আপনার দেড়-দু'লাখ টাকা দরকার। ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলেন অথচ নিতে পারছেন না। বহুত নিয়মকানুন দেখাচ্ছে। তা থাকুক। একটা প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন থাকবে না? এমনি এমনি আপনাকে টাকা দিয়ে দেবে? টাকা যে আপনি মেরে দেবেন না; এর নিশ্চয়তা কী? এমনও তো হতে পারে আপনি টাকা নিয়ে অহেতুক খরচ করবেন। লোন দেওয়ার ক্ষেত্রে এত সতর্কতা অবশ্যই দরকার। কোন খাতে খরচ করছেন; এটাও ব্যাংকের অবগত হওয়ার দরকার আছে।
কিন্তু যখন প্রভাবশালী বা উচ্চ পর্যায়ের কাউকে লোন দেবে ব্যাংক, তখন কিন্তু এত নিয়মকানুন মনে থাকে না কর্তৃপক্ষের। তাদের নমঃ নমঃ করে ব্যাংক। লোন বাড়িতে এসে দিয়ে যায়। অথচ এই উচ্চ পর্যায়ের লোকেরাই বেশি ঋণখেলাপী হয়। টকশো-পত্রিকা-সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা ঋণখেলাপীদের মুণ্ডুপাত করি, অথচ যারা এসব লোন গ্রান্ট করল, তাদের নিয়ে কোনো কথা নেই।
বাড়ির কাজ শেষ মুহুর্তে আটকে গেছে আপনার। আপনি কাজ শেষ করতে পারছেন না। নানান কসরত করে যদি দেড়-দু'লাখ টাকা পানও, সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা চা-নাস্তা বাবদ দিয়ে আসতে হবে। সরকারি ব্যাংকগুলো এসব চা-নাস্তা বাবদ টাকা নিয়ে সরকারের বারোটা বাজায়। এই সিস্টেম বেসরকারিতেও কমবেশি আছে। তবে তারা লসে থাকে না।
সরকারি ব্যাংকে সেবার মানও যাচ্ছেতাই। আপনি টাকা তুলতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। ক্যাশ অফিসার ফোনে মগ্ন। পাশের সুন্দরীর সাথে সুখদুঃখের আলাপ করছে। এরমধ্যে লাঞ্চের সময় হয়ে গেল। ৪৫+ মিনিট পার। তারপর ডেস্কে বসে কাজ শুরু করতে করতে আরও ৫-১০ মিনিট। আপনিও যে একজন কর্মজীবী মানুষ; সময়ের দাম আছে- এটা ওদের মনে থাকে না। একই মানুষ আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে অন্য রকম।
এদিক থেকে এনজিও একটু ব্যতিক্রম আছে। টাকা তুলতে তেমন সমস্যা নেই। তবে সুদের হারটা একটু বেশি। সময়মতো কিস্তি না দিতে পারলে টিনের চালা খুলে নিয়ে যায়।
এদেশে কাকে বিশ্বাস করবেন? আপনাকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হলো, সুযোগ পেলে সেখান থেকে আপনিও টাকা মারার ধান্দা করবেন। গতকাল খবরে পড়লাম প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এক মেয়েকে চেপে ধরেছে তার মা আর তার চাচা লাঠি দিয়ে আঘাত করে মেয়েটাকে হত্যা করেছে। এটা শুধু একটা ঘটনাই না৷ হরহামেশাই এমন ঘটে। জমিজমার বিরোধ নিয়ে এমন ঘটনা তো প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে।
মানুষ এত লোভী আর শঠ যে, প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে মালপানি কামিয়ে দেশের বাইরে পাঠায়। তারপর একসময় নিজেও সেখানে পাড়ি দেয়। দেশের প্রতি দরদ নেই তুললে এই একই লোক বলে, এদেশে কেউ থাকে? সিস্টেমের ঠিক নেই। সিস্টেম তো আর মানুষ না। মানুষই সিস্টেম তৈরি করে। সিস্টেমের দোহাই দিয়ে নিজেদের অসৎ কর্ম বৈধ করার প্রচেষ্টা আর কী!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৪৭