somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারের একজন (প্রথম অংশ) || অদ্ভুতদের গল্প

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটা একটু অন্যরকম। চুপচাপ, শান্তশিষ্ট, খানিকটা অসামাজিক। তাই বলে কি সে কাউকে ভালবাসতে পারবে না?

রিমি প্রায়ই ভাবে, আমি এমন কেন? একটু অন্যদের মত হলে কি এমন হত?

ছেলেটার নাম রফিক। সম্পর্কে রিমির কাজির। কাজিন বলতে বড় মামার ছোট ছেলে।

রফিককে সবাই ডাকে রফি ভাই বলে। সে এবার অনার্সের থার্ড ইয়ারে। তার সাবজেক্ট হল ফিজিক্স। পড়ালেখায় সে ভীষন মনোযোগী। এক কথায় তুখোড় ছাত্র।

রফিক হচ্ছে সেই টাইপের ছেলে যাদের গুণ গুনে শেষ করা যাবে না। হাজারটা গুনের মধ্যে তার হাসিটা অন্যতম। দেখে মনে হয় যেন সাত বছরের কোনো বাচ্চা ছেলে এই মাত্র দুষ্টুমি করে এসে মায়ের হাতে ধরা পড়ে হাসছে। এই হাসিটা দেখেই কোনো এক সন্ধ্যায় রিমির মধ্যে কিছু একটা ঘটে গিয়েছিল।

সেই থেকে মেয়েটি কত যে চেষ্টা করল, কিন্তু কিছুই হল না। কত ইশারা ইঙ্গিত প্রয়োগ যে সে করেছে তা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু রফিকের দিক থেকে কোনো সাড়া নেই। এখন শুধু সরাসরি বলে ফেলাটাই বাকি আছে।

আর রিমি জানে সে সেটা কখনই পারবে না।

মেয়েটি ভেবে পায় না রফিকের মত এমন স্মার্ট একটা ছেলে কেমন করে এত বোকা হয়। নাকি সে বুঝেও না বোঝার ভান করে? যদি সত্যিই এমনটা হয় তাহলে তো সেটা ভয়াবহ ব্যাপার হবে।

রিমি সবসময় চায় রফিকের মনযোগ কাড়তে। আর বেশির ভাগ সময় ব্যর্থ হয়। তাই সেদিন সন্ধ্যায় যখন রফিক তাকে নাম ধরে ডাক দিলো তার মনে হল তার চেয়ে সুখী মেয়ে হয়ত পৃথিবীতে আর একটিও নেই।

- এই রিমি একা একা কি করছ?
- কিছু না রফি ভাই।
- মানুষের দুইটা হাত কি কিছু না করে বসা থাকার জন্য দেয়া হয়েছে?
- না, মানে মাথাটা কেমন যেন করছে।
- হুমম, একা এভাবে মরার মত পড়ে থাকলে মাথা কেমন যেন করবেই। এদিকে আসো। সোয়েব আর আরিফকে নিয়ে আমরা মজার একটা জিনিস করব।
- না থাক।
- না থাক বলে রেহাই পাবে না। আসো, তাড়াতাড়ি আসো।
- না, আমার ভাল লাগছে না।
- এই আমি আসতে বলেছি না? তোমাকে আসতেই হবে।

রিমি বাধ্য হয়ে উঠে পড়ল। রফিকের পেছন পেছন ড্রয়িং রুমে চলে এল। রিমিরা দুই বোন। বছরের এই সময়টায় তারা দুইজন নানাবাসায় চলে আসে। ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখল তার ছোট বোন সারা টি টেবিলের ওপর কাঠের এক বোর্ডে কি সব আঁকিবুঁকি করছে। পাশে ছোট মামার দুই ছেলে আবির আর সোয়েব বসে আছে।

রিমি সারাকে দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, এটা কি?
সারার হয়ে দুই ভাই একসাথে জবাব দিল, ওয়াইজা বোর্ড।
সে আবার প্রশ্ন করল, কি বোর্ড?
এবার রফিক উত্তর দিল, সহজ ভাষায় ভূত ডাকার বোর্ড।
রিমি বলল, এটা দিয়ে কি হবে।
রফিক হাসতে হাসতে বলল, ভূত ডাকা হবে।
রিমি সারার দিকে তাকিয়ে বলল, এটা নিশ্চয়ই তোর আরেকটা আইডিয়া।
সারা বলল, না আপু। এই আইডিয়া ভাইয়ার মাথা থেকে বের হয়েছে।
রিমি অবাক হয়ে রফিকের দিকে তাকাল। রফিক কিছু না বলে শুধু মিটি মিটি হাসল।

ঠিক রাত বারোটায় আবিরের বেডরুমে ওয়াইজা বোর্ডকে ঘিরে বসল সবাই। রফিককের ভাবসাব দেখে মনে হল সে সেচ্ছায় ভূত ডাকার কার্যক্রমের লিডার হয়েছে। তার এক পাশে সারা আরেকপাশে রিমি। রিমি পাশে আবির আর সোয়েব। রুমের বাতি অনেক আগেই নিভিয়ে দেয়া হয়েছে। আলোর একমাত্র উৎস হল ওয়াইজা বোর্ডের এক কোনায় থাকা মোমবাতি। বোর্ডটাকে রুমের মেঝেতে রাখা হয়েছে।

রফিক নিজ গলায় গম্ভীর এক ভাব এনে বলল, সবাইকে আগেই বলে রাখি আগামী কয়েক ঘন্টায় যা তা হয়ে যেতে পারে। এমনকি আমাদের মাঝে কেউ আহতও হতে পারে। আমি বা এখানকার কেউই এর জন্য দায়ী থাকব না। আর প্লানচেট শুরু হওয়ার পর কেউ এই রুম থেকে বের হতে পারবে না।
সোয়েব, দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, জানাল, আমার মনে হয় একটু বাথরুমে যেতে হতে পারে। এখন অবস্থা ভালই কিন্তু ঘন্টাখানিক পর মনে হয় আর ধরে রাখতে পারব না।
রফিক বাদে উপস্থিত সবাই হি হি করে হেসে ফেলল। রফিক আগের মতই গম্ভীর গলায় বলল, তুই আজ আর বাথরুমে যেতে পারবি না। বাথরুমে যাওয়া মানেই অপবিত্র হওয়া। আত্নারা অপবিত্রতা পছন্দ করে না।
সোয়েবের মুখ দেখে মনে হল না রফিকের কথা শুনে সে খুশি হয়েছে।

রফিকের কথা মত সবাই একসাথে ডান হাতের তর্জনী ওয়াইজা বোর্ডের মাঝে রাখল। বোর্ডের এক পাশে ইংরেজিতে কিছু কথা লেখা হয়েছে। যেমন, Yes, No, Fine, Ok, Good ইত্যাদি ইত্যাদি। হাতের লেখাটা সারার।
রফিক আবার ভাষণ সুরে বলল, ইংরেজি শব্দগুলো দ্বারাই আত্না আমাদের সাথে মনের ভাব প্রকাশ করবে। আত্না যে জবাবটা দিতে চাইবে সেই শব্দটার দিকে আমাদের সবার আঙ্গুল একসাথে আকৃষ্ট হবে।
আবির বলল, আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু যদি মি আত্নার জবাব আরো বড় কিছু হয় তাহলে কি হবে।
রফিক এবার মৃদু ধমক দিল, তোরা দুই ভাই কিন্তু খুব জ্বালাচ্ছিস। চুপচাপ বসে থাক। কিভাবে জবাব দিবে তা নিয়ে ভাবার দায়িত্ব তোকে কেউ দেয় নি।

রফিক বলল, এবার সবাই চোখ বন্ধ করে বলো প্লিজ কাম, প্লিজ কাম টু আস আয়োর প্রাইড আইস্টাইন।
সারা বিরক্ত সুরে বলল, না না না। আইনস্টাইনের আত্নাকে ডেকে কি করবে তুমি? আপেক্ষিক তত্ত্ব শিখবে? তার চেয়ে বরং চলো সিডনী শেলডনের আত্নাকে ডাকি। সে আমার প্রিয় লেখক।
রফিক বলল, সিডনি সেলডনের আত্নাকে ডেকে কি করবি বল তো। উপন্যাস লেখাবি?
রিমি বিরক্ত হয়ে বলল, আচ্ছা এখানে কি সত্যি সত্যি আত্না আসবে নাকি যে এত তর্ক করতে হবে?
রফিক আতংকের সুরে বলল, এখানে অবিশ্বাসীদের কোনো স্থান নেই। রিমি তুমি কি আত্নায় বিশ্বাস করো না?
রিমি বলল, না।
রফিক হালকা সুরে বলল, যাও তাহলে তুমি দুধ ভাত।

অবশেষ ঠিক করা হল আইনস্টাইনের আত্নাকেই ডাকা হবে। সবাই এক সাথে রফিকের শিখিয়ে দেয়া বুলি আউড়াতে আউড়াতে বোর্ডের মাঝে তর্জনী রাখল। গভীর অন্ধকারের মধ্যে মোমবাতির আলোর মাঝে তাদের সম্মিলিত কন্ঠ কেমন যেন অতিপ্রাকৃতিক শোনাল।

প্রথম পাঁচ মিনিট কিছুই হল না। কিন্তু তারপর হঠাৎ করে মোমবাতি নিভে গেল। সাথে সাথেই ছাদে কি যেন একটা ধুপ করে আছড়ে পড়ল।


» অন্ধকারের একজন (দ্বিতীয় অংশ)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:২৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×