somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধকারের একজন (দ্বিতীয় অংশ) || অদ্ভুতদের গল্প

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

«অন্ধকারের একজন (প্রথম অংশ)

সবাই চুপ হয়ে গেল। সোয়েব ভীতু গলায় বলল, মনে হয় এসে গেছে।

সারা রফিকের কানের কাছে ফিসফিস করে কি যেন বলল। রফিক হেসে উঠল। রিমি ভেবে পেল না এত কাছে বসে থেকেও কেন সে সারার কথাবার্তা কিছু বুঝতে পারছে না। রফিক এবার ফিসফিস করে কি যেন বলায় দুইজন আবার হেসে উঠল।

তারা দুইজন এমন ফিসফাস করে কি বলছে? রিমি বিরক্ত হল। সারা এবার ফার্স্ট ইয়ারে উঠেছে। কলেজে উঠে মনে হয় তার পাখা গজিয়েছে। রফিকের সাথে এত খাতির কি করে হল কে জানে। রিমি মনে মনে ঠিক করল বাড়ি ফিরে সারাকে একটু টাইট দিবে।

রফিক আর সারা এখনও ফিসফাস করেই চলেছে। রিমি স্পষ্ট বুঝতে পারছে দুইজনের ওপরই তার রাগ বাড়ছে। অন্যদিকে দুই ভাই বিড় বিড় করে আল্লা আল্লা বলে চলেছে। রিমি তাদের ধমক দিল, এই চুপ।
সাথে সাথেই দুই জন চুপ মেরে গেল।

রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়াল। অন্ধকার হওয়ায় দুইপাশের কেউই সেটা টের পেল না। সে ধীরে ধীরে অনুমানের ওপর ভরসা করে দরজার দিকে এগোতে লাগল।

হাটতে হাটতেই হঠাৎ তার মনে হল কে যেন তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। সে সাথে সাথে পেছন ফিরল। কেউ নেই। হয়ত মনের ভুল। রফিক এখনও ফিসফাস করেই চলেছে। সে আবার হাটতে শুরু করল। কিছুক্ষনের মাঝেই দরজার সামনে চলে এল। হাতল স্পর্শ করার সাথে সাথেই তার পেছন থেকে একটি পুরুষালি কন্ঠ শুনতে পেল, ভুলেও ওই কাজ করো না।

আর সাথে সাথেই রিমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।

রিমির জ্ঞান ফিরে রাত ঠিক সাড়ে তিনটায়। চোখ খুলে সে নিজেকে কম্বলের নিচে আবিস্কার করল। মা তার মাথার কাছে বসে আছে। কাজের লোক সহ বাড়ির সবাই রুমে জড়ো হয়েছে। পায়ের কাছে রফিক, সোয়েব আর আরিফ বসে আছে। সারাকে আপাতত কোথাও দেখা যাচ্ছে না।

মা বলল, কিরে কি হয়েছিল তোর?
সোয়েব বলল, আইনস্টাইন হয়ত তার ঘাড়ে চেপেছিল।
ছোট মামি তার পুত্রকে ধমক লাগাল। সে এতক্ষণ রুমের এক কোণায় দাঁড়িয়ে ছিল।
রিমি ক্লান্ত সুরে বলল, কিছু হয় নি।
মা বলল, কিছু হয়নি তাহলে এমন চিৎকার করলি কেন?
বড় মামি জানালেন, হয়ত কিছু দেখেছে।
আরিফ অতি উৎসুকভাবে বলল, কি দেখেছে চাচি?
বড় মামি চোখ বড় বড় করে জানালেন, না না তাদের নাম এত রাতে মুখে নিতে নেই।
রিমি বিরক্ত সুরে বলল, না মামি আমি কিছু দেখি নি। শুধু একটু...
এবার রফিক জিজ্ঞেস করল, শুধু একটু কি?
রিমি বলল, কিছু না রফি ভাই।
রফিককে চিন্তিত দেখাচ্ছে। হাজার হোক এই প্লানচেটের বুদ্ধিটা তো তারই ছিল। সে হয়ত নিজেকে দোষী ভাবছে।
রিমি বলল, আমার কিছু হয়নি। তোমরা যার যার রুমে ফিরে যাও। আমার ঘুম আসছে।
মা বলল, আজ আমি তোর সাথেই ঘুমোব। সারাকে আমার রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি।
মায়ের সাথে ঘুমানো মানেই সারা রাত নাক ডাকা সহ্য করা। রিমি আতকে বলল, না।
মা বলল, যত যাই বলিস আজ আমি তোকে একা থাকতে দিব না।

সেদিন রিমি তার মায়ের সাথেই ঘুমোয়। পরের দিন সকাল এগারোটায় তার ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে দেখতে পায় বিছানার পাশে রাখা চেয়ারে ত্রিশ বত্রিশ বছরের এক যুবক বসে পত্রিকা পড়ছে। রিমি খুব ভয় পেল। তার রুমে এই অচেনা লোকটা কে?

লোকটা রিমির দিকে ফিরল। রিমির ঘুম ভেঙেছে এটা সে কোনো একভাবে টের পেয়েছে। লোকটা বলল, সুপ্রভাত।
রিমি জিজ্ঞেস করল, আপনি কে?
- আমার পরিচয় পরে দেয়া যাবে। আগে বল তোমার শরীর কেমন আছে?
রিমি অবাক হয়ে গেল। গতরাতে যে কন্ঠটা শুনে সে চিৎকার করেছিল সেই কন্ঠের মালিক এখন তার সামনে বসে আছে। সে কি করবে? আরেকবার চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া কি উচিত?
- না, তা করা উচিত হবে না।
রিমি সকালের দ্বিতীয় ধাক্কা খেল। লোকটা তার চিন্তা ভাবনা ধরতে পারছে। কিন্তু তা কি করে হয়?
- আপনি কে কি চান? বলুন নইলে আমি কিন্তু চিৎকার করব।
- আমাকে তো তুমি চিনো। মনে করার চেস্টা কর।
রিমি অবাক হয়ে লক্ষ করল লোকটাকে সত্যিই তার চেনা চেনা হচ্ছে। শুধু মনে করতে পারছে না তাকে কোথায় দেখেছিল।
- দেখুন ফাজলামি করবেন না। সাত সকালে একা একজন যুবতী মেয়ের ঘরে বসে আছেন আবার নিজের পরিচয়ও দিচ্ছেন না।
- ও তুমি বিরক্ত হচ্ছো। এটা অবশ্য আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল। আমি তাহলে উঠি।
লোকটা সাবলীল ভঙ্গিতে চলে গেল। যেন এই বাসায় সে অনেকদিন আগে থেকেই আছে। বাসার সমস্ত কিছু তার নখদর্পণে। লোকটা বের হয়ে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই মা রুমে ঢুকল। বলল, ঘুম ভেঙেছে?
- মা, ওই লোকটা কে?
- কোন লোকটা?
- আরে একটু আগে আমার রুমে বসে ছিল যে।
- কে তোর রুমে বসে ছিল? আশ্চর্য তো। কিছুক্ষন আগেও তোর রুমে আমি এসেছিলাম। কাউকে তো দেখি নি।

নাস্তা করে রিমি ছাদে চলে গেল। গিয়ে দেখল লোকটা এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে আকাশ দেখছে। রিমি চুপচাপ নিচে চলে এল। এরপর সোয়েবকে সাথে নিয়ে আবার ছাদে গেল। নেই। লোকটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

সোয়েব বলল, কাকে দেখাতে চাইলে?
রিমি উত্তর দিল, কাউকে না।
তারা ছাদ থেকে নেমে এল।

রিমি সেদিন স্পষ্ট বুঝতে পারছিল তার কিছু একটা হয়েছে। সে এমন কাউকে দেখছে যাকে অন্যকেউ দেখতে পারছে না। রিমি বোকা নয়। সে নিজেকে জিজ্ঞেস করল, আমি কি পাগল হয়ে গিয়েছি?

নানাবাড়ি থেকে রিমিরা বাসায় ফিরে আসে সপ্তাহখানিক বাদে। সেদিনের পর নানাবাড়ি লোকটাকে আর দেখা যায় নি। রিমি ভেবেছিল, যাক পরিস্থিতি ততটাও খারাপ হয় নি।

তবে বাসায় ফেরার কিছুদিন পরই লোকটার আবির্ভাব ঘটে। দিনে দুই তিনবার রিমি লোকটাকে দেখতে পায়। কখনও সোফায় বসে আছে, কখনও ছাদে দাঁড়িয়ে আছে আবার কখনও জানালার ওপাশে পাশে। রিমি খেয়াল করেছে যখন তার আশেপাশে কেউ থাকে না লোকটাকে শুধু তখনই দেখা যায়। রিমি বার বার জানতে চায়, লোকটা কাছে জিজ্ঞেস করে, সে কে? কি চায়? কিন্তু লোকটা তার জবাব দেয় না। শুধু মিটি মিটি হাসে।

রিমি একবার ভেবেছিল তার মাকে কথাটা জানাবে। তবে জানানোর পর কি হতে পারে তা ভেবে সে আর এই কাজ করার সাহস করে নি।

একদিন সন্ধ্যায় রিমি একা ছাদে চলে এল। জানে লোকটাকে ছাদেই পাওয়া যাবে। আজ সে তার প্রশ্নের উত্তর জেনেই ছাড়বে।

কে সে? কি চায়? কেন আমিই?

»অন্ধকারের একজন (শেষ অংশ)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×