মোবাইলে স্টোরেজ কম, তাই বিকাশ অ্যাপটা আনইন্সটল করে দিয়েছিলাম। চালু রাখার অত দরকারও ছিল না যদিও। নগদে লেনদেন করি, খরচ বাঁচে, আবার নিজেকে দেশপ্রেমিকও মনে হয়। আর যদি খুব দরকার হয়ই, অ্যাপ ছাড়াও বিকাশে লেনদেন করা যায়।
কয়েকদিন আগে আবারও বিকাশ অ্যাপ ইন্সটল দিলাম। খুব দরকার ছিল। কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে কাজটা একদম ঠিক হয়নি। লোকজন বিকাশের মূল সংগঠন ব্র্যাককে বয়কট করতে বলছে। আড়ংসহ আরও ব্র্যাক সংশ্লিষ্ট যা আছে সব বয়কট করতে বলছে। কাহিনী কী বুঝতে পারছিলাম না।
পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম ব্র্যাকের এক শিক্ষককে নাকি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তিনি নাকি ট্রান্সজেন্ডার বিরোধী কথা বলেছেন। কোনো এক ক্লাসের বই ছিঁড়ে তিনি প্রতিবাদ করেছেন। বইটাতে কোন দুই পৃষ্ঠায় নাকি ট্রান্সজেন্ডার রিলেটেড কিছু লেখা আছে! একজনের মাধ্যমে দেখতে পেলাম ওখানে আসলে হিজড়াদের নিয়ে লেখা আছে। তারা যে সমাজের অংশ, সেসব বলা হয়েছে। বুঝতে পারলাম না আসলে সমস্যা কোথায়। হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার এক না (হিজড়ার ইংরেজি hermaphrodite। অর্থাৎ যাদের জন্মগতভাবে লিঙ্গজনিত ত্রুটি থাকে। কিছু পুরুষ, কিছু নারী বৈশিষ্ট্য থাকে। পৃথিবীতে ব্যাপারটা বিরল নয়। অন্যদিকে, ট্রান্সজেন্ডার বিষয়টা এদেশে নতুন। জন্মগতভাবে এবং লিঙ্গগতভাবে নারী হয়ে কেউ যদি মানসিকভাবে পুরুষ হয় বা তার উল্টোটা। এ ধরনের মানুষও আছে। কেউ যদি এই বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে নিজ মানসিকতার সাথে মিল রেখে হরমোন ও অপারেশনের মাধ্যমে দেহের পরিবর্তন ঘটায়, তবে তাকে বলা হয় ট্রান্সজেন্ডার। হিজড়া ব্যাপারটা লুকানো কঠিন। শারীরিক-মানসিক গড়মিল চাইলে লুকিয়ে রাখা যায়। এ ধরনের মানুষগুলো এতদিন লুকিয়েই আসছে সবকিছু। এখন কেউ কেউ সামনে আসছে। রূপান্তরিত হতে চাচ্ছে। বা নিজের বাঁচার অধিকার দাবি করছে)।
কয়েকদিন আগে নায়ক জায়েদ খান হুজুরদের নিয়ে প্রসঙ্গক্রমে কথাবার্তা বললেন। লোকজন ক্ষ্যাপা বাসু হয়ে গেছে। পরে দেখলাম আসলে উনি কিছু কিছু হুজুরকে নিয়ে কথা বলেছেন, যারা শিশু বলাৎকারের সাথে জড়িত। আর যায় কোথায়? তাকে ইসলাম বিদ্বেষী প্রমাণ করতে সোচ্চার সবাই। পরে জায়েদ খানকে প্রমাণ করতে হলো যে তিনি সাচ্চা মুসলমান।
হিজড়া, ট্রান্সজেন্ডার, লেসবিয়ান, গে- এসব নিয়ে কত কথা হয়, হুজুর শ্রেণি সদা সরব। অথচ কখনও দেখলাম না কোনো হুজুর শিশু বলাৎকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কাউকে জিগ্যেস করলে এড়িয়ে যান। বড় হুজুর আরেকজনের বউকে ভাগিয়ে বিয়ে করলেও লোকজনের বাহবা পান।
যাহোক, কথা হচ্ছিল বয়কট নিয়ে। শব্দটা পুরোনো। নবিকে অবমাননার অভিযোগে ফ্রান্সকে বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়েছিল বছর কয়েক আগে। বলা হয়েছিল সে দেশের জিনিস বয়কট করতে। কয়েকদিন চলল ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের আহ্বান। ফ্রান্সের জিনিস কেনার মুরোদ নেই। ইসয়ায়েলি যে তেমন কিছু ব্যবহার করি, তাও না। তবুও প্রতিবাদ করতে হয়। সেজন্য কয়েকদিন ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ রাখলাম। লোকজনকে বললাম আমার মতো ফেসবুক বন্ধ রাখতে। কিন্তু তারা গোস্বা করল। এর মধ্যে বিএনপি ভারতীয় পণ্য বয়কটের আহ্বান জানাল। ভারতীয় পণ্য কখনও ব্যবহার করিই না। বয়কট করব কী। পেঁয়াজ সবসময় দেশিটাই কিনেছি।
লোকজনকে বললাম, বয়কট করা ভালো। দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে। ভারত গরু রপ্তানি বন্ধ করায় দেখেন না দেশে কত খামার গড়ে উঠছে। পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশি পেঁয়াজের কদর বাড়ছে। যদিও কৃষকের চেয়ে মধ্যসত্ত্বভোগীদের লাভ বেশি। যাহোক, নিজেদের লোকজনই তো খাচ্ছে। এখন ভালোয় ভালোয় ভারতে কেনাকাটা, ভ্রমণ আর চিকিৎসা সেবা বাদ দিলেই নিজেদের দেশপ্রেমিক দাবি করা যাবে।
আমি ভালোর জন্য বলছি। ওমা আমার সহকর্মী তীর্যক চোখে তাকালেন। গতকাল রাতে জানতে পারলাম সামনের সপ্তাহ ভারতে বেড়াতে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০৮