somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গৃহদাহ- প্রসঙ্গ নায়ক প্রতিনায়ক

২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮) বাংলা কথাশিল্পে অনুপেক্ষণীয় অপরাজেয় কথাশিল্পী। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্রান্তিকালে শরৎচন্দ্রের আকস্মিক আবির্ভাব। কেননা বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) গদ্যশৈলীর অনুঢংয়ের প্রভাব থাকার কারণে শরৎচন্দ্রকে রবীন্দ্রপ্রভাবিত শিল্পী আখ্যা পেতে হয়। কিন্তু অনতিকাল পরেই শরৎচন্দ্র তাঁর স্বকীয়তার স্বাক্ষর রাখেন এবং বাঙালির আবেগী আবহে রূপায়ণ করেন কালজয়ী সব চরিত্র। বাঙালি হিন্দু মধ্যবিত্তের যুগসংকট চরমে পৌঁছায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে, মানবিক মূল্যবোধের ক্রমভঙ্গুরতা এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের বেড়াজালে দিশেহারা বাঙালির প্রতিচ্ছবি রূপায়ণে সদা সচেষ্ট থেকেছেন। আবেগী কথকতায় পাঠককে মোহমুগ্ধ করে শিল্পনির্মাণে সিদ্ধহস্ত শরৎচন্দ্রের চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম-আর্দ্র-আবেগী সহযাত্রায় সঙ্গী হয় পাঠক; এই আবেগী পাঠকের সংখ্যা অদ্যাবধি ক্রমবর্ধমান।
শরৎ উপন্যাসে মননশীলতা ও বুদ্ধিবৃত্তি অপেক্ষা আবেগের প্রাধান্য বেশি। মননশীলতা ভাবাবেগের কাছে পৌনঃপুনিকভাবে পরাভূত হয়েছেÑসর্বত্রই ভেঙে গেছে ঔপন্যাসিক চরিত্রপুঞ্জের সব ধরনের বুদ্ধি-সংযমের বাঁধ। শরৎচন্দ্র সিদ্ধির জন্যে চরিত্রের এই ধরনের পরাভবকে প্রশ্রয় দেন এবং এইসব প্রবণতাই উপন্যাসের ধারায় তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ কিংবা বড় দোষ। তবে উপন্যাস পাঠক নন্দিত হওয়ার পেছনে আবেগ আশ্রিত ভাবালুতাময় জীবনই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে তা আজ অনস্বীকার্য।
ভূমিকেন্দ্রিক মধ্যবিত্তজীবনের বিচিত্র সংকট ও সমস্যায় ঋদ্ধ তাঁর উপন্যাস। কৃষিনির্ভর-মধ্যবিত্ত ও ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিক জীবন রূপায়ণে বহিঃবাস্তবতার পরিবর্তে প্রাধান্য পেয়েছে চরিত্রপুঞ্জের মনোজাগতিক বাস্তবতা। এছাড়া ভূ-সম্পত্তিকেন্দ্রিক জমিদারি ব্যবস্থার নানামাত্রিক অসঙ্গতি ও অনন্বয়ের ছবি সহসাই ধরা পড়ে। জমিদারি ব্যবস্থার অভিজ্ঞতা এবং তার প্রতি এক সহজাত সহমর্মিতাবোধ শরৎচন্দ্রের কথাসাহিত্যে পৌনঃপুনিক শিল্পরূপ লাভ করেছে।
জীবনপ্রত্যয় ও শিল্প চেতনায় শরৎচন্দ্র ছিলেন দূরাগত অতীতের মানুষ, যদিও তিনি ছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর সংক্ষুব্ধ কালের। উপন্যাসের বিষয় নির্বাচন কিংবা আঙ্গিক আবহে তিনি উনিশ শতকী আবহেই বিচরণ করেছেন। উপন্যাসের প্লট, দৃষ্টিকোণ, চরিত্রায়ন এবং অন্তিম মীমাংসা সর্বত্রই আমরা তাঁর এই পশ্চাৎমুখী মানসিকতা লক্ষ করি। জমিদারি ব্যবস্থাকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা, একান্নবর্তী পরিবারকে টিকিয়ে রাখা, সহানুভূতিতে সিক্ত করেও নারীকে পুরুষের মুখাপেক্ষী করে রাখা, সর্বোপরি সনাতন রক্ষণশীল মানসিকতার কাছে সত্তা বিসর্জনÑ এইসব নেতিবাদী প্রবণতার কারণে শরৎ-সাহিত্য আধুনিকতাকে অঙ্গীকার করতে সমর্থ হয়নি। সমসাময়িকতাকে তিনি কালজয়ী শিল্পী এবং বাঙালির আবেগ জীবনের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কথাকার এবং অদ্যাবধি শরৎচন্দ্রই বাঙালির জনপ্রিয়তম কথাশিল্পী।
“রবীন্দ্রনাথের অব্যবহিত পরেই শরৎচন্দ্রের আবির্ভাব যেন একটু অতর্কিত” Ñ সমালোচকের এ মন্তব্য আজ বাংলা সাহিত্যে একটি সর্বজনগ্রাহ্য বিশ্বাস। যাঁরা এই মতের সমর্থক তাঁরা রবীন্দ্র-শরৎ মধ্যবর্তীকালের স্বল্প মেধাসম্পন্ন লেখকদের পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে গেছেন। অথচ এসব লেখক সমকালে বিপুলভাবে সংবর্ধিত ও জনপ্রিয় লেখক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। একটি বিশিষ্ট শিল্পকৌশল বা শিল্প উপাদান তার পরবর্তী ধাপের ওপর ভর করেই সামনে অগ্রসর হয়। ভর করার বস্তুটি দুর্বল হলেও তাকে আশ্রয় করেই শিল্পের অগ্রযাত্রা থাকে অব্যাহত।
জ্যোতির্ময়ী প্রতিভায় উদ্ভাসিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম সশ্রদ্ধভাবে স্মরণে রেখেও বলা যায় যে বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শরৎচন্দ্রের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত বাংলা উপন্যাসের জগৎ মূলত ভাবপ্রধান। কিন্তু যথার্থ অভিনিবেশ নিয়ে লক্ষ করলে বোঝা যায় যে ভাবপ্রধান মূলধারার অভ্যন্তরে সকলের অগোচরেই প্রবাহিত হচ্ছিল ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তের একটি ক্ষীণস্রোত। বঙ্কিমচন্দ্র একজন বিশুদ্ধ রোমান্স লেখক। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনায় রোমান্স কোনো না কোনোভাবে ছায়াপাত করেছে। ফলে ইতিহাস এবং সামন্ত সমাজের আয়েশী জীবনের বাইরে উপন্যাসের উপাদান খোঁজা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। অবশ্য কখনো কখনো তিনি এই প্রেক্ষাপটের বাইরে দৃষ্টিক্ষেপণের চেষ্টা যে করেননি তা নয়। কিন্তু সেখানে একথাই সত্য হয়ে উঠেছে যে, বঙ্কিমচন্দ্র খাঁটি আদর্শবাদী এবং তাঁর উপন্যাসগুলোতে অতি সাধারণ জীবনযাত্রার উপরেও একটি অবাস্তব রমণীয় কল্পনার ছায়াপাত দুর্লক্ষ নয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে অন্য অনেক মহৎ শিল্পীর মতো বঙ্কিমচন্দ্র সময় ও পরিবেশের নির্মাণ মাত্র।
বঙ্কিমচন্দ্রের সময়ে সার্থক ঐতিহাসিক উপন্যাস প্রণেতা হিসেবে রমেশচন্দ্রের জনপ্রিয়তাও ছিল বঙ্কিমচন্দ্রের সমতুল্য। তাঁর রচনায় বঙ্কিমানুস্মৃতি আছে এমন অভিযোগ যেমন করা হয় তেমনি বঙ্কিম প্রভাব বলয়ের অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস হিসেবে সেসব রচনাতেই আবার নবতর উপাদানের সন্ধান পাওয়া যায়। বঙ্কিমচন্দ্রের অনুসরণে রমেশচন্দ্র প্রথম দিকে ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করলেও তাঁর ঐকান্তিক ইতিহাস নিষ্ঠার কারণে বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনা নির্ভর রোমান্সের পরিবর্তে তিনি পদচারণা করেছেন ইতিহাসের তথ্য নির্ভর বাস্তবতার পথে। শরৎচন্দ্রের যে ক’খানা উপন্যাস বিপুলভাবে পাঠক-সমালোচক নন্দিত হয়েছে, গৃহদাহ (১৯২০) তার অন্যতম। শরৎচন্দ্রের উপন্যাসধারায় গৃহদাহ একটি ব্যতিক্রমী সংযোজনা। সূচনাসূত্রে আমরা শরৎচন্দ্রকে ভাবাবেগের শিল্পভাষ্যকার হিসেবে অভিহিত করেছি। সামগ্রিক বিচারে তা-ই হওয়া উচিত শরৎচন্দ্রের অভিধা। কিন্তু গৃহদাহ উপন্যাসে একথা সর্বাংশে সত্য নয়। গৃহদাহ-ই শরৎচন্দ্রের একমাত্র উপন্যাস, যেখানে হৃদয়াবেগের সঙ্গে মননের সীমিত সমন্বয় ঘটেছে। এ কারণেই গৃহদাহ শরৎ-সাহিত্যের এক ব্যতিক্রমী সংযোজনা।
গৃহদাহ’র কাহিনী কাঠামোর নির্মিতি ত্রিভুজ প্রণয়ে ব্যক্তিক সংকটে ভুগতে থাকা তিনজন নর-নারীর অবস্থানে; পরকীয়া প্রণয়ের তীব্র ঝাঁঝালো আবেগ পাঠককে আকর্ষণ করে এবং শরৎ উপন্যাসের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। শরৎচন্দ্রের অন্য উপন্যাসের সঙ্গে গৃহদাহ-র মৌল পার্থক্য এই যে, এখানেই তিনি প্রেমকেন্দ্রিক প্লটের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ধরতে চেয়েছেন আধুনিক নর-নারীর দাম্পত্য জীবনের বহুমাত্রিক সংকটকে। আধুনিক মানুষের জটিলতা ও সিদ্ধান্তহীনতা, দাম্পত্য বিষয়ে পুরুষের আত্মজিজ্ঞাসা, নারীর আত্মস্বরূপ উন্মোচনÑইত্যাদি বিষয় এ উপন্যাসে যেভাবে পাওয়া যায়, শরৎচন্দ্রের অন্যকোনো উপন্যাসে তা পরিদৃষ্ট নয়। এ কারণে অনেক সমালোচক গৃহদাহ-কেই শরৎচন্দ্রের সবচেয়ে আধুনিক উপন্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
বস্তুত, এ উপন্যাসের পরিণতির প্রধান উপাদান প্রোথিত আছে অচলা মনোজগতের কেন্দ্রমূলে। অচলার চিত্তজাগতিক দোলাচলবৃত্তি ও সিদ্ধান্তহীনতা নষ্ট করেছে তার মনোভারসাম্য, দগ্ধ করেছে তার অন্তরালয়। অচলা কাকে চায়Ñ মহিমকে না সুরেশকেÑ সে সম্পর্কে সে নিজেই নিশ্চিত নয়। অষ্টাদশ পরিচ্ছেদে সুরেশের কাছে অচলার সংলাপে ধরা পড়েছে সিদ্ধান্তহীনতাজাত তার এই চিত্তদাহÑ “সুরেশবাবু, আমাকে তোমরা নিয়ে যাও -যাকে ভালোবাসিনে, তার ঘর করবার জন্যে আমাকে তোমরা ফেলে রেখে দিয়ো নাঃ।” অচলার এই আহ্বান সুরেশকে প্ররোচিত করেছে, মনে করেছে মহিমের কাছ থেকে চিরতরে ছিনিয়ে আনা যাবে অচলাকে Ñতার এই অবারণ উচ্ছ্বাস আর অসঙ্গত বাসনাই অচলার অন্তর গৃহদাহে ঘৃতাহুতি দিয়েছে।
অচলা বিয়ের পর স্বামীকে ভালোবেসেছে আর দশটি নারীর মতোই। কিন্তু একই সঙ্গে প্রাণচঞ্চল সুরেশের জন্য তার হৃদয়ের প্রধান অংশ থেকেছে সদা তৃষিত। মহিমের প্রতি তার দায়িত্ব ও ভালোবাসা ছিল বলেই সুরেশের জন্য তার আকর্ষণের তীব্রতা ও গভীরতা পরিমাপ করে একদা বিকট ভয়ে তার সর্বাঙ্গ কণ্টকিত হয়ে উঠেছে। সুরেশের প্রতি অনুরক্ততা তার নিজের কাছেই ধরা পড়ে যায় তাই সে স্বামী মহিমকে বিপত্তারণ রক্ষাকবচ হিসেবে সর্বমুহূর্তে চোখের সামনে রাখার চেষ্টা করে। দোলাচলে থাকা অচলা ব্যক্তিক সংকট সুরেশ-মহিমের দ্বৈরথ আকর্ষণে নিজেকে উদ্ধারের চেষ্টা করে।
স্বামীকে নিয়ে হাওয়া বদলে যাওয়ার সময় মহিমের অগোচরে অচলাই সুরেশকে সঙ্গী হতে আহ্বান করেছিল। সে কি কেবল ভদ্রতাবশত? সুরেশের আকাক্সক্ষা চিরকালের মতো ত্যাগ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই সুরেশের প্রেম অন্য কোথাও আশ্রয় খুঁজছে এ চিন্তা তার কাছে বেদনাদায়ক ও দুর্বিষহ মনে হয়েছে। সুরেশ সান্নিধ্যের দুর্বার আকর্ষণী শক্তি ভেদ করে সে বেরিয়ে আসেনি। সুরেশের স্ত্রী পরিচয়ের মিথ্যাচার ও গ ানি বহন করেও সে সুরেশের কাছেই থেকে গেছে। ট্রেনে সদ্য পরিচিত মেয়েটির কথার উত্তরে সুরেশকেই তার স্বামী বলে অন্যমনস্কভাবে পরিচয় দিয়েছে এবং সর্বশেষে সুরেশের কাছে প্রতারিত হয়ে ডিহরিতে এসে পৌঁছেছে। অচলা ইচ্ছে করলেই এই প্রবঞ্চনার ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো কিন্তু না; তা সে করেনি। বরং পরিবেশ প্রতিবেশের প্রবাহে নিজেকে নিঃশর্তে ছেড়ে দিয়েছে। নিজেকে সুরেশের গ্রাস থেকে বাঁচাবার কোনো কার্যকর চেষ্টা সে করেনি। তাই নির্জন বাড়িতে রাতে সুরেশের আবেগী আহ্বানের প্রত্যুত্তরে অচলার প্রণয়মাখা নির্লিপ্ত-উত্তর ‘না আজ নয়’। অর্থাৎ সুরেশের শয্যায় অচলার আত্মাহুতি শুধু পরিবেশের চাপে নয়। তাই যদি হতো তবে সুরেশের আহ্বানে তীব্র ঘৃণায় তাকে প্রত্যাখ্যান করতো; আশার বাণী থাকতো না। তার চেয়েও বড় কথা সুরেশ তাকে প্রতারণা করেছে, ট্রেনে একথা জানা মাত্র সে স্টেশন থেকেই ফিরতি ট্রেন ধরে কলকাতা ফিরে আসতে পারতো, তার মতো শিক্ষিত নাগরিক তরুণীর এতোটা বিহ্বল হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। সুরেশকে একান্তে করে পাওয়ার পরেই মহিমের জন্য তার দুর্নিবার অতৃপ্তি আবার তাকে অন্তরগর্ ানির চূড়ায় নিয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত অচলা আবার স্বামী মহিমের কাছেই তার শেষ আশ্রয়ের সন্ধান করেছে। অচলার নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ঘটনা দিয়ে শরৎচন্দ্র প্রকৃতপক্ষে দাম্পত্য জীবনের পবিত্রতার প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন।
গৃহদাহ’র কাহিনী-বৃত্তে জটিলতা সৃষ্টি এবং পরিণতি সাধনে মৃণালের মতোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন কেদারবাবু। উপন্যাসে এদের অবস্থান স্বল্প-পরিসর হলেও, প্রধান চরিত্রসমূহের বিকাশ ও পরিণতি, কাহিনীর নতুন-নতুন বাঁক পবির্তন এবং অন্তিম মীমাংসার ক্ষেত্রে এরা পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
অচলার বিপরীতে সুরেশ কিংবা মহিমের মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা তেমন তীব্রভাবে উপন্যাসে প্রতিভাত হয়নি। সুরেশের কাছে প্রেমের ক্ষেত্রে হৃদয়ের চেয়ে শরীরই হয়ে উঠেছে প্রধান, এক্ষেত্রে মহিমের অবস্থান বিপরীত। প্রেম ও শরীরকে কিভাবে একাত্ম করতে হয়, তা জানা ছিল না সুরেশের। ফলে অচলার দেহ পেয়েও দেহের প্রাণসত্তার স্পর্শ পায়নি সুরেশ। মহিমের মাঝেও তেমন কোনো মনস্তাত্ত্বিক বাতাবরণ নির্মাণ করেননি ঔপন্যাসিক। সমর্পিত মৃণাল ছাড়া মহিমের মনের সন্ধান কেউ-ই পায়নি। তার মন আছে কিনা, কখনো কখনো তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দেয়। অতএব বোঝা যায় মহিম বা সুরেশ নয় অচলার মনস্তত্ত্ব বিশে ষণই ছিল শরৎচন্দ্রের মৌল উদ্দেশ্য। মহিম ও সুরেশের প্রণয়ের দোলাচলে থাকা অচলার প্রত্যাবর্তন প্রথাগত সমাজকে রক্ষা করার তাগিদে, কেননা বঙ্কিমের মতো শরৎচন্দ্রও সামাজিক দায়বদ্ধতার বেড়াজাল মাড়াতে পারেননি। তাই অচলা-সুরেশ পরকীয়া প্রণয়ের পরিণতি বিচ্ছেদে; মিলনে নয়। কিন্তু ঘটনার বৈপরীত্য অনেক বেশি চমকপ্রদ; কেননা অচলা কেন্দ্রে অবস্থান করলেও বৃত্তের গণ্ডির বাইরে সুরেশ-মহিম কেউই যেতে পারেনি। পরকীয়া প্রণয়ের ঝাঁঝালো আবেগে সুরেশ-মহিম নায়ক-প্রতিনায়ক; আবার অচলার প্রত্যাবর্তনে তাদের বৈপরীত্য অবস্থান। দোলাচলে অচলার আঁচলেই নির্মিত হয় সংসারের গৃহদাহ; একথা অনস্বীকার্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১২ সকাল ১১:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×