কালীপূজার সন্ধ্যাবেলা।এগারো বছরের জ্যাঠতুতো দিদির সাথে পাঁচ বছরের আমি গিয়েছি গ্রামের মন্দিরে মন্দিরে প্রদীপ দিতে। মা কিভাবে অনুমতি দিয়েছিল মনে নাই। হয়তো আমি জেদ করেছিলাম, হয়তো মেজদি বলেছিলো সে ঠিকমত, খুউব ভালোভাবে দেখে রাখবে। সবাই তো জানে, মা আমাকে চোখে হারায়।
বেশ কয়েকটি মন্দির ভালোভাবেই ঘুরলাম। ক্লান্ত হয়ে পরের মন্দিরে গেলাম। সেখানে বেশ ভিড় ছিল। বসে বসে সবার প্রদীপ দেওয়া দেখছি। হঠাৎ খেয়াল হলো, আশেপাশে মেজদি নাই। ধক্ করে উঠলো বুকের ভেতর। কোথায় গেল মেজদি? এদিক ওদিক খুঁজে, বাইরে বেড়িয়ে এলাম। নাঃ, এখানেও নেই। তাহলে কোথায়?
আচ্ছা, সে যেখানে খুশী যাক। আমাকে তো বাড়ি যেতে হবে। রাস্তা-ঘাট ভালোভাবে চিনিনা। বছরে হয়তো একবার গ্রামে আসি। পাঁচ-ছয় দিন, কি সপ্তাহ থেকে চলে যাই। তবে সে সময় ভালোই ঘোরা হয়। বুঝতে পারছি, মন্দিরের পাশের অন্ধকার গলি পার হলেই বড়, আলো ঝলমলে রাস্তা। আর সেই রাস্তা ধরে একটু এগুলেই বাড়ি। কিন্তু, গলিতে তো একটুও আলো নেই। কালীপূজার রাত্রে শুনেছি ভুত বের হয়। যদিও কপালে ঘিএ ভেজানো তূলশী পাতা লাগানো আছে, গলিটা খুব বেশী অন্ধকার। যাব কি? রাম রাম রাম রাম..., একটু দ্বিধা করে পা বাড়ালাম।
পারলামনা, ফিরে আসলাম। খুব বেশী ভুতকাতুরে কিনা।
যে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি সেটি ধরে অনেকদুর গেলে আরেকটি বড় রাস্তা, সেই বড় রাস্তাটাও একটু একটু চিনি। মুশকিল হলো, ঠিক কতদুর গেলে সেটি পাওয়া যাবে আমার ধারনা নেই। তবু অনেকদুর, অনেক-অনেকদুর হাটলাম। কোনো হদিস নেই। বাড়ি ফেরার চিম্তায় অস্থির হয়ে গেলাম। তবে কি আমাকে ভুতের গলি দিয়েই বাড়ি যেতে হবে? তবে এতোখানি হাটলাম কেন?
ফিরে এসে অনেকক্ষন গলির সামনে দাড়িয়ে থাকলাম। তারপর... চোখ বুজে দিলাম দৌড়। চোখ বুজে, কারন চোখ খুললে যদি ভুত দেখি, আর অন্ধকারে চোখ খোলাই কি বন্ধই কি। একেবারে গলি পার হয়ে চোখ খুললাম।আঃ, কত আলো। আর সামনের বাঁকটা ঘুরলেই বাড়ি।
মা আমাদের দেরি দেখে চিন্তা করছিল। আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। তারপরেই প্রশ্ন উঠলো মেজদি কই। তার তো পথ হারানোর কথা না। যে মেয়েটা রাস্তা চেনেনা, সে বাড়ি এলো, আর যে চেনে, তার খবর নাই। খোঁজ খোঁজ খোঁজ। অবশেষে তাকে পাওয়া গেল, বাড়ির পিছনে লুকিয়ে ছিল। মেজদি আমাকে হারিয়ে ফেলার পরে অনেক খুজেছিল, না পেয়ে বাড়ি এসেছিল খবর দিতে। কিন্তু সাহস পায়নি কাউকে বলতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১২:১৫