পড়াশোনার জন্য বাড়ির বাইরে আছি ৯ বছর ধরে।কিভাবে যে এত গুলা বছর কেটে গেল টের ও পাই নি।মাঝে মাঝে হিসেবের খাতাটি নিয়ে বসতে ইচ্ছে করে।অনেক গুলো নতুন মুখের সাথে পরিচয় আর অনেক গুলো পুরাতন মুখের দূরে সরে যাওয়া।স্কুলের সেই বন্ধুগুলো,গত কয় বছরে যেন অনেককেই হারিয়ে ফেলেছি।স্কুলের বন্ধুগুলোর মত বন্ধু বোধ হয় আর হয় না।অনেক ব্যস্ততার মাঝে হয়ত অনেকের সাথে যোগাযোগ থাকে না।কিন্তু বাড়িতে ঘুরতে আসলে যে তোদের ছাড়া ভাবাই যায় না।৬/৭ বছর আগেও কত চটপটেই না ছিলাম।এখন যেন অনেক কিছুর চাপে কেমন মেরমেরে হয়ে গেছি।আড্ডাগুলো যেন আগের মত জমে না,আগের মত প্রাণ পায় না,আগের মত দুষ্টুমি করা হয় না।আড্ডায় আসার পরও আমরা কেউ ব্যস্ত হয়ে পরি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে,কমেন্ট করতে।কেউ বা আড়াল হয়ে চলে যাই প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলতে।এভাবেই আজকাল আড্ডাগুলা যেন শ্মশানে পরিণত হয়।এই কয় বছরে ঘরের মানুষ গুলো থেকেও যেন অনেক দূরে সরে গেছি।এই জিনিসটাই আমাকে সবচেয়ে বেশী ভাবায়।বাড়িতে আসলে বাবা মায়ের ব্যস্ত হয়ে পড়া ছেলে কি খাবে,কোথায় ঘুমুবে কেন জানি তখন নিজেকে অতিথি বলে মনে হয়।মায়ের সাথেও যেন আগের সেই সাবলীল স্বাভাবিক সম্পর্কটি নেই।মায়ের পাশে শুয়ে থাকতে আজ যেন কোথায় বাধা।অথচ এই মার পাশেই একসময় শুয়ে থাকা ছাড়া কিছুই চিন্তা করতে পারতাম না।অনেক আনন্দে মাকে জড়িয়ে ধরতাম,অনেক কষ্টেও মাকেই জড়িয়ে ধরে কাদতাম।অথচ আজ মাকে জড়িয়ে ধরতে কোথায় যেন বাধা।মাকে চাদর মুড়ি দিয়ে বসে থাকতে দেখলে আজ কেন জানি চাদর টেনে নিয়ে মার পাশে বসে থাকতে পারি না।মাকে ভাত খেতে দেখে কেন জানি বলতে পারি না মা আমার মুখে ভাত তুলে দাও।সারাদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মাকে বলতে পারি না।মা অসুস্থ হয়ে পরে থাকলে মায়ের কপালে হাত বুলিয়ে বলতে পারি না মা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।আজ কোন ভূল করলে মা আগের মত বকাঝকা করে না।কোন কিছু কেনার জন্য মায়ের কাছে বায়না ধরা হয় না।মাকে চিমটি দিয়ে দৌড়ে পালানো আর মায়ের তরকারির হাতা নিয়ে আমাকে ধাওয়া করা,এগুলা এখন আর হয়ে উঠে না।বড় বোনটির সাথে এখন আর মারামারি করা হয় না।স্কুল কামাই করার জন্য এবং অসময়ে খেলতে যাওয়ার কারণে বাবার কাছে বকা খাওয়া হয় না।জোড়ে জোড়ে না পড়লে বাবার জোড়ে জোড়ে পড় কথাটা শোনা হয় না।বাবার হাত ধরে বৈশাখী মেলায় যাওয়া হয় না।পরীক্ষার আগে বড় ভাইয়ের লম্বা চিঠিগুলা পাওয়া হয় না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেন সবার সাথে দুরত্বটুকু ও বেড়ে যাচ্ছে।হারিয়ে যাচ্ছে অসাধারণ সময়গুলো।হারাচ্ছি কাছের মানুষদের আদর।হয়ে যাচ্ছি যন্ত্রমানব।একসময় বড় হওয়ার জন্য পাগল ছিলাম।আর এখন মা বাবা ভাই বোনের সেই ছোট্টটি হওয়ার জন্য মনটা কাদে। বড় হচ্ছি কিন্তু এমনটাই কি চেয়েছিলাম???
অনেক আনন্দে মাকে জড়িয়ে ধরতাম,অনেক কষ্টেও মাকেই জড়িয়ে ধরে কাদতাম।অথচ আজ মাকে জড়িয়ে ধরতে কোথায় যেন বাধা।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা
সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১
নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়
সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।
হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই
সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন