অনেকদিন ধরে হরতাল অবরোধ চলছে, ক্যাম্পাস এ আড্ডা চলে, অফিস চলে, চলে অনেক যুবক-যুবতির প্রেম, শুধু ক্লাস আর পরীক্ষা চলে না, সেদিন রবিবার ছিল। সকাল গড়িয়ে দুপুর ছুঁই ছুঁই করছে। উদাস দৃষ্টিতে পায়চারী করছে কেউ কেউ। তাঁর মধ্যে অন্যমনস্ক হয়ে যে ছেলেটা পায়চারী করছে ওর নাম তামিম, পিঠে সেইন্ট ঈগল মার্কা কাঁধ ব্যাগ, গলায় ঝুলছে চাদর, গায়ে একটা টি-শার্ট, পড়নে আধ ময়লা জিনস। কেউ তেমনিভাবে ছেলেটাকে চিনে না। মানে এতটা পরিচিতি নেই ক্যাম্পাস এ। অনার্স শেষ বর্ষে পরে কিন্তু কতিপয় বন্ধু বিনে বান্ধবী নেই। কোন এক কারণে সে একাকী চলতে পছন্দ করে। তাঁর প্রিয় জায়গা নিরিবিলি, সেটা পাওয়া খুব কষ্টের ব্যাপার। অর্জুন তলা পার হয়ে যাচ্ছিল মাশুক মামার টং এর দিকে। ই-বিল্ডিং এর সামনে একজন ডেকে বসল। এক্সকিউস মি!
তামিম যতটা যানে তাকে ডাকার মত এমন কেউ নেই, অন্য কাউকে হয়ত ভেবে চলে যাচ্ছিল। এই যে চাদর ওয়ালা ভাই, শুনছেন? চাদর তো অনেকেই পরে আছে, সুতরাং অন্য কেউ হবে হয়ত। হাটার গতি একটু মন্থর করে সামনের দিকে যাচ্ছিল। এবার সামনে এসে দাঁড়াল, এই যে আপনাকে ডাকছি, শুনছেন না কেন?
তামিমঃ আমার একটা নাম আছে,
জৈনেক তরুণীঃ তা কি নাম?
তামিমঃ তামিম আহমেদ, আপনি ?
জৈনেক তরুণীঃ আমি মৌশাত,
তামিমঃ কি বলবেন?
এত উদাস কেন আপনি?
উদাস বলতে কি বুঝেন?
দেখুন আমি সংজ্ঞা দিতে পারব না, কিন্তু আপনি কোন দিকে পাত্তা দেন না কেন?
আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, সেটাই করি। কিন্তু আপনার এত কিছু জানার দরকার আছে কি?
আছে, কেন সেটা জিগ্যেস না করলে খুশি হব।
কোন বিভাগে পড়েন?
ক্রাইম নিয়ে পড়ছি,
এমন বিভাগ তো শাবিপ্রবিতে নেই।
আমি কি কখনো বলছি যে এই ক্যাম্পাস এ পড়ি?
হুম বুঝলাম, পড়েন কোথায়? আর কি মনে করে আমার পিছন লাগছেন? বসে কথা বলি।
এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে পারব না, আর এখানে বসব না, চলুন কোন নিরিবিলি জায়গায় যাই।
এখানে চা পান করতে এসেছি, চা পান শেষ করি পরে দেখা যাবে কি করা জায়।
আচ্ছা তাই করুন, বরং এতক্ষণ গল্প করি আপনার সাথে। বলল মৌশাত ।
কেন এসেছেন একটু বলেন তো মাথায় গুছিয়ে নেই চা হাঁতে নিয়ে বলল তামিম।
এমনেই ঘুরতে গতকাল এই ক্যাম্পাস এ এসেছি। কালকে বিকালে আপনাকে দেখলাম, আপনার মাথার চুল, ময়লা প্যান্ট আর কাঁধে চাদর দেখে মনে হল আপনি লেখা লেখি করেন, তাই আজ সকাল থেকে ঘুরছি আপনার সাথে কথা বলার জন্য। পেয়ে গেলাম।
আপনি পড়েন কোথায় সেটা কিন্তু বলেন নি।
ওহ, নর্থ সাউথ এ। সেকেন্ড ইয়ার। আপনি?
কিছুই জানেন না দেখছি!
কিভাবে জানব? যাকেই জিগ্যেস করি সবাই বলে এমন ঝাঁকড়া চুলতো অনেকের আছে, এমনকি প্রায় সব ঝাঁকড়া চুল-ওয়ালারা চাদর ব্যবহার করে। সেই সাথে টুকটাক লেখালেখিও করে এরা । বলুন কি করে বের করব?
ওহ আচ্ছা, ভালই স্টাডি করেছেন। তা কেউ কোন নাম বলেনি?
বলেছিল, পাঁচ ছয়জন এর নাম বলল, ফেসবুকে সবার ছবি দেখালো কিন্তু আমি যাকে দেখেছি সে আপনি। যাকে ওরা কেউই চিনে না ।
আমার কথা কেউ জানেও না। আমি কোন লেখক নই, আমি স্বভাব লেখক ও নই, মৌসুমি লেখক, যখন আসে লেখি আবার চুপ। একটা কল এসেছে একটু নিলাম।
হ্যালো, বল, আসতে হবে? এখনি? স্যর এসে উপস্থিত? আচ্ছা আসছি। সরি, আমাকে এখনি একটু যেতে হবে, যদি থাকেন তো পরে কথা হবে।
না মানে, আমি...... কোন কথা বলার সুযোগ পাচ্ছিল না মৌশাত, তামিম উঠে চায়ের বিল চুকিয়ে হাটা শুরু করল, পিছন পিছন ছুটল মৌশাত, প্লিজ দশমিনিট সময় দিন। হাঁটা অবস্থায় তামিম বলে চলল, অন্যদিন, আমার অনেক বড় একটা কাজ আছে, স্যরের অফিস এ। প্লিজ রাগ করবেন না, আমি ভুলেই গেছিলাম।
নাম্বার টা দিবেন তো একটু! আমি সেই ঢাকা থেকে এসেছি,
তামিম না দাড়িয়ে বলল টুকে নিন, নাম্বার শেষ করে বলল সে তো নিজের কাজে এসেছেন। আর শুনুন ভাববেন না যে ভাব নিচ্ছি, সত্যিই আমার খুব জরুরী একটা কাজ।
ভেবে নিলাম যে আপনি দাম বাড়াচ্ছেন আপনার,
তামিম বলল সে তো নিজের কাজে এসেছেন।
আর এই যে শুনুন আমি আপনার জুনিয়র দয়া করে তুমি করে বলবেন।
আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। একটু উচ্চ স্বরেই বলল, কিন্তু শুনতে পেল কিনা সেটা তামিমই জানে। কারণ ততোক্ষণ এ সে একশত গজ দূরে চলে গেছে। মৌশাত ঠায় দাড়িয়ে আছে ই বিল্ডিং এর সামনে।
কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিল কে জানে? তামিম স্যরের রুম এ গিয়ে বসল। যার সামনে বসে তিনি অনেক নামি একজন মানুষ, কিন্তু তাঁর সাথে দেখা করার কারণ ওই লেখালেখি, কি করে গুছিয়ে লেখা যায়, মনের অব্যক্ত কথা গুলো লেখার সময় আছে কিনা? কোন বাধা ধরা নিয়ম মেনে লিখতে হয় কিনা? বাণিজ্য নিয়ে স্টাডি করে লেখার জগতে সফল হওয়া যাবে কিনা ? এরকম অনেক প্রশ্ন নিয়ে দেখা করা। এই সব প্রশ্নের সমাধান পেল প্রায় দু ঘণ্টা আলাপ আলোচনা করে। কথাগুলো শুনে তামিমের প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল, মাথা ভার হয়ে গেছে। সব গুলো কথা মাথায় রাখতে গিয়ে কথার ওজনে এখন নেশা গ্রস্ত। গিয়েই ঘুম দিল।
সকাল অবধি নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ঘুমলও। সকাল এ উঠে দেখে অনেক গুলি মিসকল। অপরিচিত নাম্বার বাদে বাকিদের নক করে নাস্তা করে আবার অবরোধ-কালীন ক্যাম্পাস এ পায়চারী করতে বের হল। একটা কল, রিসিভ করে। হুম বলুন,
মৌশাত বলছি,
হুম বলুন, ঢাকায় পৌঁছে গেছেন?
হুম গত কালকেই । কেমন আছেন? আর কাজ টা হয়েছে?
হুম হয়েছে, আছি অন্যদিন যেমন থাকি তেমন।আপনি ?
আপনি করে কেন বলছেন? আমি জুনিয়, আর হ্যাঁ ভাল আছি।
ঠিক আছে। যা বলার বলতে পার।
যা বলার তা না বললেও এখন চলবে, আচ্ছা একটা সুন্দরী মেয়ে আপনাকে কি বলতে চাচ্ছে সেটা বুঝতে পারেন না? কেমন মানুষ আপনি?
তুমি সুন্দরী? জানতাম না তো।আর শুনুন আমি মহান কোন পণ্ডিত নই যে আগে থেকেই অনুমান করে নেব।
সূক্ষ্ম অপমান করার চেষ্টা করেছেন তবু ধার করা ডায়লগ দিয়ে। আর আমি সুন্দরী কিনা আপনার আশে পাশে যারা ছিল জিগ্যেস করে দেইখেন।
তাঁর দরকার হবে না, তোমার এই কনফিডেনসিয়াল বক্তব্যেই আচ করা যায় । আর কিছু বলার আছে?
না নেই, তবে আপনাকে আমার চাই!
কেন? আমি কি কোন পণ্য বা ক্রাইমার? যে আমাকে তোমার লাগবে?
আচ্ছা গাধার মত বুঝেন কেন? সহজভাবে ভাবতে পারেন না?
না তো, পারলে বলতাম না, কেন দরকার সেটা বললেই দফারফা।
যদি দফারফা না হয়? পরে যদি শুনে আপনি না করে দেন।
আগে তো শুনি, পরের টা পরে দেখা যাবে। আর কি করে ভাবলে যে আমি কারো অধিকারে নেই?
খুব সহজ, কারো অধিকারে থাকলে এমন ভবঘুরে থাকতে দিত না,
আমি কেমন করে চলছি সেটা তো দূর থেকে বুঝবে না, সুতরাং সে যদি অনেক দূর কোন স্থানে থেকে থাকে?
হতেই পারে না। হলেও আমি ছাড় দেব না, আচ্ছা যে কাছে থেকে কেয়ার নিতে পারবে আপনি তারই হবেন?
সেটা নির্ভর করছে সময়ের উপর। এখন ছাড়ুন আড্ডা দেব।
আমার সাথে বুঝি আড্ডা জমছে না?
না। জমছে না, না দেখে আড্ডা জমে না, কারণ আমার কথার এক্সপ্রেশন পাচ্ছি না,
স্কাইপে তো দেখা যায়। তাহলে চলুন।
না এখন বন্ধুদের সময় দেয়ার কথা।
আপনি এত কাঠ খোট্টা কেন।
জানি না , বলেই তামিম ফোন রেখে দিল ।
অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুম এ গেল সারাদিন আর বের হওয়ার কোন দরকার নেই।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:২৪