পরিচিত একজনকে বেড়াল খামচি দিয়েছে। নিয়ে গেলাম মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে। টিকিটের লম্বা সিরিয়াল। টিকিট দেওয়ার বদলে এক লোক টাকা গুনছে। বললাম, লোকজন দাঁড়িয়ে আছে আর আপনি টাকা গুনছেন? সে খুব বিরক্ত হলো। টাকা গোনা শেষে ভেতরে চলে গেল। এর মধ্যে দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা শেষে টিকিট নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে। উনি এবার দুপুরের খাবার খেতে বাইরে গেলেন। ফিরলেন ঘণ্টাখানেক পর। কিছু লিখে পাঠিয়ে দিলেন টিকা নিতে। টিকা দেওয়া শেষে কাঁদতে কাঁদতে বের হলো (পরিচিতজন)। বলল, আর জীবনে কুকুর-বেড়াল নিয়ে আদিখ্যেতা দেখাব না।
বললাম, দুষ্টু লোকদেরই কুকুর-বেড়াল টার্গেট করে। একটু সাবধানে চলাচল আর লালনপালন করলেই তো হয়।
২
জনৈক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গুলশান- ১ এ গেলাম। সে নিয়ে গেল বিশাল এক মার্কেটে। ঘোরাঘুরি করে তারপর ছাদের কফিশপে গেলাম। বুঝতে পারলাম এটা বিরাট বড়লোকদের মার্কেট। একটা চায়ের দাম একশো টাকার কম হবে না। বন্ধু জিগ্যেস করে এল। আসলেই তাই।
যাদের টাকা খরচ করার জায়গা নেই, মনে হয় তারাই এখানে আসে।
পরিবেশ ভালো। ঘুরেফিরে সবই দেখলাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম না এটা চলে কেমনে। কারণ, তেমন কাস্টমার দেখলাম না। যে ২-৩ জন আছে, তাদের দিয়ে কয় টাকা উঠবে? কর্মচারী খরচ আছে। ফ্লোর ভাড়া আছে।
৩
শাকিব খানের প্রিয়তমা সিনেমা নাকি ভালো ব্যবসা করেছে। এর প্রযোজক আমাদের রাষ্ট্রপতির ছেলে। আমার কেন জানি বিশ্বাস হয় না এই সিনেমা এত লাভ করেছে। এত লোকে আসলেই কি দেখেছে? নাকি প্রযোজকের অঢেল টাকা আছে, সেসব টাকা খরচ করার জায়গা পান না। খরচ করে লাভ দেখিয়ে টাকা বৈধ রাখছেন
সিনেমা হল কমে গিয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে। ছেলেপেলেরা মোবাইল নিয়ে সারাক্ষণ পড়ে থাকে। রাত হলে নেশার জগতে। খেলার মাঠও নেই যে গিয়ে খেলাধুলা করবে। অভিভাবকদেরও হেলদোল নেই।
৪
ছাত্রদল-শিবিরের রাজনীতি করা ছেলেপেলে সরকারি চাকরি পেয়ে এখন মুজিব কোট পরে ঘুরে বেড়ায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে। শেখ হাসিনার তোষামোদি করে। খুব অবাক লাগে যে, মাত্র কয়েকবছরে এত পরিবর্তন!
তবে এটা বোঝা যায় গণেশ উল্টে গেলে এরা পল্টি নিতে দেরি করবে না। এরা ঝোঁপ বুঝে কোপ মারতে উস্তাদ। এলাকায়ও একই অবস্থা। সবাই আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ। মোড়ে মোড়ে পোস্টার। প্রিয় অভিভাবক অমুক।
৫
ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছিলাম। বিক্রেতাকে জিগ্যেস করলাম, চাঁদা দিতে হয় না কি? সে বলে, ৭০০ প্রতিদিন। মনে মনে বলি, ব্যবসা ভালোই। সাধে তো আর পুলিশ মরলে লোকে খুশি হয় না।
এলাকার টেনেটুনে পাশ করা ছেলেপেলে এখন পুলিশের কনস্টেবলের চাকরি পেয়ে এসপির ভাব নেয়। অভিভাবকগণও সুন্দরী এবং মেধাবী মেয়ে বিয়ে দিয়ে দেন। সরকারি চাকরি বলে কথা। পদবি বড় কথা নয়।
৫
জজ সাহেবের গাড়ি রাস্তা ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছে। গণপরিবহণের চালক দুই কথা বলতেই জজ সাহেবের চালক লাঠি হাতে তেড়ে এলেন। বড় লোকের কুকুরও বড়লোক। এমনই অবস্থা। লোকজন চেপে ধরতেই সে থামল।
তাকেই দোষারোপ করে লাভ কী? যে সুযোগ পায়নি সেই ভাব মারায় না আর যার সুযোগ আছে সে দেখাবেই। এটাই তো আমাদের জাতীয় চরিত্র। সুযোগের অভাবে ভালো থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:১২