somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘড়ি

১৯ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জামান সাহেব মেস থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঘড়িটা দেখে নিলেন। প্রায় বারোটা বাজে। অনেক রাত। কিন্তু মেসের আড্ডাটা এমন জমে উঠেছিলো যা উঠার কথা মনেই ছিলোনা। মেসের ম্যানেজার শামসাদ দারুন গল্প করে। শামসাদকে সবাই বেশ পছন্দ করে। ম্যানেজার বলে সবার উপর ছড়ি ঘুরায়না। তার নামেই সবাই মেসটা চিনে। প্রাক্তন রুমমেট সমীর ছিল, আসেপাশের রুম থেকেও পুরানো বাসিন্দারা যোগ দিয়েছিলো। আর জামান সাহেবের ছেড়ে আসা সীটে যে নতুন ছেলেটা এসেছে, সে তো ছিলোই। ছোকরা গাও-গেরামের মানুষ, জ্বীন-ভুতের গল্প ছাড়া কিছু করেনা। তাদের গ্রামে কোন বাড়িতে জ্বীন ঢিল ছুড়ে, কোন বাড়িতে থালাবাটি শুন্যে ভাসে, এইসব হাবিজাবি। তাঁকে হাসতে দেখে ছোকরা তো রেগে আগুন। পারলে তখনই জ্বীন এনে দেখায়। তখন মজা লাগলেও, এখন কেমন গা ছমছম করছে। ওই বেটাই একটা জ্বীন নাতো?

তিনি এই মাসছয়েকহলো বিয়ে করে মেস ছেড়ে বাসা নিয়েছেন। তারপরে খুব একটা আর ওখানে যাওয়া হয়নি। আজ সকালে বউ বাপের বাড়ি গেছে এক সপ্তাহের জন্য, তিনিও যেন হাঁপ ছেড়ে বাচলেন।উহ্, মেয়েরা যে এত খবরদারি করতে পারে! অফিস থেকে সোজা বাসায় ফিরতে হবে, জামাকাপড় যেখানে সেখানে ফেলা যাবেনা, মশারী না ফেলে ঘুমালে কেন, এটা খাবেনা, সেটা করবেনা, সারাদিন টিকটিক করতে থাকে। আজ অনেকদিন পরে তিনি ব্যাচেলার জীবনে ফিরলেন, হোকনা এক সপ্তাহের জন্য।

ঐ যে সামুব্লগের এক ব্লগার, মা.হাসান , বউকে বাপের বাড়ি পাঠানোর জন্য ব্যাস্ত, তিনি জামান সাহেবের ভাগ্যে হিংসা করতে পারেন। তবে জামান সাহেব কোনো তান্ত্রিক-গুনীন ধরেননি। উনার কপাল বেশ চওড়া। চওড়া কপালের জামান সাহেব সকালে মোড়ের হোটেলের পরোটা মাংস, দুপুরে অফিস ক্যান্টিনের তেল জবজবে বিরিয়ানী , সন্ধ্যায় পুরানো মেসে চা-তেলেভাজা আর রাতে মেসের বুয়ার হাতের গলা জ্বলানো ঝাল রগরগে রান্না খেয়ে, এবং আড্ডা দিয়ে সদ্যপ্রাপ্ত ক্ষনস্থায়ী স্বাধীনতা উদযাপনের পরিকল্পনা করছেন।

মেস থেকেই খেয়ে এসেছেন, বাসায় আর কোনো ঝামেলা নেই। সুতরাং ঘুমাতে চলে গেলেন। অমনি বিদ্যুৎ চলে গেলো। নাঃ, গরম পড়েছে। উঠে জানালাটা খুলে আবার শুয়ে পরলেন। ঘুম আসছেনা, জামান সাহেব এপাশ ওপাশ করতে লাগলেন। বউ বাপের বাড়ি যাওয়ার এই অসুবিধা। না না, অন্য কিছু না, বউ থাকলে পাখার বাতাস করতো আরকি। সব কিছু কি হয়? এই যে ঘরে ঢুকে জুতোর একপাটি দ্বরজার পাশে, অন্যপাটি ঘরের মাঝখানে খুলেছেন, মোজা জোড়া বোধহয় খাটের নীচেই চলে গেছে, বাথরুমের আলো নেভাননি, মশারী ফেলেননি, এসব কি বউ থাকলে হতো? না এত রাত অব্দি বাইরে থাকতে পারতেন? তবে বউ আসার আগে সব পরিস্কার করতে হবে। নইলে তুলকালাম কান্ড হতে পারে। একা বাসায় কেমন একটু ভয়ও করছে। হাস্যকর জ্বীন-ভুতের গল্পগুলো এখন ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছে। উহু, ওসব কিছু নেই, নিজেকেই বললেন জামান সাহেব।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলেন। শেষরাতের দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো। অন্ধকারের মধ্যেই বাথরুম থেকে আসা অতি সামান্য আলোয় দেখলেন, আলমিরার উপরে রাখা হাতঘড়িটা শুন্যে ভাসছে। জামান সাহেবের গলা শুকিয়ে উঠলো। চেচিয়ে উঠতে চেয়েও পারলেননা। ঘড়িটা ভাসতে ভাসতে তাঁর দিকেই আসছে। তাহলে জ্বীন-ভুত সত্যি আছে। তিনি নড়তে পারছেননা, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ঘড়িটার দিকে। আস্তে আস্তে ঘড়িটা তাঁকে অতিক্রম করে বিছানার অপর পাশে এগিয়ে চললো। তিনিও সম্মোহিতের মতো আস্তে আস্তে ঘুরে ঘড়িটা দেখতে লাগলেন। ঘড়িটা এবার বিছানা পার হয়ে জানালার দিকে যাচ্ছে । জামান সাহেবের নড়াচড়া করার ক্ষমতা নাই আর। তিনি শুধু দেখছেন। দেখেই চলেছেন। আর মাত্র দুই হাত, তাহলেই ঘড়িটা জানালা পার হয়ে চলে যাবে। হঠাৎ জামান সাহেব ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। তিনি লাফিয়ে উঠে ঘড়িটা ধরলেন। বাইরে ধুপধাপ কারো দৌড়ে পালাবার আওয়াজ পাওয়া গেলো।

পরদিন সকালে জানালার নীচ থেকে লম্বা সরু লাঠিটা তুলতে তুলতে জামান সাহেব ভাবলেন, আজকের সামুর আড্ডায় থুড়ি শামসাদের মেসের আড্ডায় কোন গল্পটা ভালো জমবে? ভুতের না চোরের?
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:৩২
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×