somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে.............. নয় পর্ব

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দু সপ্তাহ ধরে আমরা কেউ আর কার সাথে দেখা করলাম না, শুধু ফোন কথা হত। আর মাঝে মাঝে আমি ওদের এলাকায় যেতাম, বারান্দা দিয়ে দেখে আসতাম। তারপর আসলো আমাদের জীবনের সেই ভয়ঙ্কর কাল রাত!!! যা আমাদের দুজনের জীবনকে পুরু তছনছ করে দিল। বিশেষ করে রেহার জীবনের সব আশা, ভরসা, সুখ কর্পূরের মত উড়ে গেল। আমাদের কপাল খারাপ ছিল, নইলে এমন হবে কেন, হয়ত আল্লাহ আমাদের দুজনের ভালবাসার পরীক্ষা নিচ্ছিল। ওই দিনের পর থেকে আমি অনুভব করতে থাকি, আমি রেহাকে আমার জীবনের চাইতে বেশি ভালবেসে ফেলেছি। যার কাছে মনিকার আবেগ বা ভালবাসার কোন দাম নাই। ওই দিন যা ঘটেছিল, তা জীবনে আমরা কেউ কক্ষনো ভুলবো না। সকালে রেহা ফোন করে জানাল, ওর আম্মু নানুবাড়ি গেছে। আর আব্বু কাজে গেছে। আমি যেন ওদের বাসায়ে এসে ওদের পিসিটা একটু ঠিক করে দিয়ে যাই। আমি ও রাফি মিলে ওদের বাসায়ে গেলাম। মজা করছি, কথা বলছি, রেহা বলল আব্বু এশার নামাজ পড়ে তারপর বাসায়ে ফিরবে। সুতুরাং সন্ধ্যা ৮ টা পর্যন্ত আমরা থাকতে পারব। এরপর চলে যেতে হবে। তখন আমরা আরাম করে পিসি ঠিক করে মুভি দেখতে বসলাম। হটাত মাগরিবের সময় দেখি রেহার আব্বু বাসায়ে ফিরছে। সর্বনাশ!!! এখন কই যাই !!! পরে সাথেসাথে রেহা বলল খাটের তলায় ঢুকতে। আমি ও রাফি কি আর করব, সাথেসাথে খাটের তলায় তেলাপোকাদের সাথে মোলাকাত করতে গেলাম। আমার ভয়ে কলিজা বের হয়ে আসতে চাচ্ছে। এ কোন বিপদ, রেহার ভাই আমাদের একটা বালিশ দিল। আমরা খাটের তলায় বসে বসে এসএমএস করছি। আর ভাবছি, কক্ষন বের হয়ে পলটি দিব। রেহা বলল চিন্তা করোনা, আব্বু একটু পর এশার নামাজ পরতে মসজিদে যাবে, তখন তোমরা চলে যেও। ভাবলাম কি কপাল শেষ পর্যন্ত খাটের তলায় ঢুকতে হল। ওখানে নড়তেও পারিনা, চড়তেও পারিনা। তার উপর আমি লম্বা হওয়াতে কষ্ট আরও বেশি। যাইহোক এমন কপাল খারাপ, সেইদিন আঙ্কেলের শরীর খারাপ লাগছে, তাই উনি বাসায় নামাজ পরবেন। এটা শুনে মনে মনে প্রমাদ গুনতে শুরু করলাম। গুরুজনেরা একটা কথা বলছেন, পিপিলিকার ডানা গজায় মরনের তরে। ঠিক সেটাই ঘটেছিল সেইদিন। আসলেই কথাটা সত্যি। অন্তত সেইদিন বুঝলাম। নইলে এমন কপাল খারাপ হবে কেন? তারপর প্ল্যান করলাম, ১১ টার সময় আঙ্কেল যখন ঘুমুবেন, তখন আমরা বের হয়ে যাব। আপাতত খাটের তলায় আর ৩ ঘণ্টা থাকতে হবে, কিছু করার নাই। ১১ টা বাজামাত্র আমরা খাট থেকে বের হয়ে এলাম, রুমের দরজা বন্ধ করে জামা পরিস্কার করার জন্য জামা খুললাম, লাইট নিবানো ছিল, শুধু পিসি চালানো ছিল, মনিটরের আলোর কারনে ঘর পুরু অন্ধকার ছিল না। জামা পরিস্কার করে পড়লাম। এই দিক দিয়ে হটাত কি মনে করে রেহার আব্বু পানি খেতে উঠল, কি মনে করে দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে তাকাল, আমাদের দুজনের জামা খোলা অবস্থায় দেখে উনি উল্টাপাল্টা বুজে নিলেন। অবশ্যই উনি যা বুজছেন, ওই অবস্থায় আমি থাকলে, আমিও তাই ভাবতাম। এটাই স্বাভাবিক। উনি সাথেসাথে দরজা নক করলেন, রেহা বুজে ফেলল আমরা ধরা খেয়ে গেছি। তখন ও আমাদের বাঁচাবার চেষ্টা করলো, আল্লাহ!!! আমি কক্ষনো ভুলবো না, ওই সময় রেহার চেহারা। আঙ্কেল দরজা খোলার পর বললেন, ওদের বল এখান থেকে বের হয়ে যেতে। রাফি তো মহা খুশি, চামে চামে পার পেয়ে যাচ্ছে। ও সবার আগে বের হল, কিন্তু আমি পারছিলাম না, রেহাকে ছেড়ে যেতে। কারন আমি ভয় পাচ্ছিলাম, এরপর রেহার কি অবস্থা হবে ভেবে। যদিও রেহার সাথে আমার তখন ততোটা গভীর সম্পর্ক ছিল না, ইচ্ছা করলে আমিও রাফির মত সরে যেতে পারতাম। কিন্তু আমি জীবনে কখনও কারও সাথে বেইমানি করেনি। সুতুরাং ওইদিনের পরও করলাম না। আমি বের হবার আগে শুধু আমার হাত দিয়ে রেহার মাথায়ে একটু বুলিয়ে দিয়ে বললাম, চিন্তা কর না, আমি তোমার সাথে আছি। আর কিছু বলতে পারলাম না। বের হয়ে চলে আসলাম। কিন্তু খুব ইচ্ছা করছিল ওকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসি, কারন জানতাম এরপর ওর উপর কি ঝড় যাবে। তারপর রাফিকে সঙ্গে নিয়ে অতরাত্রে আর বাসায় গেলাম না। বাড্ডায় এক ফ্রেন্ড এর বাসায় গেলাম। ওই বাসায় গোসল করে রাত ২ টার সময় ফোন করে দেখি ফোন বন্ধ। আরও বেশি ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম মেরে ফেলল নাকি। পারলে আমি তখন আবার রওনা দিতাম, কিন্তু লাভ কি। তারপর নামাজ পরে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম, সারারাত নামাজ পরে আল্লার কাছে দোয়া করলাম, আল্লাহ ওর যেন কোন ক্ষতি না হয়। অজোরে কাঁদলাম আল্লাহর কাছে। পরেরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে রাফিকে নিয়ে বাসায়ে গেলাম। এরমধ্যে বেলা ১১ টার দিকে আঙ্কেল একটু বাইরে গেলেন, তখন ওরা পাশের বাসা থেকে আমাকে কল দিয়ে বলল, আপাতত চুপ হয়ে থাকতে। ওরা ভাল আছে। রেহার ফোন পুড়িয়ে ফেলছে, রেহার পিসি পুরু ভেঙ্গে ফেলছে। আর ওদের আম্মুকে খবর দিছে, দেখা যাক কি হয়। ওরা ভাল আছে শুনে মনে হল আমার কলিজাতে পানি আসলো। আমি বললাম চিন্তা না করতে, দুদিনের ভিতর তোমার জন্য একটা ফোন কিনছি, আর প্লিজ, তোমরা উল্টাপাল্টা কিছু কর না। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি। আমাদের মাঝে তখন মাত্র দেড় মাসের সম্পর্ক। অথচ আমি যেভাবে ওদের কথা দিলাম, সেটা অবিশ্বাস্য। কারন আমার চেয়ে রাফি ওদের পরিবারে অনেক বেশি আপন ছিল। রেহার আম্মু রাফিকে ভালভাবে চিনত, বিশ্বাস করত, পছন্দ করত। তাছাড়া রাফির সাথে ওদের অনেকদিনের চেনাজানা। সুতুরাং রাফির দরকার ছিল, তখন ওদের পাশাপাশি দাঁড়ানো, অন্তত আর কিছু না হোক মানবিকতার জন্য অন্তত সাহশ দিতে পারত। কিন্তু রাফি তার কিছু করলো না, সে নিজেকে সেফ করে সরে গেল, হয়ত ওটাই বুদ্ধিমানের মত কাজ ছিল। কিন্তু আমি পারলাম না। পারলাম না ওই মানুষটাকে ছেড়ে অন্য কিছু ভাবতে।

আগের গুলো এখানে

চলবে.................
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×