ভাইয়া এই বড় ফ্যানটা তোমার জন্য আনিয়েছি ডেকোরেটার থেকে।
কেন? উপরে তো ফ্যান আছে।
যদি কারেন্ট চলে যায়। ওটার সাথে ব্যাটারি লাগানো আছে।
ভাইয়া এই আইস বক্সটাতে বরফ দেয়া আছে, ভিতরে পানিও দিয়েছি রাতে তেষ্টা পেলে খাবে।
আরে তোরা শুরু করছিস কি! মেঝ দিয়ে গেল ফ্যান, তুই দিয়ে যাচ্ছিস ঠাণ্ডা পানি।
আজ কিন্তু কিছু বলতে পারবে না । আজ তোমার দেখে যাওয়ার দিন।
রাত একটা। বাইরে রান্নার প্রস্তুতি চলছে। বাচ্চাদের চেচামিছি, মহিলাদের ব্যস্ততা। নীলা বসে আছে একজনের অপেক্ষায়। অচেনা একজন মানুষ আজ কাছে এসে বসবে। হয়ত এসে ঘুমিয়েও যাবে। নীলা আর কিছু ভাবতে পারছে না। ঘেমে যাচ্ছে দুশ্চিন্তায়। ইস এখন যদি কেউ ফ্যানটা চালিয়ে দিয়ে যেত। কপালে, ঘাড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটায় রূপান্তরিত হচ্ছে। আজ প্রথম নিজেকে খুব একা মনে হল। তার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে কি সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলবে?
মানুষটা ঘরে ঢুকার সাথে সাথে নীলা সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল। মানুষটি কাছে এসে ঘোমটা উঠিয়ে তাকিয়ে রইল নীলার চোখের দিকে। কাজল ভরা চোখে কান্নার নোনা জল। মানুষটি ভুলে যায় বড় ফ্যানটা চালিয়ে দেয়া দরকার। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চোখের জলের মোক্ত দানার দিকে। মানুষটি বরফ কুচি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিয়ে বলল নীলা নাও পানি খাও। তুমি আমাকে যেমন দেখতে চাও তেমনি পাবে। বিশ্বাস রেখ। আমি তোমাকে হয়ত কিছুই দিতে পারব না এই ঘরটা তোমায় উপহার দিলাম। এই দেখ নতুন কিনেছি তোমার জন্য পড়ার টেবিল, তোমার বই গুলো সব সাজিয়ে রেখ। তোমার বাবা মার মত হয়ত এমন মানুষ দিতে পারব না, তোমাকে আরও দুজন বাবা মা দিলাম তাদের তুমি যত্নে রেখ। তোমার সন্তান কেমন হলে তুমি খুশি হবে আমাকে আমার বাবা মার তেমন সন্তান হতে সাহায্য করো। এসো বিশ্বাসের জায়গাটায় আমরা ভালোবাসার পারত দিয়ে শক্ত করে দেই। যেন পৃথিবীর কোন স্বার্থই আমাদের স্বর্গীয় সুখকে নষ্ট করতে না পারে।
হটাৎ করেই নীলার বুক থেকে বিশাল বড় একটা পাথর সরে গেল। নীলার খুব ইচ্ছে করছে মানুষটি যদি তার কপালের ঘাম গুলো টিস্যু দিয়ে মুছে দিত।