ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচে এই ব্যাপারটা বেশি দেখা যায়। বাঙালি সমর্থকরা, বিশেষত ব্রাজিল সমর্থকরা আর্জেন্টিনার বিপরীতে যে দলটা খেলে তাকেই সমর্থন দেয়। দুষ্টলোকেরা যেমন বলে, যাকে তাকে বাপ বানানো। আর্জেন্টিনার সমর্থকরাও কমবেশি করে। তবে তাদের দিন ভালো বলে একটু কমই করে। বিশেষ করে, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতায় মনোবল বেড়েছে। বিপরীতে ব্রাজিল ৫ বিশ্বকাপের ফুটানি দেখানো ছাড়েনি।
বাংলাদেশ দল বোধহয় ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৮২ তম। বিশ্বকাপের মূলপর্বে কখনও খেলার সুযোগ পায়নি। নিজেদের দল যেখানে এত দুরবস্থায়, সেখানে অন্য দেশ, যাদের সাথে কোনোদিক থেকেই মিল নেই; তাদের জন্য এমন পাগলামি দেখে মনে হয় দেশ আসলেই গরু-ছাগলে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
একই ব্যাপার দেখা গেল ভারত-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে। লোকজন এমন ঘৃণার চর্চা শুরু করল যে, ভাবলে গা ঘিনঘিন করে। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খুব বাজে খেলেছে। গ্রুপ পর্বে থেকেই বাদ। যেখানে লজ্জায় মুখ খোলারই কথা না, সেখানে বাঙালির অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি লজ্জার সীমা ছাড়িয়েছে।
২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ২ রানে, ২০১৫ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে ১ রানে, কোনো এক এশিয়া কাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ার কারণে ক্রিকেট থেকে আমার মন একদম উঠে গেছে। ক্রিকেট বলতে গেলে তেমন দেখিই না। অবশ্য আমি দেখি না বলে সবাই দেখবে না, তা তো না। দেখুক। তবে যে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম, নিজের পরনে যেখানে কাপড় নেই, সেখানে অন্যকে নিয়ে এত হুড়োহুড়ি কেন?
সবই মানা গেল, কিন্তু হিংস্রতা কেন? ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো কেন? দেখলাম, চঞ্চল চৌধুরীকে নিয়েও বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে। কলকাতার এক সাংবাদিকের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে কথা বলায় একজন তো দেখলাম তাকে মেরুদণ্ডহীন বলল। চঞ্চল যদি ভারতবিরোধী দুটো কথা বলত অথবা অস্ট্রেলিয়ার সমর্থনে কথা বলত, তাহলে কি মেরুদণ্ডওয়ালা হতো?
ইদানীং বাংলাদেশে দেশপ্রেমের প্রকাশ অবশ্য ভারত বিরোধিতার মাধ্যমেই শুরু। ইদানীং দেখি যে যত বেশি নিজের দেশ নিয়ে বিষোদগার করতে পারে, সে তত বড় দেশপ্রেমিক। অবাক হয়েছে লক্ষ্য করি, রেললাইনের ফিশপ্লেট তুললে, বাসে-ট্রেনে আগুন জ্বালিয়েও দেশপ্রেম দেখানো হচ্ছে। গণতন্ত্রের স্বার্থে নাকি এসব মেনে নিতে হবে। তারা বলছে, দেশ মেরামতের কাজ চলছে। আজব কাজকারবার।
ইসরায়েলে হামাস কর্তৃক হামলা চালানোর পর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল যে গাজাকে ধুলায় মিশিয়ে দিল; এ নিয়ে তাদের কোনো রা নেই। তারা নাকি নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। আবার তারা নিজেদের বড় ধার্মিকও ভাবে। এটা কারও বুঝতে বাকি নেই তারা আমেরিকার কাঁধে সওয়ার হয়েছে। এমন কিছু করবে না, যাতে আমেরিকা বেজার হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৮:৩৮