ছেলেটা বাউল স্বভাবের। হাস্যোজ্জ্বল ও সরল। কোঁকড়া চুলের সুদর্শন ছেলেটা দারুণ মিশুক।ছেলেটা গান গায়, গানে সুর দেয়, অভিনয় করে এবং মাঝে মাঝে নাটক লিখেও ফেলে।লালন ভক্ত ছেলেটার মধ্যে নাটকের প্রতি অদম্য আকর্ষণ। তাই তো সে নাটকের দলে পাগলের মতো সময় দেয়।এই ছেলেটিই চঞ্চল ইসলাম।তবে তার আসল নাম চঞ্চল মাহমুদ। সে নিজেকে চঞ্চল ইসলাম বলে পরিচয় দিত।
২০০৯ সালে আমি সঙখেলা নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করি। সেই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য আমরা বন্ধুপ্রতিম শোয়েব মনিরের সহায়তা চাই। শোয়েব মনির তার দল ঐকিক থিয়েটারের সদস্য চঞ্চল ইসলামকে আমার কাছে নিয়ে আসে। সেই থেকে পরিচয়। ২০১০ সালে ২৮ জানুয়ারি সঙখেলার শুটিং করি। ৩ দিনের শুটিং এ চঞ্চল ইসলাম প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করে। সদাহাস্য চঞ্চল কাজের ব্যাপারে দারুণ অমায়িক। বলামাত্র সে ছুটে যায় কাজটি শেষ করার জন্য। সে অনভিজ্ঞ হলেও সে সময় পরিশ্রম ও আন্তরিকতা দিয়ে উৎরে যায়। চলচ্চিত্রের ক্রেডিট লাইন তৈরির সময় তার পুরো নাম জানতে চাই, সে বলে যে সে মিডিয়াতে চঞ্চল ইসলাম নামে পরিচিত হতে চায়।সঙখেলার ক্রেডিট লাইনে তার নাম চঞ্চল ইসলাম হিসেবে দেয়া হয়েছে।
যতটুকু জানি, ২০০৬ সালে চঞ্চল উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের সদস্য হিসেবে তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। ৫ বছর সে উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের সদস্য হিসেবে অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করে। তার অভিনিত নাটক হল , লখাই, মাছের মেজবান ও দৌড়। লখাই নাটকের তার অভিনয় সবার প্রশংসা পায়।
উন্মেষ সাংস্কৃতিক সংসদের সঙ্গে ৫ বছর কাটানোর পর সে নারায়ণগঞ্জে শ্রেষ্ঠ নাটকের দল ঐকিক থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয়। ঐকিক থিয়েটারের সাড়া জাগানো নাটক হাড় তরঙ্গের সহকারী লেখক ছিল চঞ্চল। সে অভিনয় করে হাড় তড়ঙ্গ, আশ্চর্য উপশম ও ঠিকানা নাটকে। সাম্প্রতিক সময়ে তার লেখা নাটক বক্তাবলী দারুণ প্রশংসা পায়। বক্তাবলী নাটকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সরকারী তোলারাম এই নাটকটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে।
এই চঞ্চল ইসলাম গত মঙ্গলবার থেকে নিখোঁজ। বুধবার দুপুরে কলাগাছিয়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে একটা লাশ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ। উদ্ধারকৃত লাশ মুন্সীগঞ্জ পাঠায় ময়না তদন্ত করার জন্য। ময়না তদন্ত শেষে ওই দিন সন্ধ্যায় আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে লাশটি মাসদাইর গোরস্তানে দাফন করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধারকৃত লাশটির পরিধেয় কাপড় দেখে ছেলের লাশ সনাক্ত করে নিহত চঞ্চল মাহমুদের মা রবিনা বেগম।
চঞ্চল ইসলাম চলে গেছে না ফেরার দেশে। আজ শুক্রবার সকালে তার বাসায় গিয়ে দেখি শোকের মাতম। শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে ছুটে এসেছে তার সহকর্মী নাট্যকর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।দেওভোগে তার বাসায় সাংস্কৃতিক জগতের সবাই ছুটে গেছে। সবার মুখেই একটা প্রশ্ন - এই রকম অজাতশত্রু একটা সরলমনা ছেলেটিকে কে খুন করতে পারে ?
সকলের দাবি খুনী যেই হোক, তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে । এই রকম করে আমাদের মেধাবী সম্ভাবনাগুলো হারিয়ে যেতে পারে না।
চঞ্চল ছিল একটা সম্ভাবনা। নাটকের প্রতি তার ছিল অস্বাভাবিক টান। মেধাবী এই নাট্যকর্মী আমাদের নাটকের জগৎকে অনেক অনেক দিতে পারত। অভিনেতা থেকে অধুনা নাট্যকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছিল। কিন্তু এই খুন সকল সম্ভাবনাকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
চঞ্চল ইসলাম, আমরা তোমার হারিয়ে যাওয়ার শোকে কাঁদছি। তুমি যেখানেই থাক, ভালো থেক।





আগেই আমার নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছিল:
Click This Link