somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"রোগী সুরক্ষা আইন" বনাম "চিকিৎসক সুরক্ষা আইন" : রোগী বনাম চিকিৎসক, রেফারীর ভূমিকায় মিডিয়া!!

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

গত বেশ কয়েক বছর যাবৎ বাংলাদেশের মিডিয়ার হট টপিক জুড়ে আছে "ভুল চিকিৎসা" আর "রোগী সুরক্ষা আইন"।

এই দুটো বিষয় এদেশের মানুষ খুব খায়, তাই মিডিয়ার টি আর পি বাড়ে, পত্রিকার কাটতি বাড়ে, অনলাইনে লাইক-হিট পাওয়া যায় দেদারসে।

কিন্তু সব কথার শেষ কথা হল, আপনাকে-আমাকে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেই হবে।

তাই, আপনার-আমার ভাবা উচিৎ, আসলে কি চাই আমরা?

একটি ভাল রোগীবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, না কি এই লাইক-শেয়ার এর ভার্চুয়াল মজা?

সাধারন মানুষদের বলছি, মিডিয়াওলাদের না হয় লাভ আছে এইসব নিয়ে হলুদ সাংবাদিকতা করে, তারা পয়সা কামায়, বিদেশী হাসপাতালের এজেন্ট কমিশন পায়। কিন্তু আপনার-আমার কিন্তু তিলমাত্র লাভ হচ্ছে না, বরং ক্ষতিই বেশী হচ্ছে।

দেশে চিকিৎসকদের ওপর আপনাদের আস্থা কমছে, চিকিৎসকেরা নির্যাতিত হচ্ছেন, তারা সেবা দেবার মনোভাব হারাচ্ছেন, ভালরা দেশ ছেড়ে বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন; সর্বোপরি ভাল আর ব্রাইট শিক্ষার্থীরা এখন আর চিকিৎসক হতে চাইছে না।

কাকে দিয়ে চিকিৎসা করাবেন ভবিষ্যতে ভেবে দেখেছেন আপনি?

হতে পারে আপনার টাকা আছে, বাইরে চলে যাবেন। কয়বার গিয়ে চিকিৎসা করাবার মত সামর্থ্য আছে আপনার?

আর মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত এই মানুষগুলো তো বাইরেও যেতে পারবে না। কি হবে এদের ভবিষ্যতে??

আমি চিকিৎসক হিসেবে না, একজন রোগী হিসেবে এই কথাগুলো যখন ভাবি, আমার গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে!
কারন, আমার সেই সামর্থ্য নেই যে, আমি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারব।

একজন চিকিৎসক হিসেবে যখন এগুলো ভাবি, তখন হতাশায় নিমজ্জিত হই। জীবনের এতগুলো বছরের শ্রম আর মেধা ব্যবহারের পর যখন দেখি, অযোগ্য লোকেরা আমাদের পেশাগত কাজের "ভুল" ধরার নামে আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালায়।

এরকম বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম???

না, চাইনি।

আর চাইনি বলেই এই লেখাটি লিখছি।

"রোগী সুরক্ষা আইন" আর "চিকিৎসক সুরক্ষা আইন" এর নামে এদেশের রোগী এবং চিকিৎসকদের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিচ্ছে কিছু লোক, কিছু মিডিয়া।

মুখোমুখি খুব পজেটিভ ওয়েতে করা যেত, কিন্তু তারা করছে নেগেটিভ ভাবে।

তাই, আপনি রোগী হিসেবে আইনকে যেমন নিজের দিকে টানছেন, আমি চিকিৎসক হিসেবেও আমার দিকে টানছি।

তবে, আপনার সাথে আমার একটা বড় বেসিক পার্থক্য আছে। আমি একই সাথে রোগী ও চিকিৎসক হিসেবে আইনটির জন্য কাজ করছি, আপনি স্বার্থপরের মত আপনার সুবিধার জন্য লড়ছেন।

আপনি লড়ছেন আপনার তথাকথিত "সুরক্ষার" জন্য, আমি লড়ছি আপনার-আমার "অধিকারের" জন্য।

আমার আকুল অনুরোধ আপনাদের সকলের প্রতি, সরকার একটি আইন প্রনয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একটি সুশৃঙ্খল নিয়মের আওতায় আনতে, যেখানে আপনার অধিকার আমার কর্তব্য আর আমার অধিকার আপনার কর্তব্য।

আপনি কি বাঘ-ভালুক না কি, যে আমি চিকিৎসক হিসেবে আপনার কাছ থেকে "সুরক্ষা" চাইব?

না আমি হায়েনা না কি, যে আমার কাছ থেকে "সুরক্ষা" চাইবেন আপনি?

আজ আমি আপনার চিকিৎসক, আপনার রক্ত সম্পর্কের কেউ না; আমাকে নির্যাতন করলে আপনার কিছু আসে যায় না, তাই চুপ করে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন, কাল আপনারই ভাই-বন্ধু-সন্তান চিকিৎসক হয়ে যখন নির্যাতনের স্বীকার হবে, তখন তার ওপর নির্যাতনের জন্য আপনিই দায়ী থাকবেন।

তেমনিভাবে, আজ আপনি চিকিৎসক, রোগীর প্রতি কোন অবহেলা করে নিজের পিঠ বাচাতে লেগে গেলেন, কাল আপনারই বাবা-মা-ভাই-বোন-সন্তান-এমনকি আপনি নিজেই অবহেলার স্বীকার হতে পারেন। সেদিন আপনি কিছুই করতে পারবেন না।

তাই আসুন, আমরা সোচ্চার হই, সিস্টেমকে আইনের আওতায় আনতে, সিস্টেম ঠিক হয়ে গেলে সিস্টেমের মধ্যকার সব এমনিতেই লাইনে চলে আসবে।

অন্যথা নিয়ামকগুলো নিয়ে মাতামাতি আর যুদ্ধ করতে থাকলে একসময় গোটা সিস্টেমটাই ভেঙ্গে পড়বে।

২.

"রোগী ও চিকিৎসক অধিকার সংরক্ষন আইন" নিয়ে আইন কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কাজ করছেন। যদিও তাদের মতে এটি "রোগী ও চিকিৎসক সুরক্ষা আইন"।

আমরা চিকিৎসকরাও কাজ করছি বিষয়টি নিয়ে। কাজ করছেন অনেক মানবাধিকার সংগঠন, ভুক্তভোগী রোগী/রোগীর স্বজন, আইনজীবি অনেকেই।

কিন্তু দু:খের বিষয় হল, একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে ভাগ ভাগ হয়ে কাজ করছেন, তাই নেই কোন সমন্বয়।

একদিকে আইন কমিশন কিছু ভাবছে, তেমনি ভাবছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বি এম এ ও বি এম ডি সি।

আইন অবশ্যই আইনের মত হবে। কিন্তু সেটা যেন অপব্যবহার যোগ্য আইনে পরিনত না হয়। যেমনটি হয়েছে "নারী নির্যাতন আইন"টি!
আমি আজো জানিনা, সিলেট সেন্ট্রাল জেলের চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করা ছেলেটির সাজা শেষ হয়েছে কি, না। যেখানে জেলার থেকে আইনজীবি সবাই জানে ছেলেটি অন্যায়ভাবে শুধুমাত্র ফ্যামিলি পলিটিক্সের স্বীকার, সেখানে আইনের প্যাচে অন্ধকার কারাগারে পড়ে ছিল সে।

আমরা আইনের অপব্যবহার চাই না।
আমরা চাই, সবার অধিকার সংরক্ষিত হোক।

আমরা বেশ কয়েকজন চিকিৎসক এই আইন নিয়ে কাজ করছি। আপনি যে পেশারই হোন না কেন, আপনিও আমাদের সাথে শরীক হোন।

আসুন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রেখে যাই আমরা।
আপনারা আপনাদের গঠনমূলক ও বাস্তব সম্মত মতামত শেয়ার করুন, আমরা সবাই একসাথে কাজ কঅঅরি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ৯:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×