একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া আর সব খানেই জ্ঞানী-গুণি, শিক্ষিত মানুষের কদর আছে। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ তাদের সম্মান দেয়, মর্যাদা দেয়
আর এখানে নিজের চেষ্টায় কেউ যদি সাফল্য পায়, তাহলে সবার চেষ্টা থাকে তাকে ন্যাংটো করা। তার প্যান্ট টেনে ধরা। এখানে যারা পড়াশোনা করে দেশের কথা মানুষের কথা বলে তাদের ব্যঙ্গ করা হয়। বলা হয় সুশীল-কুশীল আরো কত কি। আওয়ামী লীগ- বিএনপির বাইরে এখানে স্বাধীনভাবে কিছু চিন্তা করার সুযোগ নাই।
ড. ইউনূস যেখানে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড হতে পারে, সেখানে এই ইউনূস সাহেব তারা গড়া ব্যাংক থেকে বিতাড়িত। তার সামাজিক ব্যবসার সাফল্য অনেক দেশকেই অনুপ্রাণিত করেছে। অথচ এখানে তাকে বলা হয় সুদের কারবারি, সুদখোর কত কি। তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটান সরকার প্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরা।
ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হক অর্থ-যশ ছেড়ে চলে আসেন এদেশে, কিছু ছেলেমেয়কে সত্যিকার অর্থে শিক্ষিত করবেন বলে। ভীষণ কষ্ট পেলাম, যখন দেখি এই দু জন লাঞ্চিত হয়েছেন তাদের ছাত্রদের দ্বারা। ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা শিক্ষকদের পেটান কোনখানের এক ভিসি আমিনুলকে রক্ষার জন্য। আম জনতা ছাড়া আর কাউকে দেখলাম না স্যারের পক্ষে কথা বলতে।
ইদানিং পত্রিকায় আমাদের মেধাবী ছেলে-মেয়েদের বিশ্বজয়ের খবর বেশ বড় করে ছাপানো হচ্ছে। খুব মনযোগ দিয়ে পড়ি। আমার খুব ভাললাগে যখন দেখি আমাদের ছাত্ররা বিশ্বের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃতিত্বপূর্ণ রেজাল্ট করছে। বড় বড় কোম্পানির শীর্ষ পদে তাদের বসার যখন খবর বের হয় তখন গর্বে বুকটা ফুলে যায়। ওদের সবাই-ই সাক্ষাৎকারে বলে, তারা দেশে ফিরে আসবে। এ দেশটা গুছ্বাবে। তাদের লব্ধ জ্ঞান এদেশের মানুষের কল্যাণে লাগাবে।
ঠিক তখনই মনটা খারাপ হয়ে যায়। ভাবি, আহারে! ছেলেমেয়েগুলোর স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে। তারা যে মঙ্গলআলো জ্বালানোর জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, এখানে যে তাদের সেই মঙ্গলআলো নিভে যাবে। এখানে ভাল পড়াশোনা জানা কিংবা মেধাবী ছাত্রদের কোন মূল্য নেই। তারচেয়ে বরং কার কত বড় লবিং আছে, কার কত বড় মামা সেগুলাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তেল হল এদেশের এমন একটা ওষুধ, যাতে সব কিছুরই সমাধান মেলে।
তাই কষ্ট নিয়েই বলি তোমরা এখানে আর এসো না। ওখানেই থাক অন্তত সম্মান নিয়ে বেঁচে থাক।
এখানকার পরিবেশ কেমন যেন বদ্ধ, দূষিত হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনভাবে মুক্তভাবে কথা বলা যায় না। নেই কারো নিরাপত্তা। কখনো কাউকে আঘাত না করলেও, কখনো কারো অমঙ্গল না্ চাইলেও এখানে আঘাতের শিকার হতে হয়। এখানে কারোই মর্যাদা নেই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯