somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ষ্টোরি অব আ গ্রেট। গ্রেট অব দ্য গ্রেট।

০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এটি একটি ইয়া বিশাল পোষ্ট। ঢুকার সময় অতি সাবধানে ঢুকবেন। ;))





সময় যায়, সময় আসে। সময়ের এই তালে তালেই পৃথিবীতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য গ্রেটের সৃষ্টি হচ্ছে।



খেলাধুলার ক্ষেত্রও এই গ্রেটদের বাইরে নয়। গ্রেটরা তাঁদের কর্মকান্ড দিয়ে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন। শুরুতে কেউই গ্রেট হন না। গ্রেট তাঁদেরকে তখনই বলা হয়, যখন তাঁরা তাঁদের ক্ষেত্রে অন্যকে ছাড়িয়ে সবার ওপরে স্থান দখল করে নেন। ক্রিকেটে যেমন ডন ব্র্যাডম্যান, ফুটবলে যেমন পেলে-ম্যারাডোনা। এমন আরও অনেক আছে। বলে শেষ করা যাবে না।


টেনিসও ঠিক একইভাবে অসংখ্য গ্রেট দেখেছে। কারও আসনই স্থায়ী হয়নি। তবু তারা গ্রেট হিসেবেই বিবেচ্য হন। কেউ একজন গ্রেট হতে গেলে নানাবিধ ব্যাপার-স্যাপার রয়েছে। শুধুমাত্র কাজ দিয়ে সবার উপরে উঠলেই হয় না, কাজ হতে হয় দৃষ্টিনন্দন।

টেনিস বিশ্ব আজ পর্যন্ত দেখেছে ছেলেদের টেনিসে আর্থার অ্যাশ, বিয়ন বোর্গ, রড লেভার, জন ম্যাকেনরো, ইভান লেন্ডল, বরিস বেকার, জিমি কনোর্স, আন্দ্রে আগাসি, পিট সাম্প্রাসদের।
কিন্তু বর্তমান সময়ের যিনি, সুইস মাষ্টার রজার ফেদেরার, তিনি সবাইকেই ছাড়িয়ে গিয়েছেন। হি ইজ গ্রেট অব দ্য গ্রেট। আমার প্রিয় এই গ্রেটকে নিয়েই আজকের এই আয়োজন। বিউটি অব টেনিস হিসেবে যাঁর অনেকগুলো শট খ্যাত, অতিমানবীয় কিছু শট খেলার রেকর্ড আছে যাঁর, কোন ম্যাচ হেরে গেলেও যাঁর খেলা দৃষ্টি জুড়ায়, এই রজার ফেদেরারকে নিয়েই আজকের এই আয়োজন।


রজার ফেদেরার পেশাদার টেনিসে প্রবেশ করেন ১৯৯৮ সালে, যখন তাঁর বয়স নিতান্তই ১৭ বছর। সেসময়টায় রাজত্ব ছিলো দুই আমেরিকান গ্রেট পিট সাম্প্রাস এবং আন্দ্রে আগাসির। এই দু'জনের মাঝে আর কেউই আসতে পারেননি। একবার পিট তো আরেকবার আগাসি। এমনই চলেছিলো সেসময়টা। এর আগ পর্যন্ত এই দু'জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঝে জার্মান গ্রেট বরিস বেকারও ছিলেন। কিন্তু উনি ১৯৯৯ সালে অবসর নেওয়ায় সময়টা এমন দাঁড়িয়েছিলো, যেন হয় পিট জিতবে না হয় আগাসি জিতবে। মাঝখানে ২০০১ এর উইম্বলডনে বাগড়া দিয়ে বসেছিলেন ফেদেরার। চতুর্থ রাউন্ডে সেসময়ের নাম্বার ওয়ান পিট সাম্প্রাসকে আচমকা অপ্রত্যাশিতভাবে থামিয়ে দেন তিনি। বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়! সেবারে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে যান ফেদেরার। পরেরবার প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ে যান। কিন্তু এরপরের বারের উইম্বলডন, অর্থাৎ ২০০৩ এর উইম্বলডন দিয়েই শুরু এই টেনিস মাষ্টারের বিশ্বজয়। উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে পিট সাম্প্রাস অবসর নেওয়ার পূর্বে ১৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছিলেন। এই জেনারেশনকে পরাজিত করা দিয়েই ফেদেরার তাঁর খেলা শুরু করেছিলেন। অর্থাৎ, তিনি দুইটি জেনারেশনকে শাসন করেছেন। এখনও করছেন।



এখন পর্যন্ত প্রতিটি রেকর্ডই তাঁর পায়ের তলায় এসে লুটিয়েছে। শুধুমাত্র একটি ছাড়া। পিট সাম্প্রাসের গড়া ২৮৬ সপ্তাহ টেনিস র‌্যাংকিং এর শীর্ষে থাকার রেকর্ডটি স্পর্শ করতে ফেদেরারকে আর মাত্র একটি সপ্তাহ নাম্বার ওয়ান হিসেবে থাকতে হবে। কিন্তু হায়! যে মানুষটি ২৮৫ সপ্তাহ নাম্বার ওয়ান হিসেবে থাকতে পেরেছে, তাকে এই একটি সপ্তাহের জন্য বিধাতা অপেক্ষায় রাখলেন। এই টেনিস গ্রেট এখনও অপেক্ষায়ই রয়েছেন। বয়স হলো ২৯। অনেকে বলে, সুইস মাষ্টারের নাকি সময় ফুরিয়েছে। কিন্তু সেই সব নিন্দুকের এই কথাটিও মনে রাখা দরকার, তারাই ২০০৮ সালেও তাঁর সময়টাকে ফুরিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু তিনি সব নিন্দুকের মুখে ২০০৯ সালেই ছাই ঢেলে দিয়েছিলেন। কি হয়নি এই ২০০৯ সালে! উত্থান-পতন সবই হয়েছে বলা চলে।

শুরুটা মূলতঃ ২০০৮ সালে। শুরুতে তিনি অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে সার্বিয়ার নোভাক জোকোভিচের কাছে পরাজয়। এরপর ফ্রেঞ্চ ওপেনের লাল কোর্টে পুরানো প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদালের কাছে আবারও পরাজয়। এরপর হারালেন অল ইংল্যান্ড ক্লাবের উইম্বলডন শিরোপা, যেটি তিনি ২০০৩ সাল থেকে টানা ২০০৭ সাল পর্যন্ত জিতে এসেছেন। ২০০৮ এ'ও মুখোমুখি হলেন সেই পুরানো প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদালের, যাকে হারিয়ে তিনি ২০০৭ এ উইম্বলডন শিরোপা জিতে সাম্প্রাসের ১৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম শিরোপা জেতার রেকর্ডটি ছোঁয়ার পথে ১১তম গ্র্যান্ডস্ল্যামটি জিতেছিলেন। কিন্তু ২০০৮ সালে সবই উল্টে গেলো। টানা ষষ্ঠবারের মত জিততে চেয়েছিলেন উইম্বলডন। গড়তে চেয়েছিলেন আরেকটি রেকর্ড। কিন্তু উইম্বলডন গার্ডেনে ফুটলো নতুন ফুল। টেনিস ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ম্যাচটির জন্ম দিয়ে রাফায়েল নাদাল এবং রজার ফেদেরারের মাঝে বিজয়ী হলেন রাফায়েল নাদাল, জিতলেন তার প্রথম উইম্বলডন শিরোপা। উল্লেখ্য, এই সময়েই নিন্দুকেরা দেখে ফেলেছিলো ফেদেরারের শেষ। কিন্তু না, তাদের জন্য অনেক কিছুই দেখার ছিলো।
গ্রেট ফেড তাঁর টানা শিরোপা জয়ের ধারাটি ঠিকই বজায় রাখলেন ইউএস ওপেন এ। সেবার জিতলেন টানা পঞ্চমবারের মত ইউএস ওপেন(তাঁর ১৩তম গ্র্যান্ডস্ল্যাম। সাম্প্রাসের রেকর্ড ছুঁতে দরকার আর মাত্র একটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম শিরোপা)।
সে বছরটি ছিলো তাঁর জন্য খুবই কষ্টের। মাত্র একটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম শিরোপা নিয়ে তিনি মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। উল্লেখ্য যে, ততদিনে তাঁর উপাধি হয়ে গিয়েছে "দ্য কনজিকিউটিভ কিং"। কেন, সেটাও বলছি একটু পরে।

শুরু হলো ২০০৯। বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্ল্যাম অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে মুখোমুখি হলেন সেই পুরানো প্রতিপক্ষ রাফায়েল নাদালের। কিন্তু নাহ... নাদাল তাকে ভালোভাবেই আটকে ফেললেন। ফেদেরার এবারও পারলেন না তাঁর ১৪তম গ্র্যান্ডস্ল্যামটি জিতে সাম্প্রাসকে ছুঁতে। ফেদেরার সেদিন রড লেভার অ্যারেনায় অসি টেনিস গ্রেট রড লেভারের সামনে কাঁদলেন ছোট একটি শিশুর মত করে। একই কান্না তিনি এই রড লেভারের সামনে কেঁদেছিলেন ২০০৬ সালেও, এই অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনেই। তবে সেবার ছিলো আনন্দের কান্না আর এবার, অর্থাৎ ২০০৯ এর কান্নাটি ছিলো দুঃখের। এই বছরটিকে কেন একটু আগে বলেছি মিশ্র ছিলো, জানেন? বলছি।

রজার ফেদেরার খেলতে গিয়ে কক্ষণো কোন র‌্যাকেট ভাঙেননি, যে কাজটি বর্তমানের বেশিরভাগ খেলোয়াড়রা একটি মশা মারার মত অনেকবারই করতে থাকেন। ফেদেরার যে কাজটি কখনো করেননি, সেটি করেছিলেন এই ২০০৯ সালেই। মিয়ামি মাষ্টার্সে, নোভাক জোকোভিচের বিপক্ষের খেলায়। এটি নিয়ে তুমুল হৈ-চৈও শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু তাতে কি? ফেদেরার আগেই বলে দিয়েছেন, যে যা খুশি বলুক, আমার তাতে কিছু আসে-যায় না।

এবার এলো ক্লে মৌসুম। ক্লে কোর্ট, যে কোর্ট ফেদেরারকে বারবারই খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। যে কোর্টটি ফেদেরারকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া সত্বেও তাঁর প্রিয়। মাদ্রিদ মাষ্টার্সের ফাইনালে এই ক্লে কোর্টে রজার ফেদেরার মুখোমুখি হলেন রাফায়েল নাদাল, কিং অব ক্লে'র। অন্যান্যবারের মত এবার আর খালিহাতে ফেরেননি ফেদেরার। ফেদেরার হামবুর্গ মাষ্টার্স ২০০৭ এ রাফায়েল নাদালের ক্লে-কোর্টে টানা ৮৩টি ম্যাচ জয়ের ধারায় যেভাবে আঘাত হেনেছিলেন, অনেকটা সেভাবেই অতি-আরাধ্য ফ্রেঞ্চ ওপেনের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে নাদালের ঘরের শহর মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত মাদ্রিদ মাষ্টার্সে নাদালকেই হারিয়ে দিলেন।

এখানে বলে রাখা ভালো, ফেদেরার তাঁর জীবনের একমাত্র কাঁটা এই ক্লে-কোর্টের ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতার জন্য তাঁর পুরো খেলাটাই পাল্টে ফেলেছিলেন।

এরপর এলো ফ্রেঞ্চ ওপেন। বিধাতা বোধহয় এই দিনটির জন্যই ফেদেরারকে এতদিন এত কষ্ট দিয়ে আটকে রেখেছিলেন। যে পিট সাম্প্রাস ১৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতা সত্বেও একবারও রোঁলা গাঁরোর লাল কোর্টে সেমিফাইনালের বেশি(একবারই সেমিফাইনালে যেতে পেরেছিলেন। নতুবা প্রতিবারই চতুর্থ রাউন্ডের বেশি যেতে পারতেন না। অথচ ফেদেরার প্রতিবারই ফাইনালে উঠেছেন) যেতে পারেননি, সেই ফ্রেঞ্চ ওপেন জয় করলেন ফেদেরার। একই সাথে ছুঁলেন পিট সাম্প্রাসের রেকর্ড। একই সাথে হয়ে গেলেন টেনিসের ইতিহাসের সেরা। গ্রেটেষ্ট অব অল টাইম। সাম্প্রাস যেমনটা পারেননি, ফেদেরার তেমনটা নয়। তিনি পেরেছেন। সাম্প্রাসকে অল টাইম গ্রেট বললে যেমনটা নাক সিঁটকানো হতো, ফেদেরারের ক্ষেত্রে সেটা হবার কোন সম্ভাবনাই নেই। কারণ, তিনি সবকিছু প্রমাণ করে দিয়েছেন।(নির্দ্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড়ের সমর্থকদের কাছে তিনি গ্রেটেষ্ট অব অল টাইম হবার যোগ্য নন। কারণ, সেই খেলোয়াড়দের কিংবা খেলোয়াড়টির কাছে তিনি অনেকবার হেরেছেন। কিন্তু সেই সকল অন্ধ ভক্তের সেটাও দেখা দরকার ছিলো যে, তাঁরা কতবার কোন কোর্টে মুখোমুখি হয়েছিলেন। তাঁদের রেকর্ড খালি চোখে দেখতে ৭-১৪ মনে হলেও তাঁরা কতবার কোন কোর্টে মুখোমুখি হয়েছিলেন? তাঁদের মাঝে অনুষ্ঠিত ২১টি ম্যাচের মাঝে শুধুমাত্র ক্লে-কোর্টেই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে ১২বার! মাইন্ড ইট! ফেদেরারের দূর্বলতা ক্লে-কোর্টে, এটা সর্বজন স্বীকৃত। যার সাথে খেলা হয়েছে, ইনি যে কিং অব ক্লে, সেটাও জানা কথা। তবে এটা নিয়ে লাফালাফির কি আছে? একটা কথা মনে রাখা ভালো। আপনাদের এই খেলোয়াড় তার দূর্বলতায় ভরপুর কোর্টগুলোর ফাইনালে প্রায় সময়ই উঠতে ব্যর্থ হতো। অথচ এই দু'জনকে একই সমান সুযোগ দেওয়া হতো। ফেদেরারকে দেখা যেতো প্রতিবারই ফাইনাল খেতে। অথচ অন্যজন নেই।)

এরপর উইম্বলডনের ফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পিট সাম্প্রাসেরই দেশী অ্যান্ডি রডিক। ফেদেরারকে আটকাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন রডিক। খেলেছিলেন ক্যারিয়ারের সেরা খেলা। পারেননি আটকাতে। ফেদেরার পিট সাম্প্রাসের সশরীর উপস্থিতির সামনে ম্যাচটি জিতে নিয়ে টপকে গেলেন সাম্প্রাসকে। নিজেকে গ্রেটেষ্ট অব অল টাইম হিসেবে আরও প্রতিষ্ঠিত করলেন। সর্বমোট তাঁর জয় করা গ্র্যান্ডস্ল্যামের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫তে।

এরপর এলো ইউএস ওপেন। উইম্বলডনের মত এখানেও টানা ষষ্ঠবারের মত জিততে এসেছিলেন ইউএস ওপেন। কিন্তু আর্জেন্টিনিয়ান হুয়ান মার্টিন দেল পোত্রো আটকে দিলেন ফেদেরারকে। এবার আর হলো না ফেদেরারের।

এরপর লন্ডনের ওটু অ্যারেনায় এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুরস ফাইনালের ফাইনালে রাশিয়ার নিকোলাই ডেভিডেঙ্কোর সাথের ম্যাচটি জিততে জিততেও হেরে বসলেন। ডেভিডেঙ্কো সেমিফাইনালে নাদালকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন। ফেদেরারকে ফাইনালে হারানোর পর হুঙ্কার দিলেন, ফেদেরার-নাদালের দিন শেষ। এবার বিশ্ব দেখবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। হায়রে... লোকটা বড়ই বোকা!

অষ্ট্রেলিয়ান ওপেন ২০১০ এর কোয়ার্টারফাইনালে ফেদেরারের মুখোমুখি হলেন ডেভিডেঙ্কো। প্রথম সেটটি ৬-২ ব্যবধানে জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকাটা যেন ডেভিডেঙ্কোর কথার সত্যতাই প্রমাণ করছিলো। কিন্তু না! কিং ফেড এবার জেগে উঠলেন। দ্বিতীয় সেটটি ৬-৩ ব্যবধানে জিতে নেওয়ার পর তৃতীয় সেটটি জিতলেন ৬-০ ব্যবধানে! টানা ১২টি গেম জয় করলেন এই কাজটি করার জন্য। অর্থাৎ, এই ১২টি গেমের একটিও হারেননি। ০-৩ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকার পর ৬-৩ ও ৬-০। ডেভিডেঙ্কোর মুখে কালি পড়া শুরু হলো। চতুর্থ সেটে ডেভিডেঙ্কো প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও এক প্রকার উড়েই গেলেন। উড়ে গেলেন পুরো ম্যাচ থেকেই। ফেদেরার প্রমাণ করলেন, তাঁর দিন শেষ হয়নি। ডেভিডেঙ্কোও আবারও ফেদেরারের শ্রেষ্ঠত্বই মেনে নিয়ে কোর্ট ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।

সেমিফাইনালে ফ্রান্সের জো-উইলফ্রায়েড সোঙ্গাকে হারানোর পর তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, ব্রিটিশদেরকে আমি দেড়'শ বছর যেকোন গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের জন্য অপেক্ষায় রাখতে চাই। উল্লেখ্য যে, ততক্ষণে তিনি জেনে গিয়েছেন ফাইনালে তাঁর প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি মারে, যাকে নিয়ে ব্রিটিশ মিডিয়া সবসময়ই ফ্রেড পেরির পর গ্র্যান্ডস্ল্যামজয়ী হিসেবে দেখতে চায়। ব্রিটিশরা এই জন্যে অপেক্ষায় আছে ৭৩ বছর ধরে! ফ্রেড পেরির পর আর কেউ যে কখনোই গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয় করতে পারেনি! তাই অ্যান্ডি মারের আগমনের পর তাদের লাফালাফি একটু বেশিই বেড়ে গিয়েছিলো। মারেকে ২০০৯ উইম্বলডন শিরোপাজয়ীও বানিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু মারে সেবারও হতাশ করে সেমিফাইনালেই বাদ পড়েছিলেন। এই সেই মারে, যাকে ফেদেরার ২০০৮ এর ইউএস ওপেনের ফাইনালে হারিয়েছিলেন। আবারও দুইজন মুখোমুখি হলেন ২০১০ এর অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনে।

যথারীতি রজার ফেদেরার এইবারও মারেকে চরমভাবে উড়িয়েই দিলেন মাত্র ৩ সেটে খেলা শেষ করে দিয়ে। এইবার কাঁদলেন মারে। কাঁদতে কাঁদতে মারে বললেন, "আই ক্যান ক্রাই লাইক রজার বাট ইট'স আ শেম আই কান্ট প্লে লাইক হিম"। অবশেষে অ্যান্ডি মারে! সেমিফাইনাল থেকে ফাইনালে উঠেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে ফেদেরারকে হারিয়ে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতার কথা বলা মারে এই কথা বললেন! ডেভিডেঙ্কোর মত তিনিও মেনে নিলেন ফেদেরারের শ্রেষ্ঠত্ব।

এবার আবারও এলো ফ্রেঞ্চ ওপেন। কিন্তু ফেদেরারের অধ্যায়ে এই ফ্রেঞ্চ ওপেনটি হয়তো একটি কালো অধ্যায়ই হয়ে থাকবে। কারণ, এইবার তিনি বাদ গেলেন কোয়ার্টার ফাইনালেই। তাঁকে কনজিকিউটিভ কিং বলা হয় নানা কারণে। তিনি টানা ৫টি করে উইম্বলডন এবং ইউএস ওপেন শিরোপা জিতেছেন। এমন আরও অনেককিছুই করেছেন। তবে তাঁকে মূলতঃ যে কারনে কনজিকিউটিভ কিং বলা হয়, সেটি হলো... তিনি টানা ২৩টি গ্র্যান্ডস্ল্যামের সেমিফাইনাল খেলেছেন! যে কাজটি আজ পর্যন্ত আর কেউই করতে পারেননি। কিন্তু এই ধারায় ছেদ পড়লো ফ্রেঞ্চ ওপেন ২০১০ এ। যাকে ফ্রেঞ্চ ওপেন ২০০৯ এ হারিয়ে গ্রেটেষ্ট অব অল টাইম হয়েছিলেন, সেই রবিন সোদারলিং এর কাছে আনলাকি থার্টিন(১৩তমবার মুখোমুখি) এ যেতে পারলেন না ২৪তম গ্র্যান্ডস্ল্যাম সেমিফাইনালে। কাটা পড়লেন এর আগেই।
ফেদেরারের আরেকটি রেকর্ড রয়েছে। ২২টি গ্র্যান্ডস্ল্যামের ফাইনাল খেলার রেকর্ড। এটির ধারেকাছে এর পূর্বে কেউ যেতেও পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে কি না যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া ফেদেরারের সময়তো এখনও শেষ হয়ে যায়নি! সামনে তো আরও সময় রয়েছে।

এরপর এলো উইম্বলডন ২০১০। উইম্বলডন গার্ডেনেও তিনি কোয়ার্টার ফাইনালেই কাটা পড়লেন চেক রিপাবলিকান টমাস বার্ডিচের কাছে। হলো না এবারও।

এরপর এলো ইউএস ওপেন, যেটি শেষ হলো আজ রাত্রে। এটির কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনাল ঘাতক সোদারলিং এর। সোদারলিং এই ম্যাচটির আগে এক হিসেবে তারই পূর্বসূরি নিকোলাই ডেভিডেঙ্কোর মত হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন, ফেদেরারকে যে কেউই হারানো সামর্থ্য রাখে। তাকে বারবার হারানো যায়! কিন্তু হায়! এই লোকও ধরাকে সরা জ্ঞানই করেছিলো। কোয়ার্টার ফাইনালে ফেদেরার এই সোদারলিংকেও এক প্রকার উড়িয়েই দিয়েছিলেন। অষ্ট্রেলিয়ান ওপেনে হয়েছিলো ডেভিডেঙ্কোর মুখ কালো, এবার হলো সোদারলিং এর।


রজার ফেদেরার এবার এসেছিলেন ইউএস ওপেনের শিরোপা ফিরে পেতে। কিন্তু এবার তিনি কাটা পড়লেন সেমিফাইনালে, নোভাক জোকোভিচের কাছে। দু'টি ম্যাচ পয়েন্টে পেয়েও ফেদেরার ম্যাচটি জিততে পারেননি। টেনিসের ভক্তরা নিরাশ হলো অনেকদিন পর আরও একটি ফেদেরার-নাদাল গ্র্যান্ডস্ল্যাম ফাইনাল দেখতে না পেয়ে।

উল্লেখ্য, এবারের ইউএস ওপেন জিতেছেন রাফায়েল নাদাল। এটি জেতার সাথে সাথেই তিনি ৭ম জন হিসেবে প্রবেশ করেছেন ক্যারিয়ার গ্র্যান্ডস্ল্যামজয়ীদের ৬জনের ছোট্ট তালিকায়। একই কাজ তার পূর্বে করেছেন রজার ফেদেরার।


অনেএএএএএক কিছু লিখে ফেললাম। পোষ্টটা অসম্ভব রকমের বড় হয়ে গেলো। আর ছোটও করতে পারলাম না। দুঃখিত সেজন্য।


বলে রাখা ভালো, নিন্দুকদের মুখ আবারও খুলে গিয়েছে। ফেদেরারের নাকি দিন শেষ। সেটাই তো! দিন তো তারা ২০০৮ এ'ও শেষ করে দিয়েছিলো। বয়স ২৯ হয়ে গেলেও ফেদেরার ভক্তদের আশা, তিনি আবারও আগের মতই ফিরবেন, কিং ফেড হয়ে।

বোরিংমার্কা এই বিশাল পোষ্টের শেষে এবার কিছু ভিডিও। আশা করি, আপনাদের ভালো লাগবে। এই দুই-তিনটি ভিডিওর মাঝে ফেদেরারের বিউটি অব টেনিসের সর্বোচ্চ হলে ২০% পেতে পারেন। এর বেশি নয়। তবে যাঁরা টেনিস ভক্ত, তাঁরা ফেদেরারের খেলা বেশ ভালোমতোই জানেন।














সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। বিশালমার্কা পোষ্টের জন্য আবারও দুঃখিত।

অনেকদিন পর এই বিষয় নিয়ে এইখানে কোন পোষ্ট দিলাম।

=================
নির্ঝর, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:১৭
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×