সেই রাতে ভালোমতো ঘুম হল না। আধো ঘুম জাগরণে স্বপ্ন দেখলাম, আমি একটা পার্কে নাচছি। আমার বিপরীতে এক হ্যান্ডসাম নায়ক। ফর্সা মুখ। নীলচে গাল। চোখে সানগ্লাস। কোকড়ানো চুল। ফুর ফুর করে তার গা থেকে দামী পারফিউমের ঘ্রাণ আসছে।
পরের দিন শুটিং এ গিয়ে আমার স্বপ্নে দেখা রাজপুত্রকে খুঁজছি। স্বপ্নে দেখা নায়কের মতো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টরের মেজাজ পুরো খারাপ। একজন অভিনেতার আসার কথা সকাল ৯টায় । এখন ১১টা। তিনি এখনও এসে পৌঁছেননি। আমি বুঝলাম, আমার স্বপ্নে দেখা নায়ক এখনও আসেননি। নায়কদের দেরি করে আসতে হয় । যিনি যত গুরুত্বপূর্ণ তিনি তত দেরি করে আসেন।
গরমে আমার কম দামী মেকআপ গলে গলে পড়ছে। কিন্তু আমি বিরক্ত হচ্ছি না। আমার মনে দারুণ ফুর্তি। ফুর্তি বেশিক্ষণ টিকল না, নায়ক দেখে পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
আমার নায়ক একজন আঙ্কেল। মোটা পেট। মাথায় কাউ বয় হ্যাট। চোখে কালো চশমা। কালো কুচকুচে মুখ। মাথার কাউ বয় হ্যাট যখন খুলে ফেললেন, তখন বুঝলাম আঙ্কেলের মাথায় উইগ পরা - আলগা চুল। সজারু কাঁটার মতো মাথার চুলগুলো চারপাশে ছড়িয়ে আছে।
আঙ্কেল শুটিং স্পটে পৌঁছেই হম্বিতম্বি শুরু করলেন। ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টরকে বার বার স্মরণ করিয়ে দিতে লাগলেন, কেবল ডিরেক্টর বন্ধু মানুষ বলেই তিনি শুটিং করতে এসেছেন। নইলে এই রকম ফালতু মিউজিক ভিডিওতে তিনি কখনই অভিনয় করতেন না। শত শত ডিরেক্টর উনাকে ডাকে, উনি পাত্তাও দেন না।
এই আঙ্কেলকে কোন দিনও কোন মিউজিক ভিডিওতে দেখেছি কি না - স্মরণ করতে পারলাম না। এই ব্যাটা এত বিখ্যাত অথচ আমি চিনি না কেন বুঝলাম না। সব বিখ্যাত অভিনেতাকেই তো আমি চিনি।
ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টর সাহেব দেখি থরহরি কম্প, আঙ্কেলের ধমকের কাছে পুরোপুরি সমর্পিত। বুঝলাম, বাপেরও বাপ আছে, তার নাম দাদা। আঙ্কেলের ধমকে সবাই বিরক্ত। সবচেয়ে বেশি বিরক্ত ম্যাচের কাঠি মেকআপ ম্যান। ফিস ফিস করে আমাকে বললেন, ‘এই শালা প্রোডিউসার না হইলে এই শালারে কে নেয় ?’
বুঝলাম, আঙ্কেল শুধু নায়কই না, প্রোডিউসারও। খাইছে, এই লোককে তো লাল স্যালুট দিয়ে চলতে হবে। মিডিয়াতে ডিরেক্টর হল গিন্নী মা, তিনি সন্তান গর্ভে ধারণ করেন, জন্ম দেন এবং লালন পালন করেন এবং প্রোডিউসার হল কর্তা বাবু, তিনি মালপানি না দিলে গিন্নী মা ও তার সন্তান না খেয়ে থাকতে হয়। সুতরাং কর্তা বাবু হল রিমোটের পাওয়ার বাটন। ওই বাটন বন্ধ করে দিলে সব বাটন বন্ধ।
শুটিং শুরু হল। হাফ লেডিস খুব সুন্দর করে আঙ্কেলকে ডান্স দেখিয়ে দিল। ওই সময় আঙ্কেলের মোবাইল ফোন বেজে উঠল। তিনি কার সঙ্গে যেন ধমক দিয়ে কথা বলতে লাগলেন। হাফ লেডিস বিরক্ত হল। ফোনের কথা শেষ হলে হাফ লেডিস আবারও প্রথম থেকে ডান্স দেখাতে শুরু করল।
আঙ্কেল কোন কিছুই খেয়াল না করে ‘আচ্ছা, আচ্ছা’ বলতে লাগলেন। ডান্স প্রাকটিস করার ধারে কাছেও গেলেন না।
ঝাঁকড়া চুল ডিরেক্টর তাগাদা দিতে শুরু করলেন। হাফ লেডিস টেপ রেকর্ডার চালু করে দিল। মিউজিক শুরু হল। ধুমধারাক্কা গান।
এই গানটা রোমান্টিক। রোমান্টিক সিন। কিন্তু আঙ্কেলের মুখ রাগী রাগী। মিউজিকের তালে তালে আমার দিকে কটমট করে তাকাচ্ছেন। হঠাৎ খেয়াল করলাম, আঙ্কেলের মুখ থেকে বিশ্রি গন্ধ আসছে। আমি মুখ সরিয়ে নিতেও পারছি না। দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
ডিরেক্টর হুংকার দিলেন, ‘কাট ইট।’
আমি ভেবেছি, শট এনজি - ডিরেক্টর আবারও শট নেবেন। রোমান্টিক সিনে কি আর নায়ক রাগী রাগী চেহারায় থাকতে পারে ? কিন্তু না, ওই রাগী রাগী চেহারার আঙ্কেলকে রেখেই শট ওকে হয়ে গেল।
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আঙ্কেলের মুখের গন্ধ আর পেতে হচ্ছে না। কিন্তু না, এবার শুরু হল ব্যাক ডান্স । আঙ্কেল পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তখনই বোটকা গন্ধ পেলাম। আঙ্কেলের গা থেকে পাঠার মতো গন্ধ আসছে। গন্ধে আমার বমি আসছে। কিন্তু আঙ্কেলের গায়ের উপর বমি করলে ডাইরেক্ট বাদ পড়ে যাব। এই ব্যাটা হল এই প্রোডাকশনের কর্তা বাবু তথা প্রোডিউসার।
দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকের সময় আঙ্কেল বার বার ডিরেক্টরকে স্মরণ করিয়ে দিতে লাগলেন, ‘আরে মিয়া, তুমার এই সব বাল ছাল আমি অভিনয় করি না। কত বড় বড় ডিরেক্টর আমারে ফোন দেয়। পাত্তা দেই না। খালি তুমি দেইখ্যা শুটিং করতাছি।’
তার ফাপড় শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এই পাঠা বুঝতে পারছে না, সবাই তার ফাপড়ের কারণে কী পরিমাণ বিরক্ত। কিন্তু যত বারই তিনি আমার দিকে তাকান, মিষ্টি করে হাসার চেষ্টা করি। ডিরেক্টরকে দেখলাম, তার কথায় মাইন্ড করছেন না। হাসি হাসি মুখে হু হু করেই যাচ্ছেন। শালার টাকা রে .... টাকা থাকলে পাঠাও নায়ক হয়ে যায়।
লাঞ্চের পর আঙ্কেল আর কাজ করলেন না। তার নাকি কোথায় বিজনেস মিটিং আছে। তিনি চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আমাকে বললেন, ‘তোমার মেধা আছে। দেখতেও তো খারাপ না। লেগে থাক, তোমার হবে। আর ফোন দিও।’
তিনি আমাকে তার ফোন নাম্বার দিলেন। আমারটা নিলেন। তারপর তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন। তার দৃষ্টি দেখে বুঝলাম, এই লোক আমাকে ছাড়বে না। আঠার মতো লেগে যাবে। এই লোকের চরিত্রে আঠা আছে।
তিনি চলে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম, আমার শরীর থেকেও পাঠার মতো গন্ধ আসছে। এখন গন্ধটা অতো খারাপ লাগছে না।
মেয়েদের সিক্সথ সেন্স থাকে। এই সেন্স থাকার কারণেই মেয়েরা লম্পট পুরুষ সম্পর্কে সতর্ক হতে পারে। আমারও সিক্সথ সেন্স আছে। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে, এই লোকটা আজ রাত ১২ টার পর আমাকে ফোন দেবে। ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস ফেলতে ফেলতে কথা বলবে। আঠালো পুরুষ লোক তো আর কম দেখি নি।
আমাদের নাটকের দলের ডিরেক্টর রানা ভাই খুব ভালো ভালো কথা বলেন। শিল্পের চৌদ্দ গুষ্টি উনার নখের আয়নায় দেখা যায় , সেটা বোঝান কথায় কথায়। টিভি নাটক ও সিনেমা খুব খারাপ একটা বিষয় এবং মঞ্চ নাটক কতটা শৈল্পিক বিষয় - এটা বোঝাতে বোঝাতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। শিল্পের এই কান্ডারি সম্পর্কেও আজেবাজে কথা শোনা যায়।
আমাদের দলের আরেক প্রভাবশালী সদস্য রিমা আপা। দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তার অভিনীত অসংখ্য সুপার হিট মঞ্চ নাটক আছে। বিবাহিতা চাকুরিজীবী এক মহিলা। লম্বা ও ডাকাবুকো । তিনি সব দিক দিয়েই বড় সরো। তার উচ্চতা অনেক পুরুষের থেকে বেশি - ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। তার ফিগারের সাইজ দেখার মতো। আমার ধারণা ৩৬-২৮-৩৬। টকটকে লাল ফর্সা। দেখার মতো সুন্দরী। সেই রিমা আপার সঙ্গে ডিরেক্টর রানা ভাইয়ের লদকা-লদকি সম্পর্কে আছে বলে শুনেছি। রিমা আপার হাজবেন্ড না থাকলেই নাকি রানা ভাই তার ফ্ল্যাটে যান। এই সব কথা আমি বিশ্বাস করিনি। তাতে কী, যা রটে তা নাকি সামান্য হলেও বটে।
আমাদের দলের এক প্রভাবশালী সদস্য রেজা ভাই। মাথায় কাচা পাকা চুল। মাথার মাঝখানে সিঁথি। প্রায় বিরল চুলগুলো তেল দিয়ে সাটানো। ঠোঁটের দু পাশে ঝোলানো আদিকালের মোচ। পান আর গান - তার প্রিয় বিষয়। তাই ঠোঁটের কোল ঘেষে লেগে থাকে পানের রস। তিনি বলেন ওটা নাকি ফতুয়া, কিন্তু আসলে তিনি পরেন বাবা শার্ট। আঙ্কেল ডাকা উচিত এই ভদ্রলোককে কিন্তু সবাই ভাই ডাকে বলে আমিও ভাই ডাকি। এই আঙ্কেলের খুব বদ অভ্যাস। হাসি হাসি মুখে কথা বলতে বলতে তিনি গায়ে হাত দেন। এমনভাবে গায়ে হাত দেন যেন গায়ে হাত দেয়াটা কথা বলার একটা অংশ। একবার তো এই লোককে জুতা মারতে ইচ্ছা হয়েছিল।
এই লোককে জুতা মারা সম্ভব না। দেখতে সাধারণ হলে কী হবে, এই লোক নাকি বিরাট পয়সাওয়ালা। তার একাধিক হোটেল আছে এই শহরে। দুটা নাকি বৌও আছে। আমাদের দলের নাটকের বেশির ভাগ খরচ আসে ওনার পকেট থেকে। সুতরাং উনাকে জুতা মারলে আর ওই দলে কাজ করা যাবে না।
রেজা ভাই দলের রিহার্সেলে এসেই হারমোনিয়াম তুলে নেন। তারপর তার বেসুরো গলায় গান ধরেন। তার গান শুনে আমরা সবাই বিরক্ত হলেও এই সিন্দাবাদের ভুতকে আমাদের দলের কাঁধ থেকে নামানোর সাধ্য আমাদের নাই। এমনকি আমাদের ডিরেক্টর রানা ভাইয়েরও ক্ষমতা নাই এই লোকের বিপক্ষে কিছু করার।
(চলবে...... )
প্রথম পর্ব ।দ্বিতীয় পর্ব । চতুর্থ পর্ব
যদি এই উপন্যাসটি কিনতে চান :
তাহলে যোগাযোগ করুন :
উপন্যাস : নাটকের মেয়ে
প্রকাশক : চারুলিপি প্রকাশন
যোগাযোগ : ০১৯১২৫৭৭১৮৭
গল্প সংক্ষেপ :
পিংকি নামের মেয়েটি থিয়েটার কর্মী। তাদের নাটকের দলের পরিচালক রানা ভাই। রানা ভাই বলে রেখেছে, তার দলের কেউ টিভি বা সিনেমায় অভিনয় করলে তাকে দল থেকে বের করে দেয়া হবে। কিন্তু তার দলের সবাই গোপনে গোপনে টিভি বা সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। পরিচালক রানা কি তাদের ঘাড় ধরে বের করতে পারবে ?
নাটকের দলে পিংকির আরেক সহকর্মী রিমা আপা। তারও ইচ্ছা টিভি স্টার হওয়া। নাটকের জন্য সে তার প্রথম স্বামীকে ত্যাগ করে। কিন্তু পরের স্বামীও তাকে অভিনয় ত্যাগ করতে বলে। কী করবেন রিমা আপা ? এই স্বামীকেও ত্যাগ করবেন ?
সিরাজ সব্যসাচী ওরফে মাংকি ক্যাপ টিভি নাটকের পরিচালক। একটা নতুন নাটকের জন্য নতুন অভিনয় শিল্পীদের সুযোগ দেন। পিংকি নামে থিয়েটারের অভিনেত্রী ঢুকে পড়েন তার দলে। পিংকির ধারণা, টিভি নাটকে সুযোগের বিনিময়ে পরিচালক সিরাজ তার কাছে অনৈতিক কিছু দাবি করবে। তার ধারণা কি সত্যি ?
নিজেকে প্রযোজক বলে পরিচয় দেয় আজিজুর রহমান ওরফে টাকলু। পিংকির সঙ্গে খাতির জমাতে চায়। পিংকিকে বিরাট অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু এই লোকটিকে সহ্য করতে পারে না পিংকি। তার বিরক্তি চরমে ওঠে যখন জানতে পারে লোকটি ভুয়া প্রযোজক। এখন কী করবে পিংকি ?
শেষ ভেজালটা লাগায় পিংকির গোপন প্রেমিক রফিক ওরফে অগামারা। অগামারা তাকে বিয়ে করার জন্য তার প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়। পিংকিকে দান করে দেয় তার ফ্ল্যাট। কিন্তু পিংকি তাকে বিয়ে না করে সব গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। কেন ?
পিংকি চায় যে কোন মূল্যে টিভি স্টার হতে। কিন্তু একের পর এক বাধা তার স্বপ্ন পূরণের পথে দেয়াল তৈরি করে। পরিবারের বাধা, আত্মীয়দের বাধা, সহকর্মীদের বাধা, সমাজের বাধা। সে টপকাতে থাকে, টপকাতে থাকে। দেয়ালের পর দেয়াল। কতগুলি দেয়াল সে টপকাবে ? তার কি আর স্বপ্ন পূরণ হবে না ?
এক কথায় বইটি সম্পর্কে তথ্য :
নাম : নাটকের মেয়ে
লেখক : শাহজাহান শামীম
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
প্রচ্ছদের আলোকচিত্র : কামরুল হাসান মিথুন
লেখকের আলোকচিত্র : এটিএম জামাল
প্রকাশক : হুমায়ূন কবীর, চারুলিপি প্রকাশন, ৩৮/৪ বাংলা বাজার, ঢাকা।
বই মেলায় স্টল নং-৩৫৩,৩৫৪ এবং ৩৫৫ (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)
মূল্য : ২৫০ টাকা ( $ 10 only )
U.K Distributor : Sangeeta Limited, 22 Brick Lane, London.
U.S.A Distributor : Muktadhara, 37-69, 2nd floor, 74 St. Jackson Heights, N.Y. 11372
Canada Distributor : ATN Mega Store, 2970 Danforth Ave, Toronto
Anyamela, 300 Danforth Ave (1st floor, Suite 202), Toronto
অনলাইনে বই কিনতে পারেন রকমারি ডট কম থেকে। বই মেলা উপলক্ষে ২৫% ডিসকাউন্ট চলছে। ডিসকাউন্ট মূল্য ১৮৮ টাকা। এখানে অর্ডার দিন। বই পৌঁছে যাবে আপনার বাসায় :
http://rokomari.com/book/75811
যারা ঢাকার বাইরে :
ঢাকার বাইরে থাকেন ? বই মেলায় আসতে পারছেন না ? কোন সমস্যা নাই।
লেখকের অটোগ্রাফসহ উপন্যাস 'নাটকের মেয়ে' কুরিয়ারে পেতে হলে ০১৯১২৫৭৭১৮৭ নাম্বারে ২০০/- টাকা বিকাশ করুন। আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে বই।
বইটি সম্পর্কে আপডেট সংবাদ জানতে নিচের পেজটিতে লাইক দিন। নিজে লাইক দিন, আপনার বন্ধুদেরকেও লাইক দিতে বলুন।
https://www.facebook.com/natokermeye