somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন করে পাবো বলে

০১ লা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালকে রাতে (নিউ ইয়ারস ইভ এ) এক কলিগের বাসায় দাওয়াত ছিলো। বাসা চিনিনা, তাই আমার বাংগালী বসের জন্য বাস স্টেশনে বসে ছিলাম আধাঘন্টা। ঠান্ডায় পা জমে অবশ হয়ে গেসলো, বাসে যখন উঠেছি তখন পা এ কোনই অনুভূতি ছিলোনা... পুরা সময়টা মনে হচ্ছিলো একটা ডিপ ফ্রিজারে রাখা হয়েছে আমাকে। বাসায় ঢুকে দেখি এক দংগল লোকজন... পরিচয়ে জানা গেলো আমার পোলিশ কলিগের পোলিশ দোস্ত, তার ক্যান্টানিজ সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ডের ভাই আর ভাই এর হাউস মেট সব। ক্যান্টানিজ আর জাপানিজদের আমার আজীবনই পুতুলের মতো লাগে, মানুষ বলে বিশ্বাস হয়না। ছোটবেলায় পড়া চাইনিজ সেই সব রূপকথার গল্পের মানুষজন চোখের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে- আসলেই বিশ্বাস হয়না। যাই হোক বেশিরভাগ মেয়ে বসে রান্না-বান্না, নরওয়ের ঠান্ডা, ঘুরে বেড়ানোর কাহিনী বলছিলাম আর ছেলের একজোট হয়ে দুনিয়া উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছিলো, অবশ্য ঠিক ছেলে-মেয়ে বলে বিভাজন হয়নি গল্পের... বসার জায়গা'র উপরে ছিলো। আমার শরীরটা নেহায়েত ভালো ছিলোনা, তাই আমি ঘাপটি মেরে সোফার উপরে বসে ছিলাম, এমনিতেও আমি পার্টিতে আজীবন চুপচাপ থাকি, মানুষজনদের দেখি, কথা বলি মাঝে-সাঝে। কালকে তুলনামূলকভাবে ভালোই সরব ছিলাম। বেচারা ব্লাজেই (আমাদের গৃহকর্তা) সারাক্ষণ উৎকণ্ঠায় ছিলো ঠিকমতো অতিথি সৎকার হচ্ছে কিনা ভেবে, আমরা তাকে বার বার আশ্বস্ত করবার পরেও সে বার বার ঘুরে ঘুরে গ্লাস, বোতল, বাটি, পেয়ালা হাতে ঘুরে ঘুরে সবাইকে জিজ্ঞাসা করে বেড়াচ্ছিলো কারো কিছু লাগবে কিনা। খাবার-দাবারের কমতি ছিলোনা, বাদাম, চিপস, টেম্পুরা, ইয়োগার্ট ডিপ, সালাদ, মেক্সিকান একটা কি জানি ডিশ( রুটির ভেতরে চিজ, শসা, ক্যাপসিকাম আর মাংস দিয়ে ভাজা), ওয়াইন, বিয়ার, আর আমার মতো ভেরেন্ডা ভাজাওয়ালাদের জন্যে লেমোনেড আর ফ্রুটস জুস। আর সবার শেষে ব্লাজেই'র অনুরোধে আমার বানানো একটা কেক। খেয়ে-দেয়ে বারোটা বাজার আগ দিয়ে সবাই মিলে বাজি পোড়ানো দেখতে গোলাম.. সেকি রোশনাই! ওইখানে অনেকেই পরিবার, নাইলে ঘনিষ্ঠ বন্ধু, নাইলে প্রিয় কারো সাথে দাঁড়িয়ে হই-হল্লা করছিলো, আর আমি মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভবছিলাম, আমি কি ভীষণ একলা, যেই এককীত্ব আমার নিজেরই বেছে নেওয়া। লন্ডনে মৌসুম আর তাজীনের সাখে থাকলে আমার অবশ্য একলা লাগেনা মোটেও।

যাই হোক, এরপরে বাসায়ে ফেরার পালা, ব্লাজেই রাস্তা দেখিয়ে দিলো, ওর বাসা থেকে আমি যেখানে থাকি সেইটা মোটে মিনিট পনের'র হেঁটে যাবার রাস্তা। একলা হেঁটে বাসায় আসবার সময় আমি জানিনা কেন আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো অনেকদিনের পরে। আমি নতুন বছরের প্রখম ধোঁয়াশা চাঁদের আলোয় ধূসর সাদা বরফ জমা রাস্তায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরলাম, অথচ কাঁদবার কোন কারণ ছিলোনা... কিন্তু ওই মুহূর্তে কান্নাটাকে ভীষণ স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো। বাসায় ফিরে সিংকে ডোবানো বাসন-কোসন ধুয়ে ডুভেট এর নিচে ঢুকে হাউমাউ করে আরো কিছুক্ষণ কাঁদলাম। অথচ এমন কিছু ঘটেনি, যাতে করে আমার কান্না পেতে পারে, কিংবা কিছুই ঘটেনি সেই হতাশায়ও কাঁদতে পারি। অথচ এই জীবন আমি মেনেই নিয়েছি... আসলে নিয়েছি কি? নাকি মেনে নেবার ভান করি প্রতিমুহূর্তে নিজের সাথেই? ভাবতে ভাবতে বিরক্ত লাগছিলো, তাই একটা সময় জোর করে ঘুমিয়ে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৪:৫৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×