somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন

০৮ ই মার্চ, ২০১১ বিকাল ৪:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবে হবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন
আপেল মাহমুদ


বন্ধ আছে সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। শিক্ষকদের নির্বাচন নিয়মিত হলেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বেশ কয়েকবার নির্বাচনের উদ্যোগ নিলেও এখনো তা উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের কোনোটিতে আঠারো বছর আবার কোনোটিতে বিশ বছর ধরে কোনো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না। ছাত্র সংসদকে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নিয়মিত চাঁদাও দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কোথায় কীভাবে সেই টাকা খরচ করা হচ্ছে তাও সাধারণ ছাত্ররা জানেন না।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ভিপি ছিলেন নাজিমউদ্দিন। নির্বাচন না হওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, নির্বাচন না হওয়া মার্শাল লর চেয়েও ক্ষতিকর। এতে বাটপার, সন্ত্রাসীরা সুযোগ পেয়ে যায়। নির্বাচন হলে নতুন নতুন নেতা তৈরি হয়। গত ২০ বছরে প্রায় ৫শ নেতা তৈরি হতো কিন্তু নির্বাচন বন্ধ হওয়ায় সেটি বন্ধ হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন জানান, চাকসুর সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ১৯৯১ সালে। প্রায় ১৯ বছর ধরে চাকসু অকার্যকর হয়ে আছে। নির্বাচন না হওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, এখানে মূলত জামায়াত-শিবিরের কারণেই নির্বাচন হচ্ছে না। ক্যাম্পাসে তারা মস্তানি করে ও রগকাটার রাজনীতি করে এবং সাধারণ ছাত্রদের কাছ থেকে বায়তুল মালের নামে চাঁদা তোলে। তাদের কার্যক্রম ছাত্রদের কোণঠাসা করে রেখেছে। এসব কারণে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবকেও তিনি এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন।

বাংলাদেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। ’৯০ সালে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। এতে ভিপি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন আমানউল্লাহ আমান এবং জিএস পদে নির্বাচিত ছিলেন খায়রুল কবীর খোকন। এরপর থেকে রাজনীতি হয়ে গেছে হলকেন্দ্রিক। কেন্দ্র থেকে প্রতিটি হলের সভাপতি, সেক্রেটারি নির্ধারিত হয় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের ভিত্তিতে। ফলে এখানে এক ধরনের অসুস্থ রাজনীতির চর্চা চলছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ছাত্র সংসদ সক্রিয় নেই। ছাত্রলীগ ডাকসুসহ দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন চায়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক নাসিম আল মোমিন ডাকসুর নির্বাচনের ব্যাপারে জানান, বছরখানেক আগে ছাত্রলীগ ডাকসু নির্বাচন চেয়েছিল কিন্তু ছাত্রদল এতে সম্মতি দেয়নি। বর্তমান উপাচার্য নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও প্রশাসনের অনেকেই আছে যারা ছাত্রপ্রতিনিধিত্ব চায় না। কারণ তারা চায় এককভাবে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে। ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, ছাত্রলীগ আন্তরিকভাবে চায় ডাকসুসহ অন্যান্য নির্বাচন হোক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম সাম্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এরশাদ হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল হক রউফ এবং বিএম কলেজের ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক নাহিদ সেরনিয়াবাত ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী বলে মনে করেন। ওবায়দুল হক নাসির আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের ৮৫ ভাগ শিক্ষক এবং প্রশাসনিক কাজে ব্যয় করা হয়। ছাত্র সংসদ অকার্যকর হওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কাজেই অংশগ্রহণ কিংবা নীতিমালা গ্রহণে ভূমিকা রাখতে পারছে না ছাত্ররা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জহুরুল হক রউফ জানান, ১ বছর মেয়াদি রাকসু নির্বাচন হয় ’৯০ সালে এবং সেই সময় ভিপি ছিলেন রুহুল কবির রিজভী। তারপর আর নির্বাচন হয়নি। রাকসু ফান্ডে বর্তমানে ১৩ কোটি টাকার ওপরে জমা আছে। এখনো রাকসুর নামে ছাত্রদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয় অথচ কোনো সংসদ নেই। তিনি আরো জানান, বর্তমান সরকারের সময় আমরা দাবি তুলেছিলাম কিন্তু শিক্ষকরা চান না ছাত্রদের ক্ষমতায়ন হোক। কারণ এতে তাদের স্বৈরাচারী আচরণ ক্ষুণœ হবে। তারা মনে করেন নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ নির্বাচন হয় ’৯২ সালের জুন মাসে। এ সময় সর্বশেষ ভিপি হিসাবে নির্বাচিত হন মাসুদ হাসান তালুকদার। জাকসু নির্বাচন সম্পর্কে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্ঝর আলম বলেন, সর্বশেষ নির্বাচন কবে হয়েছিল তা ভুলে গেছি। তবে নির্বাচন না হলেও প্রতিবছর ছাত্রপ্রতি ১০ টাকা হারে সংসদের নামে টাকা নেয়া হয়। এখন এই টাকা সাংস্কৃতিক কাজে ব্যয় করা হয়।
বিএম কলেজের ছাত্রনেতা নাহিদ জানান, ২০০২ সালের পর আর কোনো সংসদ নির্বাচন হয়নি। নির্বাচনের দাবিতে আমরা মিছিল করে যাচ্ছি।
এক সময়ের অন্যতম ছাত্রনেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না জানান, নিয়মিত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। নির্বাচন না হওয়ায় নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি হচ্ছে না। ঢাবি ভিসি দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলেন নির্বাচন দেবেন কিন্তু কেন নির্বাচন দিচ্ছেন না সেটা খুঁজে বের করা দরকার। এখানে নির্বাচন না হওয়ার পেছনে শুধু প্রশাসন না, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আছে। তিনি আরো বলেন, যে সংগঠন ক্ষমতায় আসে তারা নির্বাচন চায় কিন্তু বিরোধীরা এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। তারপরও মূল কথা নির্বাচন হওয়া জরুরি। কারণ নির্বাচন না হওয়ার কারণে ছাত্রদের মধ্য থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বের হয়ে আসছে না। ফলে জাতীয় রাজনীতিতে ব্যবসায়ী, আমলারা স্থান দখল করে নিচ্ছে। এটা ভাঙার জন্য হলেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া দরকার। ঢাকসু সাবেক জিএস মোস্তাক হোসেন বলেন, ১৯৯০ সালের পর আমরা আর কোনো নির্বাচন দেখছি না, এটা ঠিক না। পার্লামেন্ট নির্বাচন তো থেমে নেই, তাহলে সারাদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন থেমে আছে কেন? ঠিকভাবে নির্বাচন হলে আমরা নতুন নেতৃত্ব পেতাম এবং ছাত্ররাজনীতি ভালো জায়গায় যেত। কিন্তু তা থেকে আমরা দূরে সরে আছি।

লেখাটি সাপ্তাহিক ২০০০ প্রকাশিত

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×