somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্কুল বাস উপাখ্যান...

১১ ই নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালকে সন্ধ্যায় বেশ পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ চিৎকার- চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। একটু পর অবশ্য বুঝলাম ব্যাপারটা কী। আমার রুমটা আমাদের বিল্ডিং এর পেছন দিকে। ওপাশে একটা চিপা গলি আর তারপর আবার বিল্ডিং এর সারি... ঢাকায় টিপিক্যালি যেমনটা দেখা যায়। সেই গলিটা দিয়ে সন্ধ্যার দিকে গাড়ি-ঘোড়া খুব একটা যাওয়া-আসা করে না। তো সেই চিপা গলিতে আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজন পিচ্চি(!) মিলে কিছু একটা খেলছিল, এবং সেই কারণেই এই চিৎকার- চেঁচামেচি। তখন আমার হঠাৎ মনে পড়ল যে আমিও তো এককালে এরকম করে খেলেছি! এখন সেটার সাথে স্কুল বাস এর কী সম্পর্ক সেটাই হল ভাববার বিষয়।

আমি যখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি, তখন থেকে আমার স্কুল বাস এ যাতায়াত শুরু হয়। কারণ- আমার স্কুলের সময়ের সাথে মা-বাবার টাইমিং এর গণ্ডগোল। এই স্কুল বাস যাত্রা অব্যাহত ছিল ক্লাস সেভেন কি এইট এর প্রথম দিক পর্যন্ত। এবং সেই স্কুল বাস নামক বাহনটায় যদ্দিন যাওয়া-আসা করেছিলাম, সেটা ছিল আমার স্কুল জীবনের বেস্ট পার্ট।

আমাদের সেই বাহনের চালক ছিলেন বেঞ্জামিন আংকেল...the sweetest guy ever...। তবে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে আমরা তাকে বেগুনিঞ্জিন আংকেল ডাকতাম। সেই রহস্যের মীমাংসা এখনো হয়নি।

ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ পর্যন্ত আমাদের ছুটি হত সিক্স থেকে টেন এর ক্লাস শেষ হওয়ার পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে (correction,পঁয়তাল্লিশ মিনিট না, আধঘণ্টা আগে হবে। তবে সবাই আসতে আসতে পঁয়তাল্লিশ মিনিটই লেগে যেত)। ফলে স্কুল বাস ততক্ষণ অপেক্ষা করত। এবং সেই পঁয়তাল্লিশ মিনিট আমরা কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে পুরো স্কুল কম্পাউন্ড চষে ফেলতাম। আমাদের স্কুলে বিশাল মাঠ ছিল না, কিন্তু যতটুকু ছিল, ততটুকুকে আমরা রীতিমত হালুয়া বানিয়ে ফেলেছিলাম। খেলার কোনো অভাব কখনো ছিল না, আমরা কিছু না কিছু বের করেই নিতাম। সেইরকম দৌড়াদৌড়ি, লাফালাফি কতদিন করিনাই...

এটা তো গেল স্কুল কম্পাউন্ড এর কথা। স্কুল বাসের ভেতরও মজা কম হত না। আমাদের বাস এ যারা যেত, সবাই ছিল খুবই...যাকে বলে fun loving। ফলে সময়টা খুব মজার কাটত। স্কুল থেকে বাসা কাছেই ছিল, এমন না যে খুব বেশি সময় পেতাম। তবে যতটুকু সময় পেতাম, ততটুকুর সদ্ব্যবহার করতে কখনোই কার্পণ্য করতাম না। গল্প-গুজব, হই-হুল্লোড় লেগেই থাকত। নানাবিধ বিষয় নিয়ে জ্ঞানগর্ভ (!) আলোচনা ছিল খুবই কমন। হেন কোন টপিক নাই যেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই নাই। পেপার, রহস্য পত্রিকা কিংবা তিন গোয়েন্দায় পাওয়া তাবৎ বিষয়ে আমাদের নাক গলানো চাই। আমার এখনও মনে আছে, আমাদের এক্সাইটমেন্ট যে বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ছিল, সেটা হল FIFA World Cup। ওই সময়টায় আমাদের (আমাদের মানে, অপেক্ষাকৃত বাচ্চা যারা) কথা বলার favorite topic ছিল ওইটা। ভাবখানা এমন ছিল যেন না জানি কত বুঝি!

কারও জন্মদিন হোক, কিংবা আর যে উপলক্ষ্যই পাই না কেন, সেইরকম(!) কিছু একটা করতেই হবে এরকম একটা অলিখিত নিয়ম ছিল। ওহ্, একবার কী উপলক্ষ্যে যেন আমরা তিনজন (আমার খুব ক্লোস দুইজন ফ্রেন্ডও ছিল আমার সহযাত্রী, হে হে!) সবাইকে চকলেট বিলি করলাম...শুধু চকলেটের প্যাকেটের মধ্যে চকলেটের পরিবর্তে মাটি ছিল, এই আর কি...। এরকম আরও কত ঘটনা আছে...

মাঝে মাঝে খুব মিস করি ওই সময়টা। এসব কথা সবসময় মনে পড়ে না। রুটিনমাফিক দিন কেটে যায়, এসব ঘটনা মনে আসার সুযোগই পায় না। তারপরও, ঘটনাচক্রে মনে পড়ে আর কি... কাল যেমন পড়ল। আবারও হয়ত হঠাৎ কোনো একদিন আবার সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙ্গে যাবে, আর মনে হবে, আরে! আমিও তো একসময়...
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:১২
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×