somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষা সৈনিক মমতাজ বেগম : আমরা যাঁর গর্বিত উত্তরাধিকার
রফিউর রাব্বি

ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা সর্বজন বিদিত। ’৪৮ সাল থেকেই এ নারায়ণগঞ্জে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীটি জোরালো হচ্ছিল। ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় সেই সময়ের দিনগুলো ছিল আন্দোলনে উত্তাল। ভাষা আন্দোলনে সে সময় যাঁরা যুক্ত ছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন নারীর ভূমিকা গোটা দেশকে তখন আলোড়িত করেছিল। তিনি মমতাজ বেগম। তিনি তখন মর্গ্যান গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিকিক্ষা।

’৫২র একুশে ফেব্রুয়ারিতে রহমতউল্লাহ মুসলিম ইনিস্টিটিউটের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। মুসলিম লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম ছিলেন ঐ সমাবেশের প্রধান অতিথি। সভা চলাকালীন সময়েই নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে পারে ঢাকার ছাত্র মিছিলে গুলি হয়েছে এবং ছাত্র মারা গেছে। মুহূর্তেই জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। চারদিকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মর্গ্যান স্কুলের ছাত্রীদের বিশাল মিছিল নিয়ে মমতাজ বেগম যোগ দেন সে মিছিলে। শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৎকালীন মাহকুমা প্রশাসকের নির্দেশে মমতাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে সরকারের নির্দেশে মমতাজ বেগমের জামিনের আবেদন বিচারক না- মঞ্জুর করেন। আদালতের রায় শোনার সাথে সাথে নারায়ণগঞ্জবাসী উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। মমতাজ বেগমকে বহনকারী ঢাকাগামী পুলিশের গাড়িটি চাষাড়া মোড়ে এলে হাজার হাজার জনতা গাড়িটি আটকে দেয়। শত শত গাছ কেটে রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। পুলিশ-জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। চাষাড়া বাইতুল আমানে সভা বসে। পুলিশ সে সভাতেও আক্রমণ করে। শত শত লোক আহত হয়। বহু লোককে গ্রেফতার করা হয়। সন্ধ্যার পর মমতাজ বেগমকে নিয়ে পুলিশ ভ্যানটি ঢাকায় রওনা হয়। পরে সরকার মমতাজ বেগমকে মুচলেকার মাধ্যমে মুক্তির প্রস্তাব দেয়। মমতাজ বেগম তা প্রত্যাখান করেন। তাঁর স্বামী ঢাকার খাদ্য পরিদর্শক আব্দুল মান্নাফ তাঁকে মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানালে তিনি তাতেও অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনায় আব্দুল মান্নাফ মমতাজ বেগমকে ডিভোর্স দেন। ১৯৫৩ সালের শেষদিকে দেড় বছর কারাভোগের পর মুক্ত হন মমতাজ বেগম।

মমতাজ বেগম-এর প্রকৃত নাম কল্যাণী রায় চৌধুরী। তিনি বাংলা সাহিত্যে অন্যতম পথিকৃৎ প্রমথনাথ বিশীর বোনের মেয়ে। ১৯২৩ সালে কলকাতায় এক প্রগতিশীল পরিবারে তাঁর জন্ম। কল্যাণী রায় চৌধুরী রণশীলতার শিকল ভেঙে ভালোবেসে বিয়ে করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র গোপালগঞ্জের আব্দুল মান্নাফকে। কল্যাণী রায় চৌধুরী হয়ে ওঠেন মমতাজ বেগম। মমতাজ বেগম এম. এ. এম. এড. পাশ করে নারায়ণগঞ্জ মর্গ্যান গার্লস হাই স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে জেল থেকে বেরিয়ে তিনি আনন্দময়ী গার্লস স্কুল ও আহমেদ বাওয়ানী একাডেমিতে আবার শিক্ষকতা শুরু করেন। নারী ও শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন এ মহিয়সী নারী। ১৯৬৭ সালের ৩০ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ভাষা আন্দোলনে যেসকল নারীদের নাম আমরা জানি তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে মমতাজ বেগম একটি অনন্য নাম। ভাষার জন্য, দেশের জন্য যিনি তাঁর পরিবারকে, সংসারকে বিসর্জন দিয়েছেন। যে ভালোবাসার জন্য তিনি সমাজকে, পরিবারকে বিসর্জন দিয়েছিলেন তিনি সে ভালোবাসাকেও বিসর্জন দিলেন। অথচ এ ভাষা সৈনিকের প্রতি আমাদের কী নিদারুণ অবহেলা। কোথাও তাঁর স্বীকৃতি নেই, নামটিও নেই। একুশের এত পদক দেয়া হচ্ছে, এত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হচ্ছে - কোথাও তাঁর নাম উল্লেখ নেই। আজকের এ প্রজন্ম যে জানবে মমতাজ বেগম নামে একজন ছিলেন - যিনি আমাদের শিখিয়েছেন দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিভাবে সবকিছু ত্যাগ করতে হয়- তারও অবকাশ নেই। এ লজ্জা আজ আমাদের- গোটা জাতির। অথচ আমরাই তাঁর গর্বিত উত্তরাধিকার।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : এই লেখাটি আমার নয়। লিখেছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। আপনারদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৫৮
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওহাবী-সালাফি-মওদুদীবাদ থেকে বাঁচতে আরেকজন নিজাম উদ্দীন আউলিয়া দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৩

১.০
ঐতিহাসিক জিয়া উদ্দীন বারানী তার তারিখ-ই-ফিরোজশাহী বইতে শায়েখ নিজাম উদ্দীনের প্রভাবে এই উপমহাদেশে জনজীবনে যে পরিবর্তন এসেছিল তা বর্ণনা করেছেন। তার আকর্ষণে মানুষ দলে দলে পাপ থেকে পূণ্যের পথে যোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×