আপেল মাহমুদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি হলের মধ্যে ১৫টিতেই গেস্টরুম বৈঠক, মিছিল ও ফ্রি খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছাত্ররাজনীতি।
মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ছাত্রদের তিনটি গ্রুপ থাকলেও বর্তমানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ সক্রিয়।
সভাপতির গ্রুপে রয়েছে ১শ ২০ থেকে ১শ ৫০ জন কর্মী এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপে রয়েছে প্রায় ২শ ছাত্রকর্মী। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সভাপতি গেস্টরুমে বৈঠক করেন এবং সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ বৈঠক করে। প্রতিদিনের বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে কে গেস্টরুমে আসেনি এবং কে মিছিলে অংশগ্রহণ করেনি। এখানে অধিকাংশ সময়ে ছাত্রদের মানসিকভাবে টর্চার করা হয় এবং মারামারিসহ বিভিন্ন কাজে উৎসাহ প্রদান করা হয়। এক সপ্তাহ আগে সভাপতি গ্রুপ গেস্টরুম বৈঠকে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে মানসিকভাবে টর্চার করার সময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। একটি ভালো রুমের আশায় প্রতিটি ছাত্রকে রাজনৈতিক মিছিল মিটিংয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিতে হয়। হলের কয়েকজন ছাত্র জানান, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ থেকে ১০ থেকে ১৫ জনের ছোট ছোট গ্রুপ করে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঠানো হয়। তারা সেখানকার আগন্তুকদের উত্ত্যক্ত করাসহ মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটায়। যেসব ছাত্র সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাদের খাবারের ব্যাপারেও রয়েছে বিশেষ সুযোগ সুবিধা। ক্যান্টিনবয়রা তাদের প্রতিটি রুমে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসে। এ ছাড়া নাস্তার দোকান ও ফেক্সি লোডের দোকান থেকেও তারা বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল
শেখ মুজিব হলের সভাপতির অধীনে রয়েছে প্রায় ১শ ৮০ জন ছাত্র এবং সাধারণ সম্পাদকের অধীনে রয়েছে প্রায় ১শ ৬০ জন ছাত্র। নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে তারা আলাদা সময়ে গেস্ট রুমে বসেন। শনি, রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি এই চারদিন রাত ১০টা থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সভাপতি এবং সোম, বুধ ও শুক্রবার রাত ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়মিত গেস্টরুমে বৈঠক করেন। যদি কোনও ছাত্র পরপর দুই দিন মিছিলে কিংবা গেস্টরুম বৈঠকে উপস্থিত না থাকেন তাহলে তাকে ফোর বেডের রুম থেকে গণরুমে পাঠান হয়। অনেক সময় ১ সপ্তাহের জন্য হল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এই হলের কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নতুন কোনও ছাত্র হলে উঠতে চাইলে তাকে গেস্টরুমে ডেকে মারামারি করার সাহস আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। যদি মারামারির সরঞ্জাম নিজের কাছে রাখাসহ মিছিল ও মারামারির সাহস দেখাতে পারে তাহলে তাকে ভালো রুমে থাকতে দেওয়া হয়। প্রতিদিন গেস্টরুমে যে বৈঠক হয় তার মূল বিষয়বস্তু গতদিন মিছিলে কে কে যায়নি, কে কে স্লোগান দেয় না ইত্যাদি। সিনিয়র ছাত্ররা যখন জুনিয়রদের ডাকবে তখন সাড়া দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই হলে প্রধান দুটি গ্রুপ ছাড়াও আরও কয়েকটি সাব গ্রুপ আছে যারা গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী ও নড়াইলের। পদ না পাওয়া এসব গ্রুপ আলাদাভাবে তাদের কার্যক্রম চালায় বলে সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের সূত্রে জানা যায়।
হলের যে সব ছাত্র সক্রিয় তাদের থাকার ব্যবস্থার পাশাপাশি ফ্রি খাবারেরও ব্যবস্থা করা হয়। সভাপতি গ্রুপের প্রায় ২০ জন পুরো ফ্রি এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ৩০ জন হাফ ফ্রি খাবার খান। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের প্রায় ১৮ জন পুরো ফ্রি এবং ৪০ জন হাফ ফ্রি খাবার খান।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল
জিয়া হলের সভাপতি গ্রুপে রয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ ছাত্র, যার সংখ্যা আনুমানিক ৩শ এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপে রয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন ছাত্র। প্রতিদিন গেস্টরুমে বৈঠক করা এই হলের ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক। রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক এবং এর পরপরই বসে সভাপতি গ্রুপ যেটি রাত প্রায় ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলে। প্রতিটি গ্রুপে প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের গেস্টরুমে আসা ও মিছিল করা বাধ্যতামূলক। তৃতীয় থেকে মাস্টার্সের ছাত্রদের ক্ষেত্রে সিনিয়র হিসাবে ছাড় দেওয়া হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের কোনও ছাত্র মিছিল, মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকলে শাস্তিস্বরূপ রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় তারা অন্য হলের বন্ধুদের কাছে থাকে বা ওই হলের মসজিদে রাত কাটান। হলে নতুন ছাত্র ওঠার সময় তার সাক্ষাৎকার স্বরূপ নাম, ঠিকানা, বিভাগের পরিচয় দেওয়ার পর নিজেকে সাহসিকতা ও সংগঠনের একনিষ্ঠ কর্মী ও নিবেদিতপ্রাণ ইত্যাদির পরিচয় দিতে হবে।
যদি কেউ মারামারির সময় সবার আগে থাকে, অস্ত্র চালনায় দুঃসাহস দেখায় তাহলে তাকে গণরুম থেকে কম ছাত্রের ভালো রুমে প্রমোশন দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র বলেন, গেস্টরুমে আলোচনার সময় বড় ভাইরা বলেন, তোমাদের সবার কাছে যেন বড় ভাইদের মোবাইল নম্বর ও রুম নম্বর থাকে। কেউ এ ব্যাপারে অলসতা করলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেওয়া হয়। কাসের কারণে কেউ যদি মিছিলে উপস্থিত হতে না পারে তখন হলের নেতারা বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় যে প্রতিদিন কাস করতে হবে।
এই হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নির্দিষ্ট কিছু ছাত্র আছে যারা নিয়মিত তিন বেলা ফ্রি খান। পুরো ফ্রি খাওয়া ছাত্রদের সংখ্যা প্রায় ৪০ এবং হাফ ফ্রি খাওয়া ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ৫০।
স্যার এএফ রহমান হল
এফ রহমান হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ থাকলেও বেশকিছু পদ না পাওয়া নেতাদের উপদল আছে। এখানে এককভাবে সভাপতি গ্রুপের তুলনায় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ বেশি শক্তিশালী। সভাপতি গ্রুপের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৮০ জন হলেও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপে আছে প্রায় ১শ ২০ থেকে ১শ ৩০ জন ছাত্র। দল ক্ষমতায় আসার পর প্রতিদিন গেস্টরুমে বসার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে সেটি শিথিল করা হয়েছে। মিছিল মিটিং কিংবা সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকলে শুধু তার আগের দিন তাৎক্ষণিকভাবে গেস্টরুমে আসতে বলা হয়। এই হলের কয়েকজন ছাত্র জানান, নতুন বর্ষের ছাত্র তোলার প্রক্রিয়া পুরোদমে চালু হলে পুনরায় নিয়মিত গেস্টরুমের বৈঠক চালু হবে। গেস্টরুমে আলোচনার প্রধান বিষয় কে কে মিছিল মিটিংয়ে ছিল না তা খুঁজে বের করাসহ ক্যাম্পাসে নিজ নিজ গ্রুপের সঙ্গে দলবেঁধে ঘোরা, টিভি রুমের সামনের সারির চেয়ারে বসা, রিমোট কন্ট্রোল না ধরা এবং বড় ভাইদের দেখলে সালাম ও হ্যান্ডশেক করা ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া হবে। হলের সক্রিয় ছাত্রদের জন্য রয়েছে ফ্রি খাবারের অফার। আর এ কারণেই হলের খাবারের মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে কয়েকজন ছাত্র জানান। বর্তমানে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন ছাত্র বা নেতাকর্মী ফ্রি খান এবং অনেকে খাবারের অর্ধেক বিল দিয়ে চলে যান।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হল
জহুরুল হক হলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উভয় গ্রুপই সক্রিয়। তবে পদ না পাওয়া আরও একটি গ্রুপ থাকলেও সেটি বর্তমানে নিষ্ক্রিয়। এখানে সভাপতি গ্রুপের কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২শ ২০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপে ১শ ২০ জন। তবে বর্তমানে জুনিয়র ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোম ও শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিটি দিন রাত ১০টা থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত গেস্ট রুমে বৈঠক করার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে বিশেষ করে মিছিল, মিটিংয়ের সময় এর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। মিছিল মিটিংয়ে না গেলে ধমক দেওয়া নেতাদের নিত্যদিনের কাজ।
দুই গ্রুপ হলের ৩টি ক্যান্টিনে প্রায় ৫০ জনের মতো ছাত্র ফ্রি খান। দুপুর ও রাতের খাবারের পাশাপাশি সকালে নাশতা করে টাকা পরিশোধ না করার প্রবণতাও বেশি। হলের কয়েকটি খাবারের দোকানদার অভিযোগ করেন, ছাত্ররা খাবার খেয়ে টাকা পরে দেবেন বলে চলে যান কিন্তু পরে আর দেন না। তারা আরও বলেন কিছু ছাত্র আছে যাদের কাছে ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা বাকি আছে কিন্তু টাকা পরিশোধ করেন না।
কবি জসীমউদ্দীন হল
জসীমউদ্দীন হলে সভাপতির অধীনে রয়েছে ১শ ৫০ জন কর্মী এবং সাধারণ সম্পাদক গ্রুপে রয়েছে প্রায় ২শ ২০ জন কর্মী। তবে এই দুটি গ্রুপ ছাড়া পদবঞ্চিত একটি গ্রুপ আছে, যাতে কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৩শ। হলের গেস্টরুমে বসার ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোনও নিয়ম নেই। সক্রিয় একজন নেতা গেস্টরুম পলিটিক্স সম্পর্কে জানান, নিউইয়ার এলে গেস্টরুম আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবে এবং খুব শিগগির এই কার্যক্রম চালু হবে। হলের কিছু সাধারণ ছাত্র জানান, গেস্টরুমে আলোচনার সময় সম্পাদককে কথা বলার তেমন সুযোগই দেন না সভাপতি। এটা নিয়ে কথাকাটাকাটির ফলে গেস্টরুমে বসা অনেকটা কমে গেছে। নিয়মিত গেস্টরুমে বৈঠক না হলেও মিছিল মিটিংয়ে অংশ গ্রহণ করতে হয় হলের ছাত্রদের। দলের কিছু একনিষ্ঠ কর্মী আছেন, যারা রুমে রুমে গিয়ে মিছিলের আগের রাতে বলে আসেন। যদি কেউ মিছিলে অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই দিন রাতে তাকে জবাবদিহি করতে হয়। পরীক্ষার কারণে মিছিলে কেউ উপস্থিত থাকতে না পারলে নেতারা বলেন, সারা জীবন কি তোমার পরীক্ষা থাকে, হলে উঠে তোমার পলিটিক্স কি শেষ হয়ে গেছে? গেস্টরুমে নেতারা প্রতিনিয়ত মারামারির প্রসঙ্গে বলেন, কে কে মারামারি করতে পারবি হাত তোল। এছাড়া তাদের প্রতি নেতাদের নির্দেশ হচ্ছে মারামারি শুরু হলে স্ট্রং থাকবি এবং কোনওভাবে পেছনে হটবি না। এই হলের প্রতিটি গ্রুপের মোট ৩০ থেকে ৩৫ জন ছাত্র ফ্রি খান এবং ৬০ থেকে ৭০ জন ছাত্র অর্ধেক বিল পরিশোধ করেন।
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হল
এসএম হল নামে পরিচিত এই হলে প্রেসিডেন্টের তুলনায় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ অধিক শক্তিশালী এবং তাদের কর্মীর সংখ্যাও বেশি। বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপে রয়েছে প্রায় ২শ ৫০ জন ছাত্র এবং সভাপতি গ্রুপে রয়েছে ৫০ জন ছাত্র। সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত গেস্টরুমে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের বৈঠক বসলেও সভাপতি গ্রুপ এখন আর বৈঠকে বসে না। সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কেউ মিছিল মিটিংয়ে নিয়মিত না এলে তাকে মানসিকভাবে টর্চারসহ অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। তারা আরও বলেন, ঠিকমতো পলিটিক্স না করলে ঘাড় ধরে হল থেকে বের করে দেব।
পূর্বে ফ্রি খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও এখন অনেকটা কমেছে। বর্তমানে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্র ফ্রি খান তবে কম টাকা দিয়ে খাবার খাওয়ার প্রবণতা অন্য ছাত্রদের মধ্যে বেশি।
শহীদুল্লাহ হল
শহীদুল্লাহ হলে সভাপতির রয়েছে ২শ থেকে ২শ ৫০ জন কর্মী এবং সম্পাদকের রয়েছে ১শ থেকে ১শ ২০ জন কর্মী। দুটি গ্রুপের মধ্যে তৃতীয় থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত কিছু ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয়, বাকিরা মিছিলের লাইন দীর্ঘকরণ ও স্লোগান ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সপ্তাহে দুই দিন গেস্টরুমে বৈঠকের আয়োজন করেন।
ফ্রি খাবারের প্রবণতা ছাত্রদের মধ্যে কম দেখা গেলেও ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্র ফ্রি খাবার খান।
অমর একুশে হল
একুশে হলে রয়েছে সভাপতির একচ্ছত্র আধিপত্য। সভাপতি গ্রুপের ছাত্রকর্মীর সংখ্যা ৩শ থেকে ৩শ ৪০ জন হলেও সম্পাদকের রয়েছে ৬০ থেকে ৭০ জন কর্মী। সপ্তাহে একদিন দুটি গ্রুপ একসঙ্গে গেস্টরুমে বসে। এই হলের এক ছাত্র জানান, এখানকার সবাই বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, ফলে কাস আর ল্যাবের চাপে রাজনীতি করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া ছাত্রনেতারা বেশি চাপও দেন না। তবে মাঝে মাঝে মিছিলে না থাকলে গালমন্দ করেন। তিনি আরও বলেন, এই হলের ছাত্রদের ফ্রি খাওয়ার প্রবণতা কম। সর্বোচ্চ ১০ জন এখানে ফ্রি খান।
শেরেবাংলা ফজলুল হক হল
ফজলুল হক হলে কোনও সাব গ্রুপ না থাকায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একসঙ্গে রাজনীতি করেন। প্রতিটি মিটিং একসঙ্গে করেন এবং তাদের মোট ছাত্রকর্মীর সংখ্যা প্রায় ২শ ৫০ থেকে ২শ ৮০ জনের মতো। এখানে নিয়মিত গেস্টরুমে বৈঠক না হলেও সপ্তাহে ১ দিন বৈঠক হয়। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে জানা যায় এখানকার ছাত্রদের মধ্যে ফ্রি খাওয়ার প্রবণতা কম, তবে যারা খান তারা টাকা কম দিয়ে খান।
বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল
এই হলে কোনও কমিটি না থাকলেও নিপা ও রুমীর দুটি গ্রুপ সক্রিয়। এখানে পলিটিক্স নেই বললেই চলে। যারা এই দুটি গ্রুপের মাধ্যমে হলে ওঠে তাদের রাজনীতি করতে হয়। মিছিল, মিটিংয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও তারা মাঝে মাঝে চাপ সৃষ্টি করেন। হলে রান্নার আলাদা ব্যবস্থা থাকায় ছাত্রীদের মধ্যে ফ্রি খাওয়ার প্রবণতা কম। তবে কিছু ছাত্রী ২৫ টাকা বিল হলে ১৫ থেকে ২০ টাকা পরিশোধ করেন।
শামসুন্নাহার, কুয়েত মৈত্রী ও রোকেয়া হল
শামসুন্নাহার, কুয়েত মৈত্রী ও রোকেয়া হলে গত ৮ বছর যাবৎ কোনও কমিটি নেই। শামসুন্নাহার হলে বর্তমানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নুসরাত ও স্বর্ণা এবং রোকেয়া হলে মিথি, নাসরিন, উর্মিসহ বেশ কয়েকজন নেত্রী। শামসুন্নাহার হলে মোট ছাত্রীকর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫০ এবং রোকেয়া হলে ৮০। প্রত্যেকে রান্না করে খান বলে ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়ার প্রবণতা নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবিনা ও স্নিগ্ধা। সক্রিয় কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৫০। এখানে কয়েকটি রুম আছে যেগুলো তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক খেলাধুলাসহ সব কাজ একসঙ্গে করলেও দুজনের রয়েছে আলাদা ছাত্রকর্মী। সভাপতির অধীনে রয়েছে ২শ কর্মী এবং সম্পাদকের অধীনে আছে প্রায় ১শ ছাত্রকর্মী। সপ্তাহে তিন দিন শনি, সোম ও বুধবার নিয়মিত গেস্টরুমে বৈঠক বসে এবং সেটা রাত ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। গেস্টরুমে বসার আগে রাতে প্রথমে চারতলার একটি নির্দিষ্ট রুমে একত্র করা হয় এবং ১০টার দিকে গেস্টরুমে দল বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। গেস্টরুমে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার চেয়ে সিনিয়রদের সম্মান করার নিয়মকানুন শেখানো হয়। হলের এক ছাত্র জানান, আমাদেরকে খাবারের ক্যান্টিনের প্রথম ৩টি টেবিলে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এখানে নেতারা বসবেন। এছাড়া টিভি রুমের প্রথম সারিতে বসা ও রিমোট ব্যবহারের ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সাপ্তাহিক ২০০০ এ ৩০ জানুয়ারি ২০১০ লেখাটি প্রকাশিত

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


