আমার জীবনের লক্ষ্য শীর্ষক রচনা লিখেনি এমন ছাত্র খুঁজে পাওয়া দায়। জীবনের লক্ষ্য রচনা গুলোতে দেখা যায় সকলেই হতে চায় চিকিৎসক কিংবা শিক্ষক। কিন্তু একজন আধুনিক ছাত্রের জীবনের লক্ষ্য রচনা হতে হবে ভিন্নতর। তারই একটা নমুনা:
ভূমিকা:
লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন নৌকার মত। নৌকা বলতে আমি কোন রাজনৈতিক দলের পরিচয় বুঝায়নি । এইটা একটা উপমা মাত্র। যাই হোক লক্ষ্য ছাড়া এ যুগে এগোনো মুশকিল। তাই জীবনের শুরুতেই একটা লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া উচিত।
আমার জীবনের লক্ষ্য:
ছোটবেলা থেকে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভেবে এসেছি। চার পাশে দেখেছি নানান পেশার মানুষ কত অশান্তি তে থাকে। সেই সাথে বুঝতে শিখেছি এই সমাজ বড়ই কঠিন। বন্ধু বান্ধব সব হতে চাইত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার বৈমানিক। কিন্তু আমি বুঝেছি সমাজে টিকে থাকতে চাইলে, ক্ষমতাবান হতে হলে জীবনের লক্ষ্য হতে হবে অন্যরকম। তাই প্রতিনিয়ত পেপার পত্রিকা পড়ে , টিভি চ্যানেলে গুলোতে খবর শুনে আমি আমার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে ফেললাম। আমি একজন রাজনীতিবিদ হব । আমার পরিবার রাজনৈতিক পরিবার না হলেও তাদের কে বুঝালাম আমার জীবনের লক্ষ্য নিয়ে। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পরিবার থেকেও পেলাম সম্মতি।
রাজনীতিবিদ হওয়ার কারন:
আমাদের দেশে রাজনীতিবিদরাই সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। তাদের মুখের উপর কথা বলার লোক কেউ নেই। আর একটু বুদ্ধি খাটালেই ক্ষমতায় থাকা যায় সব সময়ের জন্য। নিজের আয় ব্যয় নিয়েও চিন্তা করা লাগে না। জনগণের সেবা করার সবচেয়ে বড় পেশা যে রাজনীতি সেটা কে না জানে। তাছাড়া রাজনীতিবিদ আর কজন হতে চাই এই যুগে। শুধু রাজনীতিবিদ হয়ে জীবন কাটাবো না, আমার স্বপ্ন ক্ষমতায় যেয়ে একটা মন্ত্রিত্বের পদ ছিনিয়ে নিবো।
জীবনের লক্ষ্যে নিয়ে এগিয়ে চলা:
জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তৈরি হওয়ার সময় এখনই। স্কুলে থাকাকালীন রাজনীতিতে না জড়ালেও এখন থেকে শিখছি বক্তৃতা দেওয়া। অনুসরণ করার চেষ্টা করছি দেশের রাজনীতিবিদদের। মিছিল মিটিং হরতাল সম্বন্ধেও জ্ঞান নিচ্ছি অল্প অল্প করে। কলেজে উঠে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যাবো পুরোপুরি। এইসময় টুকুতে শিখবো কি করে সন্ত্রাসীদের সামলে রাখা যায়। সেই সাথে শিখতে হবে অন্য কে ডিঙ্গিয়ে উপরে উঠার বিদ্যাটা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটা পার করব এমন কোনো ক্যাম্পাসে যেখানে সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে রাজনীতি। সেখানে থাকতে শিখে নিবো টেন্ডারবাজীর ব্যাপারটা। পড়াশোনা শেষ করে ঢুকে যাবো রাজনৈতিক দলে। আমার বিশ্বাস আমার রাজনৈতিক শিক্ষা ও প্রজ্ঞা আমাকে নিয়ে যাবে অনেকদূর।
কর্মজীবন:
নিজেই বড় নেতা হয়ে শুরু করব আমার রাজনৈতিক জীবন।সাবলীল ভাবে জনগণ কে ধোঁকা দেবার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সবসময় লক্ষ্য রাখবো নির্বাচনে মনোনয়ন যেন আমি পাই। মাঝে মাঝে টক শো গুলোতে যেতে হবে নিজেকে দেখানোর জন্য। বড় বড় স্ট্যাটাস দেওয়ার জন্য তো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট অবশ্যই থাকা লাগবে। নিয়মিত পেপার পত্রিকায় আসার জন্য বিতর্কিত কাজ করা আবশ্যক। জনগণের মনে যাতে ভীতি সঞ্চার হয় সেদিকেও রাখতে হবে লক্ষ্য। বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রত্যেক টেন্ডার থেকে যেন পার্সেন্টেজ পাওয়া যায়। সর্বোচ্চ চেষ্টা করব মন্ত্রী হওয়ার। কারন একজন রাজনৈতিক নেতার স্বপ্ন পূরণ হয় মন্ত্রিত্ব লাভের মাধ্যমে।
উপসংহার:
রাজনীতি যে কোন পেশার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এই সমাজে টিকে থাকার জন্য অন্যতম সহায়ক। একমাত্র রাজনীতি করেই লোক দেখানো সেবার সাথে সাথে নিজের সেবা করা যায় পূর্ণমাত্রায়। তাই দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে আমি রাজনীতিবিদই হতে চায়।