somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূত অবিশ্বাসীদের জন্য তিনটি গল্প

২৬ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভূত প্রেতে অবিশ্বাস আছে এমন লোকদের একটা আলগা কনফিডেন্স থাকে। কোনো একজন মনীষী বলেছিলেন, সাহসের অভিনয় করা ভালো তাতে অন্যরা আপনাকে সাহসীই ভাববে। সিদ্দিক সাহেব এমন ধরনেরই একজন লোক। আমিই মাঝেমাঝে কনফিউজড হয়ে যাই ওনার ভাবসাব দেখে। ওনাকে সত্যি দূর্বল চিত্তের মনে হয় না। মনীষী খারাপ কিছু বলেনি, নইলে মনীষী কেন?

আমি হন্ত দন্ত হয়ে যখন এসে সিদ্দিক সাহেবকে ঘটনাটা বললাম, উনি হাসলেন। তাও আবার মুচকি হাসি। মুচকি হাসিরও বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ আছে, তারমধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট যে মুচকি হাসি সেটা। গল্পের এতোটুকু আজিমকে বলতেই আজিম যে মন্তব্য করলো তাতে আমি ভীষণ খুশি হলাম। আজিম বললো, হুমায়ূন আহমেদ টাইপের লেখা হয়ে গেছে। আসলে আমিও জানতাম লেখাটা হুমায়ূন টাইপই হচ্ছে। আমি ওনার লেখার একজন ভক্ত পাঠক। ওনার "দেবী" আমার দারুণ লেগেছিল। ভুতের গল্পকে এতোটা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে উপস্থাপন করার ব্যাপারটা এর আগে আমি কোথাও দেখিনি। স্টেফিন মেয়ারের টোয়ালাইট সিরিজও এতো ইন্টারেস্টিং লাগেনি। এই সব ভ্যাম্পেয়ার বেইজড মুভি বা বই দেখলেই এখন বিরক্ত লাগে। আমার ৬ বছরের ভাগনেও ভ্যাম্পেয়ার দেখে ভয় পায় না। বন্ধুদের নিয়ে ভ্যাম্পু-ভ্যাম্পু খেলা তার বৈকালীন বিনোদন। তবে মজা হলো স্টিফেন কিং -এর লেখায়! বিশেষ করে ওনার শর্টস্টোরি গুলো ! কিন্তু এর মাঝেও কিছু খাদ পেয়েছি। মাথার ওপর দিয়ে যাওয়া কিছু লেখাও আছে। আমার ধারণা, একটা বিশেষ পর্যায়ে লেখকবৃন্দ ওভার হেড রচনা ছাড়া আর কিছুই লিখতে পারেন না। আর ভূতের গল্প হলে তো কথাই নেই।

আমরা অবস্থা কিন্তু সিদ্দিক সাহেবের মতোই। ভূতে বিশ্বাস নেই কিন্তু ভয় আছে। এতো দিন ভয়টা মনের ভিতর ছিলো, কিন্তু কয়েকটা ঘটনার পর ভয়টা বাইরে চলে এসেছে। ভয় মানে, সাক্ষাৎ ভূতের না- ঘটনার ভৌতিকতায় (অপ্রত্যাশিত অস্বাভাবিকতায়)। একটি সময় ছিলো, ভূত এবং আল্লাহ দুটোতেই ছিলো অবিশ্বাস। পরে উপলব্দি হলো, আমার অবিশ্বাস একটা স্পিরিচুয়াল ক্রাইসিসে রূপ নিচ্ছে। স্পিরিচুয়াল ক্রাইসস পানসে একটা জীবনোপলব্ধীর দিকে আমাকে ঠেলে দিচ্ছিলো। আমার বায়োলজিক্যাল স্ট্রেনথ স্পিরিচুয়ালিটি ছাড়া অসম্পূর্ণ। প্রচলিত কোনো পৌরলোকিক শাসকের আদর্শে আগ্রহী না হলেও আধ্যাত্মবাদের প্রতি আমার অসীম আগ্রহ আছে।

এতো বক-বকানির পর ভূত বিষয়ক গল্প কতোটা জমবে, জানিনা। তবুও জীবনের তিনটি বাস্তব গল্প বলি।

গল্প ১.

ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকে খুঁজছে বাংলাদেশ ২০০৯ -এর উপস্থাপিকা পুতুল বাসায় দাওয়াত। পুতুলের বাসায় ইতিমধ্যে অন্যান্য সহকর্মীরা চলে গেছে। আমি সবচেয়ে লেইট। যা হোক, পুতুলের বাসা কাটাসূরে। এটা হাজারীবাগ-মোহাম্মদপুরের পিছনদিকের একটি এলাকা। ওখানে আগে কখনো যাইনি। আমি কাটাসূর এলাকার জনাকীর্ণ রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে জনে জনে জিজ্ঞেস করছি, ৪৬৫ নম্বর বাসাটা কোথায়? বিরক্তির ব্যাপারটি হলো, একেকজন একেক দিকে দেখাচ্ছে। পুতুলকে ফোন দিলাম। বললাম, আমি মোড়ের একটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি, আসতে বেশিক্ষণ লাগবেনা। পুতুল বললো, যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দিবে। আমি ফোন রাখলাম এবং লোকজনকে বললাম। কেউই আমাকে দেখাতে পারলো না। দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একজন দোকানদার আমাকে কাছে ডাকলো। ঢেকে আমাকে একটা রাস্তা চিনিয়ে বললো, "এই রাস্তায় সোজা যাবেন তারপর বায়ে। সেখানে ৪৬০ সিরিয়ালের কয়েকটি বাড়ি আছে। কিছুদূর হাঁটলেই পেয়ে যাবেন। " আমি হাঁটছি। রাত ৯:৩০। খুবই বিরক্ত। মনে মনে বলছি - এখানে কারো বাসা হয়! খুব সিগারেটের তেষ্টা পেলো, কিন্তু এখানে কোথাও সিগারেটের দোকান নেই। একটা সময় হঠাৎ খেয়াল হলো, সিগারেটের দোকানতো দূরের কথা আশে পাশে কোনো মানুষের চলাচল নেই, সারি সারি পুরানো বাড়ি। একদম মৃত ও নিস্তব্ধ অন্ধকার চরাচর। কিছুদূর হাঁটার পর নাক বরাবর হালকা আলোর একটা ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো একজন যুবককে দেখে ভালো লাগলো। গেলাম তার কাছে। বললাম, ভাই ৪৬৫ নম্বর বাসাটা? লোকটি চট করে আমাকে দেখিয়ে দিলো ঐতো..এ গলির শেষ ৪ তলা বাড়িটা। তালগাছ ওয়ালা। আমি থ্যাংকু বলে পা বাড়ালাম। পেয়ে গেলাম আমার ৪৬৫ নম্বর বাড়ি। তালগাছ। কিন্তু তাজ্জব ব্যাপার হলো সেখানো কোনো বাড়িই নেই। শুধু নেম প্লেটে বাড়ির নম্বর লেখা। আমি এবার ভীষণ....ভীষণ বিরক্ত হলাম। ল্যাম্পপোস্টের ঐ যুবকটির ওপর ভীষণ মেজাজ খারাপ হলো। দূর থেকে তাকিয়ে দেখি, সে তখনও নির্বিঘ্নে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে হাত ইশারায় কাছে ঢাকলাম। যুবকটি তাতে সায় দিয়ে আমার দিকে আসতে থাকলো।

আজকে ইচ্ছে মতো ঝাড়বো লোকটিকে। ফাজলামোর একটা সীমা আছে। আমি যখনই এরকম একটা প্রিপারেশন নিচ্ছি তখনই আমার সবকিছু এলো মেলো হয়ে গেল। আমি কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলাম। আমার সামনে যুবকটি নয় বরং একটা থুথ্থুরে বুড়ো লোক এসে দাঁড়ালো। আমি আর তার দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারিনি। আমি আসলে মানতেই পারছিনা, যুবক কি করে বুড়ো লোক হয়ে যায়। এক নিশ্বাসে বেদম পা চালিয়ে এ গলি ও গলি হাতড়ে আমি আলোকিত প্রধান কোনো সড়কে এলাম। পুতুলকে ফোন দিলাম। পুতুল তার ভূলের জন্য ক্ষমা চাইলো! বললো, ওর বাসার নম্বর ৪৬৫ নয়, ৩৬৫!
( পরের কিস্তিতে ২ এবং ৩)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯
১৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×