আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ঢাকা-১০, মাগুরা-১ ও ২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এতে অনেকেই গোস্বা করেছেন। যেভাবে গোস্বা করেছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করায়। যদিও মাশরাফী আর সাকিবের মধ্যে ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। দু’জনের মধ্যে তুলনা হয় না। তবে একটা মিল অবশ্য আছে। দু’জনেই একটা বিশেষ শ্রেণির বিরাগভাজন হয়ে গেছেন।
এই শ্রেণিটা আবার বলে, শিক্ষিত লোকের রাজনীতিতে আসা উচিত। যখন দেখা গেল, মাশরাফী বা সাকিব আওয়ামী লীগের হয়ে রাজনীতি করছেন, তখন এরা বলছে রাতের ভোটে নির্বাচন করছে। মাশরাফীর এমন জনপ্রিয়তা- উনি সর্বাবস্থায় জিতবেন। সাকিবের বিতর্ক আছে, জিতবেন কি না বোঝা যাচ্ছে না। তবে তারও যে বিশাল একটা ভক্তশ্রেণি আছে, সে কথা কারও অজানা নয়। তবে দলীয় মনোনয়নে জেতার সম্ভাবনা আছে। যদিও আমি সাকিব বা মাশরাফীর নির্বাচনে আগ্রহী না। সারাজীবন জেল-জুলুম সহ্য করে একজন মনোনয়ন পাবেন না, অথচ একজন শুধুমাত্র জনপ্রিয়তার কারণে (যেকোনো সেলিব্রেটিও হতে পারে) রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে চলে যাবেন; এটা পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের জন্য অবমাননা। জনপ্রিয় লোকটা যদি দীর্ঘদিন দলের জন্য খেটেখুটে তারপর রাজনীতেতে ভালো পদে যান, সেটা অবশ্য মেনে নেওয়া যায়।
সাকিব বা মাশরাফী যদি বিএনপির হয়ে রাজনীতি করতেন, যারা সমালোচনা করে তারা কী বলত? তাদের নেতা হিসেবে মেনে নিত? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। যারা গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায় তারা কেন এটা মেনে নেয় না, সাকিব-মাশরাফী চাইলে তাদের ইচ্ছেমতো রাজনীতি করতে পারেন?
খল অভিনেতা রাজীব দীর্ঘসময় বিএনপির রাজনীতি করেছেন, অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন। শেখ হাসিনা সরকারে এসে রাজীবের পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন। যে আমজাদ হোসেন সারাজীবন আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে গেছেন, তার চিকিৎসায় শেখ হাসিনা ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এটা কি বিএনপি বা খালেদা জিয়ার সময় সম্ভব হতো? যারা নিজেদের ত্যাগী কর্মীদের মূল্য দেয় না, তারা আবার করবে বিরোধী পক্ষের মূল্যায়ন?
তারেক রহমানের গোয়ার্তুমির কারণে বিএনপি ছেড়েছেন বি চৌধুরী, অলি আহমেদ, শমশের মবিন চৌধুরী, তৈমুর আলম চৌধুরীর মতো লোকজন, করেছেন আলাদা দল। মেজর হাফিজের মতো লোক বিএনপি থেকে সরে যাচ্ছেন। বিএনপি কি এদের ওজন বুঝতে পারে? পারে না বলেই দলটার এত দুর্গতি।
২১ আগস্টের পর তারেককে রাজনীতির বাইরে রাখার প্রস্তাব রাখা হয়। খালেদা জিয়া শোনেননি। কী এক বিষফোঁড়া লালন করেছেন; এবার হয়তো বুঝতে পারছেন। ২১ আগস্টের মতো ঘটনা না ঘটলে, অপরাধীদের প্রশ্রয় না দিলে মনে হয় না বিএনপির এমন বেহাল দশা হতো? এরা বোধহয় ভাবতেও পারেনি এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে। আওয়ামী লীগেরও একদিন পতন হবে, ভুগবে। কিন্তু এটা সত্যি তারা ২১ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটায়নি।