সাব্বির মেধাবী ছাত্র ছিল। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে সে। কিন্তু শিবিরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং সেন্টারে কোচিং করতে গিয়ে হঠাৎ করেই তার আচার আচরণ পাল্টে যায়। কট্টর ইসলামপন্থি হয়ে যায় সে। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের বলতে থাকে, কারোরই ধর্মকর্ম শুদ্ধ হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের কর্মকাণ্ডকে অনৈসলামিক বলেও গালিগালাজ করে সে। এরপর তাবলীগে যাওয়ার কথা বলে উধাও হয়ে যায় সে।
এই সাব্বির গত মঙ্গলবার ভোরে রাজধানীর কল্যাণপুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৯ ‘জঙ্গি’র একজন। সে চট্টগ্রাম আনোয়ারার আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হকের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সাব্বির গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে সরকারি মুসলিম হাই স্কুল থেকে ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। এরপর চকবাজারে জামায়াত-শিবির পরিচালিত একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়। হঠাৎ করেই তার কথাবার্তা, চালচলনে পরিবর্তন দেখা দেয়। পরে সে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) ইকনোমিক অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হয়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ক্যাম্পাসের আবাসিক হোস্টেলে থাকত সাব্বির।
হঠাৎ করেই সাব্বির বলতে থাকে, তার ছাড়া পরিবার স্বজন কারোরই ধর্মকর্ম শুদ্ধ নয়। অনৈতিক, অনৈসলামিক বলেও কাছের লোকদের গালি দিতো।
জানা যায়, তাবলীগে যাওয়ার কথা বলে মাঝে মাঝে সপ্তাহ-দশদিনের জন্য উধাও হয়ে যেতো। বছরখানেক আগে একবার তিন মাসের জন্য নিরুদ্দেশ থাকার পর বাসায় ফিরে।
সর্বশেষ চার মাস আগে রাউজানে এক বিয়েতে যাওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে পাঁচশ টাকা নিয়ে বের হয়। সেই থেকে কণিক নিখোঁজ। দীর্ঘদিন কোনো খোঁজ না থাকায় সন্তানের আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছিলেন বাবা-মা। সন্তান নিজে বিপথগামী হয়েছেন বুঝতে পেরে নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরি (ডিবি) করারও প্রয়োজন মনে করেননি তারা।
২০০৮ সালে ‘আমাগো সাব্বির দা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি খোলে। গত দু’বছর ধরে সেটি ইনঅ্যাকটিভ করে রেখেছে।
সম্প্রতি ‘আইডি নাম্বার দুই’ নামে ফেসবুকের একটি ভুয়া আইডি থেকে তার কিছু তৎপরতা স্বজনদের কাছে ধরা পড়ে। ওই আইডি থেকে সে জানায়, বিয়ে করেছেন। কিন্তু কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই বলেনি।
এই আইডিটি ছিল কোরআন-হাদিসের আলোকে নানা স্ট্যাটাসে ভরা। সর্বশেষ এটির ব্যবহার হয়েছিল ২০১৪ সালে। এই আইডিতে অস্ত্র তাক করা এক জঙ্গির ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩