somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অনুপম হাসান
শৈশব আর কৈশোর কেটেছে রংপুরে; আইএ পাসের পর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল. ও পিএইচডি. ডিগ্রি লাভ। বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিযুক্ত আছি।

গল্প

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পকারের সাক্ষাৎকার প্রকল্প

তার গল্প, গল্পের রচনাকৌশল অথবা প্রণালী, ভাষা-শব্দ, রূপক-প্রতীক-চিত্রকল্প, বিষয়বস্তু নির্বাচন থেকে শুরু করে সবকিছুই আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়, আমরা বিস্মিত হই। তার গল্পের প্রতিভা নিয়ে আমরা পরস্পর আলোচনা করি, একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করি, উত্তর খুঁজি। কেউ কেউ ভাবি-- তিনি কিভাবে এত সুন্দর, এত চমৎকার ঝকঝকে গল্প লিখতে পারেন! বিস্ময়ের ঘোর যায়, তাঁর ভাষার কৌশলে মন্ত্রমুগ্ধের মতো পাঠক হারিয়ে যায়। কী বিচিত্র বিষয় তাঁর গল্পের; বিষয়ের অভাব নেই। যেখানে হাত দেন, সেখানেই গল্প। ডানে-বামে সবখানেই শুধু গল্প ঘুরে বেড়ায় তার। তিনি হাঁটতে হাঁটতে পথের ধারে দেখেন গল্প, বাজার করতে করতে দেখেন-- তাঁর পিছুপিছু গল্প ঘুরে বেড়াচ্ছে, অফিসে যেতে যেতে দেখেন গল্পদের আসর বসেছে। গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁর অভাব নেই। আমরা বুঝে উঠতে ব্যর্থ হই কিংবা চিন্তায় কুলায় না-- অবহেলায়, অযত্নে যে গল্পরা রস্তা-ঘাটে, বাজারে-বন্দরে পড়ে থাকে সেসব তিনি কিভাবে সংগ্রহ করেন, কখন করেন; কিভাবেই বা সেসব গল্পে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেন। একথা আগে থেকেই আমাদের জানা ছিল, অথবা আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ বিষয়ে জেনেছিল যে, তিনি সাহিত্য নিয়ে পড়ালেখা করেন নি। ডাক্তারি শাস্ত্রে পড়ালেখা করেছেন; তাঁর পেশা চিকিৎসা, তিনি মনোরোগবিদ। মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা করেন। মনোরোগবিদ অধ্যাপক ছাত্রছাত্রী পড়ান আর গল্প রচনা করেন। এর বাইরে তিনি কিছুই করেন না অথবা করলেও এর বেশি আমরা জানি না, হয়তো করতেও পারেন। গল্প রচনা করাই তাঁর প্রধান কাজ আমরা অন্তত সেকথাই জানি। একথা সবাই জানে, আমরাও অবগত ছিলাম যে, তিনি বেসরকারি ক্লিনিকেও নিয়ম করে মানসিক রুগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেন ফিসের বিনিময়ে। মানসিক রুগীদের পরামর্শ দেন, ঔষুধ-পথ্য দেন। মনোরোগবিদ হিসেবে তাঁর নামডাক আছে, শহরের সবাই তাঁকে ভালো চিকিৎসক জানেন; এজন্য তাঁর প্রাইভেট পরামর্শ কেন্দ্রে রুগীর ভিড় অনেক।



এসব বিচ্ছিন্ন ভাবনারাশি একত্রিত করলে, অথবা তাঁর গল্প বিষয়ে এসব ভাবনার যোগ করলে কিংবা সুষমভাবে বিন্যস্ত করা হলে মোটাদাগে অবস্থা এরকম দাঁড়ায়-- মনোরোগবিদ হয়েও তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি গল্প রচনা করছেন। বাংলা গল্প-শাখায় তাঁর অবস্থান বেশ মজবুত। একটা শক্ত ভিত দাঁড়িয়ে গেছে তাঁর গল্পের। তাছাড়া গল্প রচনার ক্ষেত্রে তিনি বেশ খানিকটা ব্যতিক্রম। প্রথাগত বাংলা গল্প ধারার বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি গল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। কেউ কেউ তাঁকে সিরিয়াসধর্মী ধারার গল্পকার বলেন কিংবা ব্যতিক্রমী গল্পকার তিনি-- এরকম মন্তব্য করা যায় নির্দ্বিধায়। অথবা একটি নতুন গল্পধারা রচনার কলাকৌশল উদ্ভাবনের প্রয়াসে নিয়োজিত তিনি। তাঁর এই ব্যতিক্রমী গল্প-প্রয়াস সম্বন্ধে অনেক জানেন, কেউ কেউ তাকে সিরিয়াধর্মী গল্পকার হিসেবে মান্যও করেন। গল্পকার হিসেবে একটা সমীহ তিনি অর্জন করতে করলেও একথাও জানা যে, তাঁর গল্পের পাঠক নেই। শুধু তাঁর গল্পের পাঠক নেই, কথাটা এতো সরল না কিংবা সহজভাবে বলা ঠিক না, বলা উচিতও না। অথবা বলা ভালো কথাটা এতোটা সরল না। গল্প কেন, কবিতার কী পাঠক আছে; উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তো পাঠকের সংকট। বরং বলা ভালো-- এখন তো সাহিত্যেরই পাঠক নেই। গল্পেরও নেই, কবিতারও নেই। দুএকজন সস্তাধারার উপন্যাস লিখিয়ের পাঠক আছে। সিরিয়াস কোনো বইয়েরই পাঠক নেই, তা পদ্যগদ্য যাই হোক না কেন। এখন চলছে পাঠক-সংকট কাল। আমরা এখন পাঠক-সংকটের কালে আছি! বাংলা সাহিত্য এখন পাঠকবিহীন পথ চলছে। এখন কেউ-ই পড়তে চায় না, কেউ পড়ে না-- সবাই লেখে, সবাই লেখক। যারা নিজেকে পাঠক দাবি করেন, তারা শুধু গ্রন্থনাম পাঠ করেন; অনেকেই লেখক নাম পাঠ করেই মন্তব্য করেন, নিজের জ্ঞান-গরিমা জাহির করেন, বিশিষ্ট হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। এখন নিজেকে জাহিরের কাল; অন্যের কথা শোনার চেয়ে নিজের কথা বলতে ব্যস্ত সবাই।

জনপ্রিয় ধারার লিখিয়েদের দু-চারজন পাঠক আছে। কোনো কোনো লেখক নিজেই চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঠক সংগ্রহে ব্যস্ত। তারা বলেন, মনেও করেন ‘প্রচারই প্রসার’। এই বিশ্বাস নিয়ে তারা লেখক হন, এরা লেখন পাঠকের মতো করে, পাঠকের চাহিদা মাফিক। পাঠক-সংকটের কালে বিজ্ঞাপনে বাজার দখল হয়ে গেছে। এখন যার প্রচার নেই, তার প্রসার নেই। ফলে সিদ্ধান্ত প্রায় স্থির করা সম্ভব হয়, সিরিয়াসধর্মী লেখক হওয়ার কারণেও মনোরোগবিদ গল্পকারের পাঠক সংকট প্রবল। নিতান্ত যারা তাঁর লেখার ভক্ত; নবীনদের কেউ কেউ যারা তাঁকে অনুকরণ করে গল্প বানাতে চায়, কতিপয় সম্ভাবনাময় যেসব তরুণ গল্পকার তাঁর পিছুপিছু হাঁটার কথা ভেবে নিয়েছে, তারাই একমাত্র তাঁর গল্পের, তাঁর রচনাকর্মের নিবিষ্ট পাঠক। তাঁর বিস্ময়কর গল্পের পাঠক হিসেবে আমাদের মতো কতিপয় কৌতুহলী এবং একইসাথে নাদান পাঠকও আছে। বুঝতে পারি না, বোঝানো যায় না অথবা ঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না-- বাংলা সাহিত্যের বিস্ময়কর এ গল্পকারের পাঠক সংকট কেন? এসব প্রশ্ন অন্যদের করা হয় না, করার প্রয়োজন অনুভব করি না, নিজের বিবেকের কাছে করি, এবং একদিন আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হই-- সিরিয়াসধর্মী বিস্ময়কর অভিনব গল্পধারার উদ্ভাবকর মনোরোগবিদের মুখোমুখি হওয়ার। তাঁর গল্প-ভাবনা তাঁর মুখে শোনার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা সহজ মনে হয় না। অথচ সিদ্ধান্ত নেয়া যতটা সহজ, বাস্তবায়ন করাটা ততোটা সহজ ব্যাপার না, বেশ কঠিন মনে হয়-- আমরা অনিবার্য এক ধরনের জটিলতায় বিদ্ধ হই। কেননা একথা পূর্বেই আমরা জানতাম, তিনি অন্যদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করেন না অথবা করতে চান না। নিভৃতে থাকতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন; মনোরোগীদের পরামর্শ দিয়ে যে মহার্ঘ্য সময়টুকু তিনি নিজের জন্য লাভ করেন, তা অকারণে খরচ করতে চান না। তারপরও যদি সাহিত্য অথবা সাহিত্যিক বিষয়ে দেখা-সাক্ষাতের ব্যাপার হয়, তাহলে সরাসরিই এড়িয়ে যান। ফলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও বিষয়গত কারণে আমাদের পক্ষে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়ার সম্ভাবনা আরো কমে যায়; তার সাথে সাক্ষাতের সম্ভাবনা ক্ষীণতর হওয়ায় আমরা কিছুটা উদ্বেগ অনুভব করি। পরিকল্পনা ঘুরপথে বাস্তবায়নের কথা ভাবি। মনোরোগবিদ গল্পকার নিতান্ত দায়ে না পড়লে কোনো লেখক অথবা সাংবাদিকের মুখোমুখি হন না। সময়ের বড্ড অভাবজনিত কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে যান। সময়াভাব তাঁর বেলায় নিছক ওজুহাত না, চরম বাস্তবতাও। বোধহয় এজন্যই বড় গল্পকার হয়েও তাঁর চেনা-পরিচয়ের ব্যাপ্তি বেশ ছোট। তিনি গল্প রচনা করেন, সভা-সমিতি সেমিনার করেন না; অর্থাৎ লেখকত্বের বিজ্ঞাপন নেই তাঁর। প্রচার হোক, প্রসার হোক-- এটা তিনি চান, তা হলফ করে বলা মুশকিল। মনোরোগবিদ গল্পকার ইন্টারভিউ তো পরের কথা, অন্য লেখকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতেও তাঁর আগ্রহ কম।

আমরা জানতাম অনেক দিন আগে মরে যাওয়া একটা ছোট কাগজে তিনি একবার সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। কাগজের নামটা মনে নেই, মনে রাখার কোনো দরকার ছিল না; তবে কোনো এক মাহমুদ সম্পাদনা করেছিলেন কাগজটি। সেই কাগজের সম্পাদকের সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় তিনি নিজের সম্বন্ধে, তাঁর গল্প সম্বন্ধে বিস্তর তথ্যও দিয়েছিলেন। ফলে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা একেবারে অন্তর্হিত হয় না, ভরসা থেকে যায়-- লেগে থাকলে হয়তো সাক্ষাৎকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যাবে। হয়তো চেষ্টা করলে সাক্ষাৎকার জাতীয় একটা কিছু আদায় করতে পারব মনোরোগবিদ গল্পকারের কাছ থেকে।

বিচ্ছিন্নভাবে সংগৃহীত তথ্য যুক্ত করে গল্পকার সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়লে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করি-- সম্পাদক জনৈক মাহমুদ কিভাবে তাঁকে দীর্ঘ সেই আলাপচারিতায় আবদ্ধ করেছিলেন, অথবা সাক্ষাৎকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিলেন? সম্পাদকের প্রতি বিশেষ কোনো দুর্বলতা ছিল কিনা মনোরোগবিদ গল্পকারের-- তা চুলচেরা বিশ্লেষণ করি; আমাদের সংগৃহীত সব তথ্য-উপাত্ত এমনকি ছোটছোট ঘটনাও যুক্তিসহকারে বিচার-বিশ্লেষণের চেষ্টা করি। ভাবনার সীমা, বোধের পরিসীমা, চূড়ান্ত বিন্দু স্পর্শ করলে সবকিছু ভীষণ শূন্য মনে হয়। মানুষে মানুষে পারস্পরিক সম্পর্ক থাকে। কেননা মানুষ তো সামাজিক জীব। একা একা মানুষ বাস করতে পারে না; সমাজবিহীন মানুষের অস্তিত্ব অনেকটা হাস্যকর, সমাজের বাইরে বনে-জঙ্গলে মানুষ বাস করতে পারে না। মানুষ আসলে একধরনের সংঘবদ্ধ প্রাণী। মানুষের সঙ্গ প্রয়োজন। আবার প্রয়োজনীয় এ সম্পর্ক মানুষ ভেঙে দেয়, নতুন সম্পর্ক তৈরি করে। জীব হিসেবে একে মানুষ অপরের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে, বিশ্বাস অর্জন করে; লোভের ডানা বিস্তার লাভ করলে আন্তঃমানবিক সম্পর্ক ভেঙে যায়, আবার তৈরি হয়। এসব যুক্তি আমাদেরকে প্রাণিত করে, আবার ক্ষুব্ধ করে। আমরা পরস্পরের উপর নির্ভর করি; সাহায্য করি অথবা অসাহায্যের দ্বারাও কখনো কখনো অন্যকে ব্যর্থ করে দিতে উদ্যত হই। মানব সমাজে তাই ব্যর্থতা থাকে, পাশিপাশি থাকে সফলতাও। সুসম্পর্ক আর কুসম্পর্ক মানুষের সামাজিক জীবনকে পরিবেষ্টন করে রাখে। পরিবেষ্টিত সেই সীমার মধ্যেই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

নানান ভাবনা-চিন্তা অব্যাহত থাকে মনোরোবিদ গল্পকারের নিকট পৌঁছানোর উপায় খুঁজে বের করার ব্যাপারে; কেউ কেউ রুগী সেজে হলেও তাঁর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে-- তা খুব সহজ হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে না। এ ধরনের পদ্ধতি খুব একটা সুবিধাজনক মনে হয় না; আমরা তো ভুলে যাই নি-- তিনি গল্পকার এবং মনোরোগবিদ। শুধু গল্পকার নন, তিনি মানসিক বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পা-িত্যও [পিএইচডি] অর্জন করেছেন। রুগী সেজে তাঁকে ধোকা দেয়াটা সহজ কাজ হবে না; তাঁর সাথে চালাকি করে পার পাওয়া যাবে না। ধরা পড়তে হবে কিংবা এ প্রক্রিয়াটিই খুব একটা নিরাপদ মনে হয় না। ভিন্ন উপায় ও পথের সন্ধান করা ছাড়া গত্যান্তর থাকে না। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে একথা জানা গিয়েছিল যে, তিনি অগ্রজ গল্পকার হাসান আজিজুল হকের প্রতি ভীষণ বিনয়াবনত অথবা সামাজিক মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধাশীল। সুযোগ পেলে হাসানের সঙ্গ গ্রহণে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাঁর বাসায় যান, তাঁর সাথে কথা বলেন, আজ্জা দেন-- অকারণ সময় ব্যয় করেন। অগ্রজ গল্পকার হিসেবে হয়তো তিনি হক সাহেবকে শ্রদ্ধা করেন। অথবা হাসানের শিল্পীসত্তার বিশেষ কিছু তাঁকে মুগ্ধ করে থাকতে পারে। অন্যকোনো কারণেও তাঁর হাসান-প্রীতি থাকতে পারে; কেননা মানব-মনের সবকথা অন্যের পক্ষে জানাও অসম্ভব। চিকিৎসাশাস্ত্রবিগণ তো প্রমাণই করে দিয়েছেন-- ব্যক্তিমানুষ নিজেও সারাজীবনে সবকিছু জানতে পারে না। গল্পকার হাসান একটি বিশেষ কালের প্রতিনিধি; অথবা হাসানের কর্মযজ্ঞের প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপার থাকতে পারে। এসব কথা আমাদের মস্তিষ্কে বিন্দু বিন্দু উদ্বেগ আর কিছু উৎকণ্ঠার বুদ্বুদ সৃষ্টি করে।

আমাদের প্রকল্পিত চিন্তাভাবনার বাইরেও কারণ থাকতে পারে, হয়তো সে কারণেই তিনি হক সাহেব সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহ বোধ করেন, তাঁর সঙ্গ পছন্দ করেন, আড্ডা দিতে দিতে সময় ব্যয় করেন। কথা এই যে, প্রায় অর্ধ-যুগ পূর্বে তিনি হাসান আজিজুল হককে নিয়ে একটি গল্প রচনা করেছিলেন। তখন সারা দেশে ধর্মীয় মৌলবাদীচক্র ভয়ংকর রকমের সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। মৌলবাদীগোষ্ঠ তখন দেশের অসাম্প্রদায়িক চিন্তক ও তাঁদের প্রগতিশীল আদর্শ খতমের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছিল। ধর্মীয় মৌলবাদীরা বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকেই কখনো গোপনে, কখনো প্রকাশ্যে দেশের প্রগতিশলী চিন্তাচেতনাকে আক্রমণ করেছে; সম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বিনাশ করতে চেয়েছে। প্রগতিশীল ভাবনা বিনাশ করতে হলে প্রগতির চিন্তক শিল্পী-সাহিত্যিকদের মুখ ও কলম বন্ধ করতে হবে, তাদের হত্যা করতে হবে। সমাজ ভাষাবিদ হুমায়ুন আজাদকে তারা এসব কারণেই দিবালোকে হত্যার চেষ্টা করেছল, সফল না হলেও তারা তাদের উদ্দেশ্য জনসমক্ষে নিয়ে আসতে পেরেছিল। তারা সমাজকে, রাষ্ট্রকে সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকারে ঢেকে দিতে চায়। কথাশিল্পী হাসানকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, তাঁকে মুরতাদ ঘোষণা করেছে প্রকাশ্যে। মৃত্যুর হুমকি পেয়েও হাসান ভীত হন নি, মাথা নত করেন নি সামান্যতম, ভয়কে গ্রাহ্যও করেন নি। মৌলবাদীরা মুরতাদ ঘোষণা করলেও হাসান অবিচল থেকেছেন, নিজের আদর্শ থেকে সরে আসেন নি একচুল। হক সাহেব দৈহিক জীবনের চেয়ে আদর্শকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন; ব্যক্তিজীবনের চয়েও মূল্যবান জ্ঞান করেন তাঁর সাহিত্যকর্মের। মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে হাসানের এই দৃঢ় অবস্থান দেখে সম্ভবত মনোরোগবিদ সিরিয়াসধর্মী গল্পকার প্রাণিত হয়েছিলেন ভীষণ রকম। তিনি গল্পকার হাসানের সেই দৃঢ় মানসিকতার কথা, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর একক লড়াইয়ের প্রয়াস এবং পরিণামে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বিভীষিকার চিত্র তুলে ধরেছিলেন ‘কিলিং মিশন সেভেন-এইট-সিক্স’ গল্পে।

আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘কিলিং মিশন সেভেন-এইট-সিক্স’ পাঠ করেছিল; ফরে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত সহজতর হয়েছিল যে, হাসান আজিজুল হক সম্পর্কে তাঁর প্যাশান আছে। হাসান ও তাঁর গল্প নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে তাঁর ঔৎসুক্য সুপ্রচুর। হাসান বিষয়ক কোনো আলোচনা অথবা আড্ডার আয়োজন করা গেলে সাক্ষাৎকার প্রকল্পটি সার্থক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়; আগের ঘটনা আমাদের পক্ষে ছিল। সে কারণে আমরা উপায় খুঁজতে থাকি। অল্পকালের মধ্যেই জানতে পারি, এক তরুণ শিক্ষক হাসান আজিজুল হকের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করেছেন। খোঁজ-খবর নিলে আরো তথ্য পাওয়া যায়-- তিনি গবেষণা করেন, সম্পাদনা করেন; গল্প-উপন্যাস লিখেও হাত মকশো করছেন। অধ্যাপনা পেশার কারণেই বোধহয় ভদ্রলোকের এসব রচনাকর্মে অনুরাগ; ছোটখাটো, গোলগাল এই গবেষক-শিক্ষক ভদ্রলোকের আগ্রহ আছে কথাসাহিত্যে। সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেও অল্প বয়সে বেশ খ্যাতি জুটেছে; বিজ্ঞাপনের একালে ভদ্রলোক বেশ মানানসই; দেখতে দেখতে তার নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়েছে সাহিত্যিকমহলে: জনপ্রিয় লিখিয়েদের নিয়ে নিজের পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করা ছাড়ার নিজের লেখালেখিও তাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। লাইম লাইটে আসার উপায় মন্ত্রণা জানেন তিনি। একথা তো ঠিক-- সব লেখকই কমবেশি যশপ্রার্থী; শুধু লেখক নয়, ব্যক্তিমানুষও নিজের প্রশংসা শুনতে চায়। মুখে না না বললেও প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে অন্যদের মতো তারও।

আত্ম-প্রশংসায় কার না ভালো লাগে, কে না আত্মপ্রসাদ লাভ করে? নিজের প্রশংসা শুনতে লজ্জা পেলেও পরিণামে শুনতে তা ভালোই লাগে। ফলে তার সাহিত্যচর্চা নিয়ে প্রথাগত এ ধারণার বাইরে সাহিত্যচর্চায় কতটা নিবেদিত তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিস্তর সংশয় প্রকাশ করে। তবে সাক্ষাৎকার প্রকল্পটি সুনির্দিষ্ট গন্তব্যে এবং গুছিয়ে শেষ করতে হলে তরুণ অধ্যাপক-গবেষকের সহায়তা কাজে লাগানো যেতে পারে। একমাত্র এ পথে গেলেই প্রক্রিয়াটিতে ছলনা না করেও প্রকল্পিত কাজটি সহজে শেষ হবে।

সব আয়োজন সম্পন্ন হলে আনন্দসহকারে চা পান করি। চা খেতে খেতে চোখে পড়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের আমলে প্রতিষ্ঠিত মেডিক্যাল কলেজের সামনে বিশালাকায় কড়–ই গাছের প্রসারিত ছায়ায় প্রায় পুরো এলাকা অন্ধকারে ঢেকে থাকে। রাস্তার ফুটপাতে বিকেলে হরেক-রকম অস্থায়ী দোকান-পাট বসে। চা-পানের দোকানই বেশি, ক্রেতা পথচারীরা, বিক্রিও বেশ হয়। ক্রেতার ভিড় লেগেই আছে। অবসর পায় না হালকা-পাতলা কালো মতো স্টার স্টোরের পান-বিড়ির দোকানদার মাঝ-বয়সী লোকটি। বিকেলের মিহিন রোদে দূর-দূরান্ত থেকে পাখির পথ চিনে নিরাপত্তার আশ্রয় শতবর্ষী কড়–ই গাছটায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। ওরা গলা ছেড়ে আলাপ-আলোচনায় মগ্ন করে ফেলে এলাকা। তীব্র একটা কোলাহল আমাদের কানে প্রবেশ করে, যেকোনো চিন্তায় মনোসংযোগ করা যায় না; ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালেও আমাদের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিস্মৃত হই না। রাস্তায় ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে ছুটে চলে মটর সাইকেল, কার গাড়ি, জিপ, অটোরিক্সা, সাইকেল। চোখের সামনে অবিরাম যানবাহন ছুটে চলে অথচ এসব দেখতে পাই না। মস্তিষ্কের কোষগুলো তখন অন্য ভাবনায় মগ্ন। কেউ কেউ চা শেষ করে ধবল ধুম্র শলাকায় অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে, সিগারেটে সুখ টান দিতে দিতে আমরা এগিয়ে যাই কাউন্টারের দিকে। সাক্ষাৎকারের প্রস্তাবনা প্রেরণা করা হয় মনোরোগবিদ গল্পকারের চেম্বারে; বিশেষভাবে আমরা মনোরোগ-চিকিৎসকের এ্যাসিসটেন্টকে জানানো হয় আমাদের মধ্যে আছেন হাসান আজিজুল হককে নিয়ে গবেষণা করেছেন তরুণ এক অধ্যাপক; মূলত সেই গবেষকের সঙ্গী আমরা।

তিনি সিরিয়াস ধারার গল্পকার আবার মনোরোগ চিকিৎসকও, প্রাইভেট ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করেন। রুগীদের ভিড় ঠেলে ক্লিনিকে অ্যাপয়েনমেন্টের সিরিয়ালে বসে দেখতে থাকি-- নানান বয়সের মানসিক রুগীরা আসে, চলে যায় তার পরামর্শ নিয়ে। আমাদের সাক্ষাৎ প্রস্তাবটি প্রেরিত হলে তা সাদরে গৃহীত হয় এবং অল্প সময়ের ব্যবধানে তাঁর এ্যাসিসটেন্ট সেটা জানালে আমরা বেশ স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি অথবা আনন্দও হয়। এতো কাঠখড় পুড়িয়ে, অনেক অপেক্ষার পাড় করে তরুণ হাসান-গবেষককে সাথে নিয়ে চেম্বারে উপস্থিত হয়ে বিস্মিত না হয়ে পারি না-- তাঁকে দেখে। তিনি নিতান্তই সাদাসিধে চেহারার মানুষ; নিরেট ভদ্রলোক টাইপের মানুষ; দেখে তাঁকে লেখক কিংবা গল্পকার মনে হয় না। আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাধারণ হওয়ায় অখুশি হয় না; বরং একটা স্বস্তি আসে মনে। তিনি এরকম একজন সাধারণ মানুষ অথচ তাঁকে নিয়ে এতোদিন এতো পরিকল্পনা করা হয়েছে; বিশ্বাস হতে চায় না! কেননা মনোরোগবিদ গল্পকারকে দেখে আমরা কেউ-ই বিস্মিত হতে পারি না। মৃদুকণ্ঠে আমাদের স্বাগত জানিয়ে এবং শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তাঁর এ্যাসিসটেন্টকে চা-বিস্কুট নিয়ে আসার তাগিদ দিয়ে আলাপচারিতায় ঢুকে পড়েন।
-আপনি হাসানকে গবেষণা করেছেন?
-হ্যাঁ, ডিগ্রিও হয়ে গেছে, তরুণ অধ্যাপক অনুচ্চ কণ্ঠে ব্যক্ত করে।
-হাসানের কাজ নিয়ে গবেষণার সময় আপনার এক্সপেরিয়েন্স কেমন? তাঁর গল্পের কলাকৌশল নিয়ে আপনি কী উদ্ধার করলেন? জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন, মনোরোগবিদ গল্পকার।
আমাদের বন্ধু তরুণ অধ্যাপক গবেষণা-প্রকল্পের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয় বর্ণনা করতে থাকলে আমরা ভেতরে ভেতরে কৌশলী হয়ে উঠি-- ব্যক্তিমানুষ অথবা গল্পকার হিসেবে তাঁর সম্পর্কে তথ্য জানার। এক-দুই করে কথা এগোয়, আলাপচারিতা জমে ওঠে; পরিবেশ বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ মনে হতে থাকে। আলোচনা জমে ওঠে। আমরা কৌশলে আমাদের বিদ্যা জাহির করি। বোঝানোর চেষ্টা করি, তাঁর লেখা গল্পের ভালো পাঠক আমরা; তিনি সহজেই এসব কৌশল ধরে ফেলেন এবং কৌশলী প্রশ্নাদির জবাবে তিনিও কৌশলে এড়িয়ে যান। ক্রমেই নির্দিষ্ট গ-ির সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে আলোচনা। বিশ্ব সাহিত্য, বাংলা সাহিত্য নিয়ে বহুরৈখিক কথাবার্তা ক্রমেই ঘন হয়ে ওঠে। তিনি অবচেতনে অথবা সচেতনেই তারুণ্যের আড্ডায় নিজেকে উজাড় করে দেন। আমরা তখন জ্ঞাত হই, ফিল্মও ভালো বোঝেন তিনি। কবিতারও ভালো সমোঝদার। একথা বেশ জোর দিয়ে তিনি জানান ‘ভালো লিখিয়ে যিনি, তিনি ভালো পাঠকও।’
যিনি লেখক অথবা লিখতে চেষ্টা করেন তাকে মগ্ন পাঠক হতে হয়; কিংবা ভালো পাঠক হওয়াটা যে জরুরি তাঁর অল্প-বিস্তর এবং পরিমিত ব্যাখ্যা উঠে আসে। তিনি পাঠক আর লেখক উভয়েরই ভাষাজ্ঞান, দক্ষতার উপর জোর দেন। তিনি লেখায় ভাষাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তাঁর নিজের লেখার ভাষা বিষয়ক জটিলতা সৃষ্টির অন্যতম কারণও এখানেই। কবিতার ইমেজ-রূপক-প্রতীক-উপমা ইত্যাদি গল্পের ভাষায় তিনি ইন্টারপ্রেট করেন, কখনো কখনো তা সরাসরিই রিপ্লেস করার চেষ্টাও যে করেন, সেকথা অকপটে স্বীকার করেন।

সব লেখকই নিজের লেখা নিয়ে উঁচু ধারণা পোষণ করেন; নিজের লেখার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অহংকার অথবা গর্ব করে না এমন লেখক পাওয়া মুশকিল। লেখক মাত্রই মনে করেন, তার নিজের লেখাটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রচনা। সিরিয়াসধর্মী গল্পকার ও মনোচিকিৎস অবশ্য তাঁর সম্বন্ধে এ জাতীয় বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন প্রায় দু’ঘণ্টার আড্ডায়, আলাপচারিতায়। তিন দশক ধরে গল্প লিখছেন, অথচ নিজের সম্বন্ধে তাঁর বক্তব্য খুব সাধারণ এবং সংশয়াত্মক। আদৌ কিছু হচ্ছে কিনা তা নিয়ে এখনো সংশয় যায় নি তাঁর। তিনি সংশয় প্রকাশ করলে আমরা অবাক না হয়ে পারি না। একালের একজন সিরিয়াস ধারার গল্পকার হয়েও নিজের বিষয়ে এতো সাধারণ ধারণা পোষণ করাটা সত্যিই আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়, তাঁর সম্পর্কে বাড়তি শ্রদ্ধাবোধও জাগে আমাদের।

গল্পকারের চোখের পাওয়ার চশমার লেন্স ভেদ করে তাঁর চোখের দীপ্তি আমাদের উপর পতিত হলে বুঝতে পারি-- জীবন সম্বন্ধে কতটা গভীর উপলব্ধি অর্জন করলে এতোটা সিরিয়াস গল্প লেখা যায়! মনোরোগবিদ হিসেবে তিনি ব্যক্তিমানুষের বিচিত্র জীবনাভিজ্ঞানের সন্ধান পেতে পারেন-- রুগীর কাছ থেকে, এরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার সুবিধা হয় আমাদের পক্ষে। কথায় কথায় আড্ডা আরো ঘনীভূত হলে আমাদের কেউ একজন জল বিষয়ক গ্রন্থটি তাঁকে উপহার দেন। আগ্রহসহকারে তিনি সেটি গ্রহণ করেন। আমরা তো ইতোমধ্যেই জেনেছি তিনি গল্পকার যেমন, তেমন নিবিষ্ট পাঠকও বটে।

আড্ডা সংঘটিত হওয়ার অনেক দিন পর আমরা জেনেছিলাম আমাদের সঙ্গীর দেয়া জল বিষয়ক গল্পগ্রন্থটি তিনি সম্পূর্ণ পাঠ করেছিলেন। লেখকের দ্বিতীয় গল্পের বই তাকে উপহার দিলে তিনি আগের গ্রন্থের গল্প নিয়ে, লেখকের এক্সপেরিমেন্টাল ভাষা নিয়ে অনেক কথা বলেন। তখন উপলব্ধি ঘটে, সিরিয়াস পাঠক না হলে-- সিরিয়াসধর্মী রচনাকর্ম অসম্ভব।

সাক্ষাতের আরো অনেকদিন পরে আমরা বুঝেছিলাম, তিনি কেন কোনো ধরনের সাহিত্যের আসরে অথবা সাহিত্যিকদের আড্ডায় যান না, অথবা অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দেন না। সময়ের অভিজ্ঞতায় সঞ্চিত হয়েছিল-- ব্যক্তি-পর্যায়ের দলাদলি, গ্রুপবাজি অথবা স্ট্যান্টবাজি তিনি পছন্দ করেন না বলেই লিখিয়েদের আড্ডা কিংবা সাহিত্যাসরে যোগ দেন না। নিজের লেখার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য বিবিধ প্রকল্প, প্রচারণায় একালের লেখকগণ ব্যস্ত থাকেন; সেই ব্যস্ততা তাঁর নেই। তিনি নিজের বিজ্ঞাপন চান না। একাকী থাকতে চান তিনি। লেখার কর্মটি তিনি নিভৃতে করতেই ভালোবাসেন।

আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ আর আড্ডাবাজির ঠিক দুই বছর দুই সপ্তাহ পর এক বৃহস্পতিবারে তিনি গল্পকর্মের জন্য রাষ্ট্রীয় পদক লাভ করলে আমরা অনুভব করি সাক্ষাৎকার প্রকল্পটির সমাপ্তি হওয়া দরকার। প্রয়োজনীয়তা বিষয়ক সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রস্তাবনা প্রেরণ করলে-- খুব সহজেই অ্যাপয়েনমেন্ট মেলে। তবে মনোরোগবিদ গল্পকারের সাথে সাক্ষাতের পূর্বাহ্নে নিজেরা প্রস্তুতি গ্রহণ করি, পরিকল্পনা কর-- যেন সাক্ষাৎকারটি এবারে শেষ করা সম্ভব হয়।

সূত্র : ইসলাম রফিক সম্পাদিত, ঈক্ষণ, ২৮ বর্ষ : সংখ্যা ১, বগুড়া : ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:১১
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×