ভারতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্য বরাবরই ছিল। বলা চলে, কংগ্রেসের সমর্থন পেয়েই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়গাথা রচনা করতে সক্ষম হয়। ইন্দিরা গান্ধীর অবদান বোধকরি তার শত্রুরও অস্বীকার করা সম্ভব নয়। অস্ত্র প্রশিক্ষণ, কোটি শরণার্থীর আশ্রয় তো বটেই বিশ্বের সমর্থন আদায়ে তিনি যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছেন, নিশ্চিতভাবেই তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ধাত্রী বলা চলে। আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া যে দেশ স্বাধীন করা অসম্ভব, সে কথা তো বলাই বাহুল্য। উদাহরণস্বরুপ শ্রীলঙ্কার একটিটিই'র দীর্ঘ সংগ্রাম, ভারতের খালিস্তান আন্দোলন বা পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের আন্দোলনের কথা বলা যায়।
যাক সে কথা। কংগ্রেসের সাথে আওয়ামী লীগের মনোমালিন্যও হয়েছে বহুবার। তবে সম্পর্ক পুরোপুরি তলানিতে যায়নি। কংগ্রেসের সাথে আওয়ামী লীগের এত দহরম-মহরম সম্পর্ক ভারতের বিজেপি এবং বাংলাদেশের বিএনপি ভালোভাবে নেয়নি কখনও। ক্ষমতায় আসার আগে বিজেপি উত্তেজক অনেক কথাই বলেছে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেছে। যদিও পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে পরে সংযত হয়েছে। এদিকে বিএনপিও খুব খুশি হয়েছিল বিজেপির ক্ষমতারোহনে। ঢাকায় মিষ্টি বিতরণ করাও হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে হাল ছাড়তে হয়েছে। বিজেপি কংগ্রেসের মতো স্যেকুলার না হয়ে ধর্মাশ্রয়ী হলেও কূটনৈতিক স্বার্থে চাইলেও সব করতে পারে না, আগের অনেক নীতিই মানতে হয়। দেখা গেল, আওয়ামী লীগের সাথে তাদের মেলামেশা করতেই হয়। যদিও চরিত্র পুরোপুরি পাল্টায়নি। উগ্রবাদীরা উগ্রতা ছড়িয়েই যাচ্ছে।
কংগ্রেসের সাথে তো হবেই না, বিজেপির সাথেও হলো না। এখন বিএনপি আপাতত ভারতবিরোধিতা চালু রেখে আমেরিকার দিকে ঝুঁকেছে। তাদের কাঁধে সওয়ার হয়ে ক্ষমতায় আসবে; এমন স্বপ্নই দেখেছে এতদিন। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস তো কিছুদিন চেষ্টাচরিত্র করলেন কিছু করার, তবে মনে হয় না কাজের কাজ কিছু হয়েছে। আওয়ামী লীগ '১৪, '১৮ সালের মতো আরেকটা নির্বাচন করেই ফেলবে মনে হয়। যদিও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সুযোগ দিয়ে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। হয়তো আগের চেয়ে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
তথাকথিত দেশপ্রেমের নামে বিএনপি এতদিন যে বলে এল, নিজ দেশে অন্য দেশের সমর্থন গ্রহণযোগ্য না, তারাই এখন আমেরিকার কাঁধে সওয়ার; এটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, গরিব ভারতের চেয়ে বড়লোক আমেরিকার হস্তক্ষেপ ভালো। অনেকটা এমনঃ কূঁড়েঘরে কান্নাকাটির চেয়ে রাজপ্রাসাদে কান্না করা শ্রেয়। যদিও কারও বোঝার অসুবিধা না ভারত যদি বিএনপিকে সরাসরি আমেরিকার মতো সমর্থন দিত, তাহলে ভারতও তাদের কাছে গণতন্ত্রের দিশারি হয়ে যেত।
স্বাভাবিকভাবে স্মর্তব্য হলো, হোক ভারত বা আমেরিকা; নিজেদের দেশের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করা উচিত। আমেরিকা যদি সরাসরি হস্তক্ষেপ করে দেশের কী অবস্থা হবে সেটা ইরাক, লিবিয়ার মতো দেশ দেখলেই বোঝা যায়। তবুও বিএনপি আমেরিকার ওপর ভর করে তাদের সব কাজকে যেভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে। সে যাই হোক, আওয়ামী লীগ মনে হয় না কাউকে তোয়াক্কা করছে। বিএনপি না এলেও নির্বাচন তারা অনুষ্ঠান করবেই। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এর বিকল্পও নেই। তারা আরেকটা ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট নিশ্চয়ই হতে দেবে না?
নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গিয়ে দেশটার গণতান্ত্রিক কাঠামো বদল করে ফেলছে আওয়ামী লীগ। এটা দেশকে পেছনের দিকে টেনে নেবে নিশ্চয়ই। এর বাইরে আমেরিকা তথা তাদের মিত্রদের সাথে যে বিরোধ তৈরি হলো, এটা সামাল দেওয়া যাবে তো? বাংলাদেশ আয় করে আমেরিকা তথা তাদের মিত্রদের কাছ থেকে, আরবদের থেকে। এখন এরা যদি উঠেপড়ে লাগে আওয়ামী লীগ কি সামাল দিতে পারবে?
চিন, রাশিয়ার মতো দেশ পাশে আছে, কিন্তু এরা তো বাংলাদেশের মূল বাজার না। এরা বড়জোর উন্নয়ন কাঠামো বাস্তবায়ন করে। মানে এরা খরচের হাত। খরচ তো যে কাউকে নিয়েই করা যায়, কিন্তু আয়ের বাজার সংকোচিত হলে এর ধাক্কা সামালানো কঠিন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২০