ঘটনা ১ঃ
প্রায় ১০ বছর আগের ঘটনা। আমি তখন মতিঝিলের কোন একটা মিশনারি কলেজে পড়ি। ল্যাব শেষে আরামবাগ মোরে দাঁড়িয়ে চা সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম। হঠাত দেখি দু তিনজন পুলিশ এক পিক আপ চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে চড় মারছে। পিক আপ চালকের দোষ একটাই সে কেন পুলিশের গাড়িকে হর্ণ দিয়েছে। চালকের পাশের সীটে একটা ছোট ছেলে বসে ছিল। ছেলেটি নেমে এসে পুলিশের কাছে ক্ষমা চাইতেই পুলিশ ছেলেটির বুক বরাবর লাথি বসিয়ে দিয়ে দিল। তারপর আরেকজন পুলিশ আবার বাচ্চা ছেলেটার গলা চেপে টেনে তুলে কিছু একটা বলে ধাক্কা মেরে আবার মাতিতে ফেলে দিল আর ড্রাইভারকে লাঠি দিয়ে বেশ দু খানা বাড়ি দিয়ে চলে গেল।
ঘটনা ২ঃ
২০০৮ সাল। আমি শহীদ মিনারের উল্টোপাশে এনেক্স ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি এক বান্ধবীর সাথে। ঠিক উল্টো পাশে কয়েকজন পুলিশ একটা বাচ্চা ছেলেড় মুখে রুমাল ঢুকিয়ে দিচ্ছে আর কয়েকজন পুলিশ হাসিতে ফেটে পড়ছে। আমি আস্তে আস্তে হেঁটে ওইপাশে গেলাম।
খা, রুমাল খা, ঘাম খা... । পুলিশগুলো একটা ঘামে ভেজা রুমাল ছেলেটার মুখের ভিতর ঢুকিয়ে মুখ চেপে ধরে আছে আর বাকি পুলিশেরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ছেলেটা চিৎকার করে কাঁদছে আর পুলিশ গুলো আরও জোরে হাসছে। দুইহাতে পুলিশের পা জড়িয়ে থাকা বাচাটি প্রাণপণে বাঁচার চেষ্টা করছে। আর একজন পুলিশ শক্ত হাতে বাচ্চাটার চুল ধরে তার মুখে রুমাল ঢুকিয়ে ধরে রেখেছে। আমার সাথে থাকা বান্ধবীটা হড়হড় করে বমি করে দিল। আমি পুলিশকে থামাতে গেলাম। আমি ঢাবির এটা বুঝে তারা থেমেও গেল। বাচ্চাটাকে টেনে নিয়ে আসলাম। হতভাগ্য কিশোর আমার পা জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। পুলিশগুলো চলে যেতে যেতে বলতে লাগলো, এইসব ড্যান্ডি খোরদের মুখে নাকি গু ঢেলে দিলে আরও ভালো হয়। তারা তো শুধু রুমাল দিয়েছে। ছেলেটার কাছে জানতে চাইলাম সে কি করেছে। সে জানালো, সে শুধু পুলিশের কাছে একটা বিস্কুট খেতে চেয়েছিল।
এরকম আরও অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে আমি এখনও বেঁচে আছি। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয়। নিঃশ্বাস বন্ধও হয়ে আসে। আমি কখনই কিছু করতে পারিনি এইসব লোকেদের। ক্ষমতায় আমি দূর্বল। এইদেশে যার হাতে অস্ত্র তার হাতেই ক্ষমতা। আর অস্ত্র হাতে সবাই সন্ত্রাসী। এই ক্ষমতাবান পুলিশেরা জনগণের নিরাপত্তা দেয়না, হয়ত দিতে চায়না। তারা জেতা চায় সেটা হল পৈচাশিক আনন্দ। আর সেই আনন্দের শতভাগ পূরণ হয় শিশু নির্যাতন করে। এইদেশে পুলিশেরা পথ শিশু নির্যাতন করে কেবল বিনোদনের জন্য, কখনও শিশু নির্যাতন তাদের উৎকৃষ্ট বিনোদন বলে মনে হয়।
আজ ফেইসবুক এ ঘুরতে ঘুরতে আবার এরকমই একটা ছবি পেলাম। কয়েকজন পুলিশ মিলে আরেকজন শিশুকে নির্যাতন করছে আর বাকিরা তার মজা লুটে নিচ্ছে। যেন এই আনন্দের কোন সীমা নেই। কে জানে হয়ত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোও হাসে।
আমি হাসতে পারিনা। আমার ইচ্ছে হয় এদের প্রত্যেককে কয়েক হাজার বছর ধরে ফাঁসিতে ঝোলাই। প্রাকশ্যে রাস্তায়। কিন্তু আমার ইচ্ছায় কিছু আসে যায় না। কারণ আমি সরকারের নিয়োজিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নই। হলে হয়ত আমিও এমন হয়ে যেতাম। তাই আমার খুব ঘেন্না হয়। আমি এই দেশে জন্মেছি তাই খুব ঘেন্না হয়, আমি বাংলাদেশী তাই খুব ঘেন্না হয়, আমি বাঙ্গালী তাই খুব ঘেন্না হয়। একদিন সবারই হবে। আমরা আমাদের পরিচয় লুকাতে নিজেই নিজের ভ্রূণ নষ্ট করে ফেলব। কারণ তখন সব কিছু কেবলই নষ্টদের অধিকারে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১