somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মৃত্যুখেলা

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পুরো বাড়ি অন্ধকার । ইলেক্ট্রিসিটি গেছে ঘন্টাখানেক হয় । বাড়ির আঙ্গিনার একপাশে মশারীর বেড়াজালে ঢাকা ছোট্ট চৌকিটায় শুয়ে আছে জিতুর লাশ । পাশে সদ্য পাতা বেঞ্চিটায় বসে কোরআন তিলাওয়াত করছে জিতুর বড় ভাই শিতু আর ছোটবোন আলো । বাড়ির আঙ্গিনার মাঝখানে শা শা শব্দ করে জ্বলছে হ্যাজাকবাতি । তেল কম থাকায় হ্যাজাক বাতির আলো নিভু নিভু প্রায় ।
আঙ্গিনার অপর কোণে থাকা পেয়ারা গাছটায় হেলান দিয়ে বসে আছেন শোকে স্তব্দ জিতুর বাবা ওমর আলী । তারই পাশে একটা চৌকিতে শোয়ানো জিতুর মা পারভিন আক্তার । তার মাথায় গত তিন ঘন্টা ধরে পানি ঢালা হচ্ছে । বেচারী ছেলের মৃত্যু শোকে অজ্ঞান । সেদিন সকাল বেলার কথা বাড়ির জাংলার কচি লাউ আর আলু ভর্তা পেটপুরে খেয়ে অফিসের উদ্দেশে বেড়িয়েছে । শহরের একটা অফিসের পিওনের চাকুরী করে সে । লেখাপড়ার হিসেব অনুযায়ী যদিও তার পিওন এর চাকুরী করার কথা নয় । অন্তত একজন অনার্স পাস ছেলে হিসেবে তো নয়ই । অথচ তাকে পিওনের চাকুরী করতে হচ্ছে । আবার এই চাকুরীই সে পেয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে । ব্যাপারটা অস্বাভাবিক মনে হলেও সত্যি । তার সাড়ে তিন বছরের বেতনের টাকা অগ্রীম একজনের হাতে তুলে দিয়ে চাকুরীটা পেয়েছে সে ।

বেশ্যাপাড়াগুলো জেগে উঠে রাতের বেলা । দিনের বেলায় এ পাড়া যতটা নীরব রাত্রিতে তত বেশিই ঝলমলে । ঝলমলে এ পাড়ার সবগুলো ঘরেই আলো জ্বলছে । মাঝে মাঝে কিছু মেয়েমানুষের খিল খিল হাসির শব্দ বাতাসে ভেসে আসছে । এ পাড়ারই কোথাও বাজছে "দিও না গো বাসর ঘরের বাত্তি নিভাইয়া" টাইপের গান । গানটা আদৌ এই পাড়ার সাথে যায় কিনা কে জানে । বেশ্যাপাড়ার সবগুলো ঘর দুই সাড়িতে সাজানো আর মাঝখানে রাস্তা । পুবদিকের সাড়ির সতের নম্বর ঘরটা বিউটির । সে ঘর এখন সুনসান নীরব । মাথার উপর ফুলস্পিডে ঘুরছে একটা অনিডা সিলিং ফ্যান । ঘরের ভেতর বিউটীর সাথে একটা অর্ধবয়স্ক লোক । এক হাতে সিগারেট আর এক হাত বারবার বিউটির দেহের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে ।
- আজকে আবার কি আকাম করছেন ? লোকটার উদ্দেশে বিউটি কথা ছুরে দিলো ।
- কিছু না
- কিছু না হলে তো আপনি আর আমার খোজ নিতে আসেন না ।
- মাগী আমি কি করছি তাতে তোর কি ? তুই টাকা পাস না ? তোকে ট্যাকা দেবো , কাজ শেষ কইরা চইলা যাবো হিসেব শ্যাষ ।
লোকটার রাগ্রতস্বর শুনে চুপ মেরে গেলো বিউটি ।


দোতলা বাড়ির সবগুলো আলো জ্বলছে রাত এখন ২ টার কাছাকাছি । সব ছেলেমেয়ে এখন ঘুমে । শুধু বড় ছেলে রাকিব আর তার বাবা শফিক আহমেদ এখনো ফেরে নি । বাড়ির গিন্নি টিভির ঘরে বসে বসে ঘুমে ঢুলুঢুলু করছেন । মাঝেমাঝে চোখ বন্ধ করতেছেন আবার মাঝেমাঝে চোখ খুলে টিভির দিকে তাকাচ্ছেন । এমনসময় কলিংবেলের আওয়াজ । ঊঠে গিয়ে দরজা খুললেন । সামনে দাঁড়ানো রাকিবের বন্ধু সজল । তার মুখ শুকনো , চোখে মুখে ভয় আর শোকের ছায়া ।
- সজল কি হয়েছে ?
- আন্টি আঙ্কেল কই ?
- সে তো এখনো ফিরেনি বাবা ।
- আঙ্কেল কে ফোন দেন ।
- কি হইছে ?
সজল দরজা থেকে সরে দাড়ালো । সামনের একটা কফিন । কফিনটা কার হতে পারে বুঝতে আর বাকি রইলো না ।


জিতু একটা প্রাইভেট ব্যাঙ্ক এর পিওন । সারাদিন ফরমায়েশ খেটেই কাটাতে হয় তার । বিকেল ৪ টার দিকে ব্যাঙ্ক বন্ধ হবে এমন সময় দেখতে পেলো অফিসে ক্যাশিয়ার আর ম্যানেজার কি কি যেন নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করতেছে । জিতু যেতেই চুপ মেরে গেলো । ক্যাশিয়ার সাথে সাথে আকে দুইটা চা আনতে পাঠালো । চা নিয়ে ফিরে এসে জিতু দরজার পাশ থেকে তাদের কথা শুনে থমকে দাড়ালো । এইগুলা কি শুনছে !
ব্যাঙ্ক এর টাকা চুরি করতে চায় এনারা !!! পুরা কথাবার্তা শুনে সামনে এসে দাড়ালো জিতু ।
- স্যার এই নেন আপনাগো চা ।
- হ্যা তুই এখন যা ।
- স্যার আমি কিন্তু সব শূনছি ।
- কি শুনছিস ?
- যেটা আপনেরা এতক্ষন কচ্ছিলেন ।
- যা শুনছিস শুনছিস চুপ মেরে যা । তুইও ভাগ পাবি ।



একই দিনে দুইটা খুনের কন্ট্র্যাক্ট পাওয়া মুখের কথা নয় । আজকে দীর্ঘ তিনমাস পর হাতে কাজ পেয়েছে হাতকাটা মাসুদ । পেশাদার খুনি হিসেবে তার সুপরিচিতি আছে ।
প্রথম খুন হচ্ছে একটা অফিসের পিওন আরেকটা একটা ছেলে । তার পরিচয় জানেনা , শুধু ছবি আর কোথায় তাকে পাওয়া যাবে সে তথ্য পেয়েছে ।
মোটা অঙ্কের টাকার কাজ ।
ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে কাজ শেষ করে এখন নিজের ঘরে শূয়ে সিগারেট টানতেছে মাসুদ ।

ওদিকে মধ্যবয়স্ক লোকটা বেশ্যাপাড়া থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় ফিরছে । বাড়িভর্তি লোকজন আর পুলিশ । ব্যাপার কি !
কিছুক্ষন পর যা শূনলো তাতে মনে হলো নিজের কান না থাকলেই ভালো হতো ।
হাত কাটা মাসুদ নামে এক সন্ত্রাসী তার ছেলেকে খুন করেছে ।

পরিশেষ

শফিক সাহেবের সহযোগিতায় ধরা পড়লো খুনী মাসুদ । আর খুনি মাসুদের সহযোগিতায় গ্রেফতার হলো শফিক সাহেব আর ক্যাশিয়ার মোক্তর আলী ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×