somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কালো মা.........

০৯ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ প্রথম আলোতে একজনের কালো মাকে নিয়ে লেখা দেখে নিজেরও কিছু লিখতে ইচ্ছা হলো নিজের কালো মাকে নিয়ে, কিছু কিছু মিলও যেন খুঁজে পেলাম, নাকি সব মায়েরাই প্রায় এক.........





দুপুরে মায়ের সাথে কথা বলছিলাম, মনে হচ্ছিল মুখ দিয়ে যেন কথা বের হচ্ছে না। কিছুদিন ধরেই কিছু জায়গা-জমিসংক্রান্ত ঝামেলা যাচ্ছে, বাবার পেনশনের টাকা এখনো পাননি, তার জন্য সে কি ছুটাছুটি যাচ্ছে বাবার,...... সব মিলিয়ে মায়ের কত চিন্তা!!!!

আমার বড় খালা বড় মেয়ে আব্বাকে প্রায়ই জিজ্ঞ্যেস করতেন,
- খালু, আপনি কি করে খালাম্মার মতো এতো কালো মেয়ে বিয়ে
করলেন, কেমনে পছন্দ হলো, আপনি এতো ফর্সা.........

এই নিয়ে আমরা সবাই একচোট হাসতাম, মজা করতাম।

বাবা বলতেন, আমাদের পরিবারে আমরা ১১ জন ভাইবোন, বাবা মারা গেছেন, আমি বড় সন্তান, আমার উপর দায়িত্ব পুরো পরিবারের। সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করলে সে কি আমার পুরো পরিবারকে এতো সুন্দর করে আগলে রাখতে পারতো?? তোমার খালা সে রকম মেয়ে বলেই তো...... (বাবা, মাকে আগেই চিনতেন -- বসের মেয়ে)

মায়ের মুখে শুনতাম, যখন উনি আমার দাদার গ্রামের বাড়ি ছিলেন, অভাবের সংসার ছিল, সারাদিন কাজ করে ৩/৪ টা বাজে খেতে আসলে দেখতেন ভাতের পাতিল খালি। চাচা-ফুফুরা সবাই ছোট, তাদের তো এতো দায়িত্বজ্ঞান হয়নি, দাদু হয়তো জানেনও না।

কোন একদিন সকালের একটা রুটি লুকিয়ে নিজের স্যুটকেসে রেখেছিলেন, যদি ভাত আগেই শেষ হয়ে যায়.........কিন্তু রসিক সবচেয়ে ছোট দেবর সেটা আবিষ্কার করে ফেলে ......... আর তা নিয়ে সবার কি হাসাহাসি। ছোটচাচা বড় হবার পরও একথা বলতেন মাঝেমাঝে, এটা তার মুখেই শুনেছি .........এই রকম আরো কত কি??

অথচ মা ছিলেন মোটামুটি উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের, এতোটা অভাব বিয়ের আগে মাকে কখনো দেখতে হয়নি, শুধু ৭৪ ছাড়া।

পরে যখন শহরে বাসা নেয়া হলো আমার লেখাপড়ার জন্য, বাবার এক সরকারী চাকুরী দিয়ে আমাদের, দাদা বাড়ির, চাচা-ফুফুদের লেখা-পড়া --- এতোকিছু করা সম্ভব ছিল না, বাবা পাশাপাশি টিউশনি করতেন। মায়ের সব চাহিদা মেটানোর সাধ্য তার ছিল না। তাই মাও পাশপাশি কাজ খুঁজতে থাকেন। সেলাই জানার সুবাদে জাতীয় মহিলা সংস্থায় প্রশিক্ষিকা হিসেবে চাকুরীও পেয়ে যান একসময়। যদিও বেতন না , ন্যূনতম ভাতা পান, তাতেই খুশী আমার মা। মানুষ যে কত অল্পে খুশী হয়, তা আমার মাকে না দেখলে আমি কখনো বুঝতে পারতাম না।

সংগ্রাম করতে করতে আমাদের তিন ভাইবোনকে মানুষ করছেন। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি আমার বাবা কখনো উচ্চভিলাসী স্বপ্ন দেখতে পারেন না তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে। কিন্তু আমার মা তা পারেন, সব কাজের আগে আমাদের লেখাপড়ার গুরুত্ব তার কাছে বেশী, সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তারই উদ্যোগে, উৎসাহে, প্রচেষ্টা ও আগ্রহের কারণে আজ আমি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে আরেক বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ি দেয়ায় রত।

মায়ের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শিখেছি, এখনো শিখছি কিভাবে এগিয়ে যেতে হয়, কিভাবে হাজারো প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও জীবন সংগ্রামে হার মানতে হয় না, ধৈর্য ধরতে হয়, বুদ্ধি দিয়ে সব মোকাবিলা করতে হয়, মাথা গরম করে নয়। এই রকম আরো কত শিক্ষা......

অথচ এই আমি কি পারছি মায়ের জন্য আজ পর্যন্ত তেমন কিছু করতে? যখন চাকুরী করতাম, মাকে টুকটাক তার শখের কিছু জিনিস উপহার দিতাম, যেগুলো কেনার চিন্তা মা সবসময় প্রয়োজনের সামনে একপাশেই রেখে দিতেন, কিনতেন না। প্রয়োজনের তুলনায় খুব নগন্যই মাকে সাহায্য করতে পেরেছি, আরো যদি করতে পারতাম.........তাহলে আজকে মায়ের গলা ধরা কন্ঠ হয়তো আমাকে শুনতে হতো না, কিন্তু আমার তো সে সাধ্য নেই............হে খোদা, তুমি সহায় হও। আমার বাবা-মায়ের মনে একটু শান্তি দাও, সকল চিন্তা দূর করে দাও...... শুধু এইটুকু দোয়াই তোমাদের জন্য করতে পারছি মা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:২৫
৩০টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×