কাজী নজরুল ইসলামের একটা গান আছে দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার হে, লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার! গানটায় দুটো লাইন এমনঃ ''হিন্দু না ওরা মুসলিম?" ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা'র!
লাইন দুটো পড়ে কাজী নজরুল ইসলামের সমকালীন বাস্তবতা চিন্তা করি। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে তিনি কেন এমন অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভাবনা লালন করতেন? পরবর্তীকালে গঠিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান; তৎপরবর্তীকালে গঠিত বাংলাদেশে জন্ম নিলে তিনি কি এমন ভাবনা লালন করতেন? তার দরকার পড়ত?
ব্যক্তি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলাম অসাম্প্রদায়িক তো বটেই স্বচ্ছ চিন্তাধারার ছিলেন; সে কথা প্রশ্নাতীত। তার মতো মহৎ চিন্তার মানুষ এখনও আছে বলে উপমহাদেশ এখনও বিষবাষ্পে ছেয়ে যায়নি।
উপমহাদেশের তিনটা দেশ- ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। তিন দেশের জনগণের আচার-আচরণ দেখে কি মনে হয় না এসব দেশের সংখ্যালঘুরা অসাম্প্রদায়িক আর সংখ্যাগুরুরা সাম্প্রদায়িক? যদিও যে যার ধর্মের দিকে সমর্থন দেবে, খারাপ দিক এড়িয়ে ভালো দিক তুলে ধরবে। আর অন্যদের দোষ ধরবে। বাস্তবতা আসলে কী?
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে তুচ্ছ কারণে মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। একইভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান-বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া যায়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুললে বলা যায় পাকিস্তান-বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের মুসলিমরা ভালো আছে, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে হিন্দুরা ভালো আছে। এ প্রশ্ন কেন তোলা যায়? কারণ ওই একটাই। সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
যারা কাজী নজরুল ইসলামের মতো সাম্যের গান গেয়ে থাকেন, তারা বেশ বিপদেই পড়েন। কেউ পাশে থাকে না। যেমনটা হয় রাজনীতির ক্ষেত্রে। আপনি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করেন, বিপদে পড়লে দলীয় লোকজনকে পাশে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু যদি কোনো দলই না করেন, তাহলে কাউকে পাশে পাবেন না।
কয়েকদিন আগে দৈনিক প্রথম আলো'র আনিসুল হককে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী আসিফ নজরুল প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি অটোগ্রাফ দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে যান না? আনিসুল হক বিনয় করে বলেছিলেন, আপনার লেখাও তো অনেক বিক্রি হয়। আসিফ নজরুল বলেন, আমার লেখা এবারই বেশি বিক্রি হচ্ছে। আপনার তো সবসময় হয়।
আনিসুল হকের বই একটা-দুটোর বেশি পড়া হয়নি। উনার ফেসবুক রিচও কমে গেছে। একজন এ নিয়ে পোস্ট দেওয়ায় আমি বলেছিলাম আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে পোস্ট দিতে, পাশাপাশি দেশের সমালোচনা করে কিছু লিখতে। তাতে হয়তো কাজ হতে পারে। যদিও হিতে বিপরীত হতে পারে, তবে জোরেশোরে আলোচনায় আসবেন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। এছাড়া উনার রিচ বাড়ানোর আর সুযোগ নেই। একটা পক্ষে যেতেই হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপিপন্থি সবাই উনাকে নিয়ে ট্রল করে।
আসিফ নজরুল, পিনাকী ভট্টাচার্যরা যেহেতু একটা পক্ষে আছেন, ওই পক্ষের লোকজন তাদের সমর্থন দেবে। আনিসুল হকদের পাশে কেউ থাকবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৫