somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ও কালের দুপুর

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বারঘোনা বাজারটায় যেতে হয় বারঘোনা কলোনীটাকে পাশ কাটিয়ে । অনেক ভাবে যাওয়া যায় তবে গম ভাঙ্গানোর মেশিনটা পেরিয়ে যেতে সুবিধা । গম ভাঙ্গানোর মেশিনটা পেরিয়ে যাবার সময় গরম আটার একটা তামাটে পোড়া গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায় । লোকটা তখন ছুপড়ির বাইরে এসে বসে । গরমের তেতো একটা রোদ উড়ে বেরায় । কখনো আচমকা কর্ণফুলী রেয়ন মিলের বিটকেলে গন্ধ । লুঙ্গিটা হাঁটু পর্যন্ত তুলে লোকটা ফস করে বিড়ি ধরায় । প্রথম বস্তা গম উপুড় করে মেশিনের ইয়াব্বড় মুখে ছাড়া হয়েছে । পিচ্চি সহকারীটা সময় হলেই ডাক দেবে : ওস্তাদ । হাতে মেলা সময় আছে । এই সুযোগেই বিড়ি ধরানোর মওকা পাওয়া গেছে । গায়ের গেঞ্জীটা ঘামে গায়ে লেগে চিমসে রোদ্দুরে হয়ে আছে । বিড়ি দুই টান কষে টেনে দেবার পরই লোকটা ডাক দেয় কলের শব্দ ছাপিয়ে –
এরোই যা তো,একখান মুরগীর পাখনা লই আয় ।
লোকটা মুরগীর পাখা দিয়ে চোখ বুজে আরামে কান চুলকাবে । বিনা পয়সার সুখ । ১২ নম্বর লাইনের ঢোকার মুখেই অনেকগুলো বিশাল আম গাছ,একটা রেইনট্রি গাছও আছে বড় ড্রেনটার এপাশে । এতো বড় বড় গাছের কারনে রোদ এসে জমিনে পড়ে না ফলে প্রখর রোদে ও জায়গাটায় এ সময়ে ডাবের পানির মতো আরাম । লোকটার ছোট ভাই চৌদ্দগ্রামে রিক্সা চালাতো কিছুদিন আগ পর্যন্ত । আরেক রিক্সাওয়ালার বউয়ের সাথে খানিক ইচিকদানা বিচিকদানা হওয়ার সাথে সাথে ধরা,বিচার,শালিশ । ছোট ভাইটা চৌদ্দগ্রাম ছাড়া । ভাড়া রিক্সা কোনো রকম জমা দিয়ে চন্দ্রঘোনা এসে হাজির,বড় ভাইছা’র (বড় ভাই) কাছে । বড় ভাই এই গম ভাঙ্গআর মেশিনে কাজ করে । কাজ টেমপোরারী । পেপার মিলে এরকম টেমপোরারী শ্রমিক অগনিত । ইউনিয়ন নেতা কালাম গ্রুপ করে । লোকটার মাথায় এতো সব গ্রুপিং ট্রুপিং ঢোকে না । কালাম সাহেবের লাঠিয়াল পিলু ওকে এই গমের মেশিনে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে । মন্দ না । শুধু মিছিলের টাইম এলেই লোকটা ভড়কে যায় ।
তো ছোট ভাই ঘাড়ের উপর এসে পড়াতে লোকটার বউ খুব ঘ্যান ঘ্যান করলো । পারে তো নিজের ভাতার-কে ঘর ছাড়া করে । শেষে কালাম গ্রুপের কে যেন পরামর্শ দিলো বারঘোনিয়া কলোনীতে ঝাঁকা মাথায় করে ক্ষিরা বিক্রি করার জন্য । গরমে সামান্য লবন মরিচ দিয়ে কাটা ফালি ভালি ক্ষিরা খুব চলবে । অমৃত ।

ছোট ভাইটা সুরে সুরে ‘এই ঠান্ডা ক্ষীরাই’ ডেকে ডেকে ১২ লাইন ধরে ঢুকে পড়ে । কেপিএম স্কুলের সময় আসে । চারপাশ দল বেঁধে ছেলে মেয়েরা বই খাতা নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে । দলে দলে । লোকটা এরকম নানা বর্ণের ছেলে মেয়ে দেখে সুর করে ডাকা ভুলে যায় ।
কনকের গীটার প্র্যাকটিস বেড়ে যায় । ৭ নম্বর লাইনের মাঝামাঝি ওদের বাসা । ওই দুপুর বেলা কনক গান শুরু করে “আবার এলো যে সন্ধ্যা ..” । লাকী আখন্দ এসে দাঁড়ায় ৭ নম্বর লাইনে । জাহাঙ্গীর রেজা গোরা সাদা জানালার পর্দা তুলে দেয় । রেডিওর ভলিউম বেড়ে যায় আচমকা । প্রজাপতির মতো বাতাসে নার্গিস পারভীনের গানের গলা ভেসে আসে
ভালোবাসা দিয়ে মোরে এত সুখ দিয়েছো,চাই না আর চাই না
মোশাররফ তখন কালুর দোকানে সিঙ্গারা খেতে খেতে লাতু’র কথা ভাবছিল । কি করে আজ চন্দ্রিমা হলে নতুন মুক্তি পাওয়া ছবি “ সবুজ সাথী” দেখা যাবে । খুব প্যাথেটিক মুভি । কাঁদতে কাঁদতে সবাই হল থেকে বের হয় । এরকম সুখ সুখ ভাবতে এক কামড়ে সিঙ্গারা সাবাড় করবে ভাবতে গিয়ে জিভে পরম ছ্যাকা এসে লাগে । উফ । কালুকে লক্ষ্য করে মোশাররফ,দেখে কালু টাইট হয়ে ক্যাশে বসে আছে । মোশাররফ মুহূর্তে বুঝে ফেলে যে আজ বিকেলে ভিউ ক্লাবে অনুষ্ঠান আছে । অনুষ্ঠান এলেই কালু’র মাঞ্জা মারা যায় । চুলের ভাজ যেন নষ্ট না হয় সেজন্য টুপি পড়ে থাকে । ফিক করে হেসে ফেলে মোশাররফ ।

দুপুরটা চিল পাখির মতো উড়ে যায় । চন্দ্রিমা সিনেমা হলের পাশে নিরীহ গোছের মশু সিগারেটের ভিতর গাঁজা নিয়ে ঘোরে । ইশারা দিলেই ভদ্র লোকের মতো আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে । না চেনার ভান করে মুখ না ঘুরিয়েই জিজ্ঞেস করবে
কয়টা লাগবো ?
আবারো দুপুর নামে চন্দ্রঘোনায় । বারঘোনা বাজারে আজ কাঁঠাল আর কলার মেলা বসেছে । পাঁকা কাঁঠালের গন্ধে মৌ মৌ পুরো বাজার । ছোট ভাইটা তখন স্কুলের পথে ক’টা মেয়ের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে,সুরের ডাক থেমে যায় । ব্রিক ফিল্ডের পাশে রেলগাড়ির মতো চাকাগুলোতে রোদের তীব্র আলো পড়ে ঝলসে যায় ।
ঘর থেকে একটা বড়সড় পোটলার মতো কি যেন নিয়ে বেরুতেই জাহাঙ্গীর রেজা গোরা’র মা জোরে ডাক দিয়ে বসে :
ও গোরা , গোরা চাল নিয়ে যাচ্ছিস কনে ?
মুহূর্তেই খান খান রোদ ভেঙ্গে চৌচির হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বারঘোনায়,চন্দ্রঘোনায় । কী যে একটা দুপুর !
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×