শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে সামলানো কোনো বিষয়ই ছিল না।আন্দোলনটাতে যে তৃতীয় একটা পক্ষ ঢুকে গেছে, এটা উনি বোঝেছিলেনও, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেননি। ধরাকে সরা জ্ঞান করলে যা হয় আর কী! উনার এত এত নেতাকর্মী; এদেরকে যদি শুরু থেকেই মাঠে নামিয়ে রাখতেন আর পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে সেদিকে সতর্ক নজর রাখতেন, তাহলে তার এমন পরিস্থিতি হতো না। উনার আফসোস কি মরার আগে কমবে?
যাহোক, শেখ হাসিনা নেই, কিন্তু তার অনেক নেতাকর্মী দেশে রয়েছে, সমর্থক রয়েছে যারা তার জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। আর দুধের মাছিরা সব পালিয়েছে। এই যে নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা, এরা আসলে কী পান? বিএনপিকে শেখ হাসিনা ১৬ বছরে পিষে মেরেছেন। বিএনপির এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যে জেল খাটেনি। শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন একবারও কি মনে হয়নি উনি একসময় থাকবেন না, তখন দলের কী হবে? মনে হলে নিশ্চয়ই বিকল্প কাউকে রাখতেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগকে সুদে-আসলে পুষিয়ে দিচ্ছে। তবে তারাও আওয়ামী লীগের মতো টাকা খেয়ে হাইব্রিডদের দলে সুযোগ দিচ্ছে। গণেশ উল্টে গেলে এরা পল্টি নেবে বলাই বাহুল্য। বর্তমানের সরকারে এমন অনেকেই আছেন, যারা আওয়ামী লীগের গুণগ্রাহী ছিলেন, গিরগিটির মতো রঙ বদলে ফেলেছেন। বিএনপির অনেকে ১৬ বছর জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, এখন তেমন সুবিধা করতে পারছেন না হাইব্রিডদের ভিড়ে।
চাঁদাবাজদের হাত বদল হয়েছে, চাঁদাবাজি কমেনি। জমিদখল-সন্ত্রাস কমেনি। যে বাক-স্বাধীনতার তোয়াজ তুলে আওয়ামী লীগের মুণ্ডুপাত করা হয়েছে, এখন বাক-স্বাধীনতার মায়রে বাপ হয়ে গেছে। আজকেও কয়েকজনের চাকরি গেল ২৪ নিয়ে প্রশ্ন করায়। এখন ৭১ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে, শহিদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে, কিন্তু ২৪ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। তুললেই চাকরি তো যাবেই, গণপিটুনিতে মরতে হবে। শেখ হাসিনার অপরাধ জামায়াতের চেয়েও বেশি মনে হয়। যারা দেশটাই চায়নি, তারা এখন স্বাধীনতা শেখাচ্ছেন। ৭১ এর কথা স্মরণ করলে যারা লজ্জা পান, তারা এখন বড় যোদ্ধা।
আজকে অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করা হলো। শেষে পুলিশে সোপর্দ। তার অপরাধ কী ছিল? সে কয়টা খুন-ধর্ষণ করেছে? অথচ দেশের বড় বড় অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে, সেদিকে খবর নেই। শুধু আওয়ামী লীগ করলেই দোষ। মনে হয় সব অপরাধ এখনও আওয়ামী লীগই করে যাচ্ছে।
তোষামদি এখনও হচ্ছে, অপরাধও হচ্ছে, কিন্তু হইচই নেই। রাখাইনকে করিডোর দেওয়া নিয়েও হইচই নেই, নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশ নিয়েও হইচই নেই। আসলে যা বুঝলাম, আওয়ামী লীগকে সবার সাথে লড়তে হয়েছে, এখন সবাই মিলে খাচ্ছে, আর লড়ছে এক আওয়ামী লীগের বিপক্ষে। সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০৭