সম্প্রতি ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের এক স্কুলে ক্লাসের মুসলিম শিক্ষার্থীদের চড় মারতে হিন্দু শিক্ষার্থীদের প্রশ্রয় দিয়েছেন এক শিক্ষিকা। এই ঘটনায় বিতর্কের ঝড় উঠেছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, যে শিশুটিকে মারা হয়েছিল, সে নাকি নামতা মুখস্ত বলতে পারেনি। যাহোক, সমালোচনার জেরে স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অবাক করা ব্যাপার হলো- এই ঘটনায় ওই শিক্ষিকা না কি অনুতপ্ত নন। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীর অভিভাবক না কি কড়া হতে বলেছিলেন। অথচ জানা যাচ্ছে, শিক্ষিকা সাম্প্রদায়িক আচরণ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে ক্লাসে যত মোহামেডান বাচ্চা আছে তাদেরকে যেন একটা করে চড় মারা হয়।’
২
আমেরিকা বা কানাডার মতো দেশে মাঝেমধ্যে কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গদের বিরোধ বাঁধে। পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনে মৃত্যুর কথা তো প্রায়ই শোনা যায়। সারা বিশ্বে যেসব দেশের নেতারা মানবতার বাণী শোনায়, সেসব দেশে যখন এসব ঘটনা ঘটে অবাক হতে হয়।
৩
হিটলারের ইহুদি বিদ্বেষ কারও অজানা নয়। ৬০ লাখ ইহুদি হত্যা করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বের মুসলমানরাও ইহুদিদের ঘৃণা করে। শুধু কি তাই? হলোকাস্টকে সমর্থনও করে। অভিযোগ, ইহুদিরা ফিলিস্তিন দখল করেছে। মাঝেমধ্যেই হামলে পড়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর। একসময় খৃষ্টানদের এখন মুসলমানদের বিরাগভাজন হওয়া ইহুদি জাতির উৎপত্তি কোথায়? তাদের পিতৃভূমি কোথায় ছিল?
৪
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন তখনকার পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদশের নিরীহ বাঙালিদের ওপর হামলা চালায় তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল এখানকার বাঙালি নারীদের গর্ভবতী করা। তারা বলেছিল, এখানকার মুসলিমরা সহি মুসলিম না। পাকবাহিনীর ধর্ষণের ফলে সহি মুসলমান পয়দা হবে। কী বীভৎস! মুসলিমদের প্রতিই যদি এ মনোভাব হয়, হিন্দুদের প্রতি মনোভাব কেমন ছিল সে কথা তো বলাই বাহুল্য।
৫
৪৬ সালের দাঙ্গার ক্ষত ইতিহাস থেকে এখনও মুছে যায়নি। নোয়াখালী-কলকাতায় রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। ধর্ষণের মহোৎসব চলছিল। অথচ দু অঞ্চলের ভাষা-সংস্কৃতি সব একই ছিল। শুধু ধর্মীয় বিভাজন লাখ লাখ মৃত্যুর কারণ। ফলাফল বাংলা ভাগ।
৬
ভারত, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তানে দুর্নীতি, হত্যা, বিচারহীনতা নিয়ে যতটা না আলোচনা হয়, তারচেয়ে বেশি আলোচনা হয় ধর্মীয় বিষয় নিয়ে। কোনো সম্প্রদায়ের একজনের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতির অভিযোগ আনা হোক, যার পেটে ভাত নেই সেও তেড়ে আসবে। অন্য ধর্মের কেউ এই কাজ করলে তাকে তো বটেই, সুযোগ পেলে তার গোষ্ঠিসুদ্ধ মাটিতে পুঁতে ফেলবে। নিজের ধর্মের কেউ ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিলে তারও রেহাই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৩০