মা, ও মা, নিষ্ঠুর পৃথিবীতে মানুষ মানুষকে অনেক তাড়াতাড়ি ভুলে যায় । ২০০৯ এর ১ টা দিন আগেও তুমি আমাদের কাছে ছিলে । অথচ আজ আমি ছাড়া কারোরই মনে নেই তোমার কথা !!
হয়তো একদিন আমিও ভুলে যাবো তোমায় । নিষ্ঠুর পৃথিবী আমাকেও হয়তো ভুলিয়ে দিবে তোমার স্মৃতি ।
মা গো কেনো এত তাড়াতাড়ি আমাদের রেখে চলে গেলে বহুদূরে । অনেক কষ্ট হয় গো মা । তোমাকে অনেক MISS করি।
মাগো তোমার মতো করে কেউ ভালবাসে না। অনেক কষ্ট গো মা। কাউকে বলতেও পারি না
চিত্কাপর করে কাঁদতে ইচ্ছা করে কিন্তু জানো মা আমি আগের মত কাঁদতে পারিনা । শুধু বুকের ভেতর কেমন যেন ব্যাথা করে ।
মাঝে মাঝে ইচছা করে আকাশটা ছিঁড়ে তোমার কাছে গিয়ে একটু আদর নিয়ে আসি । তোমাকে কষ্ট গুলো দেখাই । কিন্তু পারি না ।
মাগো তুমি কি আমাকে দেখো ? আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি তোমাকে দেখবো বলে । চাঁদ কি তোমাকে বলে না আমি তোমাকে কত্ত মিস করি ??
মা তোমাকে কত ভালবাসি কখনও বলা হয়নি । বললে হয়তো আমাদের ছেড়ে যেতে পারতে না এত দূরে ।
মাগো আমি ঘুমালে আমায় একটু আদর করে যেও প্লিজ । আমার মাথায় বুকে একটু হাত বুলিয়ে দিও । তাহলে আর ব্যাথা থাকবে না ।
আর নইলে.....আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যেও । LOVE U SO MUCH MY SWEET MAA.
I'M MISSING U BADLY.
উপরের লেখাগুলো আমার বন্ধু Tuhin Nur Rayan তার ফেসবুক ওয়ালে তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে লিখেছিল । ফেসবুকে লাইক-কমেন্টের অনেক খেলা চলে । কিন্তু আপনি যখন দেখবেন একটা ছেলে বা মেয়ে তার মা/বাবার জন্য এভাবে কাঁদছে, তখন তাকে কি বলে সান্ত্বনা দেবেন ? আমিও কিছুই বলতে পারিনি তাকে । কারণ আমার নিজেরও মা নেই । তুহিনের সৌভাগ্য হয়েছে তার মাকে দেখার, মায়ের সঙ্গে কথা বলার, অভিমান করার । কিংবা তার মা দেখেছেন, তুহিন হাঁটছে, কথা বলছে, হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের সাথে মেধার লড়াই করছে । আমার মায়ের সেই সৌভাগ্য হয়নি । আমার সৌভাগ্য হয়নি মায়ের সাথে কথা বলার । আমার মা দেখে যেতে পারেননি, আমি হাঁটছি, কথা বলছি । আমার আরেক বন্ধু জিহাদ । তার মা মারা গেছেন ২০১৩ সালে । আমি জিহাদকে কাঁদতে দেখিনি সত্য । কিন্তু শোকে পাথর হতে দেখেছি । তার চেহারা দেখেই আমার ভেতরটা কেমন যেন করে উঠত । এখন জিহাদ মালেশিয়ায় । ও যখন চলে গিয়েছে আমি মনে মনে খুশি হয়েছি এই ভেবে যে, জিহাদের শুকনো মলিন মুখটা আমার আর দেখতে হবে না । যখন ও ফিরে আসবে তখন ও একজন ইঞ্জিনিয়ার থাকবে । তার দুঃখের দিনগুলো সে ভুলে যাবে । তখন তার মুখটা হবে হাস্যোজ্জ্বল । কিন্তু এত সহজে কি ভুলে যাওয়া যায় ?
আমি যখন কলেজে পড়তাম, মুশফিক নামের একটা বন্ধু ছিল । ওর মা প্রতিদিন ওর সাথে কলেজে আসতেন আর টিফিনের সময় নিজ হাতে ওকে খাইয়ে দিতেন । আমি এটা দেখার পর থেকে টিফিনের সময় ক্লাসের বাইরে বের হতে চাইতাম না । শুধু মনে হত আমার মা বেঁচে থাকলে হয়ত প্রতিদিন কলেজে আসতেন না কিন্তু বাসা থেকে ঠিকই একটা বক্স ধরিয়ে দিতেন । যার ভেতর হয়তো ২-৩ টা রুটি, একটা ডিম ভাজি বা সবজি থাকত । যখন পড়তে বসতাম, মনে হত যদি মা থাকতেন তাহলে পাশে বসে থাকতেন । খোঁজ খবর নিতেন ঠিকমত ক্লাসে পড়া পারি কিনা । এরকম ছোট ছোট অনেক পাওয়া না পাওয়ার হিসেবে ভরে আছে আমাদের মন । এই অপ্রাপ্তি কি দিয়ে পূরণ করবেন ?
মুরব্বিদের মুখে শুনেছি, মা না থাকলে নাকি বাবা তালই হয়ে যায় । তালই মানে নিশ্চয়ই বুঝেছেন (ভাই বা বোনের শ্বশুরকে তালই বলা হয়) । সব বাবারা এমন হয় কিনা জানি না । তবে আমার বাবা হয়েছেন । গত ছয়-সাত মাসে আমাকে একটা ফোনও করেননি আমার বাবা । বরং আমি ফোন করলেও ধরেননা । এই অপূর্ণতা কি দিয়ে পূরণ করা যাবে ?
পৃথিবীর সকল বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলছি, আপনাদের সন্তানরা আপনাদের খুব ভালোবাসে । বিশ্বাস করুন বা না করুন, সন্তানের মনের মধ্যে একটা অংশ জুড়ে যেমন মায়ের জন্য জায়গা থাকে ঠিক তেমনি আরেকটা অংশ থাকে আপনাদের জন্য । সন্তান মা হারা হবার পর হয়ত জীবনের তাগিদে অনেকেই পুনরায় বিয়ে করেন । এটা দোষের কিছু নয় । কিন্তু বিয়ের পর যদি আপনি নিজের সন্তানকেই ভুলে যান তাহলে তা কিন্তু খুব বড় একটা অপরাধ । এর ফলে আপনার সন্তান আপনার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠতে পারে । আমরা অনেক ভুল করি । আমাদের বয়সে আপনারা যে সব ভুল করতেন তা আপনাদের বাবা-মা শুধরে দিতেন । কিন্তু আমাদের মা নেই । বাবাই আমাদের শুধরাবেন । ভুলে যাবেন না আমরা বিজ্ঞানী হলেও বাবার নামের জায়গায় যার নাম লিখব আমরা সন্ত্রাসী হলেও বাবার নামের জায়গায় তার নামই লিখব । সুতরাং আপনার সন্তানকে আপনি বিজ্ঞানী বানাবেন নাকি সন্ত্রাসী বানাবেন তা আপনিই ঠিক করুন ।