আযান নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি তিন পর্বের প্রতিবেদন #১ম পর্ব, ২য় পর্ব এবং শেষ পর্ব এক সাথে আপনাদের সামনে শেয়ার করলাম যেখানে কিছু অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আমার বিশ্বাসঃ
দিনে পাচঁবার মুয়াজ্জিনের কন্ঠে যে ধ্বনি ভেসে আসে আমাদের কানে- সেই হল আজানেরর ধ্বনি। অনেকের কাছেই তা সুমধুর আবার কারও কারও কাছে তা প্রতিনিয়ত শুনতে পাওয়া একগুচ্ছ শব্দ ছাড়া নেহায়েত কিছুই নয়। ইসলামী দেশ সমূহে আযানের প্রতিধ্বনি ছাড়া কল্পনা করাই যাই না আবার বিশ্বের অনেক দেশে উচ্চস্বরে বা মাইকে আজান দেয়া নিষেধ। আমাদের নবীজী (সাঃ) বলেছেন, আজানের সময় সব কিছু বন্ধ রাখ এমন কি কোরআন তেলাওয়াতও আর মুয়াজ্জিনের সাথে তা উচ্চারণ করতে থাক। আজানের ধ্বনি কি যে মিষ্টি তা কবি নজরুল এর কথায় ফুটে উঠেছে-
ও আজান, ওকি পাপিয়ার ডাক!
ও কি চকোরীর গান!
মোয়াজ্জিনের কন্ঠেও কি ও তোমারই সে আহবান?
প্রিয় বন্ধুরা, আযান সম্পর্কে আজ আপনাদের এক বিস্ময়কর সত্য কথা জানাবো ব্যাপার টা আমার কাছে এত বিস্ময়কর তা আমি আপনাদের সাথে তা শেয়ার করতে চাই।
পৃথিবীর একটি মানচিত্র নিন। একবার তাকান পৃথিবীর পূর্বদিকে। আপনি দেখবেন ইন্দোনেশিয়ার মানচিত্র। পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীরর দেশ এই ইন্দোনেশিয়া- যার বড় বড় শহরগুলো হলো জাকার্তা, জাভা, সুমাত্রা, বোর্ণিও ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে পূর্বদিকে যে শহরটি অবস্থিত সেটি হল ' সাইবিল'। সাইবিল এর কোন এক ভোর। সময় পাচঁটা বেজে ত্রিশ মিনিট কোন এক মসজিদে সুুউচ্চ মিনার থেকে জমাট অন্ধকারের বুক চির বেরিয়ে এল আযানের ধ্বনি। ইথারের কনায় ভর করে কেঁপে কেঁপে তা প্রবেশ করল মানুষের কানে। কি মিষ্টি, কি সুমধুর লা-শরীকের উচ্চকন্ঠের এ জয়গান, আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম-ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম, এসো, নামাজের পথে এসো, এসো কল্যানের পথে এসো।
★প্রথম পর্ব এর পর থেকে.......
২য় এবং শেষ পর্বঃ
আজান কেন বিস্মময়কর বাস্তবতা?
তার এক মাত্র উদাহরন হচ্ছে পৃথিবীতে প্রত্যেক দিন প্রতিটি মিনিট তে আজান তথা তাওহীদ ও রিসালতের এ প্রত্যাহিক বলিষ্ঠ ঘোষনা চলতে থাকে। হয়ত পাঠকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে তা কেমনে সেই প্রশ্নের উত্তর আমার ২য় এবং শেষ পর্ব গুলোঃ
ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম জন গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম একটি দেশ। এই ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে পুর্বদিকে অবস্থিত "সাইবিল"রাজ্যটা। এই সাইবিল রাজ্যের সময় যখন ৫টা ত্রিশ মিনিট হয় তখন জমাট অন্ধকার বুক চিরে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে প্রতিদিনের মত প্রথমে বেরিয়ে আসে আজানের ধ্বনি। ততক্ষণে আজান শুরু হয়ে গেছে পুরো ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন শহরে। আযান শুরু হয়ে গেছে জাকার্তা,বোর্ণিওতে। তারপর সুমাত্রার উপকুল হয়ে ইন্দোনেশিয়ার সীমানা ছড়িয়ে গেল আযানের এ উদাত্ত আহবান।
ইতোমধ্যে আযান শুরু হয়ে গেল মালেশিয়ায়, মালেশিয়া ছাড়িয়ে বার্মার মসজিদ গুলোতে।
তারপর বাংলাদেশ-ঢাকা-মসজিদের শহর, বাংলাদেশের রাজধানী। জাকার্তা আজান শুরু হওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যেই তা উচ্চারিত হতে লাগল ঢাকার আকাশে বাতাসে,অলিতে-গলিতে। ঢাকা বাংলাদেশ হয়ে কলকাতা। তারপর কলকাতা ছাড়িয়ে ক্রমশঃ পশ্চিমে দিকে। বোম্বে থেকে শ্রীনগর। সাথে সাথে পুরো ভারত প্রকম্পিত হতে লাগল তাওহীদের এ আমোঘ আহবানে।
কাশ্মীরের শ্রীনগর ও পাকিস্তানের শিয়াল কোটে একই সময়ে আজান দেওয়া হয়। আবার শিয়াল কোট, কোয়েটা ও করাচির মধ্যে সময়ের পার্থক্য ৪০ মিনিট। এই ৪০ মিনিট পুরো পাকিস্তান ছড়িয়ে গেল আজানের ধ্বনি। আর এই ধ্বনি শেষ হবার আগেই ওদিকে আফগানিস্তান ও মস্কেটে তা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
মস্কেট ও বাগদাদের সময় পার্থক্য ১ ঘন্টা। এই এক ঘন্টার মধ্যে আজানের ধ্বনি হতে লাগল হিজাজে-ই-মোকাদ্দাস ( পবিত্র নগরী মক্কাও মদিনা ) ইয়ামেন, আরব-আমীরাত, কুয়েত ও ইরাকে।
ওদিকে বাগদাদ ও মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার সময়ের পার্থক্য ১ ঘন্টার। এই ১ ঘন্টায় সিরিয়া, মিশর,সোমালিয়া ও সুদানে আজান উচ্চারিত হতে লাগল। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ও লিবিয়ার ত্রিপলির দুরত্ব ১ ঘন্টা। এই এক ঘন্টায় আফ্রিকায় একের পর একদেশে আযানের প্রক্রিয়া চলছে।
অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালতের এ প্রত্যাহিক বলিষ্ঠ ঘোষনা, যা শুরু হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ায়, মাত্র সাড়ে নয় ঘন্টার মধ্যে তা আছড়ে পড়েছে আটলান্টিক মহাসাগরের পুর্ব উপকুলে।
#শেষ পর্বঃ এই পর্ব টা এই পতিবেদনের মুল সারাংশ। লেখাটা সম্পুর্ণ বুঝতে এই পর্ব টা পড়া আমার মতে জরুরী মনে হয় যদি কষ্ঠ করে পড়েন আর কি!
শুরু হয়েছিল সেই ইন্দোনেশিয়ার "সাইবিল" থেকে আবার সেই ইন্দোনেশিয়া, সেই "সাইবিল"। ফজরের আযান আটলান্টিকের পূর্ব উপকুলে পৌছানোর আগেই সেই "সাইবিলে" থেকে শুরু হয়ে গেল জোহরের আজান।
জোহরের আযান ঢাকা পৌছানোর আগেই আবার শুরু হয়ে গেল আসরের আযান এবং এই আসরের আজান জাকার্তা পৌছতে না পৌছতেই আবার শুরু হয়ে গেল এশার আজান। কি সুন্দর কি বিস্মময়কর ব্যাপার। ইন্দোনেশিয়ার মসজিদে যখন পরের দিনের ফজরের আজান হচ্ছে ঐ দিকে আফ্রিকার মসজিদ গুলোতে মুয়াজ্জিন সাহেবেরা আগের দিনের এশার নামাজের আহবান মসজিদে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। সুবাহানাল্লাহ! এমন কি আপনি যখনই এই লেখাটা পড়ছেন তখনই হয়ত পৃথিবীর কোথাও না কোথাও আযান হচ্ছে।
সমুদ্রপারে দাঁড়ালে আমরা যেমন সমুদ্রের ঢেউকে একের পর এক অন্তহীন ভাবে তীরে আছড়ে পড়তে দেখি তেমনি মহান আল্লাহর ঘরের প্রতি শাশ্বত এ আহবানে দুনিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিমে, উত্তর থেকে দক্ষিণে একের পর এক প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, একের এক বিরামহীন ভাবে।
(জীবনের প্রথম বড় কোন বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টা করলাম ভুল ত্রুটি হতে পারে হয়ে থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
সকল বন্ধুদের কে #ধন্যবাদ .... ^_^
লেখকঃ
#নুরুল_আমিন_মুরাদ
অনার্স ৩য় বর্ষ
কক্সবাজার সরকারি কলেজ।