somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজধানী ঢাকা, পুকুর নেই খালও নেই

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাজধানী ঢাকা পুকুর নেই খালও নেই
আপেল মাহমুদ



একের পর এক ভরাট হচ্ছে ঢাকার পুকুর ও খাল। কমে আসছে জলাশয়ের সংখ্যা। সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুকুর-খাল ভরাট করায় জীববৈচিত্র্যে ব্যাঘাত ঘটছে। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।
মৎস্য অধিদপ্তরের এক তথ্যে জানা যায়, ঢাকা মহানগরের পরিসংখ্যান অনুসারে ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুরের সংখ্যা ছিল ২ হাজার এবং ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালের দিকে কমে তা ১ হাজার ২শতে নেমে আসে। তিন বছর আগে মৎস্য ভবন থেকে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে তা ২শতে নেমে এসেছে। মৎস্য ভবনে কর্মরত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ঢাকা শহরের পুকুরগুলো আমাদের আয়ত্তের মধ্যে না হলেও আমরা একটি সার্ভে করেছিলাম, যেখানে ২শর অধিক পুকুর পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমানে অনেক পুকুর ভরাট করায় এই সংখ্যা আরও কমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে হিসাব করলে ডোবা ও পুকুরের সংখ্যা ১শর অধিক হবে না। ঢাকা শহরে পুকুরের সঠিক সংখ্যা কত তার হিসাব নেই ঢাকা সিটি করপোরেশনে। এমনকি অতীতে কতটি ছিল তার কাগজও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুকুরের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডিসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, ঢাকা শহরের পুকুর সম্পর্কে আমার কোনও তথ্য জানা নেই। ডিসিসির অধীনে কতটি পুকুর আছে তার হিসাব মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা বলতে পারবে, কারণ পুকুরে ওষুধ ছিটানোর কাজ তারাই করে। মশক নিয়ন্ত্রণ শাখার ঊর্ধ্বতন কীট-নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ডা. নাসিম উস-সেরাজ এ ব্যাপারে বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি কত পুকুর আছে তার হিসাব আমার জানা নেই। আমাদের কাগজে এর হিসাব থাকলেও মূলকপিসহ সব কাগজ দুদকে পাঠানো হয়েছে। কোনও ফটোকপি কিংবা এ ব্যাপারে কোনও তথ্য এখানে নেই। ডিসিসি সূত্রে জানা যায়, ১০টি অঞ্চলে মোট পুকুর ও ঝিলের পরিমাণ ৫ হাজার ১শ ৪২ বিঘা। এর মধ্যে ১ নং অঞ্চলে পুকুর আছে ১ হাজার ২২ বিঘা, ৩ নং অঞ্চলে ২শ ৭০ বিঘা, ৪ নং অঞ্চলে ১ হাজার ৪২ বিঘা, ৫ নং অঞ্চলে ১শ ৭৪ বিঘা, ৬ নং অঞ্চলে ৫শ ৭ বিঘা, ৭ নং অঞ্চলে ৪শ ৬২ বিঘা, ৮ নং অঞ্চলে ৫শ ৫৩ বিঘা, ৯ নং অঞ্চলে ৬শ ৫৮ বিঘা, ১০ নং অঞ্চলে ১শ ৭৫ বিঘা এবং ঝিল আছে ১শ ৭৫ বিঘা। এর মধ্যে ২ নং অঞ্চলে রয়েছে নবাববাড়ি পুকুর, নয়াবাজারে হাজি আবদুর রশীদ লেনের বংশাল পুকুর ও আলু বাজারের সিক্কাটুলী পুকুর। এছাড়া অঞ্চল ৫-এ ৪৯ থেকে ৫৭ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত আছে ১৮টি পুকুর, অঞ্চল-৩-এ আছে ২১টি এবং অঞ্চল-৬-এ আছে ২০টি পুকুর। এগুলোর কোনটি সরকারি আর কোনটি ব্যক্তিমালিকানাধীন তার হিসাব ডিসিসিতে নেই। পুকুরের সঠিক হিসাব সম্পর্কে পূর্ত বিভাগের উন্নয়ন ও সমন্বয় শাখাতে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোনও হিসাব দেখাতে পারেনি।
ঢাকা শহরের বাসিন্দা আহমেদ মুসা বলেন, আগে অসংখ্য পুকুর থাকলেও বর্তমানে তা ভরাট করে বাসাবাড়ি করা হয়েছে। শাহবাগে বড় দুটি পুকুর ছিল, যার একটি আজিজ সুপার মার্কেট এবং অন্যটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল ও জিয়া হল করা হয়েছে। বাংলাভিশনের বিল্ডিংও ছিল বড় একটি পুকুর। আজিজ সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশেও একটি পুকুর ছিল, যেখানে পাওয়ার হাউস করা হয়েছে। ২২ তোপখানা রোডেও একটি পুকুর ছিল। যেখানে ওয়ার্কার্স পার্টির অফিসের বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে। শহরের শান্তিনগরের পীর সাহেবের গলিতেও অনেক বড় একটি পুকুর ছিল কিন্তু চারদিক থেকে ভরাট করার কারণে এটা এখন ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে। শহরের ঝিগাতলা, রায়েরবাজার এলাকায় প্রচুর ডোবা ছিল। এখন এ ডোবাগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে বহুতল ভবন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার দুবছরের মধ্যে সরকার নিজেই আইন অমান্য করে বাসাবো, খিলগাঁও, রাজারবাগ এলাকায় যে পরিমাণ পুকুর ছিল তার প্রায় সবই ভরাট করে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুকুর,কমলাপুর রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে রেলের ঝিল, আহমদবাগ এলাকার ঝিলের নাম মানচিত্র থেকে উঠে গেছে। পুলিশ লাইনের পুকুরে বর্তমানে গাড়ি পার্ক করা হয়। রেলওয়ের ঝিল দুটিতে হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টার হচ্ছে। খিলগাঁও-এর বিখ্যাত পুকুর হয়ে গেছে খেলার মাঠ। পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্য সিক্কাটুলী পুকুরটিও হুমকির মুখে। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, একটি অসাধু গোষ্ঠী জাল দলিল করে পুকুরটি ভরাট করে দখলের পাঁয়তারা করছে। দখলকারীরা পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করছে। তারা সিক্কাটুলী পুকুর উদ্ধার করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ঢাকা শহরে পুকুরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আমাদের পরিবেশের ওপর যে প্রভাব পড়ছে সে সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী মোঃ ফজলুল হক বলেন, পুকুর ভরাটের ফলে প্রতিটি জীবের জীবন বৈচিত্র্যে ব্যাঘাত ঘটছে। পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতে পানি বের হওয়ার জায়গা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোথাও আগুন লাগলে পাশে পুকুর থাকলে পানি দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব কিন্তু পুকুরের অভাবে এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে প্রচুর জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।

মহানগরের বাইরেও কমছে পুকুর

ঢাকা মহানগরের বাইরে সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারেও কমছে পুকুরের সংখ্যা। ফলে এসব পুকুরে মাছের উৎপাদনও কমে এসেছে। আগে সরকারি পুকুর ছিল ১২৫টি, যার পরিমাণ ৭৫.৮২ হেক্টর এবং বেসরকারি ছিল ৬ হাজার ৭শ ১৩টি, যার আয়তন ৪৯৮৫ হেক্টর। ২০১০ সালের হিসাব অনুসারে খাস পুকুরের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও বেসরকারি পুকুরের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭শ ২৯টিতে। অর্থাৎ ১ হাজার ৯শ ৮৫টি পুকুর কমে গেছে। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলার মানুষ পুকুর ভরাট করে বিল্ডিং তৈরি করছে। এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুকুর ভরাট করে বিক্রি করছে। ফলে পুকুরের সংখ্যা কমে আসছে।

অবশিষ্ট কিছু পুকুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুর নিয়ে কুসংস্কার ছিলÑ এখানে গোসল করতে গেলেই মারা পড়ে লোকজন। এই কুসংস্কারের ভিত্তিটা যে কতটা পাকাপোক্ত সেটা টের পাওয়া যায় কর্তৃপরে সতর্কবাণী দেখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুর আর জহুরুল হক হলের পুকুরেও সাঁতরানো যায় অনায়াসে।
রমনা পার্কের পুকুরটি অসম্ভব রকম সুন্দর। চারদিকে স্নিগ্ধ সুন্দর প্রকৃতি। তার মাঝখানে টলটলে জলাধার। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই এখানে এলে পুকুরে নামতে ইচ্ছা করবেই। চাইলে পুকুরে সাঁতার কাটতে পারেন। তবে ততণ, যতণ পাহারাওয়ালার চোখে না পড়ে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুকুরে পুণ্যার্থীরা স্নান সারতে আসেন নিয়মিত। পুণ্য লাভের আশায় না হোক, গরম থেকে বাঁচতে চাইলে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন আপনিও। কদমতলা-রাজারবাগের শ্রীশ্রীবরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে রয়েছে গঙ্গাসাগর দিঘি। এই দিঘিটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশাল। দেখতে খুবই মনোরম। বহু লোক প্রতিদিন এখানে আসে গোসল সারতে। সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারের পুকুরও উন্মুক্ত রয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য। এখানে চাইলে যে কেউ এসে সকাল-সন্ধ্যা সাঁতার কাটতে পারবে। পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী-ইসলামপুরের নবাববাড়ির পুকুরে নামতে হলে অবশ্য কিছু টাকা খরচ করতে হবে। মাত্র তিন টাকাতেই মেলে এখানে গোসল করার অনুমতি। তবে এই পুকুরে গোসলের সময় কোনও ধরনের সাবান ব্যবহার করা যায় না।
পুরান ঢাকার বংশাল পুকুরে রয়েছে সিঁড়িসহ দুটি ঘাট। বংশালের পুকুরটি ছয় বিঘা জমির ওপর কাটা। ১৮৪০ সালের আগে এলাকাবাসীর পানি সমস্যা সমাধানের জন্য বংশালের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও জমিদার হাজি বদরুদ্দীন ভুট্টো নিজ জমিতে খনন করেন এ পুকুর। এ কারণে পুকুরটি ভুট্টো হাজির পুকুর হিসাবেও পরিচিত। প্রায় ৪শ ফুট লম্বা ও ২শ ৫০ ফুট চওড়া এ পুকুরটির গভীরতা ৩০ থেকে ৪০ ফুট। পুকুরটির চারদিকে পাকা বেষ্টনী ও রাস্তা। রাস্তার পাশ ধরে পুকুরের চারদিকে সারিবদ্ধভাবে লাগানো আছে নারকেল গাছসহ অন্যান্য গাছ। টলটলে স্বচ্ছ পানিতে এসব গাছের ছায়া সৃষ্টি করে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। পুকুরটির চারদিকেই লোহার গ্রিল দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনী, যাতে কোনও শিশু পানিতে না পড়ে যায়। পুকুরটির উত্তর ও দণি পাশে রয়েছে দুটি শান বাঁধানো ঘাট। ঘাট দুটির প্রবেশপথে আছে লোহার গেট আর ওপরে ছাউনি। উত্তর পাশের ঘাটটি ব্যবহার করেন বংশালে বসবাসরত ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা, আর দণি পাশের ঘাটটি বাইরের লোকের জন্য। এজন্য এ পাশের ঘাটে বসানো হয়েছে টোল ব্যবস্থা। প্রতিবার গোসলের জন্য প্রত্যেককে দিতে হয় দুটাকা। দণি ঘাটের পাশেই পুকুরের পানিতে বসানো হয়েছে পানির পাম্প। তার ওপরে পাকা পাটাতনের ওপর আছে পানির ট্যাঙ্ক। পাম্পে তোলা এ পানি এলাকাবাসী ব্যবহার করছে খাবার ও রান্নাবান্নার কাজে।
পুকুরটি নিয়ে ভুট্টো হাজিরই বংশধর ও ঘাটের টোল আদায়কারী মোজাফফর হোসেন বলেন, এই দণি ঘাটেই প্রতিদিন ১ হাজার ২শ থেকে ১ হাজার ৫শ লোক গোসল করে। সে হিসাবে দুঘাটে প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার লোক গোসল করছে। তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকাসহ এ নগরীতেই এক সময় আরও অনেক বড় পুকুর বা দিঘি ছিল, বর্তমানে সেগুলোর কোনও অস্তিত্ব নেই, বিলীন হয়ে গেছে রণাবেণের অভাবে।

নওয়াব আবদুল বারীর পুকুর

আহসান মঞ্জিল পরিবারের নওয়াব আবদুল বারীর খননকৃত বিশাল পুকুর। সময়টা ১৮৩৮ সাল। প্রায় ১৭১ বছরের পুরনো ইতিহাস। আর অনেক উত্থান-পতনের সাী এই গোল তালাব বা গোল পুকুর। বড় বড় বিল্ডিংয়ের ঘেরাটোপে একখ- কোমল স্নিগ্ধতা এই পুকুর। অনেক চড়াই-উত্তরাই পেরিয়ে আজ এই পুকুর পরিচালিত হচ্ছে মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। এই ট্রাস্ট পরিচালিত হচ্ছে নওয়াব পরিবারেরই বংশধর, স্থানীয় মুরব্বিদের দ্বারা। এখানে গোসলের ব্যবস্থা আছে কিন্তু কাপড় কাঁচা, সাবান ব্যবহার করা নিষেধ। মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই প্রতিবছর এই পুকুর পাড় ঘিরে আয়োজিত হয় মীনা বাজার, মেলা, মাছ ধরা প্রতিযোগিতা। আর প্রতিদিন বিকালের আড্ডা তো আছেই।

৪টি খাল নিশ্চিহ্ন, ১৩টি থেকেও নেই

ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার মূল কারণ অবৈধভাবে খাল দখল ও ভরাট করা। স্বাধীনতার আগে এ শহরে ৪৭টি খাল ছিল। বেশিরভাগ খালের প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটের বেশি। খালপথে নগরের পানি নিষ্কাশিত হতো। স্বাধীনতার পর মাত্র তিন যুগের ব্যবধানে ঢাকা মহানগর এলাকার ২৫টি খাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ২২টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও সেগুলো ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। শাহবাগ থেকে মগবাজার পর্যন্ত খাল ছিল, ঢাকা ওয়াসার মানচিত্রে এর নাম পরীবাগ খাল। তবে সেখানে এখন খালের কোনও চিহ্ন নেই, খালটি এখন সোনারগাঁও সড়ক। পরীবাগ খালের মতোই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঢাকার অবশিষ্ট খালগুলো। রাজধানীর পানি খালগুলো দিয়েই বুড়িগঙ্গাসহ আশপাশের নদীতে গিয়ে পড়ছে। খালগুলো বেদখল হওয়ায় পানি আটকে প্রতিবছরই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, যা দুর্ভোগে ফেলে নগরবাসীকে। বর্তমানে পরীবাগ, রায়েরবাজার, আরামবাগ ও গোপীবাগ এ চারটি খালের কোনও অস্তিত্বই নেই।
প্রায় এক যুগ আগে শাহবাগ থেকে উৎপত্তি হয়ে বড় মগবাজার পর্যন্ত পরীবাগ খাল, কাটাসুর খাল হতে উৎপত্তি হয়ে সরাইজাফরাবাদ ও সুলতানগঞ্জ মৌজার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রায়েরবাজারের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রায়েরবাজার খাল, বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত আরামবাগ খাল এবং গোপীবাগ থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছন দিয়ে আরামবাগ খাল পর্যন্ত গোপীবাগ খাল ছিল। নগর কর্তৃপরে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সময়ের ব্যবধানে খালগুলো সড়কে পরিণত হয়েছে।
রাজাবাজার খাল, ধোলাইখাল-১, ধোলাইখাল-২, শাহজাহানপুর খাল, গুলশান-বনানী খাল, ধানমন্ডি খাল, দণিগাঁও-নন্দীপাড়া খাল, রাজারবাগ-নন্দীপাড়া খাল, নাসিরাবাদ-নন্দীপাড়া খাল, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খাল, ডুমনি খাল, বাউখার খাল এবং গোবিন্দপুর খালÑ এ ১৩টি খাল থেকেও নেই! এর মধ্যে রাজাবাজার খাল (রাজাবাজার পশ্চিম পাশ থেকে হোটেল সুন্দরবন পর্যন্ত), ধোলাইখাল-১ (দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে ধোলাইখাল-২ পর্যন্ত), ধোলাইখাল-২ (বুড়িগঙ্গা নদী থেকে সূত্রাপুর, গে-ারিয়া, দয়াগঞ্জ, ওয়ারী শহর ঢাকা মৌজা (পুরান) হয়ে দয়াগঞ্জ বাজার পর্যন্ত, ধানমন্ডি খাল, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
ঠিকমতো দেখভাল না হওয়ায় বাকি খাল সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরের খালগুলো ধ্বংসের একটি বড় কারণ ঋণপ্রদানকারী গোষ্ঠী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পরিবেশ বিষয়ে উদাসীনতা। সরু বক্স কালভার্ট, সড়ক ও ভবন নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে বন্ধ করা হয়েছে খাল। এসব কার্যক্রমে সক্রিয় সহযোগিতা বা আর্থিক জোগান দিয়েছে ঋণপ্রদানকারী গোষ্ঠী। উন্নয়নের নামে খাল ভরাট করে নর্দমায় রূপান্তর কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশ আইন ১৯৯৫, পরিবেশ নীতিমালা, বেঙ্গল ক্যানেল অ্যাক্ট ১৮৬৪ ও জলাধার সংরণ আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জলাশয়বিহীন রাজধানী জনজীবনের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। দেখা দেবে ভূমিকম্প, জীববৈচিত্র্য হবে তিগ্রস্ত। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশসঙ্কটের আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা যা শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতির জন্যও নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনবে।
সাপ্তাহিক ২০০০ শুক্রবার ৩০ এপ্রিল ২০১০ এ প্রকাশিত

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×