somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি লাশের জবানবন্দী

১৭ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় অর্ধলগলিত এক নারীর লাশ আজ কবর খুঁড়ে তোলা হলো। আবারো মর্গে নিয়ে ফরেনসিক করা হবে। তবে এবারের তদন্ত কর্তা একটু অন্যরকম। তিনি প্ল্যানচেট না করেই লাশের স্মৃতি থেকেই সরাসরি রেকর্ড নিবেন। কোন আত্মার সাথে কথোপকথন নয়। সরাসরি স্মৃতি রোমন্থন, লাশের স্মৃতি!



এসিপি দীপুঃ হ্যালো! ভাল আছেন?
মৃতদেহের করোটির ভিতরে কেমন যেন আলোড়ন তৈরী হলো। ভীষণ ব্যাথা! বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো! শ্বাস তো নেই! বুকের ব্যাথাটা ভেতরেও গুমরাতে লাগলো। কেমন জানি দমবন্ধ! মস্তিষ্কের ভিতরে যেন অনেক দূর থেকে একটা কথা ভেসে এলো, কেমন আছেএএএএএন? একটা গোঙ্গানী, মৃত্যুর যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে…
মৃতদেহঃ কে? কে? কে ওখানে? আমাকে বাঁচাও। ওরা আমাকে মেরে ফেলছে। প্লীজ তাড়াতাড়ি আসেন, আমাকে মেরে ফেলছে!
এসিপি দীপুঃ আমি দুঃখিত। আমার এখন আর সেই সুযোগ নেই!। আপনি আসলে প্রায় ছয় মাস আগেই মারা গেছেন! আমি এসেছি আপনার কাছ থেকে আপনার সেই সময়কার অনুভূতিগুলো জানতে। আপনি এখন মৃত!
মৃতদেহঃ কিইইই বলেন! আমার ছেলেরা কোথায়? গুন্ডারা ওদের মেরে ফেলবে! প্লীজ ওদের বাঁচান! ওদের বাবা বাড়ি নেই!
এসিপি দীপুঃ হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিকাছে। ওরা সবাই ভাল আছে। আপনাকে অনেক মিস করে তারা। আপনার ছোট ছেলে এখনো আপনার জন্য কাঁদে! আপনাকে ছাড়া ঘুমোতে চাই না। বাড়ির কাজও করতে চাই না। ওদের নানু ওদেরকে দেখাশোনা করে। ওরা ভালই আছে। আপনি ভাল তো?
মৃতদেহঃ না, ভীষণ কষ্ট, খুব ব্যাথা হচ্ছে, এই দেখুন রক্তে ভেসে যাচ্ছি আমি! আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন। প্লীজ জলদি!
এসিপি দীপুঃ আমি খুবই দুঃখিত! আচ্ছা, আপনার নাম কি?
মৃতদেহঃ আমি, আমার নাম তাসনিয়া, না আয়াত, না নুসরাত। মনে করতে পারছি না! আমার মাথায় ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে, রক্ত ঝরছে, আমি নড়তে পারছি না!
এসিপি দীপুঃ আচ্ছা, সেদিন ঠিক কিভাবে কি হলো? কারা কারা এসেছিল আপনার সামনে, আপনি দরজা খুললেন কেন? তারা আপনাকে কিভাবে কাছে পেল? কি ঘটেছিল?
মৃতদেহ গোঙাচ্ছে, ফোপাচ্ছে, দম ফেলতে পারছে না। কেমন যেন বুকের ভেতর শ্বাস আটকে আছে, বুকে ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে। সারা শরীরে ব্যাথা হচ্ছে ভীষণ।
মৃতদেহঃ পানি, প্লীজ পানি, পানি খাব।
এসিপি দীপুঃ এই সেন্ট্রি, একটু পানি নিয়ে আসো, উনার মুখে ঢেলে দাও। উনার স্মৃতি উনাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে।
মৃতদেহঃ আমাকে ওরা, ওরা, মানে আমার পরিচিত বলেই দরজা খুলেছিলাম। প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো। ওদের নাম, নাম, কি যেন, চাচা, আংকেল, উসদাজ, কে যেন, মনে করতে পারছি না। ব্যাথা, ব্যাথা, পুড়ে যাচ্ছি, কেরোসিন ঢেলেছে, সারা শরীর, আগুন লাগিয়েছে! আমাকে ভীষণভাবে … … … আমি বলতে পারছি না। অনেক গুলো টুকরো, হাত কেটেছে আগে, আমি চিৎকার করতে পারিনি, মুখ বাঁধা ছিল। … কষ্ট, কষ্ট, খুব কষ্ট, আমি মা-এর কাছে যাব, সবাইকে বলে দিব, আমাকে বাঁচান!
শব্দ বেরোচ্ছে না। বুকের ভিতরে শব্দ বাজছে, মুখ বাঁধা, শব্দ বেরোচ্ছে না, গোঙানি… পুড়ে যাবার কষ্ট!
মৃতদেহঃ আমার গলা কেটে দিল। যাতে আমি কাউকে জানাতে না পারি! অনেক লাশ, গলিত লাশ, অনেক মাটিচাপা লাশ, খড়ের গাদায় লুকোনা লাশ, ফ্যান-এ ওড়না প্যাঁচানো লাশ!
এসিপি দীপুঃ কাদের কথা বলছেন? আর কে কে ছিল আপনার সাথে?
মৃতদেহঃ আমাদের বাঁচান, ওরা আমাদের ধরে এনেছে, বিক্রি করে দিয়েছে। জাহাজে উঠিয়েছে, অন্ধকার, নিচে, খোলের ভিতর! বলে ক্যাম্প! ওরা এসেছিল, দালালেরা এসেছিল। আমাদের অনেক মেরেছে। আমাদের চোখ মুখ বাঁধা, চিৎকার দিতে পারি না।
এসিপি দীপু হতবাক! কি বলছেন এসব কাদের কথা বলছেন!
মৃতদেহঃ বাঁচান! পানি! ক্ষিদে পেয়েছে! আমরা যাব না! বাঁচান। মা! মা! বাবা! বাবা! ভাইয়া! আমাদের ছেড়ে দেন! যেতে দেন! ভীষন দুর্গন্ধ! বাথরুমে যেতে দেয় না, খেতে দেয় না! অনেক জীপ আসে, হেডলাইট, ভীষণ আলো!
গোঙানি, ভীষণ কষ্ট, বুকে ভীষণ ব্যাথা হচ্ছে! রক্ত ঝরছে! মাথার পিছনে ব্যাথা! কাঁধে ব্যাথা, হাত নেই, পা নেই, পুড়ে যাচ্ছে! গলা শুকিয়ে যাচ্ছে…
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:৪৮
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×