বিরাট জ্যাম লেগেছে। রিহার্সেলের সময় বিকেল চারটা। এখন সাড়ে চারটা। বসে আছি বাসের ভেতর। বসে বসে ঘামছি। গরমে নাকি টেনশনে বুঝতে পারছি না।
টেনশনের চেয়ে মেজাজ খারাপ বেশি হয়েছে। আমার কোন সুযোগ পাওয়াটা সহজ হয় না। এর আগে এক নাটকে সুযোগ পেলাম। শুটিং ডেটও হয়ে গেল। আগের দিন রাত ১১টায় ফোন এল প্রোডিউসারকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে। ব্যাটা নাকি কোন এক মাল্টিপারপাস চালাত। এক গ্রাহক মামলা করেছে প্রতারণার অভিযোগে। স্বভাবতই সেই নাটক ভেস্তে গেল। সেই নাটকের ডিরেক্টর আগে ফোন ধরত, এখন ফোন ধরে না, কেটে দেয়। শালা একটা খাটাশ।
এই নাটকের ডিরেক্টরটি ওইটার মতো খাটাশ হওয়ার কথা না। আমাদের দলের এক মঞ্চ-নাটক দেখতে এল কয় দিন আগে। আবুল মার্কা চেহারা। মাথায় একটা মাংকি ক্যাপ লাগিয়ে বসে আছে। আমার নাটকের দলের এক প্রভাবশালী সদস্য তার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিল।
‘পিংকি, এই যে উনি হলেন সিরাজ ভাই। টিভি নাটকের ডিরেক্টর। সিরাজ ভাই, ভালো আছেন ?’
আমার সঙ্গে পরিচয় করানোর চেয়ে উনি নিজেই পরিচিত হতে লাগলেন। ডিরেক্টর সিরাজ মনে হয় আমাদের দলের প্রভাবশালী সদস্যটাকে চিনতে পারেন নি। আমি মনে মনে হাসলাম। আজকাল সবাই ফাপড়ের উপরে চলে।
তবে ডিরেক্টর সিরাজের চেহারা আবুল মার্কা হলেও ব্যবহারে ভদ্র। তিনি আমার সঙ্গে কথা বললেন আন্তরিক ভঙ্গিতে।
‘আপনি ভালো আছেন ?’
তার এই ‘ভালো আছেন’ বলার স্টাইল শুনে পাশে বসা লোক বিভ্রান্ত হওয়ার কথা। ধরে নেবে, উনার সঙ্গে আমার পিতলা খাতির আছে। কিন্তু এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে এই ব্যাটার আলুর দোষ আছে। নাটকের ডিরেক্টর অথচ আলুর দোষ নেই, তা কি হয় ?
বাস এক ইঞ্চিও এগোয় নি। সামনে যে কী হয়েছে কেউ বলতে পারছে না। একবার খবর এল, একটা বাস নাকি রাস্তার মাঝখানে চিৎপটাং হয়ে আছে। স্পট ডেড ১২ জন। আবার খবর এল, দুই পার্টির হেভি ফাইট হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ল্যাশ। গোলাগুলি এবং বোমাবাজি চলছে। বাস নিয়ে সামনে যাওয়া মানে হল ডাইরেক্ট দোযখে ঢুকে যাওয়া। কিছুক্ষণ পর খবর এল, ট্রাক শ্রমিকরা স্ট্রাইক করেছে এবং রাস্তা অবরোধ করে বসে আছে।
এই সব কোন সংবাদই আমার মাথায় ঢুকছে না। আমার মাথায় এখন কেবল রিহার্সেল। একটা চান্স পেয়ে গেলে আর পেছনে ফিরে তাকানো লাগবে না। টিভি স্টার হয়ে যাব।
আমাদের দলের প্রভাবশালী সদস্যটাকে ফোন দিলাম। ব্যাটার ফোন ব্যস্ত। কাকে ফাপড় মারছে কে জানে।
এই ফাপড়বাজদের সঙ্গে থাকতে থাকতে আমি নিজেও ফাপড়বাজ হয়ে যাচ্ছি। যেমন, আমি সব সময় বাসায় সালোয়ার কামিজ ওড়না পরি। আজ একটু সেক্সি ড্রেস পরেছি। ইচ্ছে করেই পরেছি। জিন্স ও টি শার্ট। তবে টি শার্টের উপরে একটা আলগা শার্টও পরেছি। তার সঙ্গে গলায় একটা গামছা। গামছাটা হল আমাদের দেশজ সংস্কৃতি। ওটা ফ্যাশনের মধ্যে না রাখলে দেশজ সংস্কৃতির ইজ্জত থাকে না।
এই গরমে আলগা শার্ট দরকার ছিল না, কিন্তু পাবলিকের কথা ভেবে পরেছি। টাইট জিন্স ও টি শার্ট পরা মেয়ে দেখলে পাবলিক গরম হয়ে যায়। তারপরও পাশে বসা আঙ্কেলটা উসখুস করছে। যে কোন সময় আমার বুক বরাবর কনুই চালিয়ে দেবে। আমি অপেক্ষা করছি। আংকেল বুক বরাবর খোঁচা দিতেই আমি ওর গাল বরাবর হাত চালিয়ে দেব।
গরম কম থাকলে অবশ্য মাঝে মাঝে বোরকা পরি। বোরকার নিচে জিন্স ও টি শার্ট পরলেও পাবলিক এত গরম হয় না। বুক বরাবর কনুই মারতে চায় না।
আমি কিন্তু ছোটকাল থেকেই হাত চালাতে ওস্তাদ। ছোটকালে আমার মা কেবল নানু বাড়ি যেত। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমরা লম্বা সময় কাটাতাম নানু বাড়িতে। নানু বাড়িটা তখন গ্রাম ছিল। এত রাস্তাঘাট ছিল না। আমরা বাসে করে গিয়ে তারপর একটা গরুর গাড়ি নিতাম। দূর থেকে দেখতাম, ধান ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে একটা এবড়ো- থেবড়ো রাস্তা চলে গেছে, সেই রাস্তার শেষে একটা বিশাল লম্বা তালগাছ। সেই তালগাছ দেখে মা খুশি হত, আমিও খুশি হতাম। গরুর গাড়ি ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করতে করতে নানু বাড়ির সামনে গিয়ে থেমে যেত। আমি লাফ দিয়ে নেমে এক ছুটে চলে যেতাম বাড়ির ভেতর।
কারো সঙ্গে কথা না বলে নানু বাড়ির বিশাল উঠোনের একপাশে থাকা পেয়ারা গাছে উঠে পড়তাম। সেই পেয়ারা গাছে ছোট ছোট পেয়ারা হত। কিন্তু পেয়ারা ছিল টকটকে লাল আর ভীষণ মিষ্টি। নানু বাড়িতে যত দিন মা থাকত, আমি বেশির ভাগ সময় গাছেই থাকতাম। নানু হাসতে হাসতে বলতেন, ‘গেছো মেয়ে।’
আমার ছোট খালা আমার থেকে খুব সামান্য বড় ছিলেন। পেয়ারা খাওয়া নিয়ে তার সঙ্গে মারামারি লেগে যেত। মারামারিতে আমি জিততাম। আমার খামচি ছিল বিখ্যাত। আমার এক খাবলা খামচির সঙ্গে শরীরের চামড়া উঠে আসত।
খামচি দেয়ার অপরাধে ছোটবেলা প্রচুর মার খেয়েছি। বহুবার আমার নখ কেটে দিয়েছে মা। কিন্তু নখ থাকুক বা না থাকুক আমি খামচি দেয়া চালিয়ে গেছি। একটা বয়সের পর স্কুলে বান্ধবীরা টের পেয়ে গিয়েছিল আমি খামচি ওস্তাদ। তারা আমাকে সমঝে চলত।
একবার স্কুলের সামনে আমার গায়ে হাত দিয়েছিল এক রোমিও। আমি খামচি দিয়ে ওর গালের মাংস ফালাফালা করে দিয়েছিলাম। তারপর থেকে সেই রোমিও আমাকে দেখলে দূরে পালিয়ে যেত।
পাশে বসা আংকেলকে আমার বিখ্যাত খামচিও মারতে পারি। এক খামচি মারলে আংকেলের তোবড়ানো গালের মাংস আমার আঙ্গুলে চলে আসবে। একবার আমার রাম-খামচি খেলে আর জীবনে কোন মেয়ের পাশের সিটে বসবে না।
মাস তিনেক আগে একটা মিউজিক ভিডিওর কাজ পেয়েছিলাম। আমার নাটকের দলের এক ছোকড়া মিউজিক ভিডিওর মডেল হয়েছে। সে গোপনে খবর এনে দিল। গোপনে এই জন্য যে, আমাদের নাটকের দলের পরিচালক রানা ভাই টিভি নাটক বা মিউজিক ভিডিওর নাম শুনতে পারে না। তিনি বলে রেখেছেন, যে টিভি নাটকে কাজ করবে, তাকে দল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হবে।
তার এই হুংকারে অবশ্য একটা লাভ হয়েছে। আমরা মিউজিক ভিডিও বা টিভি নাটকের কাজ গোপনে গোপনে খুঁজি । উনাকে কোনক্রমেই জানাই না।
নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি। এই জন্য সহজে পাওয়া যায় এমন কোন কিছু নিষিদ্ধ করা উচিত না। তাহলে সেই সহজ সাধারণ জিনিসটা নিয়েও খাবলা-খাবলি লেগে যায়। যেমন আমাদের নাটকের দলের সবাই টিভি নাটকে সুযোগ পাওয়ার জন্য খাবলা-খাবলি করে বেড়াচ্ছে।
যাগগে, মিউজিক ভিডিওর কাজ করতে গেলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। চিমসে চেহারার এক মেয়ে মডেল। দেখলেই বোঝা যায়, এই মেয়ের কঠিন আমাশয় আছে। তারপরও কোন কারণে একে মডেল বানাল বুঝলাম না।
অবশ্য আমাদের নাটকের দলের ছোকড়া পরে বলছিল, ডিরেক্টরের সাথে মাখামাখি করেই এই চান্স পেয়েছে মেয়েটি। হতে পারে, উদ্যানের মধ্যেই সে যেভাবে পোশাক বদলাল, তাতে এ কথা অবিশ্বাস করার কোন কারণ দেখি না।
গিয়ে দেখি, ম্যাচের কাঠির মতো এক বুড়ো এক মেয়ের সামনে শাড়ি দিয়ে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি দেয়ালের দিকে ফিরে ব্লাউজ খুলছে। আমাকে দেখেই বুড়ো বলল, ‘শাড়িটা ধরেন। ম্যাডাম চেঞ্জ করতাছে।’
আমি শাড়িটা ধরলাম। ম্যাডাম ব্লাউজ খুলে ফেললেন। তার মেরুন রঙের ব্রা ফর্সা পিঠে ফুটে আছে। আমি তাকিয়ে রইলাম। ম্যাডামের পিঠ সুন্দর।
ম্যাডাম দ্রুত হাতে আরেকটা ব্লাউজ পরে ফেললেন। পেটিকোটটাও বদলে ফেললেন। তারপর আমাদের ধরে থাকা শাড়িটা গায়ে পেচিয়ে নিলেন।
পরে বুঝলাম, ম্যাচের কাঠির মতো বুড়োটা হল মেকআপ ম্যান। একটা অল্প বয়স্ক হাড় জিরজিরে কালো মেয়েকে নিয়ে এল একটা ভোম্বল টাইপ ছেলে। মেয়েটা হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের মতো লেহেঙ্গা পরা। ম্যাচের কাঠি মেকআপ ম্যান তাকে নিয়ে সিমেন্টের বেঞ্চের উপর বসল। ম্যাচের কাঠি বিকট হা করে মেয়েটাকে মেকআপ করতে শুরু করল। তার হা দেখে মনে হল, মেকআপ শেষে সে এই মেয়েটাকে খেয়ে ফেলবে। মেকআপের গুণে কিছুক্ষণের মধ্যে কালো মেয়েটি একটা সাদা ভুত হয়ে গেল।
এরপর ভোম্বল টাইপ ছেলেটা মেকআপ করতে গেল। ম্যাচের কাঠি দুটো পোঁচ দিয়ে বলল, ‘আপনের মেকআপ শেষ।’ বুঝলাম, ম্যাচের কাঠি ছেলেদের মেকআপ দিতে জানে না অথবা ছেলেদের মেকআপ দিতে তার ভালো লাগে না।
নাটকের দলের ছোকড়া আমাকে আগেই বলে রেখেছিল। টি শার্ট আর জিন্স পরতে হবে। টি শার্ট আর জিন্স পরেছিলাম, তবে সেটার উপরে বোরকাও পরেছিলাম। রাস্তার পাবলিককে খামোখা গরম করে তো আর লাভ নাই।
মাথায় ঝাঁকড়া চুলের লম্বা লোকটা পরিচালক। একটা স্কিন টাইট চেক শার্ট পরেছে। তার ছুপা ভুড়িটা শার্টের উপর দিয়ে দেখা যাচ্ছে। লোকটা একটা ফোল্ডিং চেয়ারের উপর বসে থেকে হম্বিতম্বি করছে। হম্বিতম্বি করার মতো লোক অবশ্য তেমন নেই। সব হম্বিতম্বি একটা বোকাটে চেহারার অল্পবয়স্ক ছোকড়ার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
কোন কারণে লোকটা ক্ষেপে আছে। আমাদের নাটকের দলের ছোকড়াটা আমাকে নিয়ে তার সামনে যেতেই তিনি হুংকার দিলেন, ‘ওইখানে গিয়া বসেন। আমি ডাকলে আইবেন। আবার ফুইট্যা যাইয়েন না।’
আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। বেটা অভদ্র। কত দেখলাম। পৃথিবীর সব পুরুষেরই তরুণীদের প্রতি আগ্রহ আছে। ভদ্র পুরুষেরা সেটা লুকিয়ে রেখে একটা আলগা ভাব ধরে থাকে। সময় সুযোগ মতো সেই ভাবের চেহারাটা খুলে পড়ে। তখন ভদ্র আর অভদ্রের কোন সীমারেখা থাকে না। সময় সুযোগ হলে এই পরিচালক মহোদয়েরও হম্বিতম্বি কোথায় যাবে।
শাড়ি পরা চিমসে চেহারার মেয়েটা আগেই মেকআপ নিয়ে রেখেছিল। সে চুল আঁচড়ে মাথায় বেণী গেঁথে তৈরি হল। বেণীর মাথায় টকটকে লাল ফিতা দিয়ে বড় বড় ফুল বানাল। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক মেখে লেপ্টে ফেলল। কোমরে শাড়ির আঁচল জড়িয়ে যখন মেয়েটি ঝাঁকড়া চুলের সামনে দাঁড়াল, ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টরের চোখে ঝিলিক খেলে গেল। আছে, ভেতরে নিশ্চয়ই ঘটনা আছে।
যথারীতি আমাদের নাটকের দলের ছোকড়াকেও মেকআপ দিল না ম্যাচের কাঠি মেকআপ ম্যান। ছোকড়া ক্ষেপে উঠল। বলল, ‘আপনে এত কিপটা ক্যান ? আরেকটু মেকআপ দেন।’
ম্যাচের কাঠি দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলল, ‘অ্যাহ, আইছে নায়ক পাতলা খান।’
তারপর শুরু হল রিহার্সেল। রিহার্সেল তো নয়, খ্যামটা নাচ। একটা আদিকালের টেপ রেকর্ডারে গান বাজানো হল। কোন একটা গাও গেরামের ‘নুরজাহান’ তার পুরোনো প্রেমিকের জন্য কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যাচ্ছে, তার যৌবন বৃথা হয়ে যাচ্ছে - এই হল গানের বিষয়। গানের কথা দুঃখের হলেও সুর পুরা হেভি ম্যাটাল। ধুমধারাক্কা নাচের মধ্যে দুঃখের গান। পুরাই অস্থির।
একটা হাফ লেডিস ওদের ডান্স দেখিয়ে দিচ্ছিল। পরে জানলাম, ওই হাফ লেডিসটা নাকি ডান্স ডিরেক্টর। তবে হাফ লেডিস হলেও ওই ব্যাটা ফুল লেডিসের চেয়েও ভালো নাচতে পারে। ওর পোশাক আশাক দেখে আমি ভেবেছিলাম, হিজড়া নাকি ?
গানের মডেল ওরা চারজন - চিমসে চেহারার মডেল, সাদা ভুত পুচকে মেয়েটা, ভোম্বল ছেলেটা আর আমাদের নাটকের দলের ছোকড়া। হাফ লেডিসের সঙ্গে কেউ পাল্লা দিয়ে নাচতে পারল না। ভোম্বল ছেলেটা তো একবার পায়ে প্যাঁচ লাগিয়ে পড়ে গেল ঘাসের উপর।
রিহার্সেলের মধ্যে একটা ড্রাম সাইজ মহিলা একটা লালটু বাবু ছেলেকে বগলদাবা করে হাজির। কালো খসখসে মহিলা দেখতে দশাসই। পাশাপাশি লালটু বাবু কেমন বাচ্চা দেখতে। লাল-ফর্সা। অনেকটা লাল মুলার মতো। লালটু বাবু কেন এই ড্রাম সাইজের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেও এক রহস্য। পুরুষালি এই মহিলাকে কিভাবে মডেল বানাবে আমি ভেবে পেলাম না।
লালটু বাবু সাদা ভুত মেয়েটিকে কী যেন ইশারা করল। মেয়েটি খিটখিট করে হাসতে লাগল। ভোম্বল ছেলেটা সাদা ভুত মেয়েটার হাসিতে বিরক্ত হতে লাগল। বুঝলাম, এখানেও ঘটনা আছে।
প্রায় দুপুর নাগাদ শুটিং শুরু হল। সেই ড্রাম সাইজ বিকট কালো খসখসে চেহারার মহিলা গান গাইছে। চেহারার মতো উনার গলাও খসখসে। পরে জানলাম, উনি ‘দুঃখী নুরজাহান’ গানের গায়িকা। উনার জীবনের দুঃখ নিয়ে এই গান গাইছেন। উনার শরীর যেমন ড্রাম সাইজ, দুঃখগুলোও তেমনি ড্রাম সাইজ। কোন অলৌকিক কারণে পৃথিবীর বেশির ভাগ গায়িকারাই ড্রাম সাইজ। সম্ভবত উনাদের মাপ নিয়েই ড্রাম তৈরি করা হয়েছে।
আমি শুটিং করতে গিয়ে সারা দিন বসে বসে বোরকার নিচে সিদ্ধ হয়ে গেলাম। সবাই নাচল, গাইল। হাফ লেডিস নাচতে নাচতে ক্লান্ত হয়ে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল। অবশেষে প্যাক আপ হয়ে গেল। আমার কোন ডাক এল না।
সন্ধে বেলা আবারও ঝাঁকড়া চুলওয়ালা ডিরেক্টর সাহেবের সামনে নিয়ে গেল আমাদের দলের ছোকড়া। ঝাঁকড়া চুলওয়ালা আমার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘ বোরকা পইরা বইস্যা রইছেন ক্যা ?’
তার কথাটা উদ্দেশ্যমূলক মনে হল। আমি বোরকা খোলা শুরু করলাম। তিনি বললেন, ‘আর খুইলা কী হইব ? দুই এক দিন পর আমার অফিসে আইসেন।’
এই কথাটা আরও উদ্দেশ্যমূলক। একেবারে উনার অফিসে দেখতে চায়। তার মানে খাঁটি লোক। আমি আবারও বোরকা পরে ফেললাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
কয়েক দিন পর ছোকড়াটা ফোন দিল। ডিরেক্টর সাহেব যেতে বলেছেন। এইবার আর ভুল করলাম না। ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টরের অফিসে ঢোকার আগে সিঁড়িতেই বোরকাটা খুলে ফেললাম। ছোকড়া হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
‘আপামনি, আজকা তো আপনেরে অন্য রকম লাগতাছে।’ ছোকড়াটি ঘোর লাগা চোখে বলল।
আমি হাসলাম। কৌতুক করে বললাম, ‘ঠিক আছে না ?’
‘আবার জিগায়।’
আগে থেকেই প্লান ছিল, ঝাঁকড়া চুলের সামনে এই রকম পোশাক পরে যাব। আমার ধারণা, একবার আমার দিকে ভালো করে তাকালেই ক্লিক করে যাবে। আমার ফিগার খারাপ না। ৩৪-২৬-৩৬। স্কিন টাইট টি শার্টে আমাকে খুবই সেক্সি লাগে। রাস্তাঘাটে ব্যাটারা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে।
(চলবে ......)
দ্বিতীয় পর্ব । তৃতীয় পর্ব
যদি এই উপন্যাসটি কিনতে চান :
তাহলে যোগাযোগ করুন :
উপন্যাস : নাটকের মেয়ে
প্রকাশক : চারুলিপি প্রকাশন
যোগাযোগ : ০১৯১২৫৭৭১৮৭
গল্প সংক্ষেপ :
পিংকি নামের মেয়েটি থিয়েটার কর্মী। তাদের নাটকের দলের পরিচালক রানা ভাই। রানা ভাই বলে রেখেছে, তার দলের কেউ টিভি বা সিনেমায় অভিনয় করলে তাকে দল থেকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু তার দলের সবাই গোপনে গোপনে টিভি বা সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। পরিচালক রানা কি তাদের ঘাড় ধরে বের করতে পারবে ?
নাটকের দলে পিংকির আরেক সহকর্মী রিমা আপা। তারও ইচ্ছা টিভি স্টার হওয়া। নাটকের জন্য সে তার প্রথম স্বামীকে ত্যাগ করে। কিন্তু পরের স্বামীও তাকে অভিনয় ত্যাগ করতে বলে। কী করবেন রিমা আপা ? এই স্বামীকেও ত্যাগ করবেন ?
সিরাজ সব্যসাচী ওরফে মাংকি ক্যাপ টিভি নাটকের পরিচালক। একটা নতুন নাটকের জন্য নতুন অভিনয় শিল্পীদের সুযোগ দেন। পিংকি নামে থিয়েটারের অভিনেত্রী ঢুকে পড়েন তার দলে। পিংকির ধারণা, টিভি নাটকে সুযোগের বিনিময়ে পরিচালক সিরাজ তার কাছে অনৈতিক কিছু দাবি করবে। তার ধারণা কি সত্যি ?
নিজেকে প্রযোজক বলে পরিচয় দেয় আজিজুর রহমান ওরফে টাকলু। পিংকির সঙ্গে খাতির জমাতে চায়। পিংকিকে বিরাট অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু এই লোকটিকে সহ্য করতে পারে না পিংকি। তার বিরক্তি চরমে ওঠে যখন জানতে পারে লোকটি ভুয়া প্রযোজক। এখন কী করবে পিংকি ?
শেষ ভেজালটা লাগায় পিংকির গোপন প্রেমিক রফিক ওরফে অগামারা। অগামারা তাকে বিয়ে করার জন্য তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়। পিংকিকে দান করে দেয় তার ফ্ল্যাট। কিন্তু পিংকি তাকে বিয়ে না করে সব গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। কেন ?
পিংকি চায় যে কোন মূল্যে টিভি স্টার হতে। কিন্তু একের পর এক বাধা তার স্বপ্ন পূরণের পথে দেয়াল তৈরি করে। পরিবারের বাধা, আত্মীয়দের বাধা, সহকর্মীদের বাধা, সমাজের বাধা। সে টপকাতে থাকে, টপকাতে থাকে। দেয়ালের পর দেয়াল। কতগুলি দেয়াল সে টপকাবে ? তার কি আর স্বপ্ন পূরণ হবে না ?
এক কথায় বইটি সম্পর্কে তথ্য :
নাম : নাটকের মেয়ে
লেখক : শাহজাহান শামীম
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
প্রচ্ছদের আলোকচিত্র : কামরুল হাসান মিথুন
লেখকের আলোকচিত্র : এটিএম জামাল
প্রকাশক : হুমায়ূন কবীর, চারুলিপি প্রকাশন, ৩৮/৪ বাংলা বাজার, ঢাকা।
বই মেলায় স্টল নং-৩৫৩,৩৫৪ এবং ৩৫৫ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
মূল্য : ২৫০ টাকা ( $ 10 only )
U.K Distributor : Sangeeta Limited, 22 Brick Lane, London.
U.S.A Distributor : Muktadhara, 37-69, 2nd floor, 74 St. Jackson Heights, N.Y. 11372
Canada Distributor : ATN Mega Store, 2970 Danforth Ave, Toronto
Anyamela, 300 Danforth Ave (1st floor, Suite 202), Toronto
অনলাইনে বই কিনতে পারেন রকমারি ডট কম থেকে। বই মেলা উপলক্ষে ২৫% ডিসকাউন্ট চলছে। ডিসকাউন্ট মূল্য ১৮৮ টাকা। এখানে অর্ডার দিন। বই পৌঁছে যাবে আপনার বাসায় :
http://rokomari.com/book/75811
যারা ঢাকার বাইরে :
ঢাকার বাইরে থাকেন ? বই মেলায় আসতে পারছেন না ? কোন সমস্যা নাই।
লেখকের অটোগ্রাফসহ উপন্যাস 'নাটকের মেয়ে' কুরিয়ারে পেতে হলে ০১৯১২৫৭৭১৮৭ নাম্বারে ২০০/- টাকা বিকাশ করুন। আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে বই।
বইটি সম্পর্কে আপডেট সংবাদ জানতে নিচের পেজটিতে লাইক দিন। নিজে লাইক দিন, আপনার বন্ধুদেরকেও লাইক দিতে বলুন।
https://www.facebook.com/natokermeye
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫২