somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন কেন দেন চিকিৎসক??

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশে ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন নিয়ে কিছু সন্দেহবাতিকগ্রস্ততা রয়েছে কমবেশী সবার মধ্যেই।
রোগী এবং তাদের স্বজনরা প্রথমেই আঙ্গুল তোলেন চিকিৎসকদের দিকে। তাদের অভিযোগ, কমিশনের লোভে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করিয়ে থাকেন, পছন্দমত করতে দেন।

অভিযোগ অসত্য বলার কোন সুযোগ নেই।
অনেক চিকিৎসক আসলেই এসব কাজে যুক্ত। কিন্তু মোট চিকিৎসকের সংখ্যার তুলনায় এদের পরিমান কম। কম হোক আর বেশীই হোক, কাজটা আনইথিক্যাল।

এখন, একটু নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি আসুন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে একজন মানুষ রোগাক্রান্ত হলে, তার রোগ নির্ণয়ের কিছু ধাপ রয়েছে।

প্রথমত,
রোগীর রোগের ইতিহাস বা হিস্ট্রি।
রোগের উপসর্গ জানার পর চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে ধারনা করেন এই রোগীর কি কি রোগ হতে পারে।

দ্বিতীয়ত,
প্রথম ধাপে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে শারীরিকভাবে রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা। এই ধাপ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক তার রোগীর একটা ডায়াগনসিসে আসেন, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্রভিশনাল ডায়াগনসিস। এবং একই সাথে, তার প্রভিশনাল ডায়াগনোসিসের কাছাকাছি সম্ভাব্য কিছু ডায়াগনসিসে আসেন, যাদের বলা হয় ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনসিস।
এটা হল তৃতীয় ধাপ

এর পরের ধাপ মানে চতুর্থ ধাপ হল, ডায়াগনোসিস কনফার্ম করা ও ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনোসিস এক্সক্লুড করা। এখানেই আমরা ইনভেস্টিগেশন এর সহায়তা নেই।

আসুন দেখি কি ইনভেস্টিগেশন চিকিৎসক কি পারপাসে দিয়ে থাকেন-

১. কিছু করান ডায়াগনোসিস কনফার্ম করতে। কারন, কনফার্ম না হয়ে ঔষধ দিলে আপনি নিজেও খেতে চাইবেন না নিশ্চই।

২. কিছু করান ডিফারেন্সিয়াল ডায়াগনসিস এক্সক্লুড করতে। কারন প্রাথমিক ডায়াগনসিস একেবারে সবসময় একুরেট নাও হতে পারে। কখনো বা অন্য কোন রোগের কাছাকাছি মনেও হতে পারে, কারন একই উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগ দেখা দিতে পারে। প্রতিটি রোগের জন্যই কিছু আলাদা আলাদা ইউনিক ল্যাব টেস্ট আছে, যেটা দিয়ে আমরা রোগগুলোকে নিশ্চিতভাবে আলাদা করতে পারি।

৩. কিছু করান, তিনি যে ঔষধ আপনার রোগের চিকিৎসায় দেবেন, তা আপনার শরীরে কতটা মানাবে তা জানতে। মনে করুন, আপনার কিডনি আগে থেকেই একটু ম্যালফাংশন্ড থাকতে পারে, যেটা আপনার দৃশ্যত কোন সমস্যার সৃস্টি করছে না ( বলা হয়ে থাকে, কেন যেন ২ কিডনীর ৫ ভাগের ১ ভাগও যদি ইনট্যাক্ট থাকে, আপনার শরীরে তা লক্ষনীয় কোন রোগের আলামত দেখাবে না! এজন্য বেশিরভাগ কিডনী রোগীরই রোগ ধরা পড়ে একদম শেষ পর্যায়ে!) এখন, তিনি আপনাকে, একটা ভাল ব্যথার ঔষধ দিয়ে দিলেন কিডনী ফাংশন না জেনেই, এতে আপনার কিডনী ড্যামেজ হলে আপনি তো তখন এসে তার টুটি চেপে ধরবেন। কিন্তু তিনি যদি আগেই ক্রিয়েটিনিন করাই, বলবেন কমিশনের লোভে করাচ্ছেন! বেচারাদের এখন  উভয়সঙ্কট রে ভাই!!

৪. কিছু পরীক্ষা করান রোগের প্রগনোসিস বা উন্নতি-অবনতি বোঝার সুবিধার্থে। না হলে তারা কিভাবে বুঝবেন, চিকিৎসার বা ঔষধের রেস্পন্স কেমন।
বলতে পারেন, রোগীকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়। সব রোগ ভিজিবল উন্নতি-অবনতি দেখায় না। কিছু কিছু ব্যপার খুব সাবজেক্টিভ, রোগী টু  রোগী ভ্যারি করে।

৫. অপারেশনের আগে তারা রুটিন কিছু পরীক্ষা করান রোগীর অপারেটিভ ও এনেস্থেটিক ফিটনেস জানার জন্য। আনফিট রোগী অপারেশন করতে গিয়ে কোন সমস্যা হলে, এই ইনভেস্টিগেশন বিরোধী লোকগুলোই বলবে, আপনি টেস্ট করাইলেন না কেন!!

৬. কিছু কিছু রোগের ক্ষেত্রে, যেমন হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, বাত(রিউম্যাটিক আর্থ্রাইটিস), হেপাটাইটিস বি, সি, এইডস, কিছু ক্যান্সার ইত্যাদির ক্ষেত্রে রুটিনলি কিছু পরীক্ষা করা হয়। উদ্দেশ্য, নীরবে এই রোগগুলি শরীরে কোন মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করছে কিনা তা জানা। এতে আগে রোগ ধরা গেলে চিকিৎসা দেয়া সহজ হয়, রোগীর উপকারও বেশী।

এখন কথা হল, চিকিৎসকবৃন্দ রোগীকে খুলে বলেন না ঠিকমত যে কি তার রোগ, কোন পরীক্ষা কিসের জন্য আর কোন ঔষধ কেন দেয়া হল, কোনটার কি সাইড এফেক্ট। সমস্যা হলে কি করতে হবে।

এজন্যেই এত এত ভুল বুঝাবুঝি।

ইনভেস্টিগেশনের পার্সেন্টেজ নেন মোট সংখ্যার তুলনায় খুবই কম চিকিৎসক। এদের জন্যই এত বদনাম আমাদের।

তাহলে এখানে আপনার আমার করনীয় কি??

রোগী এবং রোগীর স্বজন হিসেবে,

প্রথম কাজ হল ধৈর্যশীল হওয়া। সবসময় পরমকরুনাময়ের কাছে সুস্থতার প্রার্থনা করা এবং এই প্রার্থনা করা যে, তিনি যেন সেই চিকিৎসকের কাছে সহজেই আমাদের পৌছে দেন, যার উছিলায় তিনি আমাদের সুস্থ করবেন।

এরপর, যার কাছে চিকিৎসার জন্য যাব, তার উপর আস্থা রাখা। তার পরামর্শমত ঔষধ ও পথ্য গ্রহণ করা।

চিকিৎসকের কাছ থেকে নিজের রোগ সম্পর্কে জেনে নেবেন অবশ্যই। তিনি নিজ থেকে না বললে জিজ্ঞেস করবেন।

কোন পরীক্ষা কিভাবে, কোথা থেকে করবেন, কি প্রিপারেশন নিয়ে করতে হবে, কোন পরীক্ষার কি উদ্দেশ্য, কতটা জরুরী অবশ্যই জিজ্ঞেস করে জেনে নেবেন।

যে ঔষধ তিনি দেবেন, সেগুলো কোনটা কেন, তা জেনে নিবেন, কি কি সাইড ইফেক্ট হতে পারে, কখন বন্ধ করতে হতে পারে ইত্যাদি জেনে নেবেন।

জেনে নেবেন কি কি উপসর্গ দেখা দিলে আপনাকে পুনরায় চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে, কখন ইমার্জেন্সী চিকিৎসা নিতে হবে, কোথায় নিতে হবে জেনে নেবেন।

সবচেয়ে বড় কথা, মন খুলে আপনার রোগসংক্রান্ত সব কথা বলুন, লজ্জার ভয়ে কিছু লুকোবেন না। প্রয়োজনে খানিকটা সময় নিন, একটু আন্তরিক হোন, চিকিৎসকের উপর আস্থা রাখুন।

চিকিৎসক হিসেবে,

প্রথম কাজ হল ধৈর্যশীল হওয়া। সবসময় পরমকরুনাময়ের কাছে নিজের সুস্থতার প্রার্থনা করা এবং এই প্রার্থনা করা যে, তিনি যেন আমাদের সেই জ্ঞান ও দক্ষতা দান করেন, যাতে আমাদের রোগীদের আমরা ভাল সেবা দিতে পারি। এবং তিনি যেন আমাদের রোগীদের সুস্থ করেন।

এরপর কাজ হল, রোগীর উপর আস্থা রাখা যে তারা পরামর্শমত ঔষধ ও পথ্য গ্রহণ করবেন। এবং তাদের এবিষয়ে কাউন্সিলিং করা।

রোগীর রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন অবশ্যই। কি হয়েছে, কেন হয়েছে, কি চিকিৎসা, চিকিৎসা নিলে কি লাভ, না নিলে কি অসুবিধা, চিকিৎসার কি অপশন আছে, সাইড ইফেক্ট কি, কিভাবে প্রিভেনশন করবে ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করবেন। রোগী নিজ থেকে না জিজ্ঞেস করলেও বলবেন।

কোন পরীক্ষা কিভাবে, কোথা থেকে করতে হবে, কি প্রিপারেশন নিয়ে করতে হবে, কোন পরীক্ষার কি উদ্দেশ্য, কতটা জরুরী অবশ্যই বিস্তারিত বলবেন। কেন কোন পরীক্ষা পূর্বে করা থাকলেও আপনি আবার করাতে চাচ্ছেন, তাও বলে দেবেন।

যে ঔষধ দেবেন, সেগুলো কোনটা কেন, তা বলবেন, কি কি সাইড ইফেক্ট হতে পারে, কখন বন্ধ করতে হতে পারে ইত্যাদি বলবেন।

এটাও বলে দেবেন যে, কি কি উপসর্গ দেখা দিলে পুনরায় চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে, কখন ইমার্জেন্সী চিকিৎসা নিতে হবে, কোথায় নিতে হবে ইত্যাদি।

সবচেয়ে বড় কথা, মন দিয়ে রোগীর কথা শুনুন, তাকে খানিকটা সময় দিন, একটু আন্তরিক হোন, রোগীর অর্ধেক রোগ এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

পরম করুনাময় আমাদের সবাইকে সৎ ও সুস্থ রাখুন।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×