somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একুশে ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইনস ডে না।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কথা বলছিলাম বন্ধুর সাথে এই দূর প্রবাস থেকে। হঠাৎ বন্ধু বলল আমাকে দোস্ত একটু পরে কথা বলছি। ৫ মিনিট পরে ফিরে আসলে তাকে জিজ্গেস করলাম কোথায় গেলি? সে বলল কোথাও না। বললাম তাহলে ফোন রেখে দিলি যে ? সে বলল আরে কালকে তো ২১শে ফেব্রুয়ারী তো আমার গার্ল ফ্রেন্ড শহীদ মিনারে যাওয়ার নাম করে ঘর থেকে বের হতে পারবে। তাই ও এখন ফোন দিয়ে বললো আমাকে কোথায় যেতে হবে। আমি বললাম ও আচ্ছা তার মানে গত ৭ দিন আগে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করেও কি তোমাদের ভালবাসার স্বাদ মিটল না ? যদিও জানি কথাটাকে সে খুব ভালোভাবে নিল না। যাই হোক ওর সাথে কথা বলা শেষ করেই লিখতে বসলাম।

ভালবাসা তুমি মানুষকে অন্ধ করে দাও আমি জানি। এই অন্ধ ভালবাসা কারণে দেখতে পাচ্ছি না আমাদের নৈতিক কি কি অবক্ষয় ঘটছে। আপনারা কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, যে এমন কোনো যুগল দেখেননি যারা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর নাম করে এই দিবস তাকে তারা পালন করছে বেহায়া দিবস হিসাবে ? কেউ যদি না দেখে থাকেন আমাকে জানাবেন। ঠিকানা দিব গিয়ে দেখে আসবেন নিজের চোখে।

আমি লজ্জিত হে সালাম ,রফিক ,জব্বার, শফিউর ও আরো অনেকের কাছে যারা এই ভাষার জন্য তাদের প্রশস্ত বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন রাজপথে। আমি সত্যি খুব লজ্জিত আজ আমরা তোমাদের মত তরুণ হয়েও তোমাদের রক্ত বিসর্জন দিয়ে এনে দেওয়া দিবসকে পুজি করে তুলছি প্রেমিক প্রেমিকার সাথে দেখা করার সুযোগের স্বার্থ। শহীদ মিনারে অনেকেই আবার ফুল দিতে অস্বীকৃতি জানান, বলেন আমরা কি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে পূজা করব নাকি ? ফুল দিলে গুনাহ হয়। মেনে নিলাম তোমাদের কথা আমি। যারা বাংলাকে মাতৃভাষা করার দাবিতে তাদের তাজা রক্ত বিসর্জন দিয়ে গেল, যাদের রক্তের বিনিময়ে কথা বলতে পারছি আজ এই প্রিয় বাংলা ভাষায় তাদের জন্য কি তোমরা একটা ফাতিহারও আয়োজন করতে পার না ?ফুল দিলে পূজা হয় কিন্তু ফাতিহা দিলে তো আর পূজা হয় না। যাইহোক আমাদের ফুলের শ্রদ্ধা অথবা শহীদদের স্মরণে ফাতিহার আশায় সেদিন ওই দামাল ছেলেরা জীবন দিয়ে যায়নি। তারা যা অর্জন করে যাবার তারা তা অর্জন করেই গেছে। আর আমাদেরকে দিয়ে গেছে গার্ল / বয় ফ্রেন্ডের সাথে দেখার করার একটা সুবর্ণ সুযোগের দিন। একবার ধন্যবাদ তো দাও তাদের এই দিন দিয়ে যাবার জন্য।

এবার আমার কিছু ব্যাক্তিগত কোথায় আসি। আমার মোবাইলে গানের প্লে লিস্টে প্রায় ৪৭৮ টি গান আছে। রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, আধুনিক বাংলা সব গান মিলিয়ে বাংলা গানের সংখ্যা মাত্র ২২০টি। আর বাকি ২৫৮ গান ইংলিশ ও হিন্দী। একটু আগে ভাবলাম আর ভেবে লজ্জিত হলাম অনেক ,যে আজ কাল আমাদের মোবাইলে বাংলা গানের চেয়ে হিন্দী গানের সংখ্যাই বেশি থাকে। ভেবে আসলেই খুব লজ্জিত হলাম। এর একটু পরেই ভাবলাম আজ আমি এতসব কেন ভাবছি। জবাব পেলাম কাল ২১শে ফেব্রুয়ারী আর ১৯৫২ সালে এই দিনে শুধু বাংলাকে মাতৃভাষা করার জন্য জীবন দিয়ে গেল কিছু মা পাগল সন্তান। আমি তাদের মত হতে পারলাম না। কাল ২১শে ফেব্রুয়ারী বলে আজ অনেক কিছু ভেবে ফেললাম কিন্তু আমি কেন ভাবি না বছরের প্রতিটা দিন তাদের কথা যাদের বিনিময়ে আমি প্রতিটা মুহূর্ত নিজের মনের ভাব কে খুব সহজেই প্রকাশ করতে পারছি ? আমার কোনো জবাব নেই শুধু লজ্জায় মাথা নত করে চুপ করে থাকা ছাড়া।

তারা জীবন দিয়ে গেল শুধু ভাষার জন্যে আর আমরা ? আমরা আজ প্রেমিকাকে ''আমি তোমাকে ভালবাসি'' বলার চেয়ে সাচ্ছন্দ বোধ করি হিন্দিতে ''ম্যায় তুমসে পেয়ার করতি হু'' বলতে। বৃথাই কি ছিল তাদের দেওয়া জীবন ? না কোনো দিন না। আমরা আমাদের মা কে ভালবাসি না বলে সবাই যে বাসে না তা কিন্তু না। আজও শত দামাল ছেলেরা রয়েছে যারা তাদের অন্তরের ভিতর থেকেই মাকে ভালবাসে। যাদের অন্তরে মায়ের জন্য রয়েছে অকৃত্তিম ভালবাসা তাদের মনের ভিতরেই জ্বলে দাউ দাউ করে আগুন। সে আগুন শুধু তখনি প্রকাশ পায় যখন মায়ের কোনো অসন্মানি হয়। আজ আমরা যারা তরুণ তারা যেই উশৃঙ্খল জীবন যাপন করছি , আমরা যাদের মনে দেশ প্রেম অথবা দেশের প্রতি কোনো দায়িত্ব পালনে বিন্দু মাত্র গাত্রদাহ করছি না সেখানে আমাদের ঘরে জন্ম নেওয়া সন্তানরা কিভাবে ভালো হবে ?তারা যে আমাদের চেয়েও বেশি উশৃঙ্খল হবে না তার কি নিশ্চয়তা ?

আজ আমরাই আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য রেখে যাচ্ছি এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়। তারা কোনোদিন জানবেনা কোনো ইতিহাস। সে জন্য দায়ী আমি। আমার সন্তানকে আমি কি শিখাবো যেখানে আমি নিজেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা করতে জানি না। দেখা যাবে আমার সন্তান হবে আমর চেয়েও বড় উশৃঙ্খল যে কিনা শহীদদের তো দূরের কথা তার জন্মদাতা বাবা মাকেই শ্রদ্ধা করবে না। কিন্তু তার জন্য আমি আমার সন্তানকে দায়ী করব না। তার জন্য দায়ী আমি নিজে।

তোমরা তোমাদের দায়িত্ব পালন করে গেছ আর আমাদের দিয়ে গেছ লজ্জায় নত শির।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×