পাশ্চাত্যের অনেক বুদ্ধিজীবি বলে থাকেন যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মূল অসুবিধাটি হচ্ছে এর এক্সেপ্টেন্সে জন্য প্রয়োজনীয় ন্যুনতম প্রি-রিকুইসিট ফুলফিল করতে না পরলে তা বরে-শাপ হয়ে যায়। অর্থাৎ এর মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই কথাটা খুবই মানিয়ে যায়। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলে গলা ফাটিয়ে ফেলি অথচ আমাদের আচরণে গণতন্ত্রের ছায়া একেবারেই অনুপস্থিত। ব্লগের কথাই ধরা যাক না কেন, আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে আমরা দিনরাত চাই তাদেরকে ব্যান করা হোক, নিদেন পক্ষে পোস্ট সরিয়ে ফেলা হোক। আবার, উল্টোপক্ষে, যখন আমাদের পক্ষের কাউকে ব্যান করা হয় আমরা ক্ষুব্ধ হই, বিচলিত হই - প্রতিবাদ করি! এটা কি গণতান্ত্রিক আচরণ? মোটেও নয়।
সামহয়্যার টিম ব্লগারদের জন্য কষ্ট করে একটি নীতিমালা বানিয়েছেন। ব্লগাররা তা মেনে চলবেন এটাই কাম্য। যদি না চলেন, তাহলে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে কারোই কোন আপত্তি নেই। সমস্যা হচ্ছে ব্লগারদের জন্য যেমন নীতিমালা রয়েছে, মডারেটরদের জন্যও সেরকম নীতিমালার আবশ্যকীয়তা রয়েছে। সেটা ব্লগাররা অনুধাবন করলেও মডারেটরবৃন্দ মনে হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছেন না, কিংবা আরো কঠিন করে বললে বুঝতে চাইছেন না। যদি সেরকম একটি নীতিমালা থাকত তাহলে ব্লগার তনুজার মডারেশনের স্বচ্ছতা কি প্রয়োজন? পোস্টটিতে কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নোটিশবোর্ডের ৫৩ নম্বর মন্তব্যের জন্য তাকে জবাবদিহিতা করতে হতো। ঐ পোস্টটিতে ইতিমধ্যেই অনেক কমেন্ট এসে গেছে আর সহব্লগারের অনুরোধও আছে, তাই আমার প্রতিক্রিয়া আলাদা পোস্ট আকারে দিলাম।
১৯ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ১:১০
নোটিশবোর্ড বলেছেন: দূর্ভাগ্যক্রমে আলোচ্য ব্লগার তাঁর সাথে যোগাযোগ করার কোন মাধ্যম ইচ্ছাকৃতভাবেই রাখেননি। তাঁর ফোন নম্বর এবং ইমেইল এড্রেস দুটোই ইনভেলিড। দুই মাস পূর্বে রেজিস্টার করা একাউন্টে ইমেইল এড্রেস দেয়া হয়েছিল মেইলিনেটর নামক সাইটের এড্রেসে থেকে, যে সাইটটি ট্রোলাররা ব্যবহার করে কোন সাইটে স্বল্প সময়ে একাধিক ইইজারনেম রেজিস্টার করে কোন সাইটে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য। এবং গত দুইদিনে ভার্চুয়াল নিকটির ব্যবহারকারী আলোচ্য নিকসহ অন্য কিছু নিক ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। এ ব্যপারে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
এবার আপনার কাছে আমাদের প্রশ্ন, আপনি কিভাবে জানলেন এই নিকটি ব্যান? যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এ ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাঁর পরিচয় আশা করি সবার কাছে প্রকাশ করবেন।
ধন্যবাদ।
নোটিসবোর্ড সামহয়্যারের মূল মুখপাত্র বলেই জানি। তার ভাষাতেই যদি বলি তাহলে তাকেও 'ভার্চুয়াল নিক' বলা উচিৎ - যদিও তার পেছনে রক্ত-মাংশের এক বা একাধিক মানুষ আছেন। খোদ নোটিসবোর্ডই যদি এরকম অনাকাঙ্খিত মন্তব্য করে তাহলে আসলেই চিন্তার কথা। কেন? বলছিঃ
১) 'সোজা কথা' নামক ব্লগার নাকি রেজিষ্ট্রশনের সময় ইচ্ছাকৃতভাবেই তার সঠিক ইমেইল বা ফোন নম্বর রাখেননি।
নোটিসবোর্ডের এই কথাটি অসত্য, অন্তত আংশিকভাবে। ফোন নম্বর যেহেতু ভেরিফাই করার ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষ করেননি সেহেতু এটি সঠিক না বেঠিক সে কথা বলা অবান্তর। তাছাড়া, এ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোন ব্লগারকে ব্যান করার আগে বা অন্য কোন সময় তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেছে এমন নজির আমার জানা মতে নেই! পাঠক, আপনারা কি এরকম কোন ঘটনার ব্যাপারে অবগত আছেন?
ইমেইলের ব্যাপারে নোটিসবোর্ডের এধরনের বক্তব্য কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ যে কোন ব্লাগরই রেজিস্ট্রশনের পর এ্যাক্টিভেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান, যার অংশ হিসেবে এ্যাকটিভেশনের লিঙ্কটি ব্লগারের ইমেইল ঠিকানায় পাঠানো হয় এবং সদ্য নিবন্ধিত ব্লগার তাতে ক্লিক করে তার রেজিস্ট্রশন প্রকৃয়া সম্পন্ন করেন। অর্থাৎ ব্লগার 'সোজা কথা'র ইমেইল ঠিকানাটি 'ইনভ্যালিড' একথা বলা নিতান্তই চাপিয়ে দেয়া একটি মিথ্যা কথা।
২) একজন ব্লগারের ব্যবহৃত ইমেইল ঠিকানাটিকে 'ট্রোলারদের' ব্যবহৃত ডোমাইনের ঠিকানা বলে দাবি করাটা আমি মনে করি অসভ্যতার পর্যায়ে পড়ে। সামহয়্যারের কর্তৃপক্ষকে এই ধরণের জাজমেন্ট দেবার অধিকার কে দিল? যদি বিতর্কের খাতিরে এই অসভ্যতা উপেক্ষাও করি, তাহলে প্রশ্ন আসে, 'ট্রোলারদের' ব্যবহৃত ডোমেইনের ঠিকানা আপনারা কেন রেজিষ্ট্র্বশনের সময় ঠেকাচ্ছেন না? ব্লগার 'সোজা কথা'কে ব্লগার না বলে 'ভার্চুয়াল নিকটির ব্যবহারকারী' বলার উদ্দেশ্যটি কী সেটা পরিস্কার করুন। এবং এটি যে সূক্ষ্ণভাবে তাকে হেয় করার চেষ্টামাত্র - তা বুঝতে আশা করি কারো অসুবিধে হয়নি। ইন্টার্নেটের এই ভার্চুয়াল জগতে জনাব/জনাবা নোটিসবোর্ড আপনিসহ সকলেই ভার্চুয়াল, সেটা বিশেষভাবে উল্লেখ করার আদৌ কি কোন প্রয়োজন আছে?
৩) আলোচ্য ব্লগার আরো এক বা একাধিক নিকের সাহায্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে - এ অভিযোগটি কি আপনারা কোনভাবেই প্রমাণ করতে পারবেন? প্রথমত, একাধিক নামে ব্লগিং করা একান্তভাবেই ব্লগারের ব্যাক্তিগত অভিরুচি। এই সীমানায় হস্তক্ষেপ করার কোনরকম অধিকারই আপনাদের নেই। সুখের কথা আপনাদের নীতিমালায়ও এ ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়ার কথাই আছে। সুতরাং একাধিক নিকে কোন নির্দিষ্ট প্রসঙ্গে যদি একজন ব্লগার ব্লগিং করে সেটাতে আপত্তির কোন সুযোগই নেই। যদিও টেকনিক্যালি প্রতিটি নিকই স্বতন্ত্র, কোন প্রযুক্তিতেই আপনাদের পক্ষে প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে অমুক নিকটি অমুকের; যদি না কোন ব্লগার ইচ্ছে করে জানায়। আপনার 'সুস্পষ্ট প্রমাণের' দাবীটি মস্ত একটি ফালতু কথা। তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগটি কোথায় গিয়ে ঠেকল?
৪) শেষে এসে তনুজাকেই জিজ্ঞেস করে বসলেন তিনি কি করে জানলেন যে ঐ ব্লগার ব্যানড হয়েছেন! কেই ব্যানড হলে সেটা কি অন্য কেউ জানতে পারেন না? আপনার কি ধারনা পোস্ট আর মন্তব্য ছাড়া ব্লগীয় মেইটদের যোগাযোগের আর কোন মাধ্যম নেই? আপনারাই তো ব্লগারদের সোশালাইজেশনের জন্য আয়োজিত ব্লগীয় আড্ডা, পিকনিক ইত্যাদি ইত্যাদির সাথে ক্লোজলি যুক্ত থাকেন বলে শুনি! নাকি আপনি আসলে ঘুরিয়ে বলতে চেয়েছিলেন যে তনুজাও ঐ গোষ্ঠিরই সদস্য? যদি তা-ই বুঝিয়ে থাকেন তাহলে বলব, আপনি আরেকটি অন্যায় করেছেন।
অতপরঃ যা বললেন সেটা পড়ে খানিকটা চমকে উঠলাম - যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, আপনার ভাষ্যে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তাঁর পরিচয় সবার কাছে প্রকাশ করার অনুরোধ করলেন! তার মানে আপনি আসলে বোঝাতেই চেয়েছিলেন যে তনুজাও তথাকথিত ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট! আরো ভয়ঙ্কর কথা হচ্ছে সেই সব (আপাত) কল্পিত ব্যাক্তি/গোষ্ঠীর পরিচয় সবার সামনে প্রকাশ করতে বললেন!! ব্লগকর্তৃপক্ষের মুখপাত্র হয়ে, ব্লগারদের আসল পরিচয় জানতে চাওয়াটি কি আপনার জব ডেস্ক্রিপশনে আছে? এখন আমি যদি জিজ্ঞেস করি আপনার পরিচয় কি? নাম কি? বাপের নাম কি? জন্মতারিখ কত? লিঙ্গ কি? বৈবাহিক অবস্থা কি? তাহলে কি আমাকে ব্যান করা হবে? সেক্ষেত্রে এ পোস্টের শুরুর দিকটা আরেকবার পড়তে অনুরোধ করছি। গণতন্ত্রের চর্চা করতে কিছু প্রি-রিকুইসিটের ফুলফিলমেন্ট প্রয়োজন।
দেখে শুনে মনে হচ্ছে উক্ত ব্লগার আপনার রোষের শিকার হয়েছেন মাত্র। ভণিতা করার প্রয়োজন কি! আপনাদের স্পর্ধা দেখে এটুকু বেশ বুঝতে পারি যে আপনাদের পায়ের তলায় মাটি এসে গেছে বলে আপনারা জ্ঞান করেন। কিন্তু আসলেই কি মাটি এসে গেছে? ব্লগার ভিন্ন আপনাদের যে ফুটো পয়সাও দাম নেই সেটাও কি বোঝেন না?
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০০৯ সকাল ১১:২৩