সাকিব
অনেক কষ্ট পেয়ে তোমাকে লিখছি। লেখাটি হয়তো তুমি পড়বে না। জানি ছোটখাটো বিষয় তোমাকে স্পর্শ করে না। খুব সহজে আমাদের আবেগকে তুমি তুচ্ছজ্ঞান করতে পার। এত কিছু জানার পরেও লিখছি। আসলে বিবেকের তাড়া খেয়ে শেষপর্যন্ত কয়েক লাইন লিখতে বাধ্য হচ্ছি।
এই লেখা শুধু তোমাকে উদ্দেশ্য করে। কারণ তুমি দেশের সম্পদ। তোমার বিচক্ষণ নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ছেলে বুড়ো প্রতিটি মানুষ তোমাকে নিয়ে গর্ব করে। তোমার অলরাউন্ড পারফরমেন্স দেখতে মাঠে আসে। তোমার নামে শিশুর নাম রাখে। তামাকে তারা হৃদয়ে ধারণ করে।
সেই মানুষগুলোর মনে কষ্ট দেওয়া কি উচিৎ হয়েছে? সাকিব তুমি দর্শকদের কিভাবে মূল্যায়ন কর জানি না। আমরা কিন্তু খেলেছি দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার কথা ভেবে। দেশের কথা মনে রেখে। আমিও তোমার মতো একসময় মাঠে খেলেছি। ভালো খেললে দর্শকরা বাহবা দিয়েছেন। খারাপ করলে দুয়ো দিয়েছেন। কই আমাদের সময়ের কোন ক্রিকেটার তো দর্শকদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী করেনি! তবে তুমি কেন করলে?
আমি এখন দর্শকদের কাতারে বসি। তোমাদের খেলা দেখে করতালি দেই। খারাপ খেললে বেফাস মন্তব্য করি না। সাধারণ দর্শকরা সহ্য করতে পারেন না। তাই ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেন। খুব বেশি কিছু তো বলেন না দর্শকরা। এখনকার দর্শক অনেক সভ্য। অশ্লীল ভাষায় তোমাদের গালাগাল করে না। গায়ে হাত তোলে না। জার্সি ধরে টানে না। বরং তোমাকে দেখলাম দর্শকদের উদ্দেশে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী করতে। তাহলে কি ধরে নেব এই প্রজন্মের ক্রিকেটাররা মানুষকে সম্মান দিতে শেখেনি। তাদের পরিবার এবং শিক্ষকরা মানুষ করে গড়ে তুলতে পারেনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিংয়ের সামনে তোমরা যখন একের পর এক উইকেট হারাচ্ছিলে তখন দর্শকদের দেখেছি দু’হাত তুলে প্রর্থনা করতে। শেষপর্যন্ত যখন তোমরা ৫৮ রানে অল-আউট হয়ে গেলে তখন তারা বিরক্ত হয়েছেন। ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিয়েছেন।
আমি ভিআইপি গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলাম। তোমরা ফিল্ডিংয়ে যাচ্ছিলে। ভিআইপি গ্যালারি থেকে তখন একদল তরুণ দর্শক সাকিব ভুয়া বলে স্লোগান দিচ্ছিলো। প্রতিউত্তরে তুমি যা করলে সেটা খুবই অশোভন। লিখতেও আমার কষ্ট হচ্ছে। সাকিব তুমি পেছনে হাত নিয়ে দুই আঙ্গুল সোজা করে বিকৃত ইঙ্গিত করলে ওই দর্শকদের উদ্দেশে। ফিল্ডিং থেকে ফেরার পথে দুই আঙ্গুল উঁচিয়ে সেই একই ভঙ্গী করলে। একজন শ্রেষ্ঠ সন্তানকে কেউ এমন বখাটে দেখতে চায় না।
তোমার আচরণ নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমাদের বন্ধুরা জানিয়েছেন তোমাকে খুশি করা সবচেয়ে কঠিন। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝ না। দেশের হয়ে খেলতে আগের মতো স্বচ্ছন্দ বোধ করো না। এমন কি এই দেশটাকেও এখন তোমার সহ্য হয় না। সেজন্য বিলেতে চলে যাওয়ার স্থায়ী বন্দোবস্ত করছো। তোমার বাবার কাছ থেকে আমার একজন সহকর্মী জেনেছেন লন্ডনে তোমার বাড়ি না যেন ফ্ল্যাট আছে। ক্রিকেট খেলে যা আয় হয়েছে তা থেকে একটা অংশ খরচ করেছ লন্ডনে ফ্যাট কিনতে। পরিবার নিয়ে সেখানে তুমি স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। কারণ বাংলাদেশের পরিবেশ এবং মানুষগুলোকে তোমার পছন্দ হচ্ছে না।
সাকিব উচ্চাবিলাস থাকা দোষের কিছু নয়। তাই বলে মানসম্মান, দেশ ও জাতিকে বিষর্জন দিয়ে নয়। দেশের মানুষকে হেও করে নয়। সাকিব তুমি দেশকে অনেক কিছু দিয়েছো মানি। কিন্তু এও বুঝতে হবে দেশ তোমাকে তৈরি করে দিয়েছে বলেই আজ দেশকে তার কিছুটা ফেরত দিতে পেরেছো। বৃটেন কিন্তু তোমাকে তৈরি করেনি। এই দেশের (বাংলাদেশ) মানুষ তোমাকে হিরো বানিয়েছে। এই দেশের সংবাদমাধ্যম তোমাকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তুমি তাদের উদ্দেশে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী করতে পারো না। কেউ তোমাকে সে অধিকার দেয়নি। যা করেছ আমি মনে করি সেজন্য জাতির কাছে তোমার ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।
ইতি
একজন সাবেক ক্রিকেটার।
সৌজন্যেঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চিঠিটি এইখানে "শেষ চিঠি" কমেন্ট করেছেন