somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইশান কোণে

২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফ্লাইটে বসে আছে এক ছেলে, যুবক, স্লিম, উৎসুক চেহারা, কিন্তু চোখ টলমল করছে। দুই পাশের সিটই ফাকা, জানালার পাশের সিট এ এক তরুণী এসে বসতে বসতে পরিচয় জানতে চেয়ে দেখে ছেলের চেহারা কাঁদ কাঁদ ভাব। আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে রইলো। হেডফোন লাগিয়ে ছেলেটি চুপ করে আছে। মেয়েটি অবশ্য বেশ মিশুক। উলটা পাশে আরেকজন ভদ্র মহিলা এসে বসার সময় একই প্রশ্ন। এই তোমার নাম কি ? সবাই যেহেতু দুবাই পর্যন্ত এক লগেই যাচ্ছে কিন্তু কার কোথায় গন্তব্য কেউ না জানাই স্বাভাবিক।

বিমান যখন আকাশ পথে স্বাভাবিক অবস্থায় তখন মধ্যবয়সি মহিলা আবার তাকিয়ে দেখে ছেলেটি এক মনে চোখ বন্ধ করে কি একটা গান শুন্তেছে। স্ক্রিন এ খেয়াল করে দেখলো একই গান বার বার বাজতেছে
তুমি খুব যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছো, দিতে পারোনি।
যদি বলি আমিই কি হেরেছি, তুমিও কি একটুও হারোনি।

বুঝে গেল আপনজন ধোকা দিয়েছে বা ছেড়ে চলে গেছে।
আমি রিজয়না হক, তুমি কে বাবা?
এবার চোখ খুলে ব্যর্থ হাসির চেষ্টা করতে করতে বলল আমি ঈশান ,
হকঃ কোথায় যাচ্ছো বাবা?
ঈশানঃ আমি নিউ ইয়র্ক যাচ্ছি আন্টি।
আমি নিরুপমা, আমিও যাচ্ছি আপনার প্লেসেই, যাক একজনকে সাথে পেলাম। আমার আবার গল্প না করলে ভালো লাগে না। আপনাকে বিরক্ত করা যাবে। এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে হাত বাড়িয়ে দিল। হ্যান্ডশেক করতে করতে ঈশান জিগ্যেস করল. কোন বিশ্ববিদ্যালয়?
নিরুপমাঃ আমি টুইরিস্ট , আমার আপা দুলাই ভাই ওখানে থাকে যাচ্ছি মাস কয়েক থেকেই আবার দেশে ব্যাক করব। আপনি ?
ঈশান ঃ আমি পড়তে যাচ্ছি , ইউইয়র্ক এ নেমে সপ্তাহ খানেক স্টে করে এর পর টেক্সাসে যাব, টেক্সাস টেক এ মাস্টার্স করতে যাচ্ছি।
হকঃ বাহ বেশ তো, তা এমন মন মরা কেন বাবা? পরিবারের জন্য খারাপ লাগছে তাইতো?
ঈশানঃ তা তো লাগতেছে কিন্তু বেশি খারাপ লাগছে যে জন্য বিদেশ যাচ্ছি সেই এখন আর আমার নেই আন্টি।
নিরুপমাঃ মানে কি ঈশান? সে এক লম্বা কাহিনি নিরু। ওহ সরি নিরু, আমি আবার নাম লম্বা করে বলতে পারি না। শর্ট করে বলে ফেললাম
নিরূঃ আমার নিরু নামটা অনেক পছন্দের ঈশান সাহেব। আপনি নিরু বলেই বলেন।
ঈশানঃ ধন্যবাদ।

নাস্তা এসে গেছে কে কি নিবা বললেন রিজয়না হক।
ঈশানঃ কিছু মনে না করলে আমি সত্যি একটু ড্রিঙ্ক করব, এক পেগ, আমার অভ্যেস নেই কিন্তু আমি সত্যি নিতে পারতেছি না। কাদতে কাদতেই বলল।
নিরুঃ তা আর দরকার নেই ঈশান। আমি যতক্ষন আছি আপনি ড্রিংক না করলেই বরং ভাল হবে। আমার উপর ভরশা রাখেন। আমি সব সামলে আপনার সব কষ্ট বের করে নিয়ে আসব। আমি একজন ডক্টর এবং মনোরোগ বিষয়ে ট্রেইনিং আছে। যদিও আমি আদতে একজন গাইনি কিন্তু আগ্রহের জন্যে মানসিক রোগ বিষয়ে ট্রেইনিং এবং পড়াশোনা আছে।

ঈশান আচ্ছা তাহলে নাস্তা পর্ব শেষ করে আমি একটু গান শুনব। এর পর গল্পের ঝুরি খুলে দিবনে। আপনার ধৈর্য থাকবে বলে মনে হয়না।

নাস্তা পর্ব করতে করতেই ঈশান কোথায় পড়েছে, কত দিন জব করেছে এসব জেনে নিল। ঈশান ও জেনে নিল যে নিরু আসলে ঢাকা মেডিকেল থেকে ২০১৯ সালে এমবিবিএস পাস করে এক প্রাইভেট মেডিকেল হসপিটালে জয়েন করেছে ২০২১ এ এবং এখন এফসিপিএস করছে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, বোন নিউইয়র্ক থাকে সেখানে কয়দিন ঘুরতে যাচ্ছে। বিয়ে এখন অবধি করা হয়নি।

ঈশান চোখ বন্ধ করে শুনতেছেঃ

গাছের পাতাকে ছিড়ে ফেলছো
ফুলতে আগুন জেলেছো
ফাগুনের সব কেড়ে নিয়েছ
স্মৃতিটুকু কেন তার কারোনি।
মান্না দের বিখ্যাত গান।


একটা ইয়ার বার্ড ঈশানের কান হতে নিজের কানে নিয়ে নিরু জিগ্যেস করল কিশের স্মৃতি ঈশান সাহেব?
ইশানঃ আমাকে সাহেব না বলে শুধু ঈশান বললে খুশি হব। আমি কিন্তু আপনার খুব বেশি বড় না মাত্র ৩ বছর বড়।
নিরুঃ তাহলে আমাকে তুমি বলতে হবে। আমি তুমিই বলি, ৩ বছর কোন পার্থক্য না। বন্ধু বন্ধু ভাব আসবে একটা
রিজয়না হকঃ আমাকে আবার বন্ধুত্বের বাইরে রেখো না। আমি খুব বেশি বড় না। মাত্র ৪৫ হল এবার হা হা । হেসে হেসেই বললেন যদিও আমার ছেলে এখন কানাডাতে স্নাতক করছে।

নিরূঃ কি বললে না ঈশান কিসের স্মৃতিতে আটকে আছো এখনো ?

ঈশানঃ অনেক লম্বা সেই ২০১৬ সাল থেকে শুরু করতে হবে বুঝাতে গেলে। সংক্ষিপ্ত করে বললে পরে আমাকেই বকবে তুমি নিরু;

নিরুঃ সমস্যা নেই আমার ধৈর্য আছে। ফ্লাইটে শেষ না হলে নিউইয়র্ক এ বসে বসে শুনব, তবুও তোমার যে কষ্ট এটা নিঃশেষ না হলে, ওখানে গিয়ে মাস্টার্সে পড়তে পারবে না।

সংক্ষিপ্ত করে বললে ভাল হত ঈশান আমি তো শেষ টুকু পাব না। বলল রিজয়না হক ।
নিরুঃ সমস্যা নেই আন্টি আমি কল করে সব বলব আপনাকে, আপনার মোবাইল নাম্বার টা দিন ।
ঈশান এদিক ওদিক তাকিয়ে কান থেকে ইয়ার বার্ড খুলে শুরু করল।

২০১৬ সাল প্রথম সরা সরি দেখা, এর আগেও অনেক বার দেখেছি। ছবি তে, বিয়ের অনুষ্টানে কিন্তু ভুলেও ভাবিনি এই মেয়েই আমার জীবন এত আলোড়িত করে যাবে। বলতে বলতেই ঈশানের চোখ বেয়ে অশ্রু পরছে, আন্টি টিস্যু দিতে উদ্ধত হলে নিরু ইশারায় নিষেদ করল। যাতে কথায় ছেঁদ না পরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি আমি তখন মাত্র চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টার এ । সে তার বাবা মার সাথে আমাদের সাথে ট্যুরে গেল। আমি যেতেই চাইনি আমার বন্ধু এবং রুমমেট গুলো জোর করে নিয়ে গিয়েছিল, আমি একজনের কাছ থেকে ক্যামেরা নিয়ে রওনা হলাম পথি মধ্যে ওরা উঠল, আমি আসলে বাস মিস করেছিলাম। কানেক্টীং বাস, ক্যাম্পাস থেকে ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত, আমি উঠলাম তার বাসার সামনের রোড থেকে। আমি পেছন থেকে আর সে সামনে দরজা দিয়ে একই সময়ে মুখো মুখি হলাম সেকি এক মায়াবী, মুগ্ধতা ছড়ানো মুহুর্ত, এখনো আমি চোখ বন্ধ করলে আমাদের সেই চোখাচুখি টা স্পষ্ট দেখতে পাই ।
এই কথাগুলো বলতে বলতেই ঈশানের চোখের পানি বন্ধ হয়ে চোখ মুখ খুসিতে চিকচিক করতেছে। মনে হচ্ছে সে তার সেই জীবন্ত মুহুর্ত টাতেই আছে।

নিরুঃ আচ্ছা ঈশান নাম তো বললে না।
ঈশান: আমি তো আসলে এর আগে ওর সাথে সাক্ষাৎ পাইনি। নাম শুনেছিলাম কিন্তু আমার মনে পরছিল না। আমি যখন মাঝ বরাবর সিটে বসলাম আমার সাম্নের সাড়ির দুইটা সিট ফাকা সে ওই সিটে এসে বসার জন্য আসা শুরু করতেই তার মা ডাক দিল এই ইমা, আমার পাশে এসে বসো, তোমার আব্বা ওখানে গিয়ে বসুক।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:২৭
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×