একটা পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করেছিলাম গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষে। এখন সেই কাজের সুফল পাচ্ছি। চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর একটি পূর্ণাঙ্গ বই লিখতে গিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে হল। পড়াশোনার একটা অংশ ছিল অভিনয়কেন্দ্রিক। ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার কৌশল সম্পর্কে বেশ কিছু বই পড়ে ফেলেছিলাম গত বছরের মাঝামাঝি। দুর্দান্ত সব বই। ইন্টারনেট ঘেটে ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে নিয়েছিলাম এই সব বই। ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রতি বারে বারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয় এ জন্য। এই প্রযুক্তি না থাকলে এই সব বই পড়ার সৌভাগ্য হয় তো কোন দিনও হত না।
থিয়েটার স্কুল থেকে অভিনয়ের উপর এক বছরের একাডেমিক কোর্স করেছি সেই ১৯৯৯ সালে। নাটকের দলে কাজ করছি। ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউটে কাজ করছি। কিন্তু এই সব বই পড়ার আগে অনেক কিছুই অজানা ছিল। কিন্তু এখন জেনে ঘটল বিপত্তি। এই সব নতুন নতুন জানা জিনিস যে কাজের সেটা পরীক্ষা করব কোথায় ? পরীক্ষা না করে মানুষকে বলে দেব এগুলো কাজের সেটাও তো ঠিক হবে না। সুতরাং পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করতে হল।
প্রায় ৩৫ জন উৎসাহী তরুণ তরুণী নিয়ে কাজ শুরু করলাম। তাদের অনেকেই কখনই অভিনয় করেন নি। অনেকে মঞ্চে সামান্য কাজ করেছেন। তাদের অভিনয় শেখাতে শুরু করলাম। নতুন পদ্ধতি - ধ্যান, যোগব্যায়াম, আইসব্রেকিং গেম, ইমপ্রোভ গেম, রসের চর্চা, ভোকাল এক্সারসাইজ ইত্যাদি মিলিয়ে একটা পরীক্ষামূলক পদ্ধতি। আমার নিজের মতো করে একটা পদ্ধতি সাজিয়ে নিয়েছি। সরাসরি ক্যামেরার সামনে অভিনয় করিয়ে দেখছি। খানিকটা দ্বিধা ছিল মনে। পদ্ধতিটা কাজ করবে কিনা ।
সামান্য কিছু প্রশিক্ষণের পর সরাসরি ক্যামেরার সামনে দাঁড় করালাম ওদের। দেখা যাক, ওরা পারে কি না। আমার অস্বস্তি ও দ্বিধা দূর হয়ে গেল। ক্যামেরার সামনে অভিনয় করছে ওরা। সাবলীল অভিনয় করছে। একটা ২২ মিনিটের চিত্রনাট্য তৈরি করলাম। মওকা নামের এই চিত্রনাট্যে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে মহড়ার শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। সম্ভবত এই মাসের শেষের দিকে শুটিং করব।
এই কাজ করতে করতে আমার পরিচিত অনেকের সাথে পদ্ধতিটা নিয়ে কথা বললাম। তারা বললেন, যদি পদ্ধতিটা কাজের হয়, তবে সেটা নিয়ে কাজ করতে থাকেন। কেবল বড়দের নিয়ে নয়, ছোটদের নিয়ে কাজ করেন।আগ্রহী ছেলে মেয়েরা খুব সহজে অভিনয় শিখুক।
তাদের পরামর্শ মনে ধরল। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলাম এবং স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে লিফলেট ছড়িয়ে দিলাম। সাড়া পেলাম। কেবল বড়রা নয়, ছোট ছোট সোনামণিরাও অভিনয় শিখছে।
পদ্ধতিটা শেষ পর্যন্ত দাড়াল এই রকম - তিন মাসের একটি ব্যাসিক একটিং কোর্স করাচ্ছি, তারপর দু’মাসের রিহার্সেল এবং সব শেষে একটা শর্ট ফিল্মে অভিনয়।
কিন্তু একটা দুঃসংবাদ হল, অভিনয় স্কুলের ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কারণে আমার চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর লেখা বইটার কাজ শেষ করা যায় নি। ফলে এই বই মেলায় বইটা বাজারে আসছে না। কবে আসবে সেটা আপাতত বলা যাচ্ছে না।
কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ?