somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়েনের পেছনে টাকার ছুট!

২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক টাকা মূল্যমানের একটি ধাতব মুদ্রা (কয়েন) নিয়ে দেশজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। নানা গুজবের কারণে বিভিন্ন স্থানে বেশি দামে মুদ্রাটি কেনাবেচা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কেনাবেচার সময় আটকও হয়েছে ১৬ জন। এই ধাতব মুদ্রার প্রধান উপাদান তামার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে খানিকটা বেড়ে যাওয়ার খবরে একটি চক্র এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যদিও ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে তামার দাম কমতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, এক টাকার এই মুদ্রার ওজন মাত্র চার গ্রাম। তিনটি ধাতব উপাদানে তৈরি এই মুদ্রায় তামার পরিমাণ ৬৯ শতাংশ, দস্তা ৩০ শতাংশ ও টিন ১ শতাংশ। এই হিসাবে এক টাকার এই মুদ্রায় তামা আছে মাত্র ২.৭৬ গ্রাম, দস্তা ১.২০ গ্রাম ও টিন ০.০৪ গ্রাম। মুদ্রাটি তৈরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের খরচ পড়েছিল মাত্র ৭৮ পয়সা।
নানা গুজবের কারণে এই ধাতব মুদ্রা গতকাল মঙ্গলবারও ১০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। তবে এই তথ্যের মধ্যেও গুজবের প্রভাব থাকতে পারে। কারণ বেশি দামে কয়েন কিনেছেন এমন কারও স্বীকারোক্তি পুলিশের সূত্রে পাওয়া যায়নি। ঢাকার পল্লবী থেকে পুলিশ গতকাল তিনজনকে আটক করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতে তাদের ছেড়েও দিয়েছে। পল্লবী থানার পুলিশ জানিয়েছে, কয়েন কিনছেন এমন খবরের ভিত্তিতে ওই তিনজনকে আটক করা হলেও তাদের কাছে কিছু পাওয়া যায়নি। তেজগাঁও রেলস্টেশন এলাকা থেকে র‌্যাব-২ মুদ্রা কেনাবেচার অভিযোগে মোখলেস নামের একজনকে ধরে তেজগাঁও থানায় সোপর্দ করেছে।
মুদ্রা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম যেটুকু বেড়েছিল, তাতে এই মুদ্রা থেকে যে তামা পাওয়া যাবে, তার সঙ্গে এই হুজুগে কেনাবেচা ও লাভ-লোকসানের হিসাব মিলছে না। তা ছাড়া এই মুদ্রা থেকে তামা আলাদা করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সাধারণ কোনো প্রক্রিয়ায় এটা সম্ভবও নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক দাসগুপ্ত অসীম কুমার প্রথম আলোকে বলেন, বেশি দামে এক টাকার মুদ্রা কেনার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। অযথা কিছু মানুষের মধ্যে হুজুগ তৈরি হয়েছে। তিনি এই মুদ্রা বেশি দামে কিনে প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
১৯৯৮-৯৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধাতব মুদ্রাটি বাজারে ছাড়ে। ২০ কোটি পিস তৈরি করলেও এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হেফাজতে ১৬ হাজার পিস মুদ্রা রয়ে গেছে। বাকি মুদ্রা বর্তমানে বাজারে সচল আছে।
ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম বাড়ছিল। কিন্তু কয়েক দিন ধরে দাম আবার কমতে শুরু করেছে। চীন বিশ্বে তামার বড় আমদানিকারক দেশ। সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে দেশটি আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তামার দাম পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্লুমবার্গ বিজনেসউইকের তথ্যমতে, গতকাল প্রতি পাউন্ড তামার দাম ছিল ৩ দশমিক ৭ ডলার।
তবে দেশের বাজারে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এই তামার মুদ্রা গলিয়ে সোনার খাদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, পাশের দেশে পাচার হচ্ছে, জিনের বাদশার কাছে নিয়ে গেলে সোনায় রূপান্তর করা যায়, এমনকি এতে সোনার উপাদানও রয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আর কিছু লোক লোভে পড়ে এই মুদ্রা বেশি দামে কিনছে।
দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ফেনী থেকে মুদ্রা কেনাবেচার খবর পাওয়া গেছে। কেনাবেচার সময় পুলিশ কমপক্ষে ১৬ জনকে আটক করেছে। এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরের পল্লবী থেকে আটক করা হয়েছে তিনজনকে।
চট্টগ্রামে মুদ্রা কেনাবেচার সময় সাতজনকে আটক করা হয়েছে। নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিটি মুদ্রা ৩০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম শাখার মহাব্যবস্থাপক মো. নওশাদ আলী চৌধুরী বলেন, ‘এটা স্রেফ হুজুগ। এই মুদ্রা বেশি দামে কেনার কোনো কারণ নেই।’
এ ছাড়া কুমিল্লার লাকসাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও নবীনগর, ফেনী ও ফেনীর পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, নোয়াখালীর চাটখিল ও চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে এক টাকার ওই মুদ্রা ১০ থেকে ৩০০ টাকায় কেনাবেচার খবর পাওয়া গেছে। নবীনগর, ছাগলনাইয়া ও চাটখিলে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় পুলিশ বেশ কিছু কয়েনসহ দুই শিশুকে আটক করেছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিভিন্ন উপজেলায় সতর্কতামূলক মাইকিং করা হয়েছে।
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×