somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মনুষ্যত্ব

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শহরের এক প্রান্তে বেশ বড় সড় একটা ফ্ল্যাট বাড়ি। সামনে খোলা জায়গা সামান্য। ২০৩০ সালে শহরের বুকে বাড়ির সামনে ফাকা জায়গা থাকবে এই কথা ভাবা দায়। কিন্তু সম্ভব হয়েছে শহরের এক প্রান্তে হওয়াতে তার চেয়েও বড় কথা বাড়ির মালিক মাহফুজ খান। বাড়িতে আজ বড় সর আড্ডা চলছে, বেশ কিছু মানুষের ভিড়। এই ভিড়ের মধ্যে শফিকুজ্জামানের সাথে বসে কথা বলছে মাহফুজ খান। বাস্তবে কিন্তু দুজন বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক দলের জাঁদরেল সদস্য। অতীতের নেতাদের মতই ভিতর ভিতর খাতির তাঁরা রেখেছেন। কিছুক্ষণ পর পর তাদের চোখ চলে যাচ্ছে সামনে খেলা করা তাদের বাচ্চাগুলোর দিকে। আসে পাশে দলীয় লোকগুলো তো আছেই।

ঐ মুহূর্তে বাড়ির ঠিক ৩০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে আছে নাহিদ। বেশ কিছুদিন ধরে এই বাড়ির দিকে নজরে রাখছে। বাড়ির দারোয়ান একদিন চায়ের দোকানে গল্পচ্ছলে বলেছিল আজকের অনুষ্ঠানের কথা। আজকের দিনকে সে বেছে নিয়েছে। যার জন্য এত বছরের প্রতীক্ষা। দুজনকে এক সাথে পাওয়া গেছে। অনেক কষ্ট করে জিনিস গুলো জোগাড় করেছে নাহিদ। এক হাত না থাকাতে কষ্ট অনেক বেশি কিন্তু কাজ টা তাঁকে করতেই হবে।

রাজীবের মেজাজ টা খিচে আছে, সে মাহফুজ খানের সহকারী। দুচোখে শফিক কে দেখতে পারে না। আর এই শফিক মিয়া আর তার লোক গুলো আজ খাওয়াতে হচ্ছে দাওয়াত দিয়ে। সমস্যা নাই, দুদিন পর আবার ফাটাফাটি লাগবে আজকে না হয় মিউচুয়াল হোক।

কাজের কথাবার্তা ছেড়ে অতীতে চলে গেল শফিক আর মাহফুজ। ২০১৩ সালের শেষের দিকে, রাজনৈতিক সহিংসতার সময়। দুজন ছিলেন দুদলের রাজ পথের কমান্ডার। আগুন উস্কে দেওয়ার সিদ্ধহস্ত। তাদের সেদিনকার অবদান! আজ রাজনীতিতে তাদের এত উঁচুতে নিয়ে গেছে। ব্যাপারটা অনেকে জানে কিন্তু জেনে কোন লাভ নাই

- শফিক ভাই, আপনে তো মিয়া খালি পেট্রোল বোনা বানাতে পারতেন, ককটেল বানাতাম এই আমি!
- ককটেল মিয়া আমিও ফুটায়ছি দু চারটা তোমরা জানো না, দোষ হয়েছিল তোমাদের, ডিটেইলস বললে তো এখনই মারবা। তবে তোমার মত এক্সপার্ট না আমি
- আরে আপনের টিমের মারা পেট্রোল বোমায় তো আমি নিজেই একবার ফাঁসছিলাম... যাই হোক পুরান কথা বাদ দেন তো।
- পুরান কথা বাদ দেয়, খাসির চাপ টা কিন্তু সেই হয়েছে, এইটা খায়।

ধীর পায়ে বাড়ির দিকে এগোচ্ছে নাহিদ, যে করে হোক ঢুকতে হবে, যদিও দেখতে পাচ্ছে সামনে দুইটা রাইফেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে দুজন গার্ড। ভিতরে আরো অনেকে আছে। চেক করে ঢুকাচ্ছে। ধরা পরার সময় ফাটাতে হবে। যেটুকু ক্ষতি হবে হল। নাহিদ আজকে কাজটা করেই ছাড়বে, বলতে গেলে এই বোমাটুকু ম্যানেজ করতে তার বাকি জীবন টা কেটে গেছে। সেই ২০১৩ সালে চলে গেল নাহিদ।

ছোট্ট বাচ্চাদের সাথে খেলছিল নাহিদ, মা গেছিলো কাজে, বাপ তো কবে চলে গেছে ওদের ছেড়ে। পাড়ার এক পোলা সুন্দর বল কিনেছে কিন্তু নাহিদ কে খেলতে দিবে না। তাই এক কোনে বসে আছে সে। বাকি সবাই খেলছে। কি খারাপ, ওর জানের দোস্ত মোখলেস ও ওর কথা ভুলে যেয়ে খেলা শুরু করছে। থাম কিছু একটা খুঁজে ওদের দেখাতে হবে!

এটাই ছিল নাহিদের ভাবনা, ঐ একটা কৌটার মত কি যেন পেয়েছিল। গেছিল দৌড়ে ঐটা কুড়াতে, তার পর আর কিছু মনে নেই। তার পর থেকে আজ পর্যন্ত নাহিদ দেখছে তার ডান হাত টা কবজি থেকে নেই। এমনি গরীবের ছেলে তার উপর হাত নেই, আর সুখের দেখা পায়নি নাহিদ। তাই তো এই দুইটা কে শেষ করে আজ দুনিয়া ত্যাগ করবে। হাত নেয় হয়ে যাওয়ার পর থেকে এই জন্য তো বেঁচে আছে সে।

গেটের গার্ড দেখলো এক হাত নাই এরকম একজন এগিয়ে আসছে। মনে মনে ভাবলও এই ফকিরের পোলা আজকে কি চাইতে আসছে আবার স্যারের কাছে, এমনিতে বাসায় গেস্ট। কাছে আসতেই আটকাতে হবে। এই তো চলে আসছে,
- ঐ থাম, কোথায় যাস তুই
- ভাই একটু ভেতরে যেতে দ্যান না, মাহফুজ সাবের লগে দেখা করব
- ওরে লাট সাবের বাচ্চা, স্যার কি তোর দোস্ত লাগে, এক থাপ্পড় দিয়ে...
- যেতে দ্যান না স্যার, উনার কাছে একটা সমস্যা নিয়ে আসছি।

গেটের কাছে রাজীব গেল কি হয়েছে দেখতে। গার্ডের সাথে এক ছোড়ার গণ্ডগোল। হাত নাই দেখি ছোড়াটার। মনে হয় ভিতরে আসতে চায় স্যারের সাহায্যের জন্য। যায় নিয়ে আসি। স্যার ওরে হেল্প করলে শফিকের সামনে ভাব নেওয়া যাবে। স্যার খুশি হবেন। আহ, স্যারের বাচ্চাগুলো গেটের কাছে যেয়ে খেলছে কেন?

নাহিদ ভিতরে ঢুকতে না পারলে এইখানে ফাটিয়ে দিবে। গার্ডের সাথে প্যাঁচাল পেরে লাভ নাই। এই সময় মাহফুজের সহকারী এসে বলল, “ ঐ ওকে ভিতরে ঢুকতে দে”। গার্ড বলে উঠল, “স্যার তাহলে চেক করে নেয়”। “ আরে ঐ লুলারে কি চেক করবি, পাঠা ভিতরে”। “ আচ্ছা স্যার চেক করে পাঠায়”। চেক করলেই ধরা পরবে নাহিদ, এই তো সময় ফাটিয়ে দেয় বোমটা। দূরে বসে আছে মাহফুজ আর শফিক। ওদের কি ক্ষতি হবে এতদূর থেকে? চিন্তা করার সময় নাই। যা হবার হবে

গার্ড আগাচ্ছে ওর দিকে। হুট করে নাহিদের চোখে পরল একেবারে দরজার কাছে বল নিয়ে খেলছে, তিনটা বাচ্চা। আড়চোখে মাহফুজের সহকারী পাহারা দিচ্ছে এদের। তাহলে ফাটালে কারো তো ক্ষতি হবে, ওরা বুঝবে ছোট্ট বাচ্চার কেমন লাগে ক্ষতি হলে। শালারা বুঝবে। কিন্তু...

রাজীব দেখলো কি মনে করে ঐ লুলা লোকটা ফিরে চলে যাচ্ছে। আরে ব্যাটা কই যায়? ডাকবো নাকি শালাকে? আরেক গার্ড এসে বলল, “স্যার ঐ লুলা আসবে না চলে যাচ্ছে, আটকামু?”। “ ধুস, আরে না যেতে দে”।

নোংরা আর মানুষ মারার রাজনীতির বীজ এই ২০৩০ সালে আছে বাংলাদেশে। সেই বীজের স্বীকার নাহিদ নিজেই, নিদারুণ কষ্টে যায় তার জীবন। কিন্তু তার মধ্যেও আছে সামান্য মনুষ্যত্ব। কি করে পারবে সে সেই এই ছোট বাচ্চাগুলোর ক্ষতি করতে। তাই ফিরে যাচ্ছে সে। দরকার নাই এইগুলার। খালি ভাবছে, “ ইস সেদিন যদি এইটুকু বোধ থাকতো শফিক মাহফুজের মধ্যে তাহলে আজ আমার হাতটা থাকতো”।
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×