somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজেশপুর ইকোপার্ক

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ ভোর ৬:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রকৃতিকে জানা এবং সৌন্দর্যকে উপভোগ করা বিনোদন প্রিয় যে কোন মানুষের কাছেই এক লোভনীয় বিষয়। সৌন্দর্যকে কে-না পছন্দ করে| আর সে সৌন্দর্য যদি হয় প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত আর মনুষ্য সৃষ্টির সংমিশ্রণ তাহলে তো কথাই নেই। এ রকম একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি হচ্ছে কুমিল্লার রাজেশপুর ইকো পার্ক। কুমিল্লা সামাজিক বন বিভাগের আওতাধীন রাজেশপুর ইকো পার্ক কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোড় কানন ইউনিয়নের অন্তগর্ত রাজেশপুর, জুগিরপুস্করিনী, জয়নগর, নিরভয়পুর, গোয়াল গাঁও এবং হাসিবপুর মৌজায় অবস্খিত। এটি কুমিল্লা জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের থেকে মাত্র ২.২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্খিত। এর আয়তন ৫৮৭.৮৯ একর। সাধারণ ভাবে এটি একটি ক্ষয়িষু শালের পত্রঝড়া বন হলেও বর্তমানে প্রায় ৩০৬ একর শালবনের পাশাপাশি ৮৭ একর উডলট বাগান, ৭৩ একর কৃষি বন বাগান, ২৬০ একর বেত বাগান, তেলসুর, গর্জন, কাজু বাদাম, লোহা কাঠ, শোভাবর্ধনকারী গাছ, বাঁশ ঝাড়, কদম, ঝারুলের শোভা এখানে পর্যটকদের মোহিত করে। স্বাভাবিক ভাবে রাজেশপুর ইকো পার্কের উত্তর ও পূর্বে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গহীন অরণ্য। এ অরণ্য দিয়ে মাঝে মাঝে হরিণ, বাঘ সহ নানা পশু এই পার্কের ভিতরে দেখা পড়ে। হাজারো সবুজের সমারোহে শোভিত বৃহদাকার এ বাগানে রয়েছে সবুজ শালবন সহ শতাধিক প্রজাতির বৃক্ষ লতা গুল্ল। প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত এ বনের গহিন অরন্যে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য। এই ইকো পার্কে ৮৪ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ১৩৫ প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে ৬ প্রজাতির উভচর, ৪০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১২৯ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
দ্গিন্ত বিস্তৃত শাল বৃক্ষের অপূর্ব নিরবিচ্ছিন্ন সমাহারে দৃষ্টি জুড়িয়ে যাওয়া এ পার্কে রয়েছে বন প্রহরী ব্যারাক, ইকো পার্কের নয়নাভিরাম সুসজ্জিত প্রবেশ গেইট, পিকনিক শেড এবং বনশ্রী বিশ্রামাগার। এছাড়া বিভিন্ন বন্য প্রাণীর মডেল, স্লিপার, দোলনা, শিশু কর্ণার, বসার জন্য হেলানো চেয়ার, সাইন বোর্ড, গাইড ম্যাপ ইত্যাদি স্খাপন করা হয়েছে। শালবন আর কাজু বাদাম বাগানের মধ্যে স্খাপিত হেলানো বেঞ্চ ক্ষনিক বসলেই প্রশান্তিতে ভরে যায় দেহ মন। আগত বিনোদন পিপাসুদের জন্য শাল, গর্জন ও বৈশাখী নামের তিনটি পিকনিক শেডের সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১০০০ টাকা আর বনশ্রী নামের বন বিশ্রামাগারটির ভাড়া ধরা হয়েছে ১৫০০ টাকা। অনুমতি সাপেক্ষে ফি দিয়ে এক দিনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। বিদ্যুৎ ও পানির সার্বক্ষনিক ব্যবস্খা রয়েছে এখানে। সাথে থাকছে প্রয়োজনীয় গাড়ি পার্কিয়ের ব্যবস্খা। বন বিশ্রামাগারের সামনে এবং বনের মাঝে মাঝে নির্মাণ করা ১১টি বিচিত্র ভাস্কর্য দর্শনীয়। প্রাণীর মডেল সহজেই ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণ করবে।

রাজেশপুর ইকো পার্কের উত্তর ও পূর্ব পাশ ঘেষে রয়েছে ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক সীমানা। উভয়দেশের মধ্যবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ড পর্যন্ত পায়ে হেটে যাওয়া যায়। দূর থেকে দেখা যাবে ভারতীয় অংশের দেয়া দীর্ঘ কাটা তারের বেড়া। পড়ন্ত বিকালে সীমান্ত সংলগ্ন শালবনে দেখা যায় অস্তগামী সূর্যের লুকোচুরি খেলা। চারদিকে দ্গিন্ত বিস্তৃত শালবনের টিলা। শালবনের মাঝখানে দিয়ে এঁকে বেঁকে ছড়িয়ে রয়েছে নীচু সমতল ভুমি| স্খানীয়ভাবে যাকে বলে বাইদ। সুবজে সবুজে আচ্ছাদিত শালবনের মাঝের সরু পথ আর বাইদ পেরিয়ে হাটতে থাকলে আগস্তুক পথিক সহজেই হারাতে পারে সময় আর পথের ঠিকানা।

অবিভক্ত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা বীরচন্দন্স মানিক্য বাহাদুর শালবন বিহারের বনভূমিতে আসতেন শিকারে| আজ সেই বনভূমি রাজেশপুর ইকো পার্ক হিসাবে পরিচিত। ২৪ আগষ্ট ২০০৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। প্রতিদিন বিকেলে হাজার হাজার তোতা পাখি দল বেঁধে এখানে আসে রাত্রী যাপন করার জন্য। আবার সকাল বেলা তারা চলে যায়। রাত্রী যাপনের জন্য বাংলাদেশের এই বনটি মনে হয় তাদের কাছে নিরাপদ। এখানে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত পাখিদের জন্য একটি নিরাপদ অভয়ারন্য ।
প্রতি বছর নভেম্বর থেকে এখানে মৌসুমী পিকনিক পার্টি আসা শুরু করে চলে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময় দর্শকদের বিপুল সমাগম ঘটে। এছাড়া প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্খান হতে অসংখ্য দর্শনার্থী আসে।

একজন ভ্রমন পিপাসুর জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবই আছে রাজেশপুর ইকো পার্কে। আসন্ন শীত মৌসুমে সবাই রাজেশপুর ইকো পার্কে ভ্রমনে আসার আমন্ত্রন রইল।
রাজেশপুর ইকো পার্কে একবার গেলে বার বার যেতে ইচ্ছে করবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×